1. [email protected] : admi2017 :
  2. [email protected] : Daily Khabor : Daily Khabor
  3. [email protected] : rubel :
  4. [email protected] : shaker :
  5. [email protected] : shamim :
মঙ্গলবার, ১২ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৪:০২ পূর্বাহ্ন

গাফিলতির মাশুল ৪২২ কোটি টাকা

ডেইলি খবর নিউজ ডেস্ক
  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ৪ মার্চ, ২০২১
  • ১২৯ বার পড়া হয়েছে

পিজিসিবির এক প্রকল্পে ঠিকাদারের গাফিলতিতে ৪২২ কোটি টাকার বেশি মাশুল গুনতে হচ্ছে সরকারকে। তাদের সুবিধা দিতে দফায় দফায় মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। এ কারণে বেড়েছে প্রকল্পের ব্যয়ও। এছাড়া এতে দুর্নীতিরও অভিযোগ উঠেছে।

যেমন, ব্যয় হলেও নির্ধারিত মাপের চেয়ে টাওয়ারের পাইলিং কম করা হয়েছে। লাইন তৈরির নকশা চূড়ান্ত না করেই কেনা হয় পণ্য। পরে সেই রুটই বাতিল করা হয়। প্যাকেজটিতে প্রস্তাবিত দরের চেয়ে বেশি দিয়ে চুক্তির অভিযোগ উঠেছে। দুর্নীতি মামলায় অভিযুক্ত এক কর্মকর্তাকে প্রকল্প পরিচালক নিয়োগ দেওয়া হয়।

অনিয়মগুলো খতিয়ে দেখতে দুর্নীতি দমন কমিশনে লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। দুদকে দায়ের করা ওই অভিযোগ এবং প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

জানা গেছে, ন্যাশনাল পাওয়ার ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক ডেভেলপমেন্ট (এনপিটিএনডি) নামে এই প্রকল্পের ৬ নম্বর প্যাকেজে অনিয়মগুলো হয়েছে। প্যাকেজটি চট্টগ্রাম অঞ্চলের সঞ্চালন ব্যবস্থার উন্নয়নে নেওয়া হয়।

এতে ঠিকাদার হিসাবে কাজ করছে জাপানি কোম্পানি ফুজিকুরার নেতৃত্বাধীন একটি কনসোর্টিয়াম। কোম্পানিটির অন্য দুই সদস্য হলো কোরিয়ান কোম্পানি এলএস কেবলস এবং জাপানের আরেক প্রতিষ্ঠান ইতোচু করপোরেশন।

সূত্র জানায়, পিজিসিবির একটি দুর্নীতিবাজ সিন্ডিকেটের যোগসাজশে ঠিকাদার কোম্পানি ও সংশ্লিষ্টরা প্রকল্পটি বাস্তবায়নে অনিয়ম করেছে। এসব কারণে ঠিকাদারের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক সালিশি আদালতে (সিঙ্গাপুরে) অভিযোগও দায়ের করেছে প্রকল্পের স্থানীয় অংশীদার ইমপিরিয়ান নামের একটি কোম্পানি।

এ অবস্থায় প্রকল্পটি পুরোপুরি বাস্তবায়ন না করেই নিজেদের ব্যবসা সংকোচনের আওতায় সংশ্লিষ্ট একটি কোম্পানি দেশ ছাড়তে পারে-এমন শঙ্কাও আছে। এদিকে প্রকল্পের একটি অংশ বাতিল হওয়ায় কনসোর্টিয়ামের অন্যতম সদস্য এলএস কেবলস মূল ঠিকাদার ফুজিকুরার কাছে ক্ষতিপূরণ চেয়ে চিঠি দিয়েছে।

পিজিসিবির ব্যবস্থাপনা পরিচালক গোলাম কিবরিয়া সাংবাদিকদের বলেন, রুট নিয়ে ঝামেলা থাকায় হাটহাজারী-রামপুর অংশের কাজ বতিল হয়েছে। পরে অন্য প্রকল্পের মাধ্যমে এটি নির্মাণ করা হবে। যেহেতু একটি অংশের কাজ বাতিল হয়েছে, তাই ঠিকাদার পুরো অর্থ পাবেন না। বাতিল হওয়া অংশের জন্য কোনো মালামাল কেনা হয়নি বলেন জানান তিনি।

কিবরিয়া বলেন, রুট চূড়ান্ত না হলে তো নকশা প্রণয়ন হবে না। ফলে কেনাকাটা হওয়ার কথা নয়। পিডির নিয়োগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এটা তার দায়িত্ব পাওয়ার আগের ঘটনা। তাই এ সম্পর্কে কিছু বলতে পারেননি। তিনি বলেন, করোনার কারণে কাজ পিছিয়ে গেছে। জাপানিরা কবে আসবেন, বলা যাচ্ছে না। তবে অন্য পার্টনারদের সহযোগিতায় দ্রুত কাজ শেষ করার চেষ্টা চলছে।

সূত্র জানায়, দেশের সঞ্চালন ব্যবস্থার উন্নয়নে এনপিটিএনডি প্রকল্পটি গ্রহণ করে ২০১২ সালে। ২০১৩ সালে এটি একনেকে অনুমোদন পায়। ২০১৭ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পটি শেষ হয়ার কথা ছিল। প্রকল্পের খরচ প্রাক্কলন করা হয় ২ হাজার ৪২৬ কোটি ৬১ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকার ৩৭৮ কোটি ৩৩ লাখ টাকা এবং পিজিসিবির ২৮০ কোটি ৭৬ লাখ টাকা দেওয়ার কথা। বাকি ১ হাজার ৭৬৭ কোটি ৫২ লাখ টাকা উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা জাইকা ঋণ সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল।

কয়েক দফা সময় বাড়িয়েও প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে পারেনি পিজিসিবি এবং ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান। সময় বেড়ে যাওয়ায় খরচ বেড়ে দাঁড়ায় ২ হাজার ৫১৬ কোটি ১৫ লাখ টাকা। সংশোধিত ডিপিপিতে সরকারের খরচের অংশ বেড়ে হয় ৮০০ কোটি ২৩ লাখ টাকা। আগে ছিল ৩৭৮ কোটি ৩৩ লাখ টাকা। এখানেই সরকারের ব্যয় বেড়েছে ৪২২ কোটি ২৯ লাখ টাকা। অন্যদিকে জাইকার খরচ কমে দাঁড়ায় ১ হাজার ৪২২ কোটি ৭৪ লাখ টাকা।

প্রকল্পটির আওতায় ১৩টি সাবস্টেশনের (উপকেন্দ্র) মধ্যে ১২টির নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে। ছয়টি উপকেন্দ্রের বে-এক্সটেনশনের মধ্যে চারটি সম্পন্ন হয়েছে। ২২০ কিলোমিটার দীর্ঘ সঞ্চালন লাইনের মধ্যে ৩০ কিলোমিটারের বেশি এখনো বাকি রয়েছে। আর ২৬ কিলোমিটার হাটহাজারী-রামপুর সঞ্চালন লাইন বাদ দেওয়া হয়েছে।

হাটহাজারী-রামপুর সঞ্চালন প্রকল্পটি বাতিল হওয়ায় সরকারের গচ্চা যাচ্ছে ১০ কোটি টাকার বেশি। ইতোমধ্যে প্রকল্পের জন্য অনেক মালামাল কেনা হয়েছে। সরবরাহকারী ফুজিকুরার দাবি করা বিলও পরিশোধ করেছে পিজিসিবি। অথচ এখন পর্যন্ত প্রকল্পের নির্মাণ লাইনের রুটই চূড়ান্ত হয়নি। যে কারণে এসব সরঞ্জাম ও মালামাল দীর্ঘদিন অব্যবহৃত পড়ে আছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ক্রয়কৃত এসব মালামাল প্রকল্পের কোনো কাজে ব্যবহার হবে কি না, তা চূড়ান্ত না হলেও এগুলো পরিদর্শন ও কেনাকাটার অজুহাতে বিদেশ ভ্রমণ করেছেন প্রকল্পের একাধিক কর্মকর্তা। ২০১৭ সালের ২৬ নভেম্বর এবং ২০১৮ সালের ১৯ এপ্রিল হাটহাজারী-রামপুর প্রকল্পের জন্য আমদানি করা সরঞ্জাম চট্টগ্রাম বন্দরে পিজিসিবির প্রতিনিধিদল পরীক্ষাও করেছে।

ফুজিকুরা রূপালী ব্যাংকে খোলা এলসির মাধ্যমে জাপান ও ফ্রান্স থেকে এসব মালামাল বাংলাদেশে আনে। ২০১৭ সালের নভেম্বরের এলসিতে হাটহাজারী-রামপুর অংশের জন্য প্রায় ৮ কোটি ৩০ লাখ টাকার মালামাল জাপান থেকে আনা হয়। ২০১৮ সালের এপ্রিলের এলসিতে ১ কোটি ৮৯ লাখ টাকার মালামাল ফ্রান্স থেকে আনা হয়। এর বাইরেও কয়েক দফা কেনাকাটা হয়েছে বলে সূত্র জানিয়েছে।

শুরুতে এনপিটিএনডির প্রকল্প পরিচালক হিসাবে দায়িত্ব পান পিজিসিবির কর্মকর্তা মাহবুব আহমেদ। পরে তিনি অবসরে গেলে নতুন পিডি নিয়োগ দেওয়া হয়। কিন্তু তার আগেই ঘটে যায় নানা অনিয়ম-দুর্নীতি। এর আগে ২০১০ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ঈশ্বরদী-বাঘাবাড়ি-সিরাজগঞ্জ-বগুড়া এবং সিলেট-শাহজিবাজার-বাহ্মণবাড়িয়া সঞ্চালন লাইন নির্মাণের প্রকল্প পরিচালক হিসাবেও দায়িত্ব পালন করেন এই কর্মকর্তা।

অভিযোগ-এই কর্মকর্তার আমলেই পিজিসিবিতে বড় ধরনের অর্থ জালিয়াতি ও আত্মসাতের ঘটনা ঘটে। মাহবুব আহমেদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির প্রথম অভিযোগ উঠে ২০১০ সালের ৪ সেপ্টেম্বর। পরে তদন্তে অভিযোগের সত্যতা প্রমাণিত হওয়ায় ৮ সেপ্টেম্বর এ নিয়ে গুলশান থানায় মামলা করা হয়। তাকে ওই প্রকল্প থেকে বাদ দেওয়া হয়।

তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, মাহবুব আহমেদসহ তার ছয় সহযোগী চেক জালিয়াতির মাধ্যমে দুটি প্রকল্প থেকে ৬৩ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন। কমিটি আরও জানায়, প্রকল্পপ্রধান হিসাবে মাহবুব আহমেদের আট মাসের দায়িত্ব পালনকালে দুটি প্রকল্পে শুধু তার হাত দিয়েই জালিয়াতি হয়েছে সাড়ে ছয় কোটি টাকা। পরে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) তদন্তেও এই জালিয়াতির প্রমাণ পাওয়া যায়। ২০১৮ সালের ১৭ অক্টোবর আদালতে এ বিষয়ে চার্জশিট দাখিল করা হয়।

বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত এবং এ সংক্রান্ত একটি মামলা চলমান থাকার পরও কীভাবে তাকে এনপিটিএনডির মতো একটি বড় প্রকল্পের পিডি নিয়োগ দেয় পিজিসিবি কর্তৃপক্ষ, তা রহস্যজনক। অবশ্য ২০১৯ সালের ১০ জানুয়ারি থেকে ওই বছরের ২০ জুলাই পর্যন্ত তাকে ছুটিতে পাঠিয়ে পরে প্রকল্প পরিচালকের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল করা হয়।

প্রকল্পে চলমান হাটহাজারী-শিকলবাহা সঞ্চালন লাইনে মোট ৮৫টি টাওয়ার বসানো হচ্ছে। প্রতিটি টাওয়ারের জন্য প্রয়োজন হয় ১৬-৩৬টি পাইলিং। এ লাইনে মোট পাইলিংয়ের সংখ্যা ২১শ। প্রকল্পের কার্যাদেশে প্রতিটি গড়ে ৩০ মিটার গভীর করার কথা থাকলেও পাইলিং করা হচ্ছে ১৮ থেকে ২০ মিটার।

এভাবে প্রতিটি কম পাইলিং করে মোটা অঙ্কের টাকা তছরুপের অভিযোগ আছে। অনিয়মটি যাতে কেউ ধরতে না পারে, সেজন্য পাইলিংয়ের মাপ পরীক্ষার জন্য পিজিসিবি অনুসরণ করছে পিআইটি (পাইল ইন্টিগ্রেটি টেস্ট) পদ্ধতি। সেক্টরের বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, এই পদ্ধতিতে গভীরতা নিরূপণের পরীক্ষার ক্ষেত্রে কারসাজি করা সম্ভব (ডিজিটাল চুরি)।

তাদের মতে, নতুন প্রজন্মের প্রযুক্তি পিএসআইটি (প্যারালাল সিসমিক ইনস্ট্র–মেন্টাল টেস্ট) পদ্ধতি অনুসরণ করা হলে প্রতিটি পাইলিংয়ের প্রকৃত গভীরতা জানা সম্ভব হতো। এ অবস্থায় পাইলিংয়ে চুরির কারণে আর্থিক লোকসানের পাশাপাশি টাওয়ার স্থাপনাটিও ভয়াবহ ঝুঁকির মধ্যে পড়বে বলেও তারা জানিয়েছেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রকল্পসংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেন, এই প্রকল্পে ব্যাপক দীর্ঘসূত্রতার অভিযোগ আছে। এর অন্যতম কারণ হলো রুট নির্ধারণে গাফিলতি। রুট নির্ধারণের জন্য প্রাথমিক পর্যায়ে প্রকল্পের সঙ্গে স্বার্থসংশ্লিষ্ট সরকারি-বেসরকারি বিভাগ, সংস্থা, এজেন্সি ও বিভিন্ন কোম্পানি যেমন রেলওয়ে, নৌবাহিনী, গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি, কর্ণফুলি ইডিজেড, কাফকো এবং সিইউএফএলসহ বিভিন্ন অংশীজনের সঙ্গে কার্যকর সমন্বয় করা হয়নি।

ফলে প্রকল্প বাস্তবায়নে মাঠে নামার পর পদে পদে বাধার সৃষ্টি হয়েছে। সঞ্চালন লাইনের জন্য যেসব ফসলি জমি অধিগ্রহণ করার কথা, তা করা হযনি। একই সঙ্গে জমির মালিক ও কৃষককে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়নি।

২০১৮ সালে প্রকল্পে একটি সংশোধিত প্রস্তাব আনা হয়, যাতে বলা হয়, হাটহাজারী-রামপুর সঞ্চালন লাইনের ওভারহেড অংশটি আগের ২৪ কিলোমিটারের বদলে ২৬ কিলোমিটার করা হবে এবং আন্ডারগ্রাউন্ড অংশটি আগের ৮ কিলোমিটারের বদলে ২ কিলোমিটার করা হবে। অর্থাৎ আগের অনুমোদিত ৭৭ কিলোমিটারের বদলে ৭৩ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন নির্মাণ করা হবে। আর এটি করতে গিয়ে দীর্ঘ সময়ক্ষেপণ করা হয়।

বিজ্ঞাপন

এ জাতীয় আরো খবর