মাহমুদা আক্তার খানম: দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটারদের উপস্থিতির হার বাড়ানোর পরিকল্পনা নিয়ে এগুচ্ছে নির্বাচন কমিশন। কোনো রাজনৈতিক দল নয়। শতকরা ৫৬ভাগ ভোটার উপস্থিতি প্রতিটি ভোট কেন্দ্রেই উপস্থিত হবে এতে কোনো সন্দেহ নেই। ইসির সুত্রগুলো জনায় বাংলাদেশে ভোটের পরিবেশ থাকলে ভোটাররা সানন্দে ভোটকেন্দ্রে ভোট দিতে উপস্থিত হন। ভোটাররা যাতে নিরাপদে ভোট কেন্দ্রে আসতে পারে তার পরিবেশ সৃস্টি করার কাজই করতে চায় নির্বাচন কমিশন। রাজনৈতিক দলগুলোর অংশগ্রহণ নয়, ভোটার উপস্থিতিকে জোর দিচ্ছে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি। রেওয়াজ অনুযায়ী ৯ নভেম্বর বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করে নির্বাচনের সার্বিক প্রস্তুুতি সম্পর্কে অবহিত করবে কাজী হাবিবুল আউয়াল কমিশন। এরপরই আগামী সপ্তাহে তপসিল ঘোষণা করবে ইসি। প্রস্তুতির শেষ পর্যায়ে এসে রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগের পরিকল্পনায় কমিশন সদস্যদের মধ্যে আলোচনা চুড়ান্ত পর্যায়ে হয়েছে।
ভোটার উপস্থিতির বিষয়ে সম্প্রতি প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছিলেন, কেউ শব্দটা ব্যবহার করছেন পারটিসিপেটরি, কেউ ব্যবহার করছেন ইনক্লুসিভ। পারটিসিপেটরি বলতে আমি যেটা বুঝেছি ব্যাপক ভোটার যদি এসে ভোটদান করে। কে এলো, কে এলো না আমরা সেটা নিয়ে মাথা ঘামাব না।
গত ৪ নভেম্বর ২৬টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠক করলেও বেশির ভাগ রাজনৈতিক দল ভোটের পরিবেশ নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছিল। ১৮টি দল অংশ নেয়নি। এই পরিস্থিতিতে কমিশন ভোটার উপস্থিতিকে সর্বাধিক গুরুত্ব প্রদান করছে। এদিকে নির্বাচন সংশ্লিষ্টদের নিরাপত্তার জন্য সরকারকে চিঠি দিয়েছে ইসি। এছাড়াও সম্ভাব্য রিটার্নিং অফিসার ও সহকারী রিটার্নিং অফিসারদেরও নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে কমিশন। এদিকে একটি সুত্র জানায় রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগের পরিকল্পনায় কমিশন সদস্যদের মধ্যে টানাপড়েন তৈরি হয়েছে। পাঁচ সদস্যের কমিশনের অন্তত দুজন সদস্য এই পরিকল্পনায় একমত হতে পারেননি। জাতীয় সংসদের পাঁচ বছরের মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার আগের ৯০ দিনের মধ্যে পরবর্তী সংসদ নির্বাচন করার সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে। চলতি একাদশ সংসদের মেয়াদ পূর্ণ হবে আগামী ২৯ জানুয়ারি। এর আগের ৯০ দিন; অর্থাৎ ১ নভেম্বর থেকে ২৯ জানুয়ারির মধ্যে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন করতে হবে। তবে ভোটের তপসিল কবে ঘোষণা করতে হবে, এ বিষয়ে আইনে সুনির্দিষ্ট কিছু বলা নেই।
ইসি সংশ্লিষ্টরা জানান, এর আগের সব নির্বাচনে তপসিল ঘোষণার দিনে রিটার্নিং কর্মকর্তার নাম ঘোষণা করা হয়েছে। রিটার্নিং কর্মকর্তা পরবর্তী সময়ে ভোট গ্রহণ কর্মকর্তা নিয়োগে একটি প্যানেল প্রস্তুত করে ঐ প্যানেল থেকে প্রয়োজনীয় সংখ্যক প্রিজাইডিং ও পোলিং কর্মকর্তা নিয়োগ করেছেন। আরিপওতেও (গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২) ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা নিয়োগের বিষয়টি সুনির্দিষ্ট করা রয়েছে। এবারে ইসির পরিকল্পনায় ছিল নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে রিটার্নিং কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেওয়ার। প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি শেষ করার জন্য তাদের ৭ থেকে ১০ দিন সময় দেওয়া হবে। তারপর নির্বাচনের তপসিল ঘোষণা করা হবে। তপসিল ঘোষণার সম্ভাব্য সময় ১৩ অথবা ১৪ নভেম্বর হতে পারে।
এদিকে নির্বাচন কমিশনের একাধিক সুত্রের সাথে আলাপ কওে জানা গেছে নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে জাতির উদ্দেশে দেওয়া এক ভাষণের মধ্য দিয়ে ভোটের তপসিল ঘোষণা করবেন সিইসি। শুধু ব্যালট ছাপানোই এখন বাকি রয়েছে, যাকে ভোটের সর্বশেষ ধাপ হিসেবে বলা হয়ে থাকে। এটি সাধারণত মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের সময়সীমার পরই ছাপানো হয়ে থাকে। দেশের সরকার বিরোধী কোনো দল নির্বাচনে না এলেও নির্বাচন কমিশনের কোনো কিছু করার থাকবে না। সিইসি বলেছেন, নির্বাচনের পরিস্থিতি সব সময় শতভাগ অনুকূলে থাকে না। তবুও সাংবিধানিক দায়িত্ব ও শপথের কারণে নির্বাচন কমিশনকে ভোট আয়োজন করতে হবে। ভোটারদের উপস্থিতিই জানান দিবে নির্বাচন কতটা সফল হয়। তাই নির্বাচনে ভোটারদের উপস্থিতির দিকেই মনোনিবেশ নির্বাচন কমিশনের।