1. [email protected] : admi2017 :
  2. [email protected] : Daily Khabor : Daily Khabor
  3. [email protected] : rubel :
  4. [email protected] : shaker :
  5. [email protected] : shamim :
শুক্রবার, ৩১ মার্চ ২০২৩, ১০:০৭ অপরাহ্ন

দেশের স্বার্থে সরকারের নয়-ছয় সুদনীতির পরিবর্তন দরকার

ডেইলি খবর নিউজ ডেস্ক
  • আপডেট সময় শনিবার, ১৮ জুলাই, ২০২০
  • ২২৭ বার পড়া হয়েছে

আমানতকারীরা এই সিদ্ধান্তে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির সম্মুখীন। অনেকেই আছেন ব্যাংকে টাকা রেখে পারিবারিক খরচ করেন, সংসার চালান। তারা এই সিদ্ধান্তে এতটাই ক্ষতিগ্রস্ত যে কি করবে কোথায় যাবে সেই দুশ্চিন্তায় অস্থির থাকেন।

সরকার যে উদ্দেশ্যে নয়-ছয় সুদহার নির্ধারণ করার চিন্তা করেছিল এবং চলতি বছরের পহেলা এপ্রিল থেকে কার্যকর করেছে তা এক কথায় চমৎকার এবং প্রশংসার দাবি রাখে। সরকারি সব সিদ্ধান্তে অনেক দিক থেকে অনেক ধরণের মন্তব্য আসে, আসবে এটাই স্বাভাবিক, কারণ কোন সিদ্ধান্তই শতভাগ ত্রুটিমুক্ত হয় না। এটি সরল অংক নয় যে দুই দুই যোগ করলে ফলাফল চার আসবে; এটি সামাজিক- অর্থনৈতিক একটি সিদ্ধান্ত। ফলে তার ধনাত্মক দিক যেমন থাকবে, তেমনি থাকবে ঋণাত্মক দিক। দুটো দিকের বিচার বিশ্লেষণ করে যা সমাজের জন্য, দেশের অর্থনীতির জন্য বেশি উপকারি সেই সিদ্ধান্তটি টিকে থাকবে, এটাই হওয়া উচিত।

একটা সময় বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সার্কুলারের মাধ্যমে একটা সুদের হার ঠিক করে দিত কিন্তু সেই হার ছিল খাতভিত্তিক। কখনো বা সুদহারের একটা সীমা বেঁধে দেওয়া থাকতো। কিন্তু সরকার তথা বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্ধারিত এই নয়-ছয় সুদহার পূর্বের নীতি থেকে ভিন্ন কিন্তু উদ্দেশ্য বেশ ভাল। উদ্দেশ্য হচ্ছে ব্যবসায়ের খরচ কমানো কারণ সুদের হার বেশি হবার কারণে ব্যবসায়ের খরচ বৃদ্ধি পায় যা দেশের আর্থিক খাতের খেলাপি ঋণ বৃদ্ধিতে সহায়তা করে অর্থাৎ সুদের হার কমিয়ে দিলে সেই সম্ভাবনা কমে যাবে, ব্যাংকিং খাত শক্তিশালী হবে। এটাতো সত্যি যে বাংলাদেশে ব্যবসায়ের খরচ অন্যান্য যেকোনো দেশের তুলনায় অনেক বেশি (শুধু কি সুদের হার, আরও আছে হাজারো অযাচিত খরচ)।

সরকারকে কেন এই সিদ্ধান্ত নিতে হল

ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে নিয়ন্ত্রণের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক আছে। দেশের সেন্ট্রাল ব্যাংক হিসেবে এই ব্যাংকের কাজ হচ্ছে মনিটারি পলিসি প্রণয়ন করা, দেশের ব্যাংকিং খাত কিভাবে চলবে তার পলিসি গাইডলাইন তৈরি করা, এই খাতের কার্যাবলী নিয়ন্ত্রকের নির্দেশাবলীতে চলছে কিনা তা পর্যবেক্ষণ করা, নিয়মনীতি না মেলে চললে তাদের শাস্তি নিশ্চিত করাসহ নানাবিধ কাজ। সুদের হার ঠিক করার সিদ্ধান্ত নেওয়াও বাংলাদেশ ব্যাংকের কাজ। তবে কেন সরকারের তরফ থেকে বারবার কথা বলা লাগলো, কেন অর্থমন্ত্রী এমনকি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকেও হস্তক্ষেপ করা লাগলো এই সুদের হার নির্ধারণের ক্ষেত্রে? সচেতন মহলের ধারণা বাংলাদেশ ব্যাংক দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক হিসেবে তার যথাযথ দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছে তা সে যে কারণেই হোক। তারা যদি দক্ষতা ও পেশাদারিত্বের সঙ্গে তাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করতে পারত তাহলে ব্যাংক খাতের এই চরম দুর্দশা হয়ত দেখতে হতোনা। বাংলাদেশ ব্যাংকের যে স্বাতন্ত্র্য ও ক্ষমতা তা সততার সাথে ব্যবহার করতে তারা পারেনি, হয়ত বারবার মাথা নুইয়েছে, নিজেদের শিরদাঁড়া সোজা করে থাকতে পারেনি ফলে স্বকীয়ভাবে দাঁড়াতে না পারার কুপমন্ডুকতা তাদেরকে গ্রাস করেছে। নতি স্বীকার করতে হয়েছে বিভিন্ন প্রেশার গ্রুপের কাছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের পছন্দ নয় এমন সিদ্ধান্তও হয়ত নিতে হয়েছে। যার ফলে খেলাপি ঋণ বেড়েছে হু হু করে, এই বৃদ্ধিকে রোধ করার জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি বা নেয়ার চেষ্টা করা হলেও তা বাস্তবে রুপ নেয়নি। তাছাড়া খেলাপি ঋণ আদায়ে যে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া দরকার সেখানেও গলদ ছিল, ঋণ পুনঃতফসিলীকরণের নিয়ম বারবার পরিবর্তন করা হয়েছে যা মূলত ভাল ঋণগ্রহীতাদের বিশেষ উপকারে আসেনি বরং ক্ষতি করেছে, স্বেচ্ছা খেলাপিদের উৎসাহিত করেছে, খুব বেশি খেলাপি ঋণ আদায় তো হয়-ই-নি বরং নতুন কিছু ঋণ খেলাপিঋণ হবার ক্ষেত্র সৃষ্টি হয়েছে।

মূলত সরকার এই সিদ্ধান্ত গ্রহণে নিজেকে সম্পৃক্ত করেছে কারণ সরকার বাংলাদেশ ব্যাংকের উপর সেই আস্থা ধরে রাখতে পারেনি। সরকার ভেবেছে সরকারি হস্তক্ষেপ দেশের জন্য ভাল হবে। সেজন্য এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে এবং সিদ্ধান্তটি ব্যাংকিং খাতের উপর একপ্রকার জোর করে চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। ব্যাংক মালিকদের সংগঠন যদিও নিম রাজি ছিল এবং এই বিষয়কে সামনে রেখে সরকারের কাছ থেকে বেশ কিছু সুবিধা আদায় করে নিয়েছে কিন্তু ব্যাংক ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ শুরু থেকেই বিরোধিতা করে শেষমেশ মেনে নিতে বাধ্য হয়েছেন। কিন্তু বর্তমান প্রেক্ষাপটে এই নয়-ছয় সুদনীতি ভাল কোন ফল বয়ে নিয়ে আসছে না বলেই প্রতীয়মান হচ্ছে।

সুদ-হার বেঁধে দেওয়ার ফলাফল

সুদের হার নয়-ছয়ে নির্ধারণ করে দিলে ব্যবসায়ীদের ব্যবসার খরচ কমে যাবে ফলে ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণ কমে যাবে। কথা সত্য। যারা বড় এবং সৎ ব্যবসায়ী তাদের জন্য আর্থিক খরচ অনেক বড় একটা বিষয়। উচ্চহারে সুদ বহন করে তারা ক্লান্ত। দিনরাত ২৪ ঘন্টা অফিস বা ফ্যাক্টরি চলে না ঠিকই কিন্তু সুদের চাকা বন্ধ হয়না। সুদ প্রতি তিনমাসে মূল পুঁজিতে পরিণত হয়। চক্রবৃদ্ধি হারে সুদ বাড়ে, সবাই জানেন। কিন্তু যখন সুদের হার ১৩-১৭ শতাংশ হয় তখন চরম প্রতিযোগিতার এই সময়ে মুনাফা করে সুদসহ আনুষঙ্গিক সব খরচ মিটিয়ে লাভ করে ব্যবসায়ে টিকে থাকা সত্যিই কঠিন হয়ে পড়ে। এদের জন্য এই সুদ হার কমানো খুব যুক্তিযুক্ত।

কিন্তু যারা স্বেচ্ছা-খেলাপি তাদের জন্য? তাদের ক্ষেত্রে সুদ হার কমানোই কি আর বাড়ানোই কি। তারাতো সম্মানিত (!) শ্রেণি। তাদের কমিয়ে বাড়িয়ে বিশেষ কোন লাভ নেই। তারা ধরা ছোঁয়ার বাইরে, বিশেষ এক প্রজাতি, তারা এই দেশে তো কয়দিন পরেই বিদেশে। শুধু দেশে নয়, তাদের বিত্ত বৈভব সারা বিশ্বময়, করোনা ভাইরাসের মত তাদের অবাধ চলাচল। সুতরাং সুদের হার কমিয়ে তাদের লাভ ও নেই, লোকসান ও নেই।

অন্যদিকে ছোট ও মাঝারী ব্যবসায়ীদের জন্য এই নির্ধারিত সুদের হারও খুব যুক্তিযুক্ত কারণ এটি তাদেরও ব্যবসায়ের খরচ কমাবে। কিন্তু তাদের টাকা দেবে কে? ব্যাংক তাঁদের টাকা দিতে চাইবে না। ভাল করে খোঁজ নিলে জানা যাবে ব্যাংক তাদের ঋণ দিতে অনাগ্রহ প্রকাশ করছে প্রতিনিয়ত। যুক্তি হিসেবে একটাই কথা এসএমইতে ঋণ দিতে পরিচালন খরচ অনেক বেশি। আমানতকারীর টাকার সুদসহ অন্যান্য খরচ বাদ দিলে তাদের লাভ তো দূরের কথা মূলধনে টান পড়বে। ফলে তারা ঋণ না দিয়ে সরকারি বন্ডে বিনিয়োগ করাকে যৌক্তিক মনে করছে। ঋণ না পেলে দেশের ছোট ও মাঝারী শিল্পের বিকাশ হবে কিভাবে? আর ছোট ও মাঝারী ব্যবসায়ের মুনাফার হার বেশ ভাল। তাদের বাহুল্য খরচ ও কম। তাই তাদের ঋণের প্রবাহ দরকার। তাদের মধ্যে খেলাপি ঋণের হার ও কম। সরকারি সদ্ধান্তে এই শ্রেণিটি বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে, ঋণের প্রবাহ থেকে তারা বঞ্চিত হবে, হচ্ছে।

আমানতকারীরা এই সিদ্ধান্তে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির সম্মুখীন। অনেকেই আছেন ব্যাংকে টাকা রেখে পারিবারিক খরচ করেন, সংসার চালান। তারা এই সিদ্ধান্তে এতটাই ক্ষতিগ্রস্ত যে কি করবে কোথায় যাবে সেই দুশ্চিন্তায় অস্থির থাকেন। সরকারি সঞ্চয় পত্রেও তাদের সুবিধা সংকুচিত হয়ে আসছে। ফলে তারা বেশি লাভের আশায় বেশি সুদে এমন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে টাকা দিবে বা দিচ্ছে যারা তাদেরকে নিঃস্ব করে ফেলবে। ক্ষতিগ্রস্ত অনেকেই হচ্ছেন এমন উদাহরণ আমরা হরহামেশাই দেখতে পাই।

বিবিধ কারণেই দেশের বৃহত্তর স্বার্থে সরকারকে এই সিদ্ধান্তকে প্রত্যাহার করে সুদের হার নির্ধারণ বাজারের চাহিদা ও জোগানের উপর ছেড়ে দেওয়া উচিত। আর খুব বেশি হলে ঋণের সুদের একটা সিলিং করে দেওয়া যেতে পারে। যেমন কৃষিখাতে ক-খ, ছোট শিল্পে, ক-গ, বড় শিল্পে ক- ঘ, মাঝারী শিল্পে ক-ন ইত্যাদি। আমানতের কোন সিলিং দরকার নেই। আর যারা স্বেচ্ছা খেলাপি তাদের ব্যাপারে সরকারের অবস্থান হওয়া উচিত খুব কঠোর। এখানে কোন ধরনের নমনীয়ভাব রাখা উচিত হবে না। দেশে সুস্থ একটা শ্রেণি তৈরি হোক এটা সকলের চাওয়া, লুটেরা শ্রেণি দেশ ও দশের শত্রু। আর বাংলাদেশ ব্যাংককে দক্ষতার সঙ্গে কাজ করতে হবে পাশাপাশি সরকারের উচিত হবে না তাদের কাজে কোন ধরনের হস্তক্ষেপ করা। আমরা একটা শক্ত ও সৎ ব্যাংকিং খাত চাই, নাহলে দেশ এগুবে কিভাবে? করোনাকে জয় করে দেশের অর্থনীতিক উন্নয়নের গতি তরান্বিত হবে কিভাবে?

লেখক: কলাম লেখক ও অর্থনীতি বিশ্লেষক
ফাউন্ডার ও সিইও, ফিনপাওয়ার লিডারশীপ ইন্টারন্যাশনাল

বিজ্ঞাপন

এ জাতীয় আরো খবর