কোরবানি ঈদের পর স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় দেশে করোনা সংক্রমণ ফের বেড়ে যাওয়ার প্রভাব হাসপাতালগুলোতে পড়েছে। ঈদের আগেও যে হাসপাতালগুলোতে করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা কম ছিল, তেমন কয়েকটি হাসপাতালে এখন আবার ধীরে ধীরে রোগী বাড়ছে।
গেল তিন দিনের সরকারি হিসাব ঘেঁটে দেখা যায়, গত মঙ্গলবার সারা দেশে করোনা রোগীর ভর্তিসংখ্যা ছিল চার হাজার ১২১ এবং ও বেড খালি ছিল ১১ হাজার ১৪৭টি, বুধবারের হিসাবে রোগী ভর্তি ছিল চার হাজার ২৫৭ জন ও বেড খালি ছিল ১১ হাজার ১৩টি এবং সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টার হিসাবে গতকাল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যানুসারে রোগী ভর্তি ছিল চার হাজার ৩৪৮ জন এবং বেড খালি ছিল ১০ হাজার ৯২২টি। অর্থাৎ ধারাবাহিকভাবে তিন দিন ধরে হাসপাতালে রোগী বেড়েছে। কমেছে খালি বেডের সংখ্যা। সেই সঙ্গে রোগীদের হয়রানি ও বিড়ম্বনাও বেড়েছে। তবে শুধু রোগীই নয়, চিকিৎসক, নার্স ও অন্য স্বাস্থ্যকর্মীদের ওপরও এর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। সেই সঙ্গে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত অনুসরণ করতে গিয়ে মারাত্মক ঝুঁকি ও হয়রানির মধ্যে পড়েছেন চিকিৎসাযোদ্ধারা। এত দিন শুধু চিকিৎসকরা আক্রান্ত হলেও তারা বাসার বাইরে সরকারের ব্যবস্থাপনায় হোটেলে কোয়ারেন্টিনে থাকার সুবাদে পরিবার নিরাপদে ছিল। কিন্তু এখন হোটেলে থাকার ব্যবস্থা বাতিল হওয়ায় হাসপাতালে ডিউটি করেই তাঁরা যাচ্ছেন বাসায়। ফলে পরিবারের সদস্যদেরও আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেড়েছে। এরই মধ্যে করোনা বিশেষায়িত কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের দুই চিকিৎসক পরিবারের দুই সদস্য করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন বলে জানিয়েছেন তাঁদের সহকর্মীরা।
অন্যদিকে কোরবানির আগেই করোনা বিশেষায়িত হাসপাতালের তালিকা এক দফা ছোট করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এবার আরো কয়েকটি হাসপাতালে বন্ধ হচ্ছে করোনা রোগীদের ভর্তির সুযোগ। এর মধ্যে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, মিরপুর লালকুঠিও রয়েছে। যে হাসপাতালগুলোয় এখনো পুরোনা রোগীরা যেমন ভর্তি রয়েছে, আবার প্রতিদিনই নতুন রোগী ভর্তি হচ্ছে বিভিন্ন সংখ্যায়। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেকও গতকাল বলেছেন, কিছু করোনা হাসপাতাল কমানো হবে।
যদিও গতকাল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানার দেওয়া তথ্যানুসারে শুধু ঢাকার বাইরেই নয়, গতকাল ঢাকার কমপক্ষে ১০টি হাসপাতালেই আগের দিনের চেয়ে ভর্তি রোগীর সংখ্যা বেড়েছে।
গতকাল শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ঘুরে করোনা ইউনিটের বেশির ভাগ বেডেই রোগী দেখা যায়, যাদের মধ্যে কারো কারো অক্সিজেন লাগানো ছিল। অক্সিজেন লাগানো এক রোগীর স্বজন সুলতানা ইয়াসমিন বলেন, ‘আমার ভাইয়ের পাঁচ দিন ধরে জ্বর-কাশি, দুই দিন আগে শ্বাসকষ্ট দেখা যায়। বুধবার শ্বাসকষ্ট বেশি হওয়ায় এই হাসপাতালে নিয়ে আসি। এখন তার অক্সিজেন ছাড়া চলছে না। সেচুরেশনও ৮৮-৯০ এর মধ্যে উঠানামা করছে।’
শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. উত্তম কুমার বড়ুয়া বলেন, ‘আমাদের এখানে ১৭৪টি করোনা বিশেষায়িত সাধারণ বেড রয়েছে। এর মধ্যে এখন ভর্তি আছে ১৩১ করোনা রোগী। গত ২৪ ঘণ্টায় ভর্তি হয়েছে ১৮ জন। এ ছাড়া ১০টি আইসিইউ বেডের মধ্যে ৯টিতেই রোগী রয়েছে। ডা. উত্তম আরো বলেন, ‘আমাদের চিকিৎসকদের জন্য এখন পর্যন্ত কোনো ডরমেটরি পাইনি। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে যে ছয়টি ডরমেটরির কথা বলা হয়েছিল সেগুলোতে যোগাযোগ করেও খালি পাইনি। ফলে চিকিৎসকরা এখন ভয়ে আছেন তাঁদের স্বজনদের সুরক্ষা নিয়ে।’
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল) ডা. ফরিদ উদ্দিন মিয়া বলেন, রোগী কমে যাওয়ায় কয়েকটি হাসপাতাল কমানো হবে, তবে এখনো তালিকা করা হয়নি।
এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হাসপাতাল শাখার পরিচালক বলেন, ‘ডরমেটরির সমস্যা হচ্ছে। অনেকে সিট পাচ্ছে না সেটা আমরা জেনেছি। যদিও এখনো নতুন কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।’