1. [email protected] : admi2017 :
  2. [email protected] : Daily Khabor : Daily Khabor
  3. [email protected] : rubel :
  4. [email protected] : shaker :
  5. [email protected] : shamim :
সোমবার, ১১ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:১০ অপরাহ্ন

ঘুষ লেনদেন সরকারি অ্যাকাউন্টে!

ডেইলি খবর ডেস্ক
  • আপডেট সময় রবিবার, ৩১ জানুয়ারি, ২০২১
  • ১৮৩ বার পড়া হয়েছে

ঘুষ লেনদেন সরকারি অ্যাকাউন্টে হয়েছে। কক্সবাজার কারাগারের সাবেক জেল সুপার মোকাম্মেল হোসেন মোল্লা ঘুষ বাণিজ্যের ২০ লাখ টাকা সরকারি অ্যাকাউন্টে নিয়েছেন। জেল সুপারের এই সরকারি অ্যাকাউন্টের ঘুষের খবর আর গোপন রইল না,সবখানে চাউর হয়েছে। এই টাকা তিনি আবার ব্যক্তিগত খাতে খরচও করেছেন। বন্দিদের জন্য নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্য সরবরাহ করেন এমন একজন ঠিকাদারের কাছ থেকে এই টাকা নেন তিনি। অগ্রিম টাকা নিয়ে বদলি হয়ে দিনাজপুরে চলে গেলে ঠিকাদার আইনি নোটিশ পাঠিয়ে সেই টাকা ফেরতও নিয়েছেন। অথচ সরকারি এই হিসাবে সাধারণ মানুষের টাকা জমা দেওয়া তো দূরের কথা হিসাব নাম্বারই জানার কথা নয়। সংরক্ষিত এই অ্যাকাউন্টে সরকারি হিসাবের বাইরে কোনো টাকা জমা হলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার কথা।

এ ক্ষেত্রে জেল সুপার কোনো পদক্ষেপ তো দূরের কথা, উলটো নামে-বেনামে এই টাকা তুলে নিয়েছেন। এভাবে বন্দিদের খাবারের টাকা লোপাট করে বিপুল বিত্তবৈভবেরও মালিক হয়েছেন এই কারা কর্মকর্তা। দিনাজপুর কারাগারে বদলির পর চাঞ্চল্যকর ঘটনাটি প্রকাশ হলে কারা কর্তৃপক্ষ বিব্রতকর অবস্থায় পড়েন। তবে রহস্যজনক কারণে অদ্যাবধি এই কারা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে মোকাম্মেল হোসেন মোল্লা বলেন,‘ঠিকাদার মুজিবুল হক মানিক জেল সুপারের অ্যাকাউন্টে টাকা জমা দিয়ে আমাকে ব্ল্যাক মেইল করেছেন।

কারা কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানিয়েছিলেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন ‘না, জানাইনি।’ একজন জেল সুপারকে কেন ঠিকাদার ব্ল্যাক মেইল করবেন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন,‘আপনার সঙ্গে কথা বলতে আমি বিব্রতবোধ করছি।’এ বিষয়ে আইজি প্রিজন ব্রিগেডিয়ার মমিনুর রহমান মামুন বলেন,‘বিষয়টি আমার জানা নেই। আসলে না জেনে এ বিষয়ে কথা বলতে পারছি না।

তথ্যানুসন্ধানে দেখা গেছে, গত ৮ এপ্রিল কক্সবাজার জেল সুপারের নামে সোনালী ব্যাংকে সরকারিভাবে খোলা অ্যাকাউন্টে ২০ লাখ টাকা জমা হয়। ১২ এপ্রিল পুরো ২০ লাখ টাকাই নগদ উত্তোলন করা হয়। এদিকে গত ২২ সেপ্টেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের এক আদেশে জেল সুপার মোকাম্মেল হোসেন মোল্লাকে কক্সবাজার থেকে দিনাজপুর জেলা কারাগারে বদলি করা হয়। ২৬ সেপ্টেম্বর তিনি ওই কারাগারের দায়িত্ব ছেড়ে নতুন কর্মস্থলের উদ্দেশে কক্সবাজার ত্যাগ করেন। এরপর ১১ অক্টোবর কক্সবাজারের বার্মিজ স্কুল রোডের বাসিন্দা মেসার্স মুজিবুল হক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মালিক মুজিবুল হক জেল সুপার মোকাম্মেল হোসেনের পক্ষে আইনজীবী আবিদুর রহমান আইনি নোটিশ পাঠান। এতে তিনি উল্লেখ করেন,‘লিগ্যাল নোটিশ গ্রহিতাকে (মোকাম্মেল হোসেন মোল্লা) জানাচ্ছি যে, আমার মক্কেল (মুজিবুল হক) দীর্ঘদিন ধরে কক্সবাজার জেলা কারাগারে বন্দিদের খাদ্য সরবরাহের কাজে নিয়োজিত আছেন। পূর্ব পরিচয়ের সুবাদে জরুরি প্রয়োজনের কথা বলে আপনি ৮ এপ্রিল জেল সুপারের সোনালী ব্যাংকের সঞ্চয়ী হিসাবে ২০ লাখ টাকা ঋণ গ্রহণ করেন। ২/১ মাসের মধ্যে এই টাকা ফেরত দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ছয় মাস অতিবাহিত হলেও টাকা ফেরত দেওয়া হয়নি। লিগ্যাল নোটিশ পাওয়ার ৭ দিনের মধ্যে টাকা ফেরত দেওয়ার আলটিমেটাম দেওয়া হয়। অন্যথায় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের কথাও জানিয়ে দেওয়া হয়। লিগ্যাল নোটিশের অনুলিপি দেওয়া হয় তৎকালীন কারা মহা-পরিদর্শককেও। এরপর ফেসবুক ম্যাসেঞ্জারে ঠিকাদার মুজিবুল হককে একটি বার্তা পাঠান মোকাম্মেল হোসেন মোল্লা।

এতে তিনি উল্লেখ করেন, ‘আচ্ছালামু আলাইকুম। আশা করি ভালো আছেন। আপনাদের পাঠানো উকিল নোটিশ পেয়েছি। আল্লাহর ওপর ভরসা রেখে বলছি, আমি এই দুনিয়ায় কারো কাছ থেকে একটি টাকাও ধার করিনি। কেউ আমার কাছে একটি টাকাও পাবে না। ওই চেক দিয়ে আপনারা আপনাদের দেনা পরিশোধ করেছেন। তার পরও যদি অন্যায়ভাবে আমার কাছ থেকে টাকা নিতে চান তাহলে নেছার আলম (বর্তমান জেল সুপার, কক্সবাজার) সাহেবের কাছে বলবেন। তার মধ্যস্থতায় টাকা দিয়ে দেব। কক্সবাজার জেল সুপার নেছার আলম বলেন,‘সরকারি কোষাগারে ঠিকাদারের এভাবে টাকা জমা দেওয়ার ঘটনা শুনে আমি নিজেও বিব্রত হই। এখন আমি নিজেও ভয় পাচ্ছি। তিনি বলেন,‘হ্যাঁ, বিষয়টি জানার পর নিজের নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে ভয়েই আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে মৌখিকভাবে জানিয়েছি। এরপর কি হয়েছে আমি জানি না। আলোচিত এই ঠিকাদার মুজিবুল হক মানিকের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলার চেষ্টা করা হয়। কয়েক দিন ধরে তার ব্যক্তিগত মুঠোফোনে কল করা হলেও তিনি ওপাশ থেকে রিসিভ করেননি। বক্তব্য চেয়ে মোবাইলে ক্ষুদে বার্তা পাঠালেও কোনো জবাব মেলেনি। এর মধ্যে সরেজমিন কক্সবাজার গিয়েও তার সঙ্গে দেখা করা সম্ভব হয়নি।

কারা সূত্র জানায়, কক্সবাজার কারাগারে বেপরোয়া ছিলেন মোকাম্মেল হোসেন মোল্লা। যেসব ঠিকাদার কারাগারে নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্য যেমন- চাল, মুসুর ডাল, মাছ, মাংস, তরকারি সরবরাহ করেন তাদের সঙ্গে তিনি গোপন ভাগাভাগির রফা করতেন। অর্থাৎ নিুমানের খাদ্যদ্রব্য গ্রহণ করে বেশি দামের বিলে অনুমোদন দিতেন। এভাবে অতিরিক্ত বিলের টাকা নিজের পকেটে হাতিয়ে নিতেন। বাস্তবতা হলো, সবগুলো কারাগারেই কমবেশি একই অবস্থা বিরাজ করছে। বন্দিদের খাবার চুরি করেই এক শ্রেণির কারা কর্মকর্তা-কর্মচারী ও দায়িত্বরত মেডদের অনেকেই বিপুল বিত্তবৈভবের মালিক হয়েছেন। এমন লোভ সামলাতে না পেরে কেউ কেউ বিসিএস ক্যাডারের চাকরি ছেড়ে দিয়ে জেল সুপার পদে চাকরি নিয়েছেন। উদ্দেশ্য একটাই, অসহায় এই বন্দিদের খাবারের টাকা চুরি করে রাতারাতি নিজে ধনী হওয়া।

এদিকে সংশ্লিষ্ট কারাগারের একজন কারারক্ষী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, জেল সুপার মোকাম্মেল হোসেন প্রতিদিন সকালে নাস্তা খেতে চলে যেতেন কারা কেন্টিনে। বিকেলে কারা কেন্টিনের আয় থেকে বাণিজ্য করতেন। অথচ কারা কেন্টিনের সম্পূর্ণ আয় বন্দিদের মধ্যে খরচ করার কথা। কারণ বন্দিদের জমা রাখা খরচের টাকা (পিসি) দিয়েই এই ক্যান্টিন পরিচালনা করা হয়। সাবেক আইজি প্রিজন ব্রিগেডিয়ার জাকির হোসেন বন্দিদের সুবিধার কথা বিবেচনায় নিয়ে এই কারা কেন্টিন চালু করে যান। অথচ বন্দিদের টাকায় কারা কেন্টিনে কোনো সুবিধা নেই। উলটো এক টাকার জিনিস ১০ টাকা রাখা হয়। বিনিময়ে প্রতি বছর কোটি কোটি টাকা বাণিজ্য করেন সংশ্লিষ্ট কারা কর্মকর্তারা। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে কোনো লাভ হয় না। এখানে রক্ষকরাই বড় ভক্ষক। অপর একজন কর্মকর্তা বলেন, কক্সবাজার কারাগারের কেরানি ইফতেখারুল আলম কারা ঠিকাদারদের সঙ্গে গোপন লেনদেনের সম্পর্ক গড়ে তুলেছেন। তার কারণেই কারাগারের দাফতরিক অনেক নথিপত্র ফাঁস হয়ে যায়। কক্সবাজারে তিনি অবৈধ আয়ের টাকায় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানও গড়ে তুলেছেন। যে কারণে তিনি এখান থেকে বদলি হতে চান না।

তিনি বলেন, সম্প্রতি এই ইফতেখারকে কিশোরগঞ্জ বদলি করা হয়। তদবির করে তিনি সে আদেশ প্রত্যাহার করাতে সক্ষম হয়েছেন। একজন কেরানি যদি এভাবে বদলি আদেশ বাতিল করতে পারেন তাহলে কোনো কিছু বুঝতে আর বাকি থাকে না। মোকাম্মেল হোসেন মোল্লার গ্রামের বাড়ি রাজবাড়ী সদর উপজেলার সুলতানপুর ইউনিয়নের শ্যামনগর গ্রামে। তার পিতার নাম মোকছেদ আলী মোল্লা। ঢাকার মিরপুরে একটি নিজস্ব আলীশান ফ্ল্যাটে থাকেন পরিবারের সদস্যরা। তিনি ফরিদপুর পৌর শহরের ৮নং ওয়ার্ডের গোয়ালচামট শ্রীঅঙ্গন সংলগ্ন লাক্সারি হাউজিং স্টেটে মোল্লা ক্ষণিকালয় নামে ছয়তলা বাড়ি করেছেন। রাজবাড়ী জেলার রাজাপুর ইউনিয়নের ধর্মশীল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আব্দুল কাইয়ূম বলেন, ছয়তলা এই বাড়িটির মালিক মোকাম্মেল ও তিনিসহ তিনজন। আলমগীর হোসেন নামে আরেক সরকারি কর্মকর্তা আছেন। সরেজমিন দেখা যায়,বাড়িটির ছয়টি ইউনিটের ছয়তলা তিন ইউনিটের। দুটি বেডরুম একটি কিচেন একটি ডাইনিং রুম, দুটি বারান্দা রয়েছে। সব ইউনিটই ভাড়া দেওয়া। সুলতানপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসে গিয়ে মোকাম্মেল হোসেনের কেনা বিপুল পরিমাণ জমির সন্ধান পাওয়া যায়। সূত্র-যুগান্তর

বিজ্ঞাপন

এ জাতীয় আরো খবর