1. [email protected] : admi2017 :
  2. [email protected] : Daily Khabor : Daily Khabor
  3. [email protected] : rubel :
  4. [email protected] : shaker :
  5. [email protected] : shamim :
সোমবার, ১১ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৬:০৭ অপরাহ্ন

আর কতকাল অপেক্ষা

ডেইলি খবর নিউজ ডেস্ক
  • আপডেট সময় বুধবার, ১৬ ডিসেম্বর, ২০২০
  • ৩৯০ বার পড়া হয়েছে

প্রতিবছর মার্চ ও ডিসেম্বর এলেই জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান মুক্তিযোদ্ধাদের নামের নির্ভুল তালিকা প্রণয়নে শুরু হয় সরকারের সংশ্লিষ্টদের নানা তৎপরতা। বিভিন্ন কমিটি গঠন করে দেয়া হয় একাধিক দিকনির্দেশনা। ‘ধীরে চল নীতিতে’ চলে যাবতীয় কার্যক্রম।

নতুন নতুন নির্দেশনার আলোকে তালিকায় চলে সংযোজন-বিয়োজন। একসময় থেমে যায় সবকিছু। এ যেন ‘স্থায়ী সংস্কৃতি’ হয়ে দাঁড়িয়েছে, যা চলছে স্বাধীনতার পর থেকেই। ফলে ৪৯ বছরেও চূড়ান্ত হয়নি প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের নামের তালিকা। এমন পরিস্থিতিতে সংশ্লিষ্টদের প্রশ্ন-এ তালিকা পেতে আর কতকাল অপেক্ষা করতে হবে।

তবে এ পর্যন্ত সরকারিভাবে তৈরি হয়েছে পাঁচটি তালিকা। আর চার বছর ধরে চলছে ষষ্ঠ তালিকা প্রণয়নের কাজ। এটি কবে নাগাদ ‘আলোর মুখ’ দেখবে, তা সুনির্দিষ্টভাবে বলতে পারছেন না সরকারের সংশ্লিষ্টরা।

সর্বশেষ ঘোষণায় এসেছে, জামুকা (জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল)-এর অনুমোদন ছাড়া ৩৯ হাজার ৯৬১ জন মুক্তিযোদ্ধা তালিকাভুক্ত হয়েছেন। তাদের তথ্য যাচাই-বাছাই ৯ জানুয়ারি দেশব্যাপী একযোগে শুরু হবে। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।

জানতে চাইলে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী ও জামুকার চেয়ারম্যান আ ক ম মোজাম্মেল হক সোমবার বলেন, ‘বীর মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা তৈরির কাজ চলমান রয়েছে। আইনি জটিলতাসহ নানা ঝামেলার কারণে যাচাই-বাছাই কার্যক্রম এখনও সম্পন্ন করা যায়নি। আমরা ইতোমধ্যে মুক্তিযোদ্ধার প্রমাণক হিসেবে ৩৩টি ক্যাটাগরি নির্ধারণ করেছি।

২০০২ সাল থেকে এ পর্যন্ত নিয়মবহির্ভূতভাবে ৩৯ হাজার ৯৬১ জন মুক্তিযোদ্ধা তালিকাভুক্ত হয়েছেন, যা মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে। আগামী ৯ জানুয়ারি দেশব্যাপী একযোগে শুরু হবে এসব মুক্তিযোদ্ধার তথ্য-উপাত্ত যাচাই-বাছাই। এরপর পর্যায়ক্রমে চূড়ান্ত হবে প্রকৃত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ষষ্ঠ তালিকা।’

সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, মূলত রাজনৈতিক কারণেই মুক্তিযোদ্ধাদের নামের তালিকা চূড়ান্ত করা যাচ্ছে না। সরকার বদলের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকার পরিবর্তন হওয়াটাও যেন নিয়মে পরিণত হয়েছে। আর এ কারণেই দিন দিন বাড়ছে মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা। তবে তালিকা চূড়ান্ত না হলেও এ মুহূর্তে গেজেটভুক্ত মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা ২ লাখ ৪ হাজার ৬৮৫।

জানা গেছে, যখনই নতুন তালিকা করা হয়েছে, তখনই দেখা গেছে মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা বেড়েছে। আর আগের তালিকা থেকে বাদ পড়েছে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নাম। এসব তালিকায় সর্বনিু মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা ৭০ হাজার ৮৯৬ জন, সর্বোচ্চ দুই লাখেরও বেশি। আর ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে ষষ্ঠ তালিকা তৈরির কাজে হাত দেয় মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়।

মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে রাষ্ট্রের স্বীকৃতি পেতে নতুন করে ১ লাখ ৩৪ হাজার ব্যক্তি আবেদন করেন। এসব আবেদন যাচাই-বাছাইয়ের পর প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার তালিকা চূড়ান্ত করতে সারা দেশে ৪৭০টি উপজেলা যাচাই-বাছাই কমিটি গঠন করে সরকার। এর মধ্যে ১১০টি কমিটি আইনি জটিলতায় প্রতিবেদন দিতে পারেনি।

বাকি ৩৬০টি কমিটির চূড়ান্ত প্রতিবেদন পাওয়া গেলেও তাতে রয়েছে প্রচুর অসঙ্গতি ও ভুলত্রুটি। এসব কমিটির প্রতিবেদন থেকে মাত্র ২৫ হাজার ব্যক্তিকে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তালিকাভুক্তির সুপারিশ করা হয়।

বাকি ১ লাখ ৯ হাজার আবেদনই নামঞ্জুর করা হয়। সেখান থেকে ৩৫ হাজার ২৮০ ব্যক্তি সংক্ষুব্ধ হয়ে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলে (জামুকা) আপিল আবেদন করেন। সুপারিশকৃত ২৫ হাজার ও আপিলকৃত ৩৫ হাজার ২৮০টি আবেদন অধিকতর যাচাই-বাছাই করতে প্রতি বিভাগে একটি করে মোট ৮টি কমিটি গঠন করা হয়। এসব কমিটির কার্যক্রম এখনও চলমান।

অন্যদিকে ২০০২ সাল থেকে এ পর্যন্ত জামুকার অনুমোদন ছাড়া ৩৯ হাজার ৯৬১ জন মুক্তিযোদ্ধা তালিকাভুক্ত হয়েছেন। তাদের তথ্যপ্রমাণাদি যাচাই-বাছাই কার্যক্রম ৯ জানুয়ারি শুরু হবে।

এজন্য উপজেলা ও মহানগর এলাকায় ৪ সদস্যের যাচাই-বাছাই কমিটি গঠিত হয়েছে। ৩ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত জামুকার সভায় যাচাই-বাছাই সংক্রান্ত নীতিমালা অনুমোদন দেয়া হয়। তবে এই যাচাইয়ের আওতার বাইরে থাকবেন বেশকিছু ক্যাটাগরির মুক্তিযোদ্ধা। এর মধ্যে মুক্তিযোদ্ধার ভারতীয় তালিকা, কল্যাণ ট্রাস্ট কর্তৃক প্রণীত শহীদ বেসামরিক গেজেট, সশস্ত্র বাহিনীর শহীদ গেজেটে যাদের নাম আছে তারা এর বাইরে থাকবেন।

এছাড়া বিজিবির শহীদ গেজেট, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধার গেজেট, খেতাবপ্রাপ্তদের গেজেট, মুজিবনগর, বিসিএস ধারণাগত জ্যেষ্ঠতাপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, বিসিএস, সেনা, বিমান, নৌ, নৌকমান্ডো, পুলিশ ও আনসার এর মধ্যে পড়বে না। স্বাধীন বাংলা বেতারের শব্দসৈনিক, বীরাঙ্গনা, স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল, ন্যাপ, কমিউনিস্ট পার্টি, ছাত্র ইউনিয়ন গেরিলা বাহিনী, লাল মুক্তিবার্তা, লাল মুক্তিবার্তায় স্মরণীয় যারা বরণীয় যারা, মুক্তিযোদ্ধাদের ভারতীয় তালিকা (সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনী), ভারতীয় তালিকা (পদ্মা), ভারতীয় তালিকা (মেঘনা), যুদ্ধাহত পঙ্গু বিজিবি, যুদ্ধাহত বিজিবি, সেক্টর অনুযায়ী ভারতীয় তালিকা, বিশ্রামগঞ্জ হাসপাতালে দায়িত্বপালনকারী ও যুদ্ধাহত সেনা গেজেটে প্রকাশিত মুক্তিযোদ্ধারাও এর বাইরে থাকবেন।

আওয়ামী লীগ টানা ১২ বছর রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকার পরও মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা কেন শেষ হচ্ছে না? জবাবে মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, ‘এটি একটি জটিল ও স্পর্শকাতর বিষয়। নানা ধরনের আইনি ও প্রশাসনিক জটিলতা মোকাবেলা করেই কাজ করতে হচ্ছে।

তালিকা থেকে কাউকে বাদ দিতে চাইলে অনেক প্রক্রিয়া অনুসরণ করে কাজটা চূড়ান্ত করতে হয়।’ ‘মুক্তিযোদ্ধাদের পাঁচটি তালিকার পরও কেন নতুন তালিকা’-এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ওইসব তালিকায় অনেক ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার নাম রয়েছে বলে আপনারাই পত্রপত্রিকায় লেখেন। ভুয়াদের বিরুদ্ধে এত অভিযোগ যে, নতুন তালিকা না করে উপায় নেই। এ কারণে নতুনভাবে কমিটি করে তালিকা করা হচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক গবেষক ও ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির যুগান্তরকে বলেন, আমরা শুরু থেকেই বলছি, আমলাদের দিয়ে এই কাজ হবে না; বিতর্ক বাড়বে।

কারণ ডিসি-ইউএনওদের এটা কাজ না। তারা মুক্তিযুদ্ধ দেখেনি। এখানে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক গবেষকদের সম্পৃক্ত করতে হবে। তবে আগের যে কোনো সময়ের মন্ত্রীদের চেয়ে বর্তমান মন্ত্রীকে এ ব্যাপারে অনেক বেশি আন্তরিক মনে হয়েছে। যতবারই নতুন তালিকা হয়েছে, ততবারই এটা নিয়ে উচ্চ আদালতে রিট হয়েছে। ফলে অনেক কাজই দীর্ঘসময় ধরে ঝুলে আছে। এর শেষ হবে কবে, তা বলা খুবই কঠিন।’

মুক্তিযুদ্ধের পর সেক্টর কমান্ডার ও সাবসেক্টর কমান্ডারদের বিভিন্ন প্রকাশনা থেকে জানা যায়, মুক্তিযুদ্ধে নিয়মিত বাহিনীর সংখ্যা ছিল ২৪ হাজার ৮০০ এবং অনিয়মিত বাহিনীর সংখ্যা ছিল ১ লাখ ১০ হাজার।

অর্থাৎ মোট ১ লাখ ৩৪ হাজার ৮০০ জন। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধকালীন সেক্টর বিলুপ্তির পর ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের প্রশিক্ষণ ও রেকর্ড সংরক্ষণ প্রতিষ্ঠান ইবিআরসিতে স্থানান্তরিত দলিলে দেখা যায়, মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা ৭০ হাজার ৮৯৬ জন। এক্ষেত্রে আগের তালিকার বাকি মুক্তিযোদ্ধার হদিস পাওয়া যায়নি। এটিই পরবর্তীকালে মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টে সংরক্ষিত রয়েছে।

যেটি ভারতীয় তালিকা নামে পরিচিত। এর আগে ১৯৭৮ সালের পর মুক্তিযোদ্ধার তালিকা তৈরির কাজে হাত দেন তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান। তৎকালীন সেনাপ্রধান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে দায়িত্ব দেন তিনি। ওই তালিকায় ১৯৮৬ সালে এরশাদের শাসনামলে জাতীয় তালিকা নামে প্রকাশ করা হয়। যার সংখ্যা ছিল ১ লাখ ২ হাজার ৪৫৮।

তবে এ তালিকা গেজেট হিসেবে প্রকাশিত হয়নি। ১৯৯৪ সালে বিএনপির শাসনামলে মুক্তিযোদ্ধা সংসদেও ভোটার-সূচক তালিকায় মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তালিকাভুক্ত হন ৮৬ হাজার।

আওয়ামী লীগের আমলে (১৯৯৬-২০০১) মুক্তিবার্তায় প্রকাশিত হয় ১ লাখ ৮২ হাজার মুক্তিযোদ্ধার নাম। সেখান থেকে ১৯৯৮ সালে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের তৎকালীন ডিজি মমিনউল্লাহ পাটোয়ারির নেতৃত্বে জেলা ও উপজেলা কমান্ডারদের নেতৃত্বে গঠিত যাচাই-বাছাই কমিটির মাধ্যমে তৈরি করা তালিকাটি মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলে সংরক্ষণ করা হয়। এটিই এখন ‘লালবই’ নামে পরিচিত।

এতে ১ লাখ ৫৪ হাজার মুক্তিযোদ্ধার নাম রয়েছে। ২০০১ সালে ক্ষমতায় এসে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার গঠন করে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়। সে সময়ে আগের নীতি বাদ দিয়ে তৎকালীন মন্ত্রিপরিষদ সচিবের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করা হয়। এই কমিটির সুপারিশে মুক্তিযোদ্ধা সংসদকে বাদ রেখে ইউএনও ও ডিসিদের নিয়ে উপজেলা ও জেলা যাচাই-বাছাই কমিটি করা হয়। আগের যে কোনো দুটি তালিকায় যাদের নাম রয়েছে তাদেরই সুপারিশ করে কমিটি। তাদের সুপারিশের ব্যক্তিরাই মুক্তিযোদ্ধা হয়ে যান।

এভাবে ২০০৩ ও ২০০৪ সালে মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকার দুটি গেজেট প্রকাশ করা হয়। এর একটি ছিল বিশেষ গেজেট; যেখানে সামরিক বাহিনীর মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা ছিল ৩৯ হাজার এবং অপর গেজেটে মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা নির্ধারণ করা হয় ১ লাখ ৫৯ হাজার। দুটি মিলে তখন মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা দাঁড়ায় ১ লাখ ৯৮ হাজার জনে।

অর্থাৎ জোট সরকারের সময় মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৪৪ হাজার, যা ২০০৯ সালে মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে ভুয়া বলে অভিযোগ করা হচ্ছে। এরপর বর্তমান সরকারের সময় কয়েক হাজার মুক্তিযোদ্ধার গেজেট হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

এ জাতীয় আরো খবর