বুধবার, ১৫ জানুয়ারি, ২০২৫, ২ মাঘ ১৪৩১

নষ্ট করার মতো হাতে এক মুহূর্ত সময়ও নেই

প্রকাশিত: ১০:৩৬ এএম, এপ্রিল ২২, ২০২০

নষ্ট করার মতো হাতে এক মুহূর্ত সময়ও নেই

আবু আলম মো. শহীদ খান: সাধারণ ছুটি আর লকডাউনের দোলাচলে বাংলাদেশ। লকডাউন ভেঙে ট্রাকে করে নারায়ণগঞ্জ ছেড়ে যাওয়ার সময় ৪৬ জনকে আটক করে বাসায় ফেরত পাঠিয়েছে পুলিশ। করোনার ভয়াবহতার সময়ে লকডাউন উপেক্ষা করে সামাজিক দূরত্ব বজায় না রেখেই লাখো মানুষ আল্লামা মাওলানা যুবায়ের আহমদ আনসারীর জানাজায় অংশ নিয়েছে। লক্ষ্মীপুরে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নুর উদ্দিন চৌধুরী নয়নের বাবা সুলতান আহমেদ চৌধুরীর জানাজায় সহস্রাধিক মানুষ উপস্থিত হয়েছে। অলিগলি, রাস্তাঘাট, কাঁচাবাজার, এমনকি চায়ের দোকানে মানুষের জটলা আর আড্ডা বন্ধ করতে হিমশিম খাচ্ছেন পুলিশ, র‌্যাব ও সেনা সদস্যরা। আমরা সবাই জানি যে করোনার ভয়াবহ সংক্রমণ ঠেকাতে না পারলে আমরা মহাদুর্যোগে নিপতিত হব। আমাদের সীমিত স্বাস্থ্য অবকাঠামো শত শত রোগীর চিকিৎসাসেবা দিতে পারবে না। প্রধানমন্ত্রী জনগণকে ঘরবন্দি থাকতে আবেদন জানিয়েছেন। কিন্তু ঘরে থাকার আবেদনে কান দিচ্ছে না অনেকেই। রাষ্ট্রীয়ভাবে আরো কঠোর অবস্থানে যাওয়ার তাগিদ দেওয়া হচ্ছে অনেক আগে থেকেই। কিন্তু সরকার লকডাউন না করে মানুষের চলাচল সীমিত করে একে অপরের সঙ্গে দূরত্ব বজায় রাখার মাধ্যমে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়া রোধ করার পন্থাকে গুরুত্ব দেয়। জনসাধারণকে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কোনোভাবেই ঘরের বাইরে না আসার জন্য অনুরোধ জানানো হয়। কিন্তু সাধারণ ছুটি ঘোষণাকে মানুষ উৎসব ভেবে ঢাকাসহ বিভিন্ন নগর ছেড়ে গ্রামে রওনা হয়। সাধারণ ছুটি অব্যাহত ও গণপরিবহন বন্ধ থাকা সত্ত্বেও পোশাকশিল্প মালিকদের অবিমৃশ্যকারিতায় করোনাভাইরাস আতঙ্কের মধ্যেই পোশাক কারখানাগুলো খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত জানার পর শত ভোগান্তি সঙ্গী করেই পোশাক শ্রমিকদের অনেকে কর্ম এলাকায় ফিরতে শুরু করেন। আবার কারখানা বন্ধের ঘোষণা দেওয়া হয়। শুরু হয় ফিরতি যাত্রা। ১ এপ্রিল স্বাস্থ্যবিধি মেনে দেশের তৈরি পোশাক কারখানা চালুর কথা জানান বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, তিনি কিছুই জানেন না কারখানা খোলার বিষয়ে। সমন্বয়হীনতা আর কাকে বলে! শুরুতে কিছু কড়াকড়ি আরোপ করার ক্ষেত্রে আইনবহির্ভূত কয়েকটি ঘটনা মিডিয়া, বিশেষ করে সোশ্যাল মিডিয়ায় নেতিবাচক মনোযোগ পায়। প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কিছুটা পিছু হটে জনগণকে বোঝানোর কৌশল নেয়। সারা দেশে সন্ধ্যা ৬টা থেকে পরদিন সকাল ৬টা পর্যন্ত বাইরে বের হওয়া যাবে না এবং বের হলেই আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে—১০ এপ্রিল এমন আদেশও জারি করা হয়। কিন্তু নানা অজুহাতে ঘর থেকে মানুষের বের হওয়া বন্ধ করা যাচ্ছে না। পুরো ভারত লকডাউন ঘোষণা করেছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। অন্যান্য দেশেও একই ধরনের ঘোষণা আসে। এসব ঘোষণা একেবারেই পরিষ্কার ছিল। কিন্তু আমরা সুস্পষ্ট বার্তা দিতে পারিনি। লকডাউনকে লকডাউনই বলতে হবে, সাধারণ ছুটি নয়। রেডিও, টিভি, গণমাধ্যমের পাশাপাশি সব মসজিদের লাউড স্পিকার থেকে মানুষকে ঘরে থাকার অনুরোধ জানাতে হবে। কাউকে কোনো ছাড় নয়, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের কঠোর হতে হবে। প্রধানমন্ত্রী যেসব নির্দেশনা দিয়েছেন সেগুলো কার্যকর বাস্তবায়নের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোকে তৎপর হতে হবে এখনই। মন্ত্রণালয়ে কেন্দ্রীয় কন্ট্রোল রুম খুলে সারা দেশের পরিস্থিতির খবর নিয়ে জরুরি নির্দেশনা দিতে হবে। মনে রাখতে হবে, এখন সাধারণ সময় নয়, আমলাতান্ত্রিক মনোভাব ছুড়ে ফেলার সময়। সবাইকে নিয়ে একসঙ্গে কাজ করার সময়। এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীদের নিয়ে বিশেষ মন্ত্রিসভা কমিটি করা যেতে পারে; যে কমিটি প্রতিদিন বসে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় থেকে পাওয়া তথ্য-উপাত্ত ও সুপারিশ আলোচনা করে নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্ত ও ব্যবস্থা নেবে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে কর্মকর্তা ও বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে একাধিক টিম গঠন করে বিভিন্ন দায়িত্ব ভাগ করে দিতে হবে। এখন তাদের প্রধান কাজ পরীক্ষা আর পরীক্ষা, চিকিৎসা দেওয়া, রোগী পৃথক করা, রোগী যাদের সঙ্গে মেলামেশা করেছে তাদের খুঁজে বের করা, চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের কাছে সুরক্ষা সামগ্রী পৌঁছানো, তাঁদের থাকা-খাওয়ার পৃথক ব্যবস্থা, টেস্ট কিট ও সুরক্ষা সামগ্রী তৈরি, আমদানি ও সুষ্ঠু বিতরণ। জাতিকে বাঁচানোর জন্য নষ্ট করার মতো এক মুহূর্ত সময়ও নেই আমাদের হাতে! সূত্র: কালের কণ্ঠ লেখক : সরকারের সাবেক সচিব
Link copied!