ঋণখেলাপিদের কাছ থেকে ঋণ আদায় বাড়ানোর জন্য সরকারি খাতের চারটি বাণিজ্যিক ব্যাংককে নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
একই সঙ্গে ব্যাংকগুলোর মন্দ বা আদায় অযোগ্য কুঋণের পরিমাণ কমিয়ে আনার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কমাতে হবে পরিচালন ব্যয়ের পরিমাণও।
বৃহস্পতিবার সরকারি খাতের চারটি বাণিজ্যিক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের (এমডি) সঙ্গে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবিরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে চার রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের এমডি, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সূত্র জানায়, বৈঠকে করোনাভাইরাসের প্রভাব মোকাবিলায় সরকার ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজগুলো বাস্তবায়নে ব্যাংকগুলোকে আরও সক্রিয় হতে বলা হয়েছে।
যেসব উদ্যোক্তা করোনার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাদের ঋণ দেয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পুঁজির অভাবে যাতে কোনো উদ্যোক্তার ব্যবসার ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে শাখাগুলোকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিতে বলা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক সিরাজুল ইসলাম বলেন, প্রতি বছর শীর্ষ ঋণখেলাপিদের কাছ থেকে ঋণ আদায়সহ নানা খাতে তাদের লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দেওয়া হয়। একই সঙ্গে তাদের আগের বছরের অগ্রগতি পর্যালোচনা করা হয়। সে লক্ষ্যেই এ বৈঠক হয়েছে। এতে ব্যাংকগুলোকে কিছু নির্দেশনা দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সূত্র জানায়, গত বছরে করোনার থাবার কারণে ব্যাংকগুলোর ঋণ আদায় কার্যক্রম বন্ধ ছিল। এছাড়া আগের খেলাপি ঋণ থেকেও আদায় বাড়ানো সম্ভব হয়নি। এসব কারণে ঋণ আদায়ের হার কম। গত বছর ঋণের বিপরীতে সুদ আদায় অনেক হয়েছে।
ফলে ব্যাংকের আয় কমেছে, বেড়েছে ব্যয়। এতে পরিচালন ব্যয় বেড়ে গেছে। বৈঠকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক চলতি বছরে ঋণ আদায় ও বিতরণ বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছে। এ বছরের মধ্যে ব্যাংকিং খাতকে গত বছরের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে হবে।
সেজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। এক্ষেত্রে যাতে কোনো ধরনের শৈথিল্য দেখানো না হয় সেদিকে নজর রাখতে বলা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান মতে, ডিসেম্বর শেষে চার রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের মধ্যে একটি ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি।
ব্যাংকটির ডিসেম্বর শেষে এর পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৩ হাজার ৬২২ কোটি টাকা। এ ঋণ মোট ঋণের ২৪ দশমিক ৯১ শতাংশ। এর মধ্যে আদায় অযোগ্য বা মন্দ ঋণের পরিমাণ ১২ হাজার ৮৮৫ কোটি টাকা, যা তাদের খেলাপি ঋণের প্রায় ৯৫ শতাংশ।
দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে অপর একটি ব্যাংক। ডিসেম্বরে তাদের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ১০ হাজার ৭২১ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ২০ দশমিক ৪৮ শতাংশ। এর মধ্যে মন্দ ঋণের পরিমাণ ৯ হাজার ৪৭২ কোটি টাকা, যা তাদের খেলাপি ঋণের ৮৮ শতাংশ।
তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে অপর একটি ব্যাংক। তাদের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৫ হাজার ৮৫৯ কোটি টাকা। মন্দ ঋণের পরিমাণ ৫ হাজার ৫৩ কোটি টাকা। যা তাদের খেলাপি ঋণের ৮৬ দশমিক ২৪ শতাংশ। সবচেয়ে কম খেলাপি ঋণ রয়েছে অন্য একটি ব্যাংকের। তাদের খেলাপি ঋণ ৩ হাজার ৯৭২ কোটি টাকা। মন্দ ঋণের পরিমাণ ৩ হাজার ৮২৫ কোটি টাকা, যা তাদের খেলাপি ঋণের ৯৬ দশমিক ৩০ শতাংশ।