রাজধানীর মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বিভিন্ন ধরনের সংস্কারের জন্য ২০২২-২৩ অর্থবছরে দরপত্রের মাধ্যমে মোট ২৭টি কার্যাদেশ দিয়েছিল গৃহায়ন ও গণপূর্ত অধিদপ্তর। এর মধ্যে ১৫টি কাজই সম্পন্ন না করে পুরো বিল তুলে নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
সংশ্লিষ্ট কাজের দায়িত্বে থাকা গণপূর্তের নির্বাহী প্রকৌশলী সাইফুজ্জামান চুন্নুর যোগসাজশে এসব কাজ না করেই বিল তুলে নেওয়া হয়েছে বলে মুগদা জেনারেল হাসপাতাল ও গণপূর্ত অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে।
এসব কাজের তদারকির দায়িত্বে থাকা গণপূর্তের নির্বাহী প্রকৌশলী সাইফুজ্জামান চুন্নুর কাছে অভিযোগ সম্পর্কে জানতে তার মুঠোফোনে কল করলে তিনি তার অফিসে যেতে বলেন। তার সঙ্গে দেখা করতে গণপূর্ত অধিদপ্তরে গেলেও সাক্ষাৎ পাওয়া যায়নি। এরপর তাকে একাধিকবার কল করলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।
তবে, সরেজমিন গণপূর্ত অধিদপ্তরের বিভিন্ন জনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নির্বাহী প্রকৌশলী সাইফুজ্জামান চুন্নু গণপূর্তের প্রায় সব বদলি বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ করেন একাই। এসব অবৈধ কাজ করে চুন্নু কোটি কোটি টাকার মালিক বনেছেন। তার গ্রামের বাড়ি পটুয়াখালী সদর উপজেলায়। বাবা আবদুস সালাম মৃধা পটুয়াখালী সদর উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি এবং জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য।
গণপূর্তের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী (সিভিল) মিহির কান্তির কাছে কাজ না করেও বিল তুলে নেওয়ার পাশাপাশি সিভিল ওয়ার্ক করা সব ঠিকাদারের তালিকা চাইলে তিনি সেটা দিতে অস্বীকৃতি জানান। তবে ঠিকাদাররা দরপত্রের চাহিদামত সব কাজ সম্পন্ন করেছেন বলে জানান তিনি। গণপূর্ত ও মুগদা হাসপাতালের একটি ‘বিশেষ গ্রুপ’ উদ্দেশ্যপূর্ণভাবে এসব ছড়াচ্ছে বলেও জানান মিহির।
মুগদা হাসপাতালের পরিচালকের দেওয়া চিঠি বিষয়ে জানতে চাইলে ‘আমি এই চিঠির বিষয়ে অবগত নই’ বলে তিনি কল কেটে দেন।
এদিকে, ২৭টি কাজের মধ্যে ১৫টি সম্পন্ন না করে ঠিকাদাররা তাদের কাজের প্রত্যয়নপত্র চাচ্ছেন মর্মে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সিনিয়র সচিবকে ৮ নভেম্বরে পাঠানো এক চিঠিতে অবগত করেছেন মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ডা. মো. নিয়াতুজ্জামান।
সিনিয়র সচিবকে দেওয়া হাসপাতাল পরিচালকের চিঠিতে বলা হয়, ২০২২-২৩ অর্থবছরে গণপূর্ত অধিদপ্তর কর্তৃক দরপত্র চাওয়া ২৭টি কাজের প্রত্যয়নপত্রের জন্য কাগজপত্র দাখিল করা হলেও তার মধ্যে ১৫টি দাখিলকৃত কার্যাদেশ অনুযায়ী কাজ সম্পাদন করা হয়নি। গণপূর্ত অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট বিভাগকে বারবার বলার পরও তারা নির্মাণ ও সংস্কার কাজ সঠিকভাবে সম্পন্ন করছে না।
৬ সদস্যের কমিটির এক সদস্য এবং মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক ডা. আনিছুর রহমান বলেন, ঠিকাদাররা কাজ শেষ করেছে জানালে আমরা কমিটির ৬ সদস্য সরেজমিন পরিদর্শনে গিয়ে যা যা দেখেছি এবং যেসব তথ্য পেয়েছি, তা হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ডা. মো. নিয়াতুজ্জামান স্যারকে লিখিতভাবে জানিয়েছি।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২৭টি সংস্কার কাজের জন্য আলাদা আলাদা কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে। যার ১৫টি কাজ সুষ্ঠুভাবে শেষ না করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের সব কাজ শেষ হয়েছে, এই মর্মে প্রত্যয়নপত্র চেয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে কাগজপত্র দাখিল করেছে। তবে হাসপাতালের কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে গঠিত ছয় সদস্যের কমিটির সরেজমিন পরিদর্শন প্রতিবেদনে কাজ না করার বিষয়টি উঠে এসেছে। এতে উল্লেখ করা হয়, ১৫টি প্রতিষ্ঠান তাদের কাজ সম্পন্ন করেনি। যার কারণে তাদের প্রত্যয়নপত্র দেওয়া হয়নি।
কাজ সম্পন্ন না করে বিল তুলে নেওয়া এবং প্রত্যয়নপত্র চাওয়া প্রসঙ্গে মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ডা. মো. নিয়াতুজ্জামান বলেন, কাজের দরপত্র যেমন আমরা দিইনি, তেমনি কাজের বিলও আমরা পরিশোধ করিনি। সেটা গণপূর্ত করেছে। তবে দরপত্র অনুযায়ী কাজ শেষ হয়েছে- এই মর্মে ঠিকাদাররা আমাদের কাছে প্রত্যয়নপত্র চান। এসব ক্ষেত্রে কাজ ঠিকমত সম্পন্ন হয়েছে কি না, সে বিষয়ে মতামত দিতে হয়। কাজের সর্বশেষ অবস্থা জানানোর জন্য আমাদের একটি কমিটি রয়েছে। ওয়ার্ক অর্ডার এবং বাস্তব কাজ দেখে তারা মতামত দেন। কমিটির মতামতের আলোকে লিখিতভাবে মন্ত্রণালয়কে আমরা মতামত জানিয়েছি।