হিমালয়ের হিমবাহ ধসে ভারতের উত্তরাখণ্ড রাজ্যে প্রায় দেড়শ’ মানুষের মৃত্যুর আশঙ্কা করা হচ্ছে। গতকাল বরফ গলে একটি বাঁধে প্রচণ্ড গতিতে আঘাত করলে এই বিপর্যয়ের সৃষ্টি হয়। এতে সেখানে মুহূর্তের মধ্যে বন্যা সৃষ্টি হয়। ফলে মানুষজন নিরাপদ আশ্রয় খুঁজে নেয়ার সময় পায়নি। এ নিয়ে উত্তরাখণ্ড রাজ্যের মুখ্য সচিব ওম প্রকাশ বলেছেন, এখন পর্যন্ত কত মানুষ মারা গেছেন তা নির্দিষ্ট করে বলা যাচ্ছে না। তবে মৃতের সংখ্যা ১০০ থেকে দেড়শ’ হবে একজন প্রত্যক্ষদর্শী বলেছেন, তিনি মাটি, পাথর আর পানির মিশ্রণের প্রচণ্ড এক গর্জন শুনতে পান। সেদিকে তাকিয়ে দেখেন বিদ্যুৎ গতিতে তা ছুটে আসছে একটি নদী দিয়ে। রাইনি গ্রামের বাসিন্দা সঞ্জয় সিং রানা বলেছেন, এটা এতটা তীব্র গতিতে ছুটে আসছিল যে, কাউকে সতর্ক করার কোনো সময়ই ছিল না।
আমার মনে হয়েছিল, আমাদেরও ভাসিয়ে নিয়ে যাবে।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভাটিতে যে ঋষিগঙ্গা বিদ্যুৎকেন্দ্র রয়েছে, বন্যার প্রথম আঘাতটা সেখানেই লাগে। উত্তরাখণ্ডের স্টেট ডিজ্যাস্টার রেসপন্স ফোর্সের (রাজ্য দুর্যোগ মোকাবিলা বাহিনী) ডিআইজি ঋধিম আগরওয়াল জানান, ওই বিদ্যুৎকেন্দ্রের দেড়শোরও বেশি কর্মীর কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। বিদ্যুৎকেন্দ্রের কর্তৃপক্ষ আমাদের বলেছেন প্রোজেক্ট সাইটে কর্মরত দেড়শোর মতো কর্মীর সঙ্গে তারা যোগাযোগই করতে পারছেন না। চামোলি জেলার ওই অঞ্চলে অনেকগুলো রেলপথ ও সড়ক নির্মাণ প্রকল্পেরও কাজ চলছে। সেখানে যেসব শ্রমিক ও কর্মচারীরা রয়েছেন, তাদের সুরক্ষা নিয়েও প্রবল উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে।
এদিকে, রাজ্যের বিপর্যয় মোকাবিলা টিমের দুইশ’ কর্মী সেখানে উদ্ধার অভিযান পরিচালনা শুরু করেছেন। ভারতের জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর (এনডিআরএফ)-র পাঁচটি দলও ঘটনাস্থলে পৌঁছে গেছে, যার চারটি গেছে দিল্লি থেকে, আর একটি দেরাদুন থেকে। ইন্দো-টিবেটান বর্ডার পুলিশ নামে ভারতের যে সীমান্তরক্ষী বাহিনী চীন-লাগোয়া ওই অঞ্চলটিতে প্রহরার কাজে মোতায়েন, তাদেরও দুটো দল বন্যা বিপর্যস্ত এলাকায় তল্লাশি ও উদ্ধারের কাজ করছে।
উল্লেখ্য, উত্তরের বেশকিছু জেলায় উচ্চ সতর্কতা দিয়েছে ভারত। স্থানীয় পর্যায়ের লোকজন যে ফুটেজ শেয়ার করেছেন তাতে দেখা যাচ্ছে পানির সর্বগ্রাসী রূপ একটি ড্যামে প্রচণ্ড জোরে আঘাত করে তা ভাসিয়ে নেয়। সেই সঙ্গে এর সামনে যা পড়েছে তাই ভাসিয়ে নিয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, একটি ছোট্ট ড্যামের দিকে পানির তোড় বাড়ছে। একপর্যায়ে তা নির্মাণসামগ্রী ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী ত্রিবেন্দ্র সিং রাওয়াত বলেছেন, আলোকনন্দা নদীতে নন্দপ্রয়াগ এলাকায় পানির স্রোত সাধারণ পর্যায়ে থাকে। কিন্তু এখন সেখানে স্বাভাবিকের চেয়ে এক মিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে পানি। আস্তে আস্তে তা কমে আসছে।