1. [email protected] : admi2017 :
  2. [email protected] : Daily Khabor : Daily Khabor
  3. [email protected] : rubel :
  4. [email protected] : shaker :
  5. [email protected] : shamim :
বুধবার, ৩১ মে ২০২৩, ০৬:০৭ অপরাহ্ন

টাকা উদ্ধারের যে গল্প গোয়েন্দা কাহিনীকেও হার মানায়!

ডেইলি খবর নিউজ ডেস্ক
  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ৪ জুন, ২০২০
  • ১৭১ বার পড়া হয়েছে

গত মে মাসের ১০ তারিখের ঘটনা। রাজধানীর পুরান ঢাকার ইসলামপুরে ন্যাশনাল ব্যাংকের একটি গাড়ি থেকে ৮০ লাখ টাকা উধাও হয়ে যায়। গাড়িতে ছিলেন চারজন। ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা, দুইজন সিকিউরিটি গার্ড আর ড্রাইভার। দিন দুপুরে চারজন মানুষের সামনে থেকে ৮০ লাখ টাকা ভর্তি বস্তা উধাও। কিন্তু গাড়িতে থাকা কেউ কিছু জানেন না! এ এক অবিশ্বাস্য ঘটনা। সরল চোখে, এটাকে ওই চারজনের কারসাজি হিসেবে ধরে নেওয়া খুবই স্বাভাবিক। হয়েছেও তাই। ন্যাশনাল ব্যাংক কর্তৃপক্ষ গাড়িতে থাকা ওই চারজনকে আসামি করে ডিএমপি’র কোতোয়ালী থানায় একটি মামলা করে। তদন্তে নামে থানা পুলিশ। আর ঘটনার পরপরই ছায়া তদন্তে নামে ডিএমপি’র ডিবি দক্ষিণের কোতোয়ালী জোনাল টিম।

গাড়িতে থাকা ওই চারজনের সাথে কথা বলে পুলিশ এটা বুঝতে পারে, টাকাটা গাড়ি থেকে অন্য কেউ সরিয়েছে। কিন্তু কে সে? কীভাবে করলো? কখন করলো? সাথে কারা ছিলো? অন্য কারও ইন্ধন আছে কি-না, এসব প্রশ্নের উত্তর জানা যে খুবই দরকার।

শুরুতেই ঘটনাস্থল ধরে এগুতে থাকে পুলিশ। ঘটনার পূর্বাপর জানতে টাকা ভর্তি গাড়িটি যেখানে রাখা ছিলো তার আশপাশের ভবনে থাকা সিসিটিভির ফুটেজ সংগ্রহ করে পুলিশ। শুরু হয় ফুটেজ বিশ্লেষণ। অনেক ফুটেজ বিশ্লেষণের পর একটি ফুটেজে দেখা যায়, থামানো গাড়ি থেকে এক ব্যক্তি একটি বস্তা নিয়ে রিকশাযোগে চলে যাচ্ছেন। কিন্তু ওই ব্যক্তির মুখটা অস্পষ্ট।

ওই রিকশাটিকে অনুসরণ করে সড়কের অন্যান্য ভবনের ফুটেজ সংগ্রহ করে পুলিশ। এভাবে প্রায় শতাধিক ফুটেজ বিশ্লেষণে ওই ব্যক্তির মুখের একটি স্পষ্ট ছবি পাওয়া যায়। কিন্তু প্রশ্ন হলো, কে এই ব্যক্তি? কি তার পরিচয়? পুলিশের কাছে থাকা অপরাধীদের ছবির সাথে ওই ব্যক্তির চেহারা মেলাতে শুরু করে পুলিশ। কয়েক হাজার ছবি মেলানোর পর দেখা যায়, টাকার ওই বস্তাটি নিয়ে যাওয়া ব্যক্তির নাম হান্নান।

এবার হান্নানের অবস্থান জানা প্রয়োজন। তার অবস্থান শনাক্তে পুলিশের তদন্ত অভিজ্ঞতার সাথে যুক্ত করা হয় প্রযুক্তির মিশেল। প্রায় ২০ হাজার নম্বর বিশ্লেষণে হান্নানের একটি মোবাইল নম্বর পায় পুলিশ। কিন্তু এ কী? নম্বর যে বন্ধ!

পরিস্থিতির বিবেচনায় ভিন্ন কৌশল নেয় পুলিশ। সিদ্ধান্ত হয় এমন কাউকে টার্গেট করার যিনি হান্নানের অবস্থান জানাতে পারবেন। বিভিন্ন সূত্র থেকে পুলিশ জানতে পারে, হান্নানের চতুর্থ স্ত্রী পারভীনের আলমগীর নামে এক ভাই আছেন। আলমগীরকে জিজ্ঞাসাবাদ করার সিদ্ধান্ত নেয় পুলিশ। কিন্তু তাতে কয়েকটি ঝুঁকির বিষয় পুলিশকে মাথায় রাখতে হয়। প্রথমত, আলমগীরকে জিজ্ঞাসাবাদের খবর হান্নান জেনে গেলে পুরো পরিশ্রম বৃথা হওয়ার আশংকা রয়েছে। দ্বিতীয়ত,আলমগীর যদি হান্নানের বিষয়ে সত্যি কিছু না জানেন, তাহলে পুলিশ তাঁকে হয়রানি করেছে -এমন অভিযোগও উঠতে পারে। শেষে টাকা উদ্ধার না হলে পুলিশকে নানা ধরনের প্রশ্নের মুখে পড়তে হতে পারে।

প্রতিটি তদন্তে পুলিশকে কিছু না কিছু ঝুঁকি নিতেই হয়। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। সম্ভাব্য ঝুঁকি মাথায় নিয়েই হান্নানের শ্যালক আলমগীরকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। আর তাতে কিছু তথ্যও পাওয়া যায়। আলমগীর পুলিশের কাছে জানায়, ওই ৮০ লাখ টাকার বিষয়ে তার বোন পারভীন জানেন। পারভীন বর্তমানে ঢাকাতে নেই। সে শরীয়তপুরে আছেন। এমন সংবাদ পেয়ে পুলিশের একটি দল ছুটে যায় শরীয়তপুর। কিন্তু বাবার বাড়িতে পারভীনকে পাওয়া গেল না। চাচার বাসায় অভিযান চালিয়েও তাকে পাওয়া গেল না। পরবর্তীতে মামার বাড়ি থেকে পারভীনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে পারভীন জানায়, ন্যাশনাল ব্যাংকের ২০ লাখ টাকা তারা ইতিমধ্যেই খরচ করে ফেলেছেন। বাকি টাকা তার ঢাকার বাসায় আছে। হান্নান বর্তমানে কিশোরগঞ্জের ভৈরবে আছেন। এদিকে, পারভীনকে নিয়ে পুলিশের দলটি টাকা উদ্ধারের জন্য ঢাকার উদ্দেশ্য রওয়ানা দেয়। অন্যদিকে, হান্নানকে ধরতে ডিবির আরেকটি দল কিশোরগঞ্জে যায়। শরীয়তপুর থেকে আসা ডিবির দলটি পারভীনকে নিয়ে তার ধোলাইখালের বাসায় অভিযান চালায়। সেখানে তার বাসার খাটের নিচ থেকে ৬০ লাখ টাকা উদ্ধার করে পুলিশ।

এদিকে, কিশোরগঞ্জের ভৈরব থেকে হান্নানকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। হান্নান পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদের ৮০ লাখ টাকার নিয়ে যাওয়া ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা দেন। হান্নানের ভাষ্যমতে, টানা পার্টির তাদের দলের সদস্যরা ব্যাংকের টাকার ওই গাড়িটিকে অনেক সময় ধরেই ফলো করতে থাকে। গাড়িটি ইসলামপুরে ন্যাশনাল ব্যাংকের ব্রাঞ্চের সামনে থামিয়ে ব্যাংকের ওই কর্মকর্তা ও একজন সিকিউরিটি গার্ড ভেতরে চলে যান। তখন গাড়িতে ড্রাইভার ও আরও একজন সিকিউরিটি গার্ড ছিলেন। টাকার বস্তাটি গাড়ির ভেতরে রাখা ছিলো। তার সাথে থাকা মোস্তফা, বাবুল মিয়া ও আরও দুই-তিনজন মিলে ড্রাইভার ও সিকিউরিটি গার্ডের সাথে কথা বলে ভাব জমিয়ে ফেলেন। এরপর গাড়ির চালককে কৌশলে ব্যাংকের ভেতরে পাঠান। ড্রাইভার গাড়ি রেখে ভেতরে গেলে তার সহযোগীরা বিভিন্ন কথা বলে সিকিউরিটি গার্ডকে অন্যমনস্ক রাখে। তখন সুযোগ বুঝে গাড়ির দরজা খুলে টাকার বস্তাটি নিয়ে রিকশাযোগে তার বাসায় চলে যান তিনি। পরবর্তীতে সুযোগ বুঝে দলের অন্য সদস্যরাও সেখান থেকে সটকে পড়েন।

হান্নানও পুলিশের কাছে দাবি করেন, ৮০ লাখ টাকার মধ্যে ২০ লাখ ইতিমধ্যেই খরচ হয়ে গেছে। তার কিছু টাকা দলের সদস্যদের মধ্যে ভাগবাটোয়ারা করেছেন। কিছু টাকা দিয়ে ঋণ শোধ করেছেন। তার নামে থাকা মামলাগুলো পরিচালনা করতে খরচ করেছেন এবং মাজারে মানত পূর্ণ করে টাকা দিয়েছেন। তবে, পুলিশ হান্নানের তথ্যগুলো খতিয়ে দেখছে।

জিজ্ঞাসাবাদে হান্নান আরও জানান, তার বাসায় অস্ত্র আছে। এই তথ্যের ভিত্তিতে হান্নানের বাসায় তাকে নিয়ে অভিযান চালিয়ে একটি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়। এ ছাড়াও তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে দলের সদস্য মোস্তফাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। মোস্তফার দেওয়া তথ্যমতে, তার বাসায় তল্লাশি করে আরও একটি আগ্নেয়াস্ত্র ও গুলি উদ্ধার করে পুলিশ। পরবর্তীতে টানা পার্টি দলের অপর এক সদস্য বাবুল মিয়াকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এ ঘটনার সাথে যুক্ত বাকি আসামিদের গ্রেপ্তারে পুলিশের অভিযান চলছে।

বিজ্ঞাপন

এ জাতীয় আরো খবর