ব্রাহ্মণবাড়িয়া নাসিরনগর উপজেলা সাবরেজিস্ট্রার মিজহারুল ইসলাম ঘুষ ছাড়া কোনো কাজ করেন না বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত ২৬ আগস্ট ১২ জন ভুক্তভোগী জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগে ঘুষ আদায়ের ৪০টি খাত ও ঘটনার কথা উল্লেখ করেছেন।
এই অভিযোগের কপি আইনমন্ত্রীসহ বিভিন্ন দপ্তরে পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া ভুক্তভোগীদের মধ্যে মো. আহাম্মদ হোসেন নামের এক ব্যক্তি সাবরেজিস্ট্রারের অনিয়ম-দুর্নীতির বিষয়ে জেলা রেজিস্ট্রারের কাছে ২৩ আগস্ট পৃথক অভিযোগ দেন।
জেলা প্রশাসকের কাছে দেওয়া অভিযোগের ১৮ নম্বরে লেখা হয়, প্রতিটি দলিলের জন্য দলিল লেখককে আলাদাভাবে চুক্তি করতে হয়। খাসকামরায় দলিল লেখকদের ডেকে নিয়ে মাস্টার রোলের কর্মচারী সাইফুল ইসলামের মাধ্যমে টাকা আদায় করেন সাবরেজিস্ট্রার। এ সময় এ লিখলে এক হাজার, বি লিখলে দুই হাজার, সি লিখলে তিন হাজার, এভাবে ক্রমান্বয়ে টাকার অঙ্ক বোঝানো হয়।
৩৯ নম্বর অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, প্রতি মাসে স্থানীয় সংসদ সদস্যকে (এমপি) তিন লাখ টাকা দিতে হয় উল্লেখ করে ঘুষের পরিমাণ বাড়িয়ে দেওয়া হয়। দলিল লেখক মো. সালাহ উদ্দিন এমপি ‘সৎ মানুষ’ উল্লেখ করে প্রতিবাদ করায় তাঁর বিরুদ্ধে থানায় তিনটি সাধারণ ডায়েরি করানো হয়।
অভিযোগে আরো উল্লেখ করা হয়, ২০১৯ সালের ১ আগস্ট সাবরেজিস্ট্রার মিজহারুল যোগদানের পর দলিলের নকল বা সার্টিফায়েড কপি তুলতে সরকার নির্ধারিত ফি ২৭০ টাকার বদলে দেড় হাজার টাকা গুনতে হয়। সাফকবলা দলিলের মূল্য এক হাজার থেকে এক লাখ টাকা পর্যন্ত হলে সরকারি ফির বাইরে সেরেস্তা বাবদ আড়াই হাজার টাকা ঘুষ দিতে হয়। আর যদি দলিলের মূল্য এক লাখ বা অধিক হয়, তাহলে প্রতি লাখে ৩০০ টাকা করে বেশি দিতে হয়। মুসলিম সম্প্রদায়ের হেবা ঘোষণা দলিলের মূল্য যতই হোক না কেন সরকারি ফি ৬৫০ টাকা। কিন্তু এক হাজার থেকে এক লাখ টাকা পর্যন্ত হলে তিন হাজার ৩০০ টাকা সেরেস্তা বাবদ ঘুষ দিতে হচ্ছে সেবাগ্রহীতাদের। আর এক লাখ টাকার বেশি মূল্য হলে প্রতি লাখে অতিরিক্ত আরো ৩০০ টাকা করে নেওয়া হয়ে থাকে। একইভাবে হিন্দু সম্প্রদায়ের দানের ঘোষণা দলিল মূল্যের ওপর সরকার নির্ধারিত ফিও ৬৫০ টাকা। কিন্তু এক হাজার থেকে এক লাখ টাকা পর্যন্ত হলে তিন হাজার ৩০০ টাকা সেরেস্তা বাবদ ঘুষ দিতে হয়। এ ছাড়া এক লাখ টাকার অধিক মূল্য হলে প্রতি লাখে দিতে হয় অতিরিক্ত আরো ৩০০ টাকা। বিনিময় দলিল করতে ব্যাংক চালানের পরও অতিরিক্ত চার-পাঁচ হাজার টাকা ঘুষ দিতে হচ্ছে সাবরেজিস্ট্রারকে।
সাবরেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে অভিযোগকারীদের একজন নাসিরনগর উপজেলা সদরের বাসিন্দা মিহির দেব জানান, চার-পাঁচ মাস তিনি একটি বাড়ির দলিল করতে গেলে সাবরেজিস্ট্রার মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করেন। পরে ২০ হাজার টাকা ঘুষ দিয়ে তিনি দলিল করেন।
আরেক অভিযোগকারী দলিল লেখক মো. সালাহ উদ্দিন বলেন, ‘দুর্নীতির প্রতিবাদ করায় আমার লাইসেন্স বাতিলের জন্য অন্য দলিল লেখকদের কাছ থেকে জোর করে স্বাক্ষর নিয়েছেন সাবরেজিস্ট্রার। স্বাক্ষর না দিলে কারো দলিল রেজিস্ট্রি করবেন না বলে হুমকি দেন।’
অভিযোগ দায়ের হওয়ার পর থেকে মিজহারুল ইসলাম গণমাধ্যমকর্মীদের এড়িয়ে চলছেন। পরিচিত কারো ছাড়া ফোন ধরছেন না। বুধবার বিকেলে কল করে ওয়েটিং পাওয়া গেলেও তিনি পরে ফোন ধরেননি। তবে এক সংবাদকর্মীর কাছে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে তদন্তসাপেক্ষ সত্য লেখার আহ্বান জানিয়েছেন।