1. [email protected] : admi2017 :
  2. [email protected] : Daily Khabor : Daily Khabor
  3. [email protected] : rubel :
  4. [email protected] : shaker :
  5. [email protected] : shamim :
সোমবার, ২৯ মে ২০২৩, ০৬:০৯ অপরাহ্ন

নিয়োগেও ব্যাপক অনিয়ম দুর্নীতি

ডেইলি খবর নিউজ ডেস্ক
  • আপডেট সময় রবিবার, ৩০ আগস্ট, ২০২০
  • ২৪৩ বার পড়া হয়েছে

ঋণ বিতরণে মহাকেলেঙ্কারির পর এবার বেসিক ব্যাংক লিমিটেডে লোক নিয়োগেও ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির তথ্য পাওয়া গেছে। ন্যূনতম যোগ্যতা ও নীতিমালা লঙ্ঘন করে বিভিন্ন পদে দেয়া হয়েছে ৮৭১ জনের নিয়োগ। অনেকের ক্ষেত্রে অবতীর্ণও হতে হয়নি নিয়োগ পরীক্ষায়, দিতে হয়নি জীবনবৃত্তান্ত ও আবেদনপত্র। পত্রিকায় ছিল না কোনো নিয়োগ সংক্রান্ত বিজ্ঞাপন। এমনকি মানা হয়নি সরকারি চাকরির বয়সসীমা। শুধু তাই নয়, কোনো ক্ষেত্রে ছিল না যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদনও। এসব নিয়োগের অধিকাংশই ছিল বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তার পদ।

বাংলাদেশ কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেলের (সিএজি) প্রতিবেদনে উঠে এসেছে নজিরবিহীন এসব অনিয়ম ও দুর্নীতির তথ্য। প্রতিবেদনটি প্রধানন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে। শিগগিরই এটি অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির কাছে পাঠানো হবে। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।

এ প্রসঙ্গে বেসিক ব্যাংকের সদ্য বিদায়ী চেয়ারম্যান এমএ মজিদ বলেন, ব্যাংকের নিয়োগ নিয়ে ফাংশনাল একটি অডিট হয়। তখন ৭০ জনের চাকরিচ্যুত করা হয়। তবে সিএজি (বাংলাদেশের কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল কার্যালয়) রিপোর্টের ভিত্তিতে অনেকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। অনেক প্রার্থীর সনদ জাল ছিল, অযোগ্য ছিল। কিন্তু এরপরও এসব তোয়াক্কা না করে ব্যাংকের পরিচালনা বোর্ড নিয়োগ দিয়েছে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, যে কেউ চাকরি চাইতে পারে, সেটি তার দোষ নয়। কিন্তু যে চাকরি দিয়েছেন সে এর জন্য দায়ী।

ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) রফিকুল আলম বলেন, অডিট রিপোর্ট হয়েছে আমি যোগদান করার আগের ঘটনা নিয়ে। রিপোর্ট না দেখে তাৎক্ষণিক মন্তব্য করতে পারছি না। তবে যেটুকু জেনেছি এই রিপোর্ট সংসদীয় কমিটির কাছে গেছে। সংসদীয় কমিটি কি পদক্ষেপ নিয়েছে সেটি আমার জেনে বলতে হবে। ৮৭১ জনের নিয়োগে অনিয়মের বিষয়ে অডিট প্রতিবেদনে সুনির্দিষ্টভাবে তুলে ধরা হয়েছে। এর মধ্যে ছিল আবু শহীদ (৪২)। তিনি বেসিক ব্যাংকে নিয়োগের জন্য আবেদন করেছিলেন। আবেদনপত্রে পদের স্থানে লিখেছেন ‘সুইটেবল’। ব্যাংকের মানবসম্পদ বিভাগ এই প্রার্থীকে ব্যবস্থাপক পদে নিয়োগ দিয়েছে। ব্যাংকের নীতিমালায় ব্যবস্থাপক পদে প্রার্থীর বয়স সর্বোচ্চ ৪০ বছরে নির্ধারণ করে দেয়া আছে। কিন্তু আবু শহীদের নিয়োগের সময় বয়স ছিল ৪২ বছর।

এছাড়া মিসেস শায়লা সেতু কোনো পরীক্ষা ছাড়াই সরাসরি অফিসার পদে নিয়োগ পেয়েছেন। প্রার্থীর শিক্ষাগত যোগ্যতা বিএ (সম্মান) তৃতীয় বিভাগ। এটি অফিসার পদে নিয়োগ পাওয়ার ক্ষেত্রে পুরোপুরি অযোগ্য। এই প্রার্থীকে নিয়োগ দিয়েই শেষ হয়নি। ব্যাংকে কোনো ধরনের অবদান ছাড়াই এই কর্মকর্তাকে সহকারী ব্যবস্থাপক পদে ‘এক্সিলারেটেড প্রমোশন’ দেয়া হয়। একইভাবে নিয়োগ নীতিমালা উপেক্ষা করে প্রার্থীর সিভি বা আবেদন না থাকার পরও নিয়োগ এবং প্রয়োজনীয় যোগ্যতা অর্জন না করা সত্ত্বেও ‘এক্সিলারেটেড প্রমোশন’ দেয়া হয় অনেক প্রার্থীকে।

এছাড়া ভুয়া সনদে চাকরিতে যোগদান, চাকরিচ্যুতির পর পুনরায় নিয়োগ এবং বয়স্ক ও অনুপযুক্ত প্রার্থীকে উচ্চতর পদে নিয়োগ দেয়ার মতো অনিয়ম শনাক্ত করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, ব্যাংকের নীতিমালা অনুযায়ী কৃতিত্বপূর্ণ বা দুঃসাধ্য কাজ ও কোনো অসাধারণ কর্মকাণ্ড বাস্তবায়ন করার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে দেয়া হয় ‘এক্সিলারেটেড প্রমোশন’। কিন্তু কর্মকালীন এ ধরনের কোনো অবদান বা অর্জন না থাকা সত্ত্বেও ব্যাংকের কর্মকর্তা কনক কুমার পুরকায়স্থ, ফজলুস সোবহান, আবদুল কাইয়ুম মোহাম্মদ কিবরিয়া, গোলাম ফারুক, আহম্মেদ হোসেন, শামীম হাসানকে এক্সিলারেটেড প্রমোশন দিয়ে মহাব্যবস্থাপক পদে বসানো হয়। এছাড়া নিরঞ্জন দেবনাথ, ফিদা হাসান, মোমেনুল হক, মাহবুবুল আলম খান, মাহবুবুল আলম, আরিফ হাসানকে একই প্রমোশন দিয়ে উপমহাব্যবস্থাপক পদে বসানো হয়। আরও দেখা গেছে, এসএম আনিসুজ্জামান, মিসেস সাদিয়া আক্তার শাহিন ও সামিমা আক্তারকে সহকারী মহাব্যবস্থাপক পদে এবং মুস্তাফিজ মনিরকে ব্যবস্থাপক, মিসেস নিসাত নাসরিন ও সোনিয়া হককে সহকারী ব্যবস্থাপক পদে এই প্রমোশন দেয়া হয়। এই প্রমোশন প্রসঙ্গে রিপোর্টে বলা হয়, কোনো প্রকার কৃতিত্ব বা অসাধারণ কর্মকাণ্ড না থাকার পরও বিধিবহির্ভূতভাবে ‘এক্সিলারেটেড প্রমোশন’ দেয়া হয়। এক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত না করে অবৈধ পন্থায় নিয়োগ দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি উপযুক্ত যোগ্যতা না থাকা সত্ত্বেও অনিয়মের মাধ্যমে এসব পদোন্নতি দেয়া হয়েছে। এতে ব্যাংকের প্রশাসনিক শৃঙ্খলা ক্ষতিগ্রস্ত এবং যোগ্যতাসম্পন্ন কর্মকর্তারা পদোন্নতি থেকে বঞ্চিত হয়েছে।

জানতে চাইলে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, এই নিয়োগে অনিয়মের আগে ব্যাংকটির অবস্থা ভালো ছিল। এরপর নানা অনিয়ম হয়েছে। যা এরই মধ্যে প্রকাশ পেয়েছে। সরকারের এ ব্যাংকে লোক নিয়োগ প্রক্রিয়া অবৈধভাবে হতে পারে না। ব্যাংকের পরিচালনা বোর্ড অবৈধ নিয়োগ দিতে পারে না। এই অডিট রিপোর্টের মাধ্যমে বেসিক ব্যাংকের ওই সময়ে কর্তৃপক্ষের অপরাধ প্রমাণিত হয়েছে। এখন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মাধ্যমে আরও অধিক তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে সরকার।

অডিট প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, চাকরির আবেদনপত্র, পত্রিকায় বিজ্ঞাপন প্রকাশ ও নিয়োগ পরীক্ষা ছাড়াই ডিজিএম পদে নিয়োগ দেয়া হয় মোহাম্মদ আলীকে। ২৬৮তম বোর্ড সভায় এই নিয়োগের অনুমোদন দিয়ে শান্তিনগর শাখার প্রধান হিসেবে দায়িত্ব দেয়া হয়। আর এই মোহাম্মদ আলী দায়িত্ব পালনকালে জামানত ঘাটতি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্ব না থাকার পরও অনেক প্রতিষ্ঠানকে ঋণ দিয়েছেন। অনেক ক্ষেত্রে ঋণসীমা লঙ্ঘন করেও ঋণ অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এরপরও ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে সময়মতো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।

অডিট বিভাগ অনুসন্ধান করে দেখতে পায়, অবৈধভাবে প্রার্থীকে নিয়োগ দেয়ার জন্য পরীক্ষার আয়োজন করা হয় ঘরোয়াভাবে। আর এই প্রক্রিয়ায় নিয়োগ পেয়েছে মৌলভীবাজার শাখার সহকারী অফিসার ফারাহ নাজ। তার পরীক্ষার খাতায় মূল্যায়নকারীর স্বাক্ষর নেই, আবেদনপত্রও নেই। পাশাপাশি সহকারী অফিসার পদে ঘরোয়া পরীক্ষার মাধ্যমে নিয়োগ দেয়া হয় খুলনা শাখার সোহেলী পারভীন, প্রধান কার্যালয়ের মুনতাসির আলম, জোয়ারগঞ্জ শাখার সানাউল হক, ব্রাঞ্জ কন্ট্রোল বিভাগের রেজওয়ান মাহবুব, বসুন্ধরা শাখার তাছরিন জাহান ও কামরুল আহম্মেদ, ট্রেনিং ইন্সটিটিউট শাখার মিথুল আহসান, বরিশাল শাখার কাজী মইনুল হোসেন, বাবুবাজার শাখার আজাদ হাওলাদার, কারওয়ান বাজার শাখার শহিদুল ইসলাম, সাতক্ষীরা শাখার কৌশিক কুমার মণ্ডল, প্রধান শাখার রিনা রানী সেন, যশোরের সাবিনা খাতুনসহ অনেককে।

এছাড়া প্রার্থীর ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা নেই, জীবনবৃত্তান্ত জমা দেননি এবং নিয়োগের জন্য আবেদনও করেননি। এরপরও নিয়োগে দেয়া হয়েছে এ ধরনের অনেক প্রার্থীকে। এর মধ্যে রয়েছে কুষ্টিয়া শাখার কৃষ্ণলাল, খুলনা শাখার আজগর আলী, ক্যান্টনমেন্ট শাখার নাহিদ আল মামুন, বনানী শাখার সুমা বেগম, ফকিরহাট শাখার রফিকুল ইসলাম, ট্রেনিং ইন্সটিটিউটের মিথুলা আহসান, ইসলামপুরের কামাল পাশা, বাবুবাজার শাখার মোল্লা মনিরুল ইসলাম, মঠবাড়িয়ার দবির হোসেন, কারওয়ান বাজার শাখার আইরিন পারভিন, কুষ্টিয়া শাখার শেখ হাবিবুর রহমানসহ অনেক প্রার্থীর।

অডিট প্রতিবেদনে বলা হয়, সরকারি প্রতিষ্ঠানে লোক নিয়োগের ক্ষেত্রে সবার প্রতি সম-অধিকার নিশ্চিত থাকলেও ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নিয়োগ নীতিমালা লঙ্ঘন করে ৪৯৮ জনকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের সহকারী অফিসার থেকে অফিসার পদে যোগ্য লোক নিয়োগের ক্ষেত্রে সব পাবলিক পরীক্ষায় ন্যূনতম দ্বিতীয় শ্রেণির সম্মানসহ স্নাতক পাস হতে হবে। তৃতীয় বিভাগপ্রাপ্ত প্রার্থী আবেদনের অযোগ্য। কিন্তু সেক্ষেত্রে শিক্ষাজীবনে এক বা একাধিক তৃতীয় বিভাগপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। নিয়োগ অনিয়মে আরও দেখা গেছে, পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞাপন প্রচার ছাড়াই এ ব্যাংকে ২৯ জন কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে নিয়োগ দেয়া হয়। এছাড়া ভুয়া লিখিত পরীক্ষা নেয়া হয়েছে। যে কারণে পরীক্ষার খাতায় পরীক্ষকের এবং পরিদর্শকের স্বাক্ষর ও তারিখ নেই। তবে কোনো ধরনের সংরক্ষিত কোটা যেমন- মুক্তিযোদ্ধা, উপজাতি, প্রতিবন্ধী ও জেলার ক্ষেত্রে মানা হয়নি। আরও দেখা গেছে, মানবসম্পদ বিভাগে ১৮ জন কর্মকর্তা ও ১১ জন কর্মচারী নিয়োগ দেয়া হয়েছে। কিন্তু এ নিয়োগ দেয়ার আগে নিয়োগ কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কোনো অনুমোদন নেয়া হয়নি।

প্রসঙ্গত, ইতোমধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তদন্তে বেসিক ব্যাংকের তিনটি শাখায় প্রায় সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকা ঋণ জালিয়াতির ঘটনা ধরা পড়েছে। এর মধ্যে গুলশান শাখায় ১ হাজার ৩০০ কোটি টাকা, শান্তিনগর শাখার ৩৮৭ কোটি টাকা, মেইন শাখা প্রায় ২৪৮ কোটি টাকা ও দিলকুশা শাখায় ১৩০ কোটি টাকা অনিয়মের মাধ্যমে ঋণ বিতরণ শনাক্ত করা হয়। পাশাপাশি বেসিক ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ তদন্তে আরও এক হাজার কোটি টাকার জালিয়াতির ঘটনা বেরিয়ে আসে। সব মিলে এখন পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকার জালিয়াতির ঘটনা প্রকাশিত হয়।

বিজ্ঞাপন

এ জাতীয় আরো খবর