একেবারেই নতুন এক ভুবনে পা রাখতে চলেছেন তিনি। তবে এখানেও ফেলে আসা জীবনের অনুভূতিই ছুঁয়ে যাবে আব্দুর রাজ্জাককে, ‘এখন খেলব না, কিন্তু খেলার সময় যেমন অনুভূতি হতো, তেমনই হবে। মন-প্রাণ চাইবে, জাতীয় দল যেন ভালো খেলে।’
তবু জাতীয় দলের জন্য অবদান রাখায় অবস্থানগত পার্থক্যের দিকটিও মাথায় আছে সাবেক এই বাঁহাতি স্পিনারের। তিন ফরম্যাট মিলিয়ে ঠিক ২০০টি আন্তর্জাতিক ম্যাচের সমৃদ্ধ ক্যারিয়ার তাঁর। কখনো নিজ সাফল্যের আলোয় দলকে রঙিন করেছেন, আবার কখনো সদলবলে ব্যর্থতার অতলেও ডুবেছেন। সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর লক্ষ্য স্থির করে কখনো সফল হতে পেরেছেন তো কখনো পারেননি। নির্বাচক রাজ্জাকের জন্য সেই পারা বা না পারার জায়গায়টিই নেই, ‘নির্বাচক হিসেবে আপনি নিশ্চয়ই পারফরম্যান্স দেখে দল করবেন। এখন কোনো খেলোয়াড় যদি মাঠে নেমে খারাপ খেলে, আপনি কি ওর জায়গায় খেলে দিয়ে আসতে পারবেন?’
খেলতে তো পারবেনই না, উল্টো দলের ব্যর্থতা নিয়ে হতাশায় চারপাশের পরিবেশ ক্রমেই ভারী হয়ে যেতেও দেখবেন। এখন যেমন আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচক জীবন শুরুর আগেই দেখছেন। মিনহাজুল আবেদীন ও হাবিবুল বাশারের সঙ্গে তৃতীয় নির্বাচকের দায়িত্ব সই-স্বাক্ষর করে বুঝে নেওয়ার আগেই দেশের মাটিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে টেস্ট সিরিজে বিধ্বস্ত মমিনুল হকের দল। তাতে অনেকেই তুলছেন ‘গেল গেল’ রব। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট কাঠামো নিয়ে প্রশাসকদের উদাসীনতাকেও যখন কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হচ্ছে, তখন রাজ্জাক আশার ছবিই দেখাতে চাইছেন। সেটি তাঁর নিজের প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট খেলার টাটকা অভিজ্ঞতা থেকেই। করোনা মহামারিতে সব থমকে যাওয়ার আগে গত বছর ফেব্রুয়ারিতে নিজের সর্বশেষ প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলেছেন সদ্য অবসরে যাওয়া এই ক্রিকেটার। তাতে পূর্বাঞ্চলের বিপক্ষে প্রথম ইনিংসে ১০২ রানে ৭ উইকেট নেওয়া বাঁহাতি স্পিনার সুদীর্ঘ ক্যারিয়ার থেকেই পার্থক্য তুলে ধরলেন, ‘প্রথম যখন জাতীয় ক্রিকেট লিগ খেলি (২০০০-২০০১ মৌসুমে), কেউ একটি ৫০ মারলেই বলা হতো রান করেছে। কেউ একবার ৫ উইকেট পেলেই মনে করা হতো বিরাট কিছু করে ফেলেছে। আর এখন একজনেরই সেঞ্চুরি থাকে চার-পাঁচটি। এর মধ্যে ডাবল সেঞ্চুরিও থাকে। আগে বেশির ভাগ ম্যাচই ড্র হতো। এখন প্রায় প্রতি ম্যাচেই ফল হয়।’
নিজের সর্বশেষ ম্যাচেও রাজ্জাকের দল খেলিয়েছে তিন পেসার। অন্যান্য দলও তা-ই করছে। কারণ উইকেটে ঘাস রাখা হচ্ছে। নিজেদের ফিট রাখার জন্য খেলোয়াড়দের প্রচেষ্টাও মুগ্ধতা কেড়েছে তাঁর, ‘আমরা যখন শুরু করি, তখন কিছু ব্যাপার ছিলই না। এখন যেমন ছেলেদের দেখি, নিজে নিজেই ফিটনেস নিয়ে কাজ করছে। ট্রেনারকে নিয়ে করছে বাড়তি পরিশ্রমও। আমার দলে এসব নিয়ে কাউকে কিছু বলে দিতেও হতো না।’ কাজেই আশাবাদী রাজ্জাক নতুন ভূমিকায় দেখতে চান আরো উন্নতির ছোঁয়াও, ‘এখন যদি কাউন্টি ক্রিকেটের মতো সমান সমান মান চান, তা হবে না। এটিই সত্যি কথা। তাই বলে খেলোয়াড়দের আরো যে উন্নতি করার জায়গা নেই, সেটিও ঠিক না। নির্বাচক হিসেবে সেসবই দেখতে চাইব।’