করোনা প্রতিরোধে টানা ৬৬ দিন বন্ধ থাকার পর জীবিকা সচল রাখার প্রয়োজনে খুলে দেওয়া হয়েছে সরকারি-বেসরকারি সব প্রতিষ্ঠানই। এদিকে করোনা রোধে বেসরকারি অনেক সংস্থাই কর্মীদের কোভিড-১৯ টেস্ট করে আনার বাধ্যবাধকতা যোগ করেছে। আবার সাধারণ চিকিৎসার জন্যও এখন হাসপাতালগুলো রোগী ভর্তি হতে গেলেই করোনা নেগেটিভ সার্টিফিকেট চায়। এই সুযোগ কাজে লাগে দেশের অনেক জায়গায় করোনা নেগেটিভের জাল সার্টিফিকেট বিকিকিনি চলছে।
গত এক সপ্তাহে করোনার সার্টিফিকেট জাল করে এরকম কয়েকটি চক্রের সদস্যদের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী গ্রেপ্তার করেছে। তাদের কাছ থেকে জাল সার্টিফিকেটও উদ্ধার করা হয়েছে। এই চক্রগুলো করোনা নেগেটিভ এবং পজেটিভ দুই ধরনের জাল সার্টিফিকেটই তৈরি করে চাহিদা অনুযায়ী। তকে নেগেটিভ সার্টিফিকেটের চাহিদা বেশি।
প্রায় সব হাসপাতালগুলো রোগী ভর্তি হতে গেলেই বর্তমানে করোনা নেগেটিভ সার্টিফিকেট চায়।এ ছাড়া রোগী ভর্তি তো দূরের কথা অনেক সময় চিকিৎসাই দিতে চায়না তারা। এর বাইরে কর্মস্থল, পোশাক কারখানা এবং ভ্রমণের জন্য করোনা নেগেটিভ সার্টিফিকেট অনেকটা বাধ্যতামূলক হয়েছে। কিন্তু সাধারণভাবে করোনা টেস্ট এখানে সময় সাপেক্ষ এবং উপসর্গ ছাড়া পরীক্ষা করানো কঠিন। আর এই সুযোগ নিচ্ছে প্রতারক চক্র। তারা বিভিন্ন হাসপাতাল, করোনা টেস্টিং সেন্টারের সিল, চিকিৎসকের নাম, সাক্ষর এবং করোনা সার্টিফিকেটের স্টাইল জাল করে ভুয়া সার্টিফিকেট দিচ্ছে। তারা শুধু নেগেটিভ নয়, পজেটিভ সার্টিফিকেটও দিচ্ছে। পজেটিভ সার্টিফিকেট নিয়ে কেউ কেউ আবার অফিসে না গিয়ে বাসায় ছুটি কাটানোসহ নানা সরকারি সুবিধা নিচ্ছেন। ঢাকা শহরে এইসব সার্টিফিকেট বিক্রি হচ্ছে পাঁচ থেকে সর্বোচ্চ সাত হাজার টাকা।
ঢাকাসহ জেলা শহরের হাসপাতালগুলোকে কেন্দ্র করেই এই চক্র সবচেয়ে বেশি তৎপর। তারা হাসপাতাল এলকা থেকেই প্রধানত জাল সার্টিফিকেট ক্রেতাদের টার্গেট করে। এছাড়া পোশাক কারখানা এলাকায়ও তাদের তৎপরতা আছে।
ঢাকার ব়্যাব-৩ এর সদস্যরা সোমবার বিকেলে মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এলাকা থেকে করোনা সার্টিফিকেট জালকারী এইরকম একটি চক্রের চার সদস্যকে আটক করেছে। তারা হলো: ফজল হক, মো. শরিফ হোসেন, মো. জামশেদ ও মো. লিয়াকত আলী । তাদের কাছ থেকে করোনার বেশ কিছু জাল সার্টিফিকেট, দুইটি কম্পিউটার, দুইটি প্রিন্টার ও দুইটি স্ক্যানার উদ্ধার করেছে র্যাব। ওই চক্রটি এরইমধ্যে করোনার দুই শতাধিক জাল সার্টিফিকেট বিক্রির কথা স্বীকার করেছে।
ব়্যাব-৩ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল রকিবুল হাসান জানান, এখন যারা জরুরি প্রয়োজনে দেশে বাইরে যান তারাও এই জাল নেগেটিভ সার্টিফিকেট কেনেন। এই জালিয়াত চক্র হাসপাতাল ও টেস্টিং সেন্টার এলাকা ছাড়াও অনলাইনে তৎপর। তারা অনলাইনে করোনা সার্টিফিকেটের নানা ধরনের অফার দেয়।
এই ধরনের চক্র শুধু ঢাকায় নয়, ঢাকার বাইরেও তৎপর বলে জানান তিনি। ঢাকায় এই সার্টিফিকেট জরুরি ভিত্তিতেও বিক্রি হয়। দাম পড়ে বেশি। এর আগে ৬ জুন সাভার এলাকা থেকে আটক করা হয় দুইজনকে। তারা পোশাক শ্রমিকদের কাছে করোনা নেগেটিভ ও পজেটিভ সার্টিফিকেট বিক্রি করে আসছিলো। পোশাক কারখানার শ্রমিকরা করোনা পজেটিভ হলে তাদের কোয়ারিন্টেনে পাঠানো হয়। কোয়ারিন্টিনের সময় তারা বেতন নাও পেতে পারেন এই ভয়ে কোনো কোনো পোশাক শ্রমিক প্রতারকদের কাছ থেকে জাল সার্টিফিকেট কেনেন। আবার করোনা হলে চাকরি হারানোর ভয়ও আছে।
বাংলাদেশে করোনার প্রাথমিক পর্যায়ে মার্চ মাসের দিকে বিদেশ থেকে আসা যাত্রীদের কাছে বিমানবন্দরে করোনা নেগেটিভ সার্টিফিকেট বিক্রির অভিযোগ ছিলো। জাল নয়, টাকার বিনিময়ে আসল সার্টিফিকেট বিক্রিরই অভিযোগ ওঠে তখন। যাত্রীরা বাধ্যতামূলক কোয়ারিন্টিন এড়াতে বিমানবন্দরে দায়িত্বরত অসাধু কর্মকর্তাদের কাছ থেকে টাকার বিনিময়ে এই সার্টিাফিকেট নিতেন বলে অভিযোগ।