ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ থানায় কর্মরত পুলিশ কর্মকর্তা শ্রীবাসের জ্বর, সর্দি, কাশি দেখা দিলে করোনা নমুনা দেন। তবে ফলাফল আসে নেগেটিভ। কিন্ত তাঁর শারিরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকে। চিকিৎসা করাতে গিয়ে আবার নমুনা দিলে করোনা পজিটিভ আসে। কিন্তু উপসর্গ থাকাকালে শুরুতে ফলাফল নেগেটিভ আসায় তিনি পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে অনেকেরই সংস্পর্শে এসেছেন।
উপসর্গ না থাকলেও দাপ্তরিক কাজ করতে গিয়ে অনেকের সংস্পর্শে আসায় সন্দেহ প্রবণ হয়ে নমুনা দেন জেলার আখাউড়া উপজেলার বেশ কয়েকজন সরকারি কর্মকর্তা। গত ৩ জুন নমুনা দেওয়ার পর ১২ জুন আসা ফলাফলে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নূরজাহান বেগম ও মৎস অফিসের ক্ষেত্র সহকারি ঝুমন দাসের পজিটিভ আসে। উপসর্গ না থাকায় ওই দুই কর্মকর্তাই ফলাফল আসার মাঝখানের সময়টাতে অনেকের সংস্পর্শে আসেন। ক্ষেত্র সহকারি তো মৎস্য চাষিদের ট্রেনিংও করিয়েছেন।
ফলাফল নিয়ে মজার ঘটনা ঘটেছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌর ছাত্রলীগ সাংগঠনিক সম্পাদক মো. তৌহিদুল ইসলামের বেলায়। ওই যুবক গত ৩ জুন সদর হাসপাতালে ফরম পূরণ করে জমা দিলে পরদিন নমুনা দিতে বলা হয়। তবে ব্যস্ততার কারণে তিনি নমুনা দিতে পারেননি। এ অবস্থায় গত ৯ জুন আসা ফলাফলে তার পজিটিভ আসে এবং ফোন করে জানানো হয় যেন তিনি আইসোলেশনে থাকেন।
এমন ‘তালগোল’ আর দেরিতে আসা ফলাফলে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ঝুঁকি আর আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে চলছে। গত দুই সপ্তাহ ধরে হু হু করে বেড়েছে আক্রান্তের সংখ্যা। শুক্রবার আসা ফলাফলে একদিনে সর্বোচ্চ ৫৩ জনের পজিটিভ আসে। ওই দিন নাগাদ জেলায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৪০৬ জন। মারা গেছেন ৬ জন।
এপ্রিল ও মে মাসে যেখানে ১২১ জনের করোনা পজিটিভ আসে সেখানে এ মাসের প্রথম ১২ দিনে ২৮৫ জনের পজিটিভ আসে। শুক্রবার নাগাদ জেলায় ৬ হাজার ৫৮৫ জনের নমুনা নেওয়া হয়। এর মধ্যে ফল আসে ৫ হাজার ৪১৩ জনের। আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় রোগীদের প্রাতিষ্ঠানিক আইসোলেশনে দেওয়া যাচ্ছে না। বর্তমানে মাত্র ৪৩ জন প্রাতিষ্ঠানিক ও ২৭৯ জন নিজ বাড়িতে আইসোলেশনে আছেন।
গত এক সপ্তাহে তুলনামূলকভাবে রোগী বেড়ে যাওয়ায় সংশ্লিষ্টরা বিষয়টি নিয়ে ভাবতে শুরু করেছেন। ইতিমধ্যেই অধিক করোনা আক্রান্ত থাকা কসবা পৌরসভার তিনটি এলাকাকে লকডাউন করা হয়েছে। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে একটি মার্কেট। নবীনগর পৌর এলাকাতেও কঠোরতা অবলম্বন করে কিছু নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভার একাধিক এলাকাকেও লকডাউনের চিন্তাভাবনা চলছে।
এদিকে তালগোল ফলাফলের জন্য মানুষের মাঝে বিভ্রান্তি বাড়ছে। অনেকে ফলাফল নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে ফলাফল দেরিতে আসার জন্য সংশ্লিষ্টদেরকে দায়ী করে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি তুলেছেন।
এদিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে করোনা পরীক্ষার জন্য পিসিআর ল্যাব স্থাপন কাজ শেষে পরীক্ষামূলক কার্যক্রম শুরু হয়েছে। আগামী ২০ জুন বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় তিন হাজার ৫০০ টাকায় সেখানে করোনার পরীক্ষা করানো যাবে। দাবি উঠেছে দ্রুতই ওই হাসপাতালে সরকারিভাবে কিট সরবরাহ করা হলে অনেক কম খরচে পরীক্ষা করানো যাবে। সরকারি কিট পেলে ৩০০-৪০০ টাকায় পরীক্ষা করানোর ব্যাপারে রাজি আছেন মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ।
করোনা পরীক্ষার ফলাফল প্রসঙ্গে এক সংবাদকর্মী জানান, উপসর্গ দেখা দিলে তিনি পরীক্ষা করালে ফলাফল নেগেটিভ আসে। পরবর্তীতে ওনার স্ত্রীর উপসর্গ দেখা দিলে ফলাফল ঠিকই পজিটিভ আসে। বিষয়টি নিয়ে তাঁরা বিভ্রান্তিতে পড়ে যান।
জেলা করোনা নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কমিটির সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আল-মামুন সরকার বলেন, করোনার নমুনা পরীক্ষার ফলাফল তাড়াতাড়ি আনার বিষয়ে সভাতে তাগাদা দেওয়া হয়। দ্রুত ফলাফল আনা গেলে অনেক দিক থেকেই সুবিধা হবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরো বলেন, বেসরকারি হাসপাতালে দ্রুত কিট সরবরাহের পাশাপাশি যদি সদর হাসপাতালে পিসিআর ল্যাব স্থাপন করা যায় তাহলে ফলাফল নিয়ে যে সমস্যা আছে সেটা কাটিয়ে ওঠা যাবে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া মেডিক্যাল কলেজের চেয়ারম্যান ডা. মো. আবু সাঈদ বলেন, আমার এখানে সরকারি কিট সরবরাহ করা হলে ৩০০-৪০০ টাকার মধ্যে পরীক্ষা করাতে পারবো। প্রতিদিন অন্তত ৩০০ জনের পরীক্ষা করানো সম্ভব হবে আমার এখানে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সিভিল সার্জন ডা. মো. একরাম উল্লাহ জানান, জেলা সদরসহ ৯ উপজেলা থেকে নমুনা এনে এক সঙ্গে করে ঢাকায় পাঠানো হয়। ঢাকার দুইটি পৃথক ল্যাবে পরীক্ষার পর ফলাফল আসতে কিছুটা দেরি হয়। বিষয়টি নিয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছি। তিনি জানান, উপসর্গ নেই কিংবা করোনা আক্রান্তের সংস্পর্শে আসেননি এমন লোকজনও সন্দেহবশত নমুনা দিচ্ছেন বলে চাপ বেড়ে যাচ্ছে। তবে নমুনা নেওয়ার সময় প্রত্যেককেই হোম কোয়ারেন্টিনে থাকার জন্য বলে দেওয়া হয়।