1. [email protected] : admi2017 :
  2. [email protected] : Daily Khabor : Daily Khabor
  3. [email protected] : rubel :
  4. [email protected] : shaker :
  5. [email protected] : shamim :
শনিবার, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১০:৪০ অপরাহ্ন

আলাদিনের চেরাগের নাম আবজাল হোসেন

ডেইলি খবর নিউজ ডেস্ক
  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ২৭ আগস্ট, ২০২০
  • ২৮১ বার পড়া হয়েছে

ডেইলি খবর ডেস্ক: আবজাল হোসেন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী। বরখাস্ত হওয়ার আগে সর্বসাকুল্যে বেতন ছিল ত্রিশ হাজার টাকা। কিন্তু চাকরিরত অবস্থায় অবৈধ পন্থায় হাজার কোটি টাকার সম্পদ গড়েন। গত বছরের শুরুর দিকে আবজালের বিপুল সম্পদের মালিক হওয়ার কাহিনী প্রকাশ্যে আসে ঢাকা ও ঢাকার বাইরে প্লট-ফ্ল্যাটসহ অনেক সম্পদের তথ্য ফাঁস হতেই সর্বত্র হইচই পড়ে যায়। তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী হয়ে এত এত টাকার মালিক বনে যাওয়ায় চলে নানা আলোচনা-সমালোচনা। গণমাধ্যমের খবরেও উঠে আসে স্বাস্থ্যের এই টাকার কুমিরের নাম। ধারাবাহিকভাবে শুরু হয় দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অনুসন্ধানও।

অনুসন্ধানে নানা তথ্য মিললেও দুদক শেষ অবধি হিসাবনিকাশ করে আবজালের বিরুদ্ধে ২২ কোটির কিছু বেশি টাকার পরিমাণ অবৈধ সম্পদের অর্জনের অভিযোগে মামলা করে। আর তার স্ত্রী রুবিনা খানমের বিরুদ্ধে ২৬৩ কোটি টাকার বেশি পরিমাণ অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ মামলায় দেখায়।

মামলা হওয়ার পরই আত্মগোপনে চলে যান এই দম্পতি। দীর্ঘ ১৪ মাস পর আদালতে আত্মসমর্পণ করেন আবজাল। আদালতে জামিন চাইলেও বিচারক তা নাকচ করে কারাগারে প্রেরণ করেন। অন্যদিকে আবজালের স্ত্রী এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরেই রয়েছেন।

দুদক জানায়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এডুকেশন শাখার হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করতেন আবজাল। তার স্ত্রী রুবিনা খানমও একই অধিদপ্তরের শিক্ষা ও জনশক্তি উন্নয়ন শাখায় স্টেনোগ্রাফার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। পরে ২০০০ সালে স্বেচ্ছায় চাকরি ছেড়ে দেন আবজালে স্ত্রী। সে বছরই রহমান ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল নামের একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সঙ্গে কাজ শুরু করেন রুবিনা। অন্যদিকে আবজাল কর্মরত থেকেই নিয়োগ-বদলি বাণিজ্য, টেন্ডার বাণিজ্যসহ নানা উৎস তৈরি করে অবৈধ আয়ের অর্থে একের পর এক সম্পদের মালিক বনে যান।জানা যায়, ফরিদপুরে বেড়ে ওঠা আবজাল হোসেনের। ১৯৯২ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পাসের পর আর পড়ালেখা করেননি। ১৯৯৫ সালে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একটি প্রকল্পে অফিস সহকারী হিসেবে নিয়োগ পান। পরে একই পদে নিয়োগ পান ফরিদপুর মেডিকেল কলেজে। সেখান থেকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজে হিসাবরক্ষক হিসেবে যোগ দিয়ে দুই মাসের মধ্যেই ঢাকায় বদলি হয়ে আসেন আবজাল। এখানে এসেই ধীরে ধীরে টাকার মেশিন হিসেবে আখড়া তৈরি করেন। বেছে নেন নিয়োগ বাণিজ্য, বদলি বাণিজ্য ও টেন্ডার বাগিয়ে নেয়ার মতো অস্ত্র। এসব অবৈধ পথ অবলম্বন করে রাতারাতি টাকার কুমির হয়ে যান এই আবজাল। তার সঙ্গী হিসেবে কাজ করেন স্ত্রী রুবিনা। তার নামে গড়া রহমান ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল কোম্পানি দেশের বিভিন্ন মেডিকেল কলেজের যন্ত্রপাতি ও অন্যান্য সরঞ্জাম কেনার নামে টাকা নিয়ে নিম্নমানের যন্ত্রপাতি সরবরাহে বরাদ্দ হাজার হাজার কোটি টাকা অবৈধভাবে আয় করে। অনুসন্ধানে জানা যায়, উত্তরা ১৩ নম্বর সেক্টরের ১১ নম্বর সড়কেই তাদের ৪টি পাঁচতলা বাড়ি ও একটি প্লট রয়েছে। ১১ নম্বর সড়কের ১৬, ৪৭, ৬২ ও ৬৬ নম্বর বাড়িটি তাদের নামে। সড়কের ৪৯ নম্বর প্লটটিও তাদের। মিরপুর পল্লবীর কালশীর ডি-বøকে ৬ শতাংশ জমির একটি, মেরুল বাড্ডায় আছে একটি জমির প্লট। মানিকদি এলাকায় জমি কিনে বাড়ি করেছেন, ঢাকার দক্ষিণখানে আছে ১২ শতাংশ জায়গায় দোতলা বাড়ি। এ ছাড়া আরেকটি বাড়ি আছে অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে। রাজধানী ছাড়াও দেশের বিভিন্ন এলাকায় আছে অন্তত ২৪টি প্লট ও ফ্ল্যাট। দেশে-বিদেশে আছে বাড়ি-মার্কেটসহ অনেক সম্পদ। এসব সম্পদের বাজারমূল্য হাজার কোটি টাকারও বেশি। এত সম্পদ নিয়ে যখন হইচই পড়ে যায় তখনই দুদক অনুসন্ধানে নামে।

গত বছরের ১০ই জানুয়ারি আবজালকে জিজ্ঞাসাবাদ করে দুদক। রুবিনাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১৭ই জানুয়ারি হাজির হতে বলা হলে তিনি সময় চেয়ে আবেদন করেন। তারপর আর তাদের কোনো হদিস পাওয়া যায়নি। তবে, গত ৬ই জানুয়ারি ইমিগ্রেশনে চিঠি দিয়ে আবজাল দম্পতির বিদেশ যাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়। এরপর ১৩ই মার্চ পুলিশের বিশেষ শাখায়ও চিঠি পাঠানো হয়। সে বছর ২২শে জানুয়ারি দুদকের আবেদনে আবজাল-রুবিনার স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি ক্রোক, হস্তান্তর বা লেনদেন বন্ধ এবং ব্যাংক হিসাবগুলোর লেনদেন অবরুদ্ধ (ফ্রিজ) করার আদেশ দেন আদালত। আদালতের আদেশের পর তা গেজেট আকারে প্রকাশ হয়। তবে, ৭ই ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত রুবিনা খানমের মালিকানাধীন রহমান ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল সচল ছিল। দুই সপ্তাহে ওই প্রতিষ্ঠানটিরসহ দম্পতির বিভিন্ন হিসাবে ৪৫ কোটি টাকা লেনদেন হয়। সূত্র জানায়, আত্মগোপনে যাওয়ার আগে আবজাল দম্পতি থাকতেন উত্তরার তামান্না ভিলায়। আবজাল দম্পতি তামান্না ভিলা ছেড়ে যাওয়ার প্রায় দেড় মাস পর ১৮ই মার্চ বাড়ির মূল ফটকের পাশে একটি সাইনবোর্ড লাগানো হয়। এতে সম্পত্তির বিবরণ উল্লেখ করে বলা হয়, ‘ক্রোকাবদ্ধ উক্ত সম্পত্তি কোনোভাবে বা কোনো প্রকারে অন্যত্র হস্তান্তর, উক্ত সম্পত্তি সংক্রান্ত কোনো প্রকার লেনদেন বা উক্ত সম্পত্তিকে কোনোভাবে দায়মুক্ত করা আইনত নিষিদ্ধ।’

আবজাল দম্পতির মামলার এজাহারে যা বলা হয়েছে: গত বছরের ২৬শে জুন দুর্নীতির মাধ্যমে ৩১০ কোটি ৮০ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন ও মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগে এই দম্পতির বিরুদ্ধে আলাদা দুটি মামলা করে দুদক। সংস্থাটির উপ-পরিচালক মো. তৌফিকুল ইসলাম বাদী হয়ে দুদকের ঢাকা জেলা সমন্বিত কার্যালয়-১-এ মামলা দুটি দায়ের করেন। প্রথম মামলা আবজালের স্ত্রী রুবিনা খানমের বিরুদ্ধে। এতে ২৬৩ কোটি ৭৬ লাখ ৮১ হাজার টাকার মানি লন্ডারিংসহ ২৮৫ কোটি ২৭ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়। ৫ কোটি ৯০ লাখ ২৮ হাজার টাকার সম্পদের তথ্য গোপনসহ ৩১ কোটি ৫১ লাখ ২৩ হাজার টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ দুদকের অনুসন্ধানে প্রমাণিত হয়।

আবজালের বিরুদ্ধে ২০ কোটি ৭৪ লাখ ৩২ হাজার টাকা মানি লন্ডারিং এবং ২ কোটি ১ লাখ ১৯ হাজার টাকার সম্পদের তথ্য গোপনসহ ৪ কোটি ৭৯ লাখ ৩৪ হাজার টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদের অভিযোগ আনা হয় মামলায়। মামলার এজাহারে বলা হয়, আবজালের স্ত্রী রুবিনা খানম নিজ নামে ট্রেড লাইসেন্স খুলে তার স্বামীর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহায়তায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অধীন বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের কাজ টেন্ডারের নামে একচেটিয়া হাতিয়ে নেন। প্রারম্ভিক মূলধন ছাড়াই কথিত ব্যবসার আড়ালে বিভিন্ন যন্ত্রপাতি ও সংশ্লিষ্ট মালামাল সরবরাহের নামে অনৈতিক প্রক্রিয়ায় আর্থিকভাবে লাভবান হতে তিনি নানা কৌশলের আশ্রয় নেন। এতে আরো বলা হয়, তিনি স্বামী আবজালের অবৈধ আয়কে বৈধ করার পূর্বপরিকল্পনায় নিজ নামে ও তাদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট রহমান ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল ও রুপা ফ্যাশনের নামে তফসিলি ব্যাংকের ২৭টি হিসাবের মাধ্যমে ২৬৩ কোটি ৭৭ লাখ ৬৪ হাজার টাকা স্থানান্তর, হস্তান্তর ও মানি লন্ডারিং করেন, যা ২০১২ সালের মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের ২(য) ধারায় বর্ণিত সন্দেহজনক অস্বাভাবিক লেনদেন হিসেবে অনুসন্ধানে প্রমাণিত হয়েছে।

এতে বলা হয়, তিনি বিভিন্ন তারিখে এই অপরাধলব্ধ টাকা ব্যাংকে জমা করেন। পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় ওই টাকা উত্তোলন করে তার অবৈধ প্রকৃতি, উৎস, অবস্থান, মালিকানা ও নিয়ন্ত্রণ, গোপন বা ছদ্মাবরণে স্থানান্তর/হস্তান্তর বা রূপান্তরের মাধ্যমে পাচার করেন। এমনকি ক্ষেত্রবিশেষ তিনি ওই অর্থ পাচারের ষড়যন্ত্রও করেন। এ ছাড়া রুবিনা খানম নিজ নামে স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের যে হিসাব দুদকে দাখিল করেন, তাতে তিনি ৫ কোটি ৯০ লাখ ২৮ হাজার টাকার সম্পদের তথ্য গোপন করেন। আর দুদকের অনুসন্ধানে প্রমাণিত হয়, তিনি ৩১ কোটি ৫১ লাখ ২৩ হাজার টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন করেন। এ কাজে তাকে সহায়তার জন্য স্বামী আবজাল হোসেনকেও সহযোগী আসামি করা হয়। অন্যদিকে, আবজালের বিরুদ্ধে ২০ কোটি ৭৪ লাখ ৩২ হাজার টাকা মানি লন্ডারিং এবং ২ কোটি ১ লাখ ১৯ হাজার টাকার সম্পদের তথ্য গোপনসহ ৪ কোটি ৭৯ লাখ ৩৪ হাজার টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদের অভিযোগ আনা হয় মামলায়। সূত্র-মানবজমিন

বিজ্ঞাপন

এ জাতীয় আরো খবর