1. [email protected] : admi2017 :
  2. [email protected] : Daily Khabor : Daily Khabor
  3. [email protected] : rubel :
  4. [email protected] : shaker :
  5. [email protected] : shamim :
সোমবার, ১১ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৭:০৯ অপরাহ্ন

অস্ত্রবাজ হতে চান ‘যুবরাজ’

ডেইলি খবর নিউজ ডেস্ক
  • আপডেট সময় শুক্রবার, ২৭ মে, ২০২২
  • ১১২ বার পড়া হয়েছে

পঞ্জিকার তারিখটা ২৪ জুন, সালটা ২০১৩। রেলওয়ের ৪৮ লাখ টাকার দরপত্র ঘিরে রীতিমতো যুদ্ধাবস্থা চট্টগ্রাম সিআরবির সাতরাস্তা মোড়ে। এক বলয়ের অধিনায়ক সে সময়ের চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) ছাত্রলীগ নেতা সাইফুল আলম লিমন, অন্যটির দলপতি যুবলীগ নেতা হেলাল আকবর বাবর। চলে দু’পক্ষের তুমুল গোলাগুলি। লাশ পড়ে দুটো। চট্টগ্রামের সেই আলোচিত সিআরবি জোড়া খুনের অভিযোগপত্রভুক্ত আসামি লিমন। এখনও রেলওয়ে ঘিরে তাঁর ডেরা। সিআরবি এলাকার কিশোরদের কাছে তিনি ‘বড় ভাই’। লিমনের কথায় উঠে-বসে কিশোররা। টেন্ডারবাজি, অস্ত্রবাজি, চাঁদাবাজিসহ বেশ কয়েকটি মামলা তাঁকে ঘিরে। নানা দুর্বৃত্তপনা করে বেড়ানো এই রংবাজের কারাগারের চার দেয়াল দেখা একাধিকবার। এসব অপকর্মের কারণে একসময় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহসম্পাদক পদও খোয়ান তিনি। এখন সেই লিমনই চট্টগ্রাম মহানগর যুবলীগের ‘যুবরাজ’ হতে চান! এবার তাঁর নগর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক হওয়ার খায়েশ। তাই শীর্ষ নেতাদের কাছে ফেলেছেন তদবিরের বড়শি।

শুধু লিমনই নন; যুবলীগের গুরুত্বপূর্ণ তিন সাংগঠনিক জেলা চট্টগ্রাম উত্তর, দক্ষিণ ও মহানগর কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের পদ পেতে আদা-জল খেয়ে নেমেছেন এক ডজনের বেশি বিতর্কিত নেতা। যাঁদের বিরুদ্ধে খুনোখুনি, অস্ত্রবাজির মতো গুরুতর অপরাধের অভিযোগ রয়েছে; আছে মামলাও। চট্টগ্রামের তিন সাংগঠনিক জেলায় দল পুনর্গঠন কার্যক্রম চলছে। এরই অংশ হিসেবে আগামীকাল শনিবার চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা যুবলীগ, রোববার উত্তর জেলা যুবলীগ এবং সোমবার মহানগর যুবলীগের সম্মেলন হওয়ার কথা রয়েছে। তিন সম্মেলন ঘিরে সাংগঠনিক জেলাগুলোতে একদিকে প্রাণের সঞ্চার, অন্যদিকে বিতর্কিত পদপ্রত্যশীদের দৌড়ঝাঁপে জমেছে শঙ্কার মেঘ।

অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে মহানগর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদকের পদপ্রত্যাশী সাইফুল আলম লিমন বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে যেসব মামলা কিংবা অভিযোগ আছে, এর সবই ষড়যন্ত্র ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।’

চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক আবদুল মালেক জনি হত্যা মামলার অন্যতম আসামি হলেন পটিয়ার কুসুমপুরা গ্রামের সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েম ও মহিউদ্দিন মহি। এবার দক্ষিণ জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদকের পদ পেতে মরিয়া চেষ্টা তাঁদের। জনির ছোট ভাই আবদুল মাজেদ চৌধুরীর করা মামলার আসামি হলেও জেলা ছাত্রলীগের সাবেক আহ্বায়ক মোহাম্মদ ফারুককে অদৃশ্য কারণে অভিযোগপত্র থেকে বাদ দেওয়া হয়। খুনের ঘটনায় নাম জড়ানো সেই মোহাম্মদ ফারুকই দক্ষিণ জেলা যুবলীগের সভাপতি পদে বসতে জীবনবৃত্তান্ত জমা দিয়েছেন।

খুনের শিকার জনির ছোট ভাই আবদুল মাজেদ চৌধুরী বলেন, ‘৯ বছর পার হলেও ভাই হত্যার বিচার পাইনি। হত্যায় সরাসরি জড়িত থাকার পরও মামলার অভিযোগপত্র থেকে কাউকে কাউকে বাদ দেওয়া হয়েছে। জনি হত্যা মামলার আসামিরাই এখন রাজনীতির মাঠ দাপাচ্ছেন; যুবলীগের শীর্ষ পদ বাগাতে চাইছেন।’

অভিযোগের ব্যাপারে কথা বলতে মোবাইলে ফোন দেওয়া হলেও সংযুক্ত করা যায়নি আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েমকে। আর মহিউদ্দিন মাহির ফোন রিসিভ করেন অন্যজন। কিছুক্ষণ পর মাহি ফোন করবেন বললেও আর করেননি। খুদে বার্তা পাঠিয়েও তাঁর সাড়া পাওয়া যায়নি।

চবি ছাত্রলীগ নেতা দিয়াজ ইফরান হত্যা মামলা ছাড়া সিআরবির জোড়া খুন মামলার আসামি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আলমগীর টিপুও। এবার তিনিও হতে চান মহানগর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক। পদ পেতে কেন্দ্রে জমা দিয়েছেন জীবনের ইতিবৃত্ত। চবি ক্যাম্পাসে মারামারিসহ নানা অপকর্মের অভিযোগ আছে তাঁর নামে। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিস্কারও হয়েছিলেন সাবেক এই ছাত্রলীগ নেতা।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে আলমগীর টিপু বলেন, ‘দিয়াজকে আমি হত্যা করিনি। আদালতে দিয়াজের বান্ধবী ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়ে জানিয়েছেন, দিয়াজকে কেউ হত্যা করেনি; সে আত্মহত্যা করেছে। এরপরও দিয়াজের পরিবার উদ্দেশ্যমূলকভাবে আমাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করছেন; বিতর্কিত করার চেষ্টা করছেন।’

অত্যাধুনিক একে-২২ রাইফেলসহ গ্রেপ্তার হয়েছিলেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ১৬ নম্বর চকবাজার ওয়ার্ডের কাউন্সিলর যুবলীগ নেতা নুর মোস্তফা টিনু। পুলিশের খাতায় তিনি কিশোর গ্যাংয়ের ‘গুরু’। অস্ত্রবাজি ছাড়াও তাঁর নামে আছে ছিনতাই ও চাঁদাবাজির মামলাও। ২০১৯ সালের ২২ সেপ্টেম্বর পিস্তল, শটগান, ৭২টি গুলিসহ র‌্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হয়ে দীর্ঘদিন জেলও খেটেছেন। প্রথমে নগর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক পদের জন্য জীবনবৃত্তান্ত তৈরি করলেও পরে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদের জন্য মনস্থির করেন।

অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে নুর মোস্তফা টিনু বলেন, ‘পুরোনো কিছু ঘটনা সামনে এনে আমাকে বিব্রত ও বিতর্কিত করার চেষ্টা চলছে। কাউন্সিলর হওয়ার পর থেকে আমি এলাকায় বড় ধরনের পরিবর্তন এনেছি। একটি মহল ষড়যন্ত্র করলেও মানুষ আমাকে ভালোবাসে। যুবলীগের যুগ্ম সম্পাদক পদ পেলে সংগঠনের জন্য কাজ করতে চাই।’

হত্যাচেষ্টা মামলার আসামি, চাঁদাবাজি ও টেন্ডারবাজির অভিযোগ রয়েছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ফজলে রাব্বী সুজনের বিরুদ্ধেও। তিনি এবার নগর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক পদপ্রত্যাশী। ২০২১ সালের চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের মারামারির ঘটনায় পাঁচলাইশ থানার একটি মামলায় ৭ নম্বর আসামি সুজন। বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি দেওয়ার মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে দু’জনের কাছ থেকে ১০ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। চবির বিভিন্ন উন্নয়নকাজের টেন্ডারবাজির অভিযোগ তো রয়েছেই।

তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে ফজলে রাব্বী সুজন বলেন, ‘আমি মাঠের কর্মী। তাই দলের জন্য সব সময় ঝুঁকি নিয়ে কাজ করেছি। এ কারণে একটি মহল বিভিন্ন সময় আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যমূলক অভিযোগ করে বিতর্কিত করার চেষ্টা করেছে। এখনও সেই মহলটি সক্রিয়। তবে আমি যুবলীগের দায়িত্ব পেলে সর্বোচ্চ সময়, শ্রম ও মেধা দিয়ে সংগঠনের জন্য দায়িত্ব পালন করব।’

এ ছাড়া তিনটি খুনের মামলাসহ ছয় মামলায় নাম জড়ানো কাউন্সিলর ওয়াসিম উদ্দিন চৌধুরীও নগর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক হতে চান। ২০১১ সালের ২৩ জুন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় রাজনৈতিক বিবেচনায় একটি খুনের মামলা বিচার শেষ হওয়ার আগেই তাঁর নাম প্রত্যাহার করে নেয়।

জানতে চাইলে ওয়াসিম উদ্দিন বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে আগে মামলা থাকলেও এখন আর নেই। কোনো মামলা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, কোনো মামলায় আদালত নির্দোষ বলেছে। আবার কোনো মামলায় অভিযোগপত্র ও পুলিশি তদন্তে খারিজ পেয়েছি।’

নগরীর বায়েজিদ শিল্পাঞ্চলে দখল-বেদখল ও কিশোর গ্যাংয়ের পৃষ্ঠপোষক হিসেবে র‌্যাব-পুলিশের তালিকায় রয়েছে আবু মোহাম্মদ মহিউদ্দিনের নাম। নগর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক পদ পেতে দৌড়ঝাঁপে আছেন তিনিও। তবে তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ একবাক্যে অস্বীকার করেছেন মহিউদ্দিন। তিনি বলেন, ‘আমি ষড়যন্ত্রের শিকার। একটি মহল আমার পেছনে লেগেছে। তারাই আমাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করছে।’

বিজ্ঞাপন

এ জাতীয় আরো খবর