ডেইলি খবর ডেস্ক: বিপুল চাঁদাবাজির পরও চট্টগ্রামের হলি ক্রিসেন্ট কভিড হাসপাতাল হয়নি। রোনাকালে চট্টগ্রামের ৬১টি বেসরকারি হাসপাতালে করোনা রোগী ভর্তি না করে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকা হলি ক্রিসেন্ট হাসপাতালকে কভিড হাসপাতাল তৈরির ঘোষণা দেয় কথিত হাসপাতাল ও ক্লিনিক মালিক অ্যাসোসিয়েশন। প্রতিটি হাসপাতাল থেকে ৩ লাখ টাকা করে চাঁদাবাজি ও শিল্পপতিদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ চাঁদা নেওয়া হলেও বেহাল অবস্থা হলি ক্রিসেন্ট হাসপাতালের। এখনও কোনো ভেন্টিলেশন স্থাপন করা হয়নি। ২১টি সাধারণ বেড, ২৩টি কেবিন ও ১৩টি আইসিইউ থাকলেও আইসিইউর অবস্থা খুবই খারাপ। চিকিৎসার পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা নেই, বাথরুম, টয়লেট ইত্যাদির ভালো অবস্থা নেই। হ-য-ব-র-ল অবস্থা কভিড হলি ক্রিসেন্ট হাসপাতালের। এ প্রতিষ্ঠানকে কার্যকর না করা এবং করোনাকালে দীর্ঘ কালক্ষেপণ করার পেছনে ডা. ফয়সাল ইকবাল চৌধুরীর দায়-দায়িত্ব রয়েছে বলে পুলিশের গোপন প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
এছাড়া মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী নয় চট্টগ্রামের বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকের ওপর একটি কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করেন চট্টগ্রামের বিতর্কিত চিকিৎসক নেতা ফয়সাল ইকবাল চৌধুরী। অন্য বেসরকারি হাসপাতালের ওপর তার যথেষ্ট প্রভাব রয়েছে। বিভিন্ন ইস্যুতে বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকের পক্ষাবলম্বন করেন তিনি। শুধু তাই নয়, করোনাকালেও করোনা রোগীদের চট্টগ্রামের বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা না দেওয়ার প্রশ্নবিদ্ধ কার্যক্রমে ডা. ফয়সালের প্রশ্রয় ছিল বলে পুলিশের গোপন প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। দীর্ঘদিন চট্টগ্রাম বিএমএ শাখার সাধারণ সম্পাদক থাকায় বেসরকারি হাসপাতালগুলোর ওপর ফয়সাল ইকবাল কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করেন বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। তিন পৃষ্ঠার গোপন প্রতিবেদনটিতে পুলিশ ফয়সাল ইকবালকে নিয়ে ৭ দফা পর্যবেক্ষণ ও ৫ দফা সুপারিশ তুলে ধরেছেন। চট্টগ্রামে গত ৩ এপ্রিল প্রথমে করোনা শনাক্ত হয়। তারপর বেসরকারি হাসপাতালে কভিড ও ননকভিড রোগী ভর্তি বন্ধ করে দেন হাসপাতাল মালিকরা। তখন বহু রোগী বেসরকারি হাসপাতালের সামনে, রাস্তা ও অ্যাম্বুলেন্সে মারা যান। একটি অরাজক পরিস্থিতি তৈরি হয় চট্টগ্রামের স্বাস্থ্য খাতে। এরপরই পুলিশ এ গোপন প্রতিবেদনটি তৈরি করে।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, হলি ক্রিসেন্ট হাসপাতালকে করোনা চিকিৎসার জন্য প্রস্তুত করা নিয়ে সময়ক্ষেপণ করা হয়। হলি ক্রিসেন্ট হাসপাতালটি অনেক দিন ধরে পরিত্যক্ত অবস্থায় আছে। হলি ক্রিসেন্ট হাসপাতাল চালু করার জন্য প্রতিটি প্রাইভেট হাসপাতাল থেকে তিন লাখ টাকা করে চাঁদা নেওয়া হয়েছে। অনেক শিল্পপতির কাছ থেকে চাঁদা নেওয়া হয়েছে। সব অর্থ ব্যয় হলে হলি ক্রিসেন্ট হাসপাতালের চিকিৎসা ব্যবস্থা অনেক ভালো হতে পারত। বেসরকারি হাসপাতাল ও শিল্পপতিদের কাছ থেকে চাঁদা নেওয়ার বিষয়ে ফয়সল ইকবাল চৌধুরী জড়িত ছিলেন বলে অভিযোগ আছে।
পর্যবেক্ষণে যা আছে
ডা. ফয়সাল ইকবাল চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারী হিসেবে গ্রুপিং রাজনীতিতে ভূমিকা রাখেন। তিনি মহানগর আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক। তার সাম্প্রতিক কর্মকান্ড মহানগর আওয়ামী লীগ ও অন্য সংগঠনের নেতাকর্মীদের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে। করোনা সংকটের সময় উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল ও আ জ ম নাছির উদ্দীন গ্রুপের মধ্যে পাল্টাপাল্টি দোষারোপ করতে দেখা গেছে। ফয়সাল ইকবাল চিকিৎসকদের নিরাপত্তা পর্যাপ্ত নয় বলে বিতর্কিত মন্তব্য করেন এবং চিকিৎসকদের সুরক্ষাসামগ্রী নিয়ে দায়িত্বশীল পদে থেকে বিষোদ্গার করেন। প্রথম দিকে বেসরকারি হাসপাতালে করোনা রোগীদের চিকিৎসা দিতে অনীহার পেছনে ফয়সাল ইকবালের ভূমিকা রয়েছে। হলি ক্রিসেন্ট হাসপাতালকে কার্যকর না করা এবং দীর্ঘ কালক্ষেপণ করার পেছনে তার দায়-দায়িত্ব রয়েছে। ছাত্রলীগ নেতা নুরুল আজিম রনির দায়ের করা অভিযোগের বিষয়ে ফয়সাল বিএমএতে প্রভাব খাটিয়ে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারেন বলে প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে।
ডা. ফয়সাল ইকবাল চৌধুরীকে বিতর্কিত বক্তব্য ও কার্যক্রম থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দেওয়া; ফয়সাল ইকবাল কর্তৃক ভয়ভীতি প্রদর্শনের অনুসন্ধানপূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা; বিএমএর মাধ্যমে চিকিৎসকদের সুরক্ষাবিধি মেনে নির্ভয়ে কাজ করার জন্য উদ্বুদ্ধ করা; হলি ক্রিসেন্ট হাসপাতালকে দ্রæত চিকিৎসার পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধাসম্পন্ন করে পূর্ণাঙ্গ কভিড হাসপাতাল হিসেবে সক্ষমতা তৈরির জন্য বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক মালিক অ্যাসোসিয়েশনকে নির্দেশ দেওয়া ও নিবিড় তদারকির মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা এবং অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনারের নেতৃত্বে গঠিত মনিটরিং কমিটিতে স্বাচিপ ও বিএমএর গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত করে বেসরকারি হাসপাতালে প্রশাসনিক ও চিকিৎসা কার্যক্রম মনিটরিং জোরদার করার সুপারিশ করা হয়। অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএমএ নেতা ডা. ফয়সাল ইকবাল চৌধুরী বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে প্রতিবেদনে যে অভিযোগ আনা হয়েছে তা মিথ্যা, কাল্পনিক ও ভিত্তিহীন। এটি চট্টগ্রামের নোংরা রাজনীতির দ্বারা প্রভাবিত রিপোর্ট। হলি ক্রিসেন্টের সঙ্গে আমার কোনো সম্পৃক্ততা ছিল না। বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক মালিক সমিতি হলি ক্রিসেন্ট তৈরি করেছে। বিএমএর প্রতিনিধি হিসেবে সেখানে গিয়েছিলাম। আমি কোথাও থেকে এক টাকা নিইনি। কেউ প্রমাণ দেখাতে পারলে সমস্ত পদ-পদবি থেকে পদত্যাগ করব। ক্লিনিক মালিক সমিতি টিকে গ্রুপ থেকে ১৫ লাখ টাকা নিয়েছে শুনেছি। তার সব কিছুই করেছে ক্লিনিক মালিক সমিতি।
এদিকে ডা.ফয়সাল ইকবাল চৌধুরীকে নিয়ে একটি প্রিিতবেদন মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর কথা স্বীকার করেন পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি মো.হায়দার আলী খান। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের বেসরকারি স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা অধিশাখার যুগ্ম সচিব উম্মে সালমা তানজিয়া বলেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো বিএমএ নেতা ডা.মোহাম্মদ ফয়সাল ইকবাল চৌধুরী সম্পর্কে একটি বিশেষ প্রতিবেদন পেয়েছি। এটি সচিব স্যারের দপ্তর ঘুরে আমার টেবিলে এসেছে। এটি উচ্চপর্যায়ের সিদ্ধান্তের জন্য অপেক্ষমাণ রয়েছে।’ সূত্র-সমকাল