পশুর হাট জমেনি, অব্যবস্থাপনা ও বৃষ্টিতে নাকাল ক্রেতা-বিক্রেতা
প্রকাশিত: ০৪:০৭ এএম, জুলাই ৩০, ২০২০
করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকির বিষয়টি মাথায় রেখেই এবার কোরবানির পশুর হাটগুলোতে স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে মানার বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা; কিন্তু রাজধানীর হাটগুলোতে স্বাস্থ্যবিধি মানার কোনো বালাই নেই। এ ছাড়া হাটগুলোতে অব্যবস্থাপনাও প্রকট। প্রতিদিন বৃষ্টিপাতের কারণে কাদাপানিতে থকথকে অবস্থা। পশু ও বিক্রেতাদের জন্য প্রয়োজনীয় ছাউনি নেই বেশির ভাগ হাটে। পশুখাদ্যের সংকটের কথাও জানালেন বিক্রেতারা।
আর এক দিন পর, অর্থাৎ শনিবার দেশে ঈদুল আজহা উদ্যাপিত হবে। করোনা পরিস্থিতির কারণে কোরবানির পশুর হাট নিয়ে সতর্কতা রয়েছে সব মহলে। এ কারণে এবার ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন এলাকায় ১৬টি অস্থায়ী হাট ইজারা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া আছে গাবতলীর স্থায়ী হাট। এর বাইরে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন ডিজিটাল হাটের ব্যবস্থা করেছে।
এমন অবস্থায়ও পশুর হাটগুলোতে এখন পর্যন্ত গরু-ছাগলসহ অন্যান্য পশু এসেছে কম। ক্রেতার সংখ্যাও কম। ক্রেতা-বিক্রেতার মধ্যে গরুর দরদামেও অনেক পার্থক্য লক্ষ করা গেছে।
বুধবার রাজধানীর স্থায়ী পশুর হাট গাবতলী, অস্থায়ী পশুর হাট পুরান ঢাকার রহমতগঞ্জ, হাজারীবাগ ও উত্তরার বৃন্দাবন হাট সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, ক্রেতার মুখে মাস্ক আছে। কিন্তু বিক্রেতাদের বেশির ভাগই মাস্ক পরেননি। হাটের প্রবেশ মুখে নেই হাত ধোয়া বা হাত জীবাণুমুক্ত করার কোনো ব্যবস্থা। হাত দিয়ে গরু বা ছাগল ধরে দেখার ক্ষেত্রেও হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার দেখা যায়নি। একজন আগ্রহী ক্রেতা কোনো একটি গরু হাত দিয়ে ধরে দেখে সরে যাওয়ার পর আরেকজন এসে একইভাবে দেখছেন। কিন্তু কেউ হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করছেন না। বেশির ভাগ হাটেই গরু-ছাগল ও বিক্রেতাদের জন্য ছাউনির ব্যবস্থা নেই। যে কারণে বৃষ্টি এলেই কাকভেজা হতে হচ্ছে বিক্রেতাদের ও পশুগুলোকে। এ ছাড়া পানি জমে কর্দমাক্ত হয়ে গেছে হাট।
বিক্রেতারা অভিযোগ করেছেন, প্রতিবছর হাটের ইজারাদাররাই পশুর খাদ্য সরবরাহ করে থাকেন। এবার বেশির ভাগ হাটে ইজারাদার খাদ্য সরবরাহ করেননি।
গাবতলী হাটে গিয়ে দেখা যায়, গরু ও বিক্রেতাদের জন্য কিছু তাঁবু টাঙ্গানো হয়েছে। কিন্তু হাটের সব জায়গায় এমন ব্যবস্থা করা হয়নি। পশ্চিম প্রান্তে সাতটি গরু নিয়ে একটি পলিথিন পেপারের নিচে জুবুথবু হয়ে বসে আছেন সাদেক আলী। বৃষ্টিতে ভিজছে তাঁর গরুগুলো। তিনি এসেছেন জয়পুরহাট থেকে। হাটব্যবস্থাপকদের প্রতি ক্ষোভ জানিয়ে সাদেক আলী কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘গরুগুলো রাখার কোনো ছাউনি নেই। আমরা বৃষ্টিতে ভিজে রাত কাটাচ্ছি। এর ওপর আবার গরুর খাদ্যও নেই।’ তিনি বলছেন, ঈদ ঘনিয়ে এলেও এখন পর্যন্ত তেমন ক্রেতা নেই। যাও বা আসেন, দাম বলেন কম।
সকালের দিকেই হাটে গরু কিনতে এসেছেন মিরপুর পাইকপাড়ার বাসিন্দা ব্যবসায়ী সালাউদ্দিন শেখ। তিনি একটি গরুর দাম বলছেন ৮৫ হাজার টাকা। বিক্রেতা আবুল কালাম চাইছিলেন এক লাখ ৩০ হাজার টাকা।
সালাউদ্দিন শেখ বলেন, স্বাভাবিক সময়ে ঈদে এ গরুর দাম ৮০ থেকে ৯০ হাজারের বেশি হতো না। এখন করোনা, দাম তো আরো কমার কথা।
পাবনা থেকে আবুল কালাম ১৩টি গরু নিয়ে এসেছেন। এই ক্রেতার কথার জবাবে তিনি বলছিলেন, যে গরুর দাম ৮৫ হাজার টাকা বলেছেন ক্রেতা, সেটা তিনি কিনেছেন এক লাখ পাঁচ হাজার টাকায়। এরপর এই গরু ঢাকায় বয়ে নিয়ে আসাসহ অন্যান্য খরচ হিসেবে করেই তিনি ওই দাম হাঁকিয়েছিলেন।
গরুর খামারি শাহ আলম বলেন, ‘লোকে এসে বলে এখন করোনার সময়, এত দাম হবে কেন? আরে ভাই আমরা যখন গরু পুষেছি তখন তো আর করোনা ছিল না। আর করোনা বলে গরুকে তো কম খাওয়াতে পারিনি।’
রহমতগঞ্জ পশুর হাট কাদাপানিতে একাকার। হাটব্যস্থাপনার দায়িত্বে থাকা ইমতিয়াজ হামিদ সুজন বলেন, ‘বৃষ্টির কারণে হাটে কাদা হয়ে গেছে। আমরা বালু দিয়ে কাদা দূর করার চেষ্টা করছি।’
হাটে আসা ক্রেতা লালবাগের জালালউদ্দিন বলেন, ‘গত ঈদের চেয়ে এবার পশুর দাম বেশি।’
এই হাটেই কুষ্টিয়া থেকে গরু নিয়ে এসেছেন ইসমাইল হোসেন। তিনি বলেন, ‘১০টি গরু নিয়ে এসেছিলাম। এখন পর্যন্ত একটিও বিক্রি করতে পারিনি। ক্রেতারা দাম বলেন অনেক কম।’
হাটের হাসিলঘরে খোঁজ নিয়ে জানা গেল, গত মঙ্গলবার সারা দিনে বিক্রি হয়েছে ১০০ গরু। গতকাল সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ৭৫টি গরু বিক্রি হয়েছে। হাট ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা লোকজন জানালেন, বিক্রির পরিমাণ কিছুটা বাড়ছে।
হাজারীবাগ পশুর হাটের ইজারাদার ইয়াসেফ আহমেদ বলেন, ‘এবার হাটে গরুও কম, ক্রেতাও কম। ক্রেতা-বিক্রেতার দরদামেও অনেক ব্যবধান। গরু বিক্রি হচ্ছে কম। এবার দেখছি গরুর চেয়ে ছাগল বেশি বিক্রি হচ্ছে।’ তিনি বলছেন, ‘এবার হাটে আমাদের নির্ঘাত লোকসান হবে।’
উত্তরার বৃন্দাবন হাটে গরু নিয়ে এসেছেন কুষ্টিয়ার ভেড়ামারার মোহাম্মদ আলী, জামালপুরের মহসিন মিয়া, টাঙ্গাইলের শামসুদ্দিন। তাঁরা গরু রেখেছেন সড়কের ওপর। হাটব্যবস্থাপকরা তাঁদের জন্য কোনো ছাউনি করে দেননি। গরু নিয়ে বৃষ্টিতে ভিজে রাত কাটাচ্ছেন তাঁরা। তিনজনই জানালেন, তাঁদের গরুর খাদ্যও শেষ।
এই হাটের ব্যবস্থাপনা নিয়ে ইজারাদার নূর হোসেন বলেন, ‘বৃষ্টির উপরে তো কারো হাত নেই। কাঁচা মাটিতে হাট, কাদাতো একটু হবেই। তবে এটা ঠিক যে অনেক ব্যবসায়ীকে আমরা ছাউনি করে দিতে পারিনি।’
নূর হোসেনও বলছিলেন, ‘হাটে এবার ইজারার টাকা উঠবে কি না সন্দেহ।’ সূত্র: কালের কণ্ঠ