1. [email protected] : admi2017 :
  2. [email protected] : Daily Khabor : Daily Khabor
  3. [email protected] : rubel :
  4. [email protected] : shaker :
  5. [email protected] : shamim :
সোমবার, ২৯ মে ২০২৩, ০২:৫৫ অপরাহ্ন

গম ক্রয় না করেই কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ

ডেইলি খবর নিউজ ডেস্ক
  • আপডেট সময় বুধবার, ৯ সেপ্টেম্বর, ২০২০
  • ২২৪ বার পড়া হয়েছে

ডেইলি খবর ডেস্ক: জালিয়াত চক্র জালিয়াতির মাধ্যমে বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক লিমিটেড (বিডিবিএল) থেকে এক দিনেই ২৫ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে ঢাকা ট্রেডিং হাউস নামের একটি প্রতিষ্ঠান। মাঠ থেকে গম সংগ্রহ করে সরকারি গুদামে পৌঁছে দেয়ার নামে মিথ্যা তথ্য দিয়ে এ প্রতারণা করা হয়। সুত্রগুলো জানায় ওই ট্রেডিং প্রতিষ্ঠানটি গম সরবরাহ না করেই টাকা তুলে নিয়েছে। এক্ষেত্রে ভুয়া সমঝোতা স্মারক সংক্রান্ত কাগজপত্র ব্যাংকে জমা দেয়। একটি কাগুজে প্রতিষ্ঠান থেকে গম ক্রয় দেখানো হয়। যে ট্রাকে গম সরবরাহের কথা বলা হয়েছে তার নম্বরও ভুয়া। বাস্তবে এ ধরনের কোনো ট্রাক ও গম বিক্রির কোম্পানির অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। সেখান থেকে ট্রাক ভাড়া দেখানো হয় সরেজমিন গিয়ে তারও প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

এ সবই দুর্নীতি দমন কমিশনের তদন্তে উঠে এসেছে। তদন্তে দেখা গেছে, ঢাকা ট্রেডিং হাউস জাল কাগজ দিয়ে পরস্পর যোগসাজশে বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের প্রিন্সিপাল শাখা থেকে এক দিনেই ২৫ কোটি টাকা তুলে নিয়েছে। এ টাকা ফেরত পাওয়া বা পরিশোধের সম্ভাবনা শূন্য। তদন্ত কাজ পরিচালনা করছেন দুদকের উপ-পরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধান। এ বিষয়ে তিনি বলেন,আমার যা বলার তদন্ত প্রতিবেদনেই উল্লেখ থাকবে। তদন্তে জালিয়াতি,প্রতারণা ও অনিয়মের প্রমাণ মিলেছে। জানা যায়, সরকারকে ৫০ হাজার টন গম সরবরাহের জন্য ঋণের বিষয়ে বিডিবিএলের সঙ্গে ঢাকা ট্রেডিং হাউসের চুক্তি হয়। এজন্য ব্যাংকে এ সরকারের সঙ্গে এ সংক্রান্ত সমঝোতা স্মারক উপস্থাপন করা হয়। ৫০ হাজার টন গম সরবরাহ বাবদ ১২০ কোটি টাকা ঋণ দেয়ার কথা ছিল। কিন্তু প্রথম চালানেই জালিয়াতি করায় পরে চুক্তি বাতিল হয়ে যায়। ফলে ১২০ কোটি টাকার পুরোটা নিতে পারেনি প্রতিষ্ঠানটি। ঋণের ২৫ কোটি টাকা নিয়েই তারা সটকে পড়ে। ২০১২ সালের পর থেকে এ পর্যন্ত সুদ-আসলে ২৫ কোটি এখন ৩০ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। তদন্তেদেখা যায়, ঢাকা ট্রেডিং হাউস একটি ব্যক্তি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান। এর স্বত্বাধিকারী মো. টিপু সুলতান। তিনি বিডিবিএল প্রিন্সিপাল শাখায় ঢাকা ট্রেডিং হাউস প্রতিষ্ঠানের নামে একটি হিসাব খোলেন।

এরপর এলসি লিমিট এবং এলটিআর ঋণ মঞ্জুরের জন্য আবেদন করেন। এজন্য তিনি একটি এমওইউর কপি বিডিবিএলের প্রিন্সিপাল শাখায় নিয়ে আসেন। যেখানে দেখানো হয়, স্থানীয় বাজার থেকে ১৫ হাজার টন গম সংগ্রহ করে তা ডাইরেক্টর জেনারেল অব ফুডস, খাদ্য ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়কে সরবরাহ করবেন। এ মর্মে তার মেসার্স ঢাকা ট্রেডিং হাউসের পক্ষে টিপু সুলতানের সঙ্গে ডাইরেক্টর জেনারেল অব ফুডস, খাদ্য এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে একটি এমওইউ সম্পাদিত হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে ওই এমওইউ ভুয়া। এটি অডিট ফার্ম জি.কিবরিয়া অ্যান্ড কোংয়ের অডিট প্রতিবেদনে প্রমাণিত হয়েছে। বিডিবিএল কর্তৃক নিয়োগকৃত অডিট ফার্ম জি. কিবরিয়া অ্যান্ড কোং কর্তৃক বিডিবিএলের প্রিন্সিপাল শাখার গ্রাহক মের্সাস ঢাকা ট্রেডিং এ ঋণ বিতরণের ক্ষেত্রে যথাযথ ব্যাংকিং পদক্ষেপ গ্রহণ, সরবরাহকৃত ডকুমেন্টের সত্যতা যাচাই-বাছাইকরণ, ঋণের শ্রেণিকরণ সঠিক হচ্ছে কিনা তা নিরীক্ষার জন্য ২০১৫ সালের ২০ নভেম্বর তারিখ পর্যন্ত নিরীক্ষা কার্যক্রম সম্পন্ন করে খসড়া প্রতিবেদন দাখিল করে। এ প্রতিবেদনেও বলা হয়েছে, গ্রাহক টিপু সুলতান জাল রেকর্ডপত্র তৈরি করে বিডিবিএলের প্রিন্সিপাল শাখায় উপস্থাপন করে। তা দিয়ে কোনো মালমাল সরবরাহ ছাড়াই বিডিবিএল থেকে ওই অর্থ উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেছে। বিডিবিএলের নোটিংয়ের ৩২তম পৃষ্ঠায় উল্লেখ করা হয়েছে, ঢাকা ট্রেডিং হাউস ২০১২ সালের ৬ জুন পত্রের মাধ্যমে এলসিতে উল্লিখিত মালামাল বুঝে পাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে ডকুমেন্ট ছাড় করার অনুরোধ করা হয়েছে। এলসি উপস্থাপন করার পরের দিনই ১৫ হাজার টন গম বুঝে পাওয়ার বিষয়টি পুরোটাই মিথ্যা। যা দুদকের তদন্তে উঠে এসেছে। এসপিএস কর্পোরেশন নামের কাগুজে প্রতিষ্ঠান থেকে গম ক্রয় দেখানো হয়েছে। বাস্তবে এ প্রতিষ্ঠানের কোনো অস্তিত্ব নেই। যে ট্রাকের মাধ্যমে পরিবহন দেখানো হয়েছে, সেটির রেজিস্ট্রেশন নম্বরও ভুয়া। যে প্রতিষ্ঠান থেকে ট্রাক ভাড়া নেয়া হয়েছে,সরেজমিন ওই জায়গায় উক্ত প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি।

বিডিবিএল সূত্রে জানা যায়, ঢাকা ট্রেডিং হাউসের হিসাব খোলার সময় আপ টু ডেট ইনকাম ট্যাক্স সার্টিফিকেট সংগ্রহ কর হয়নি। কেওয়াইসিতে টিন নম্বর সংযোজন করা হয়নি। কেওয়াসির পরিচয়দানকারীর তথ্য সঠিক ছিল না। কেওয়াইসির গ্রাহক টিপু সুলতানের পিতার নাম এবং জাতীয় পরিচয়পত্রে টিপু সুলতানের পিতার নাম এক নয়। ২০১২ সালের ৩ এপ্রিল ঢাকা ট্রেডিং হাউসের এলটিআর অ্যাকাউন্ট নং ৮৪১০০০০০৮৪ খোলেন। এবং ওই বছর ৯ এপ্রিল ওই ঋণ সংক্রান্ত ২৫ কোটি টাকা অনুমোদন হয়। এছাড়া ২২ দশমিক ৫ কোটি টাকা ডিসবার্স হয়। গ্রাহকের পরিশোধ প্রক্রিয়া, দক্ষতা এবং সক্ষমতা যাচাই না করে ২৫ কোটি টাকার ঋণটি খুবই দ্রুতই অনুমোদন হয়। তদন্তে দেখা যায়, খাদ্য অধিদফতরের পরিচালক (সরবরাহ, বণ্টন ও বিতরণ বিভাগ) মো:বদরুল হাসান স্বাক্ষরিত ইউ.ও. নোট নং ৩, তারিখ ৫/১/২০১৫ এর কপি মর্মে জানা যায়, তিনি টিপু সুলতানের সঙ্গে কোনো এমওইউ বা কোনো চুক্তি সম্পাদন করেননি। যে এমওইউর ভিত্তিতে ওই ঋণটি দেয়া হয়, তা পরে জাল হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে। অর্থাৎ জাল রেকর্ডপত্র খাঁটি হিসেবে ব্যবহার করে ঋণটিকে সুকৌশলে অনুমোদন করে নেয়া হয়েছে। ১৫ হাজার টন পণ্য এক দিনে একটি ট্রাকে পরিবহন দেখানো হয়েছে, যা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। গম ক্রয় না করেই টাকা আত্মসাতকারীদের কঠোর সাজা না হলে জবাবদিহি নিশ্চিত হবে না।

বিজ্ঞাপন

এ জাতীয় আরো খবর