নীতিমালায় আটকে আছে এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফল। শিক্ষার্থীকে কোন গ্রেড দেয়া হবে, কেন দেয়া হবে, এর মানদণ্ড কি তা এই নীতিমালায় প্রস্তাব করা হয়েছে। আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটি এ সংক্রান্ত নীতিমালা চূড়ান্ত করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। কিন্তু শনিবার পর্যন্ত সেটি অনুমোদন পায়নি। এ কারণে এগোচ্ছে না ফল তৈরির কাজ। এমন অবস্থায় চলতি ডিসেম্বর মাসের বাকি চার দিনের মধ্যে ফল প্রকাশের বিষয়টি নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।
নীতিমালা অনুমোদন না হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক এসএম আমিরুল ইসলাম। তিনি বলেন, তবে এজন্য ফল তৈরির কাজ থেমে নেই। ছাত্রছাত্রীর বৈশিষ্ট্য এবং এর আগে ঘোষিত গ্রেড তৈরির মানদণ্ড অনুযায়ী ডাটা পুঞ্জীভূত করা হচ্ছে। নীতিমালা পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই দ্রুত ফল প্রস্তুত সম্ভব হবে। গত ৭ অক্টোবর এক সংবাদ সম্মেলনে এইচএসসি পরীক্ষা বাতিল ঘোষণা করেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। একইদিন তিনি জানান, জেএসসি ও এসএসসির ফলের ভিত্তিতে এইচএসসির ছাত্রছাত্রীদের গ্রেড দেয়া হবে। পরে ২৫ নভেম্বর আরেক সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানান, এই পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হবে ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে। মাধ্যমিকের ফলের ওপর ৭৫ শতাংশ এবং নিম্নমাধ্যমিকের ফলের ওপর ২৫ শতাংশ গুরুত্ব দিয়ে তৈরি করা হবে শিক্ষার্থীর গ্রেড।
ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তারা জানান, ফল তৈরির ব্যাপারে কারিগরি কমিটি গঠন করে দেন শিক্ষামন্ত্রী। সেই কমিটি বিভিন্ন বৈঠকে বসে শিক্ষার্থীর বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী ক্যাটাগরি তৈরি করে। দুই পরীক্ষার ফলের ভিত্তিতে গ্রেড তৈরির কথা বলা হলেও বেশকিছু শিক্ষার্থী আছে যারা জেএসসি পাস করেনি। এর মধ্যে ইংরেজি মাধ্যম ও কারিগরি খাতের পরীক্ষার্থী অন্যতম। উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থীও আছে এই গ্রুপে। এভাবে আরও কিছু ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীকে অনায়াসে মূল্যায়ন কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। এ অবস্থায় নীতিমালা তৈরিতে হিমশিম খায় কমিটি।
তবে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক ইসলাম বলেন, সমতা আর ন্যায্যতার আলোকে তারা একটি নীতিমালা তৈরি করেছেন। এরপর সেটার ভিত্তিতে বিভিন্ন বোর্ড এবং উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্রেড সংগ্রহ করেছেন। প্রয়োজনীয় ডাটা তৈরি করে তারা কাজ এগিয়ে রেখেছেন। শিক্ষার্থীকে গ্রেড দেয়া কঠিন হবে না। তিনি আরও বলেন, নীতিমালা চূড়ান্তকরণে মন্ত্রণালয়ে একের পর এক বৈঠক হচ্ছে। সবচেয়ে উপযুক্ত নীতিমালা তৈরির লক্ষ্যে বিশেষজ্ঞরা চিন্তা করছেন ও পরামর্শ দিচ্ছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মন্ত্রণালয় এবং দুটি বোর্ডের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, আনুষ্ঠানিকভাবে যেটা বলা হচ্ছে সেটা বাস্তবতা নয়। কাজে ধীরগতির কারণে মন্ত্রণালয় নীতিমালা অনুমোদন দিতে পারেনি। আর নীতিমালা কাছে না পাওয়ায় তথ্য সংগ্রহ শেষ হলেও বোর্ডও চূড়ান্ত কাজ শুরু করতে পারেনি। নীতিমালা পাওয়ার পরও অন্তত দুই সপ্তাহ লাগবে ফল তৈরিতে। সেই হিসাবে জানুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহে ফল প্রকাশের সম্ভাবনাই বেশি।
সম্প্রতি আলাপকালে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের সচিব অধ্যাপক তপন কুমার সরকার বলেন, ডিসেম্বরের মধ্যেই ফল প্রকাশের লক্ষ্য আমাদের আছে। আসলে এ ব্যাপারে শিক্ষামন্ত্রী যে নির্দেশনা দেবেন সেটাই বাস্তবায়ন করা হবে।
জানা গেছে, কাজ না এগোনোয় ফল প্রকাশের কোনো প্রস্তাবও করা হয়নি। অন্য বছর অন্তত এক সপ্তাহ আগে সময় চেয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে ফল প্রকাশের সারসংক্ষেপ পাঠানো হয়। সাধারণত প্রধানমন্ত্রী একটি দিন ঠিক করে দেন। সেদিনে তার হাতে ফলের সারসংক্ষেপ তুলে দিয়ে ফল প্রকাশের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হয়। পরে শিক্ষামন্ত্রী সংবাদ সম্মেলন করেন। কিন্তু শুক্রবার পর্যন্ত এমন কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি বলে জানা গেছে। সারসংক্ষেপ না পাঠানোর বিষয়টি শুক্রবার যুগান্তরকে নিশ্চিত করেছেন মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন।