বরিশালে করোনা সংকটের এই সময়ে কোরবানির গরুর চাহিদা ও দাম কমার শঙ্কায় রয়েছেন খামারিরা। গত বছরের চেয়ে গরু ও খামারের সংখ্যা এবং গো-খাদ্যের মূল্য বৃদ্ধি পেলেও বাড়েনি গরুর চাহিদা। পাশাপাশি করোনা সংক্রমণের ভয়ে হাটে ক্রেতা কমবে। এ অবস্থায় গরু বিক্রি নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন খামারিরা।
খামারিরা জানান, গরু লালন-পালন করতে গিয়ে বিগত বছরের চেয়ে সব পণ্যের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে কয়েক গুণ। সেই অনুযায়ী গরুর দামও বেশী হওয়ার কথা। কিন্তু করোনা পরিস্থিতির কারণে কোরবানিতে পশুর দামও বৃদ্ধি না পেলে এবং বাজারে ক্রেতা সংকট থাকলে লোকসান গুনতে হবে খামারিদের।
বরিশালের উজিরপুর উপজেলার সরদার ফার্মের স্বত্ত্বাধিকারী গিয়াস উদ্দিন সরদার বলেন, করোনার কারণে গত ৪ মাস ধরে গো-খাদ্যের দাম অনেকটাই চড়া রয়েছে। সেই হিসেবে পশু পালনে গত ৪ মাসে খরচও বেড়েছে। আর সেই খরচ মিলিয়ে পশুর দামও কোরবানিতে কিছুটা বাড়াতে হবে। আর সেই দর না পেলে লোকসান গুনতে হবে খামারিদের।
তিনি জানান, আগে যে খৈলের দাম ছিল ৩০ থেকে ৩২ টাকা। করোনাকালে তা কিনতে হচ্ছে ৩৮-৩৯ টাকায়, পরিবহন খরচসহ প্রতি মন ভুট্টার দাম ছিল সাড়ে সাতশত থেকে আটশত টাকায়। এখন প্রতি ভুট্রা পরিবহন খরচ বাদে কিনতে হচ্ছে নয়শত টাকায়। দেড়শত থেকে দুইশত টাকার ভূসি কিনতে হচ্ছে আড়াইশত টাকায়। জীবাণু ও রোগমুক্ত রাখতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে পরিচর্যা করতে গিয়ে খামারে পরিচ্ছন্নতা খরচও বেড়ে হয়েছে দ্বিগুণ।
খামারি সাদ্দাম হোসেন সুমন বলেন, কোরবানীকে সামনে রেখে প্রতি বছর ৫০-৬০ গরু পালন করি। কোরবানীর একমাস আগেই বলতে গেছে গরুগুলো বিক্রী হয়ে যায়। অথচ এ বছরের এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবসায়ী কিংবা ব্যক্তি গরু কেনার আগ্রহ দেখায়নি। এছাড়া শেষ পর্যন্ত গরুর দাম কী পাওয়া যাবে তা নিয়েও শঙ্কা রয়েছে। এ বছর ৩৯গরু আছে। যা স্বাভাবিক বাজার থাকলে ৭০ থেকে ৭৫ লাখ টাকার ওপরে বিক্রি হওয়ার কথা। কিন্তু করোনা পরিস্থিতি এ রকম থাকলে এবং গরুর দাম না বাড়লে এবার মাঠে মারা যাবো।
বরিশাল বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এবারের কোরবানির জন্য বিভাগের ছয় জেলায় ১৯ হাজার ৮০৬ জন খামারির কাছ কোরবানিযোগ্য ১ লাখ ৪ হাজার ৭৪১টি পশু রয়েছে। কোরবানীর আগ মুহূর্তে তা গিয়ে দাঁড়াবে ১ লাখ ৩০ থেকে ৪০ হাজারে। এছাড়া পারিবারিকভাবে লালন-পালনকৃত আরো প্রায় ৫০-৬০ হাজার পশু কোরবানির জন্য প্রস্তুত হয়েছে।
বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ দপ্তরের উপ-পরিচালক ডাঃ কানাই লাল স্বর্ণকার বলেন, করোনার বর্তমান প্রেক্ষাপটে এবারে লক্ষ্যমাত্রা থেকে প্রায় একলাখ কমে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সেই হিসেবে এবারে প্রায় সাড়ে ৩ লাখ পশু কোরবানি হওয়ার কথা। এ বছরের লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী পশু কোরবানি হলে ২০-২৫ শতাংশ পশু বিভাগের বাহির থেকে আনা প্রয়োজন হবে।
করোনা পরিস্থিতিতে কোরবানির বাজার কিছুটা মন্দা হতে পারে বলে জানিয়ে উপ-পরিচালক আরো বলেন, জেলার গুরুত্বপূর্ণ স্থান অর্থাৎ যেসব জায়গায় বেশি পশু বিক্রি হয়, সেসব এলাকায় সামাজিক দূরত্ব মেনে পশুর হাট বসানোর চিন্তা রয়েছে। এছাড়া অনলাইনেও পশু বিক্রির জন্য খামারিদের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এ জন্য আমরা অনলাইনে কোরবানীর গরুর হাট নামে একটি ওয়েবসাইট ওপেন করেছি। কোরবানির আগ মুহূর্তের হাটের জন্য অপেক্ষা না করে খামারিদের অনলাইনে গবাদি পশু বিক্রির জন্য পরামর্শ দিয়েছি। সূত্র: কালের কণ্ঠ