পুড়ে যাওয়া টিনেই আশ্রয় খুঁজছেন রাজধানীর মহাখালী সাততলা বস্তিতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো। অগ্নিকাণ্ডের পর সোমবার রাতে স্থানীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন স্থানে তাদের কেউ কেউ রাত কাটিয়েছেন। কেউবা আত্মীয়ের বাসায় আশ্রয় নেন। বস্তির প্রায় সব বাসিন্দাই দিন এনে দিন খাওয়া শ্রমিক। তাদের কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই। তাই পোড়া টিনসহ অবশিষ্টাংশ আসবাবপত্র নিয়ে তারা ফের আশ্রয় গড়ে তোলার চেষ্টা করছেন।
বস্তির বাসিন্দা রাজমিস্ত্রি আব্দুল আজিজ বিশ্বাস। ছেলে, ছেলের বউ, এক নাতি ও এক নাতনি নিয়ে তার পরিবার। তিন হাজার টাকা করে দুটি রুমে বেশ কয়েক বছর ধরে বসবাস করে আসছিলেন। করোনায় রাজমিস্ত্রির কাজ তেমন নেই, তাই একপ্রকারে ঘরে বসেই দিন কাটছিল তার। ছেলেও দিনমজুর। কাজ পেলে চুলো জ্বলে, নয়তো একপ্রকারে অনাহারে দিন কাটে। এর মধ্যে সর্বনাশা আগুন যেন আরেক মহামারি হয়ে তার সর্বস্ব কেড়ে নিল।
মঙ্গলবার দুপুরে বস্তিতে গিয়ে দেখা যায়, আজিজ তার ছেলে ও ছেলে বউকে নিয়ে পুড়ে যাওয়া টিন, তক্তা, বাঁশ আর বাজার থেকে কিনে আনা প্লাস্টিকের ছাউনি দিয়ে তাঁবু বানাচ্ছে। মাচানের মতো সামান্য তাঁবু বাতাসেই উড়ে যাবে। তবুও রোদ, বৃষ্টি থেকে পরিবারের সদস্যদের একটু আড়াল করার চেষ্টায় ব্যস্ত তিনি।
আজিজ বিশ্বাস বলেন, করোনা দেখা দেওয়ার পর থেকে তিনি তেমন কাজ পাচ্ছেন না। ছেলেও একদিন কাজ পাইলে দু’দিন পায় না। এভাবেই করোনার মধ্যে দিন কাটছিল তাদের। তার মধ্যে আবার আগুনে সব কেড়ে নিয়েছে। তারা পরনের কাপড় ছাড়া আর কিছুই রক্ষা করতে পারেননি। ঢাকায় আত্মীয়স্বজনও নেই। উপায়ান্তর না পেয়ে ছেলে ও ছেলের বউকে নিয়ে মাথার গোঁজার চেষ্টা করছেন।
আরেক বাসিন্দা ইতি আক্তার আটটি রুমবিশিষ্ট একটি ঘরের মালিক। এর একটি রুমে ছেলে, মেয়ে, মেয়ের জামাই ও নাতিকে নিয়ে থাকতেন। বাকি রুমগুলো ভাড়া দিয়ে কোনো রকম সংসার চালাতেন। জামাই রায়হান পিকআপ চালিয়ে একটু ভালোই দিন যাচ্ছিল। কিন্তু সেই সুখ দীর্ঘস্থায়ী হলো না ইতি ও তার পরিবারের কারও কপালে। তিনিও রাজমিস্ত্রি আজিজের মতো শেষ অবলম্বনটুকু কুড়িয়ে আবার আবাস করার চেষ্টা করছেন।
দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ইতি আক্তার বলেন, এতগুলো লোক নিয়ে এখন কোথায় যাব? আত্মীয়স্বজন থাকলেও এতগুলো লোক একজনের বাসায় কয়দিন থাকতে পারে। কী করব বুঝতে পারছি না। আপাতত টিন, কাঠ দিয়ে মাচানের মতো ঘর করে থাকতে হবে। পরে ঋণ নিয়ে ঘর করবেন।
শুধু আজিজ কিংবা ইতি নয়; তাদের মতো বস্তির ক্ষতিগ্রস্ত সবারই একই অবস্থা। তারা ভেবে কূল-কিনারা পাচ্ছেন না, কী করবেন, কোথায় যাবেন। স্বাভাবিক অবস্থায়ই তাদের চুলো জ্বলত না, আর এখন তো সব পুড়ে ছাই।
পুড়ে যাওয়া ঘরগুলোর মালিকরা বলছেন, তারাও ভাড়াটিয়াদের কষ্ট দেখে কষ্ট পাচ্ছেন। কিন্তু কী করার আছে। করোনায় তাদেরও আয় নেই। সামান্য যে ভাড়া উঠত তা দিয়ে পেটে-ভাতে দিন চলে যেত।