আজ ৭ জুন ঐতিহাসিক ছয় দফা দিবস। বাংলাদেশের স্বাধীনতাসংগ্রামের ইতিহাসে দিনটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।
এই দিনে তৎকালীন পাকিস্তানে বাঙালির মুক্তির সনদ ছয় দফা আদায়ের লক্ষ্যে আওয়ামী লীগের ডাকা হরতাল চলাকালে নিরস্ত্র জনতার ওপর পুলিশ ও তৎকালীন ইপিআর গুলি চালায়। এতে বহু মানুষ হতাহত হয়। এরপর ছয় দফার আন্দোলন সারা বাংলায় ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে, পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে একাট্টা হয় এ দেশের জনগণ। ছয় দফার পথ ধরেই ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে অর্জিত হয় স্বাধীনতা।
দিবসটি বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সংগঠনসহ সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করবে। তবে করোনা পরিস্থিতির কারণে জনসমাগমপূর্ণ কর্মসূচি পরিহার করা হবে।
পাকিস্তানি শোষণ-বঞ্চনা থেকে মুক্তির লক্ষ্যে স্বৈরাচার আইয়ুব সরকারের বিরুদ্ধে ১৯৬৬ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি লাহোরে তৎকালীন পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের সব বিরোধী রাজনৈতিক দলকে নিয়ে ডাকা এক জাতীয় সম্মেলনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছয় দফা দাবি উত্থাপন করেন। পরে ১১ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় ফিরে তিনি ছয় দফার পক্ষে দেশব্যাপী প্রচারাভিযান শুরু করেন। বাংলার সর্বস্তরের জনগণের মাঝে ছয় দফা ব্যাপক সমর্থন পায়। বিষয়টি আঁচ করতে পেরে ১৯৬৬ সালের ৮ মে বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে ঢোকায় পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী। ৭ জুন আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে সারা দেশে হরতাল আহ্বান করা হয়। এই হরতাল পালনকালে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গুলিতে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে মনু মিয়া, সফিক, শামসুল হকসহ ১১ জন শহীদ হন। এর প্রতিক্রিয়ায় মানুষ রাজপথে নেমে আসে।
ছয় দফাভিত্তিক ১১ দফা আন্দোলনের পথপরিক্রমায় সংঘটিত হয় ঊনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান। পরে ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে বাংলার জনগণ আওয়ামী লীগের পক্ষে একচেটিয়া রায় দেয়। কিন্তু পাকিস্তানি শাসকরা জনরায় মেনে ক্ষমতা হস্তান্তর না করায় ১৯৭১ সালের মার্চে বঙ্গবন্ধু অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেন। এরই ধারাবাহিকতায় মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করে।