1. [email protected] : admi2017 :
  2. [email protected] : Daily Khabor : Daily Khabor
  3. [email protected] : rubel :
  4. [email protected] : shaker :
  5. [email protected] : shamim :
শুক্রবার, ৩১ মার্চ ২০২৩, ০৭:১৮ অপরাহ্ন

ফুঁসছে নদ-নদী, হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দি

ডেইলি খবর নিউজ ডেস্ক
  • আপডেট সময় রবিবার, ২৮ জুন, ২০২০
  • ১৯২ বার পড়া হয়েছে

একদিকে টানা বর্ষণ, অন্যদিকে পাহাড়ি ঢল। আর তাতেই নদ-নদীর পানি ফুলেফেঁপে উঠছে। এরই মধ্যে উত্তর জনপদের তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে নদীর পানি বিপৎসীমার ২০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

লালমনিরহাটের শিমুলবাড়ী পয়েন্টে ধরলার পানি বিপৎসীমার দুই সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বিপৎসীমা ছুঁই ছুঁই করছে যমুনার পানি। সিলেট অঞ্চলের সুরমা ও জাদুকাটার পানি নতুন করে বাড়ছে। বেড়েছে পুরাতন ব্রহ্মপুত্র ও ঘাঘট নদের পানিও। পানির তোড়ে প্লাবিত হচ্ছে রাস্তাঘাট। কোনো কোনো এলাকায় তলিয়ে গেছে লোকালয়। পানিবন্দি হয়ে ভোগান্তিতে পড়েছে হাজার হাজার মানুষ। অনেক এলাকায় তলিয়েছে ফসল, ভেসে যাচ্ছে মাছ। এ ব্যাপারে আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-

নীলফামারী: নীলফামারীর তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে গতকাল বিকেল ৩টায় নদীর পানি বিপৎসীমার ২০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। গত শুক্রবারও ওই পয়েন্টে একই রকম পানি প্রবাহ ছিল। তিস্তার পানি বাড়ার ফলে ডিমলার পূর্বছাতনাই, খগাখড়িবাড়ী, টেপাখড়িবাড়ী, খালিশা চাঁপানী, ঝুনাগাছ চাঁপানী ও গয়াবাড়ী ইউনিয়নের তিস্তা নদীবেষ্টিত ১৫ চরাঞ্চলের পাঁচ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। গত দুই দিনে ওই উপজেলার ঝুনাগাছ চাঁপনী ইউনিয়নের ২২ পরিবারের ঘরবাড়ী নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে।

ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র সূত্র জানায়, তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে শুক্রবার তিস্তা নদীর পানি বিপৎসীমার ২০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। শনিবার সকাল ৬টায় সেখানে পাঁচ সেন্টিমিটার কমলেও দুপুর ১২টায় আরো পাঁচ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ২০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। ওই পয়েন্টে নদীর পানি বিপৎসীমা ৫২ দশমিক ৬০ সেন্টিমিটার। ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রবিউল ইসলাম বলেন, পরিস্থিতি মোকাবেলায় ব্যারাজের সব কটি (৪৪টি) গেট খুলে দেওয়া হয়েছে।

লালমনিরহাট: লালমনিরহাটের তিস্তা ও ধরলা নদীর পানি গতকাল শনিবারও বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। ফলে নদী তীরবর্তী কয়েক হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। জেলা প্রশাসক আবু জাফর জানান, গতকাল পর্যন্ত জেলার হাতিবান্ধা, আদিতমারী ও সদর উপজেলার সাত হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। তাদের জন্য ৮০ মেট্রিক টন চাল ও ছয় লাখ ২৬ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, লালমনিরহাটের শিমুলবাড়ী পয়েন্টে ধরলার পানি বিপৎসীমার দুই সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়।

গাইবান্ধা: ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বেড়ে যাওয়ায় বাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি ঢুকে দুটি গ্রামের সহস্রাধিক পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ডুবে গেছে গাইবান্ধা-বালাসীঘাট সড়কও। জেলার সুন্দরগঞ্জ, সদর, ফুলছড়ি ও সাঘাটা উপজেলার নদীতীরবর্তী নিম্নাঞ্চল ও চরাঞ্চল প্লাবিত হওয়ায় ডুবে গেছে বিস্তীর্ণ ফসলি জমি ও পানিবন্দি হয়ে পড়েছে কয়েক হাজার পরিবার। এতে করে খাবার, বসবাস, বিশুদ্ধ পানি ও পয়োনিষ্কাশনব্যবস্থার কষ্টে ভুগতে হচ্ছে মানুষদের। শুরু হয়েছে নদীভাঙনও। বিপৎসীমার ওপর দিয়ে বইছে ব্রহ্মপুত্র ও ঘাঘট নদীর পানি। গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মোখলেছুর রহমান বলেন, আগামী দুই থেকে তিন দিন আরো পানি বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। এতে করে আরো বেশ কিছু এলাকা প্লাবিত হতে পারে।

রংপুর: গঙ্গাচড়ায় তিস্তার পানি বেড়ে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে গঙ্গাচড়ার চরাঞ্চলের প্রায় ৭৫০ পরিবার পানিবন্দি হয়েছে। তলিয়ে গেছে আমন বীজতলা, ভুট্টা ও বাদাম ক্ষেত।

পীরগাছা (রংপুর): পীরগাছায় তিস্তার পানি বেড়ে যাওয়ায় নদীতীরবর্তী এলাকায় বসবাসকারী প্রায় চার হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। দেখা দিয়েছে খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির সংকট।

সিরাজগঞ্জ: পানি বেড়ে যাওয়ায় যমুনা নদীর সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে পানি বিপৎসীমা ছুঁই ছুঁই করছে। পানি এভাবে বাড়তে থাকলে রাতের মধ্যেই এই পয়েন্টে পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

ধুনট (বগুড়া): উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও ভারি বর্ষণের কারণে বগুড়ার ধুনট ও সারিয়াকান্দি উপজেলায় যমুনা নদীর পানি বাড়ছেই। গত ২৪ ঘণ্টায় ৩৭ সেন্টিমিটার পানি বেড়ে গতকাল দুপুর পর্যন্ত বিপত্সীমা ছুঁইছে। পানি বাড়তে থাকলে রাতের মধ্যেই বিপৎসীমা অতিক্রম করবে বলে আশঙ্কা পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) কর্মকর্তাদের।

ভূরুঙ্গামারী (কুড়িগ্রাম): ভূরুঙ্গামারীতে অবিরাম বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পানিতে উপজেলার আটটি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে নদীতীরবর্তী প্রায় কয়েক হাজার মানুষ। একদিকে করোনাভীতি অন্যদিকে বন্যা, নদীভাঙন ও টানা বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। ঘর থেকে বেরুতে না পারায় দিন এনে দিন খাওয়া প্রান্তিক কৃষক এবং শ্রমজীবী মানুষ পরিবার নিয়ে পড়েছেন বিপাকে। কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, দুধকুমার নদীর পানি বিপত্সীমার ১৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

উলিপুর (কুড়িগ্রাম): উলিপুরের ধরলা, তিস্তা ও ব্রহ্মপুত্রের পানি হু-হু করে বাড়তে থাকায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। উপজেলার আটটি ইউনিয়নের প্রায় ৪০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। পানিবন্দি মানুষ বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ, পাশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আশ্রয় নিয়েছে।

সুনামগঞ্জ: ভারি বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে সুনামগঞ্জের নদ-নদীর পানি বাড়ছেই। সুনামগঞ্জ শহরসহ বিভিন্ন এলাকায় সুরমার পানি তীর উপচে লোকালয়ে ঢুকেছে। এদিকে পাহাড়ি ঢলে তাহিরপুর-আনোয়ারপুর সড়ক, লালপুর-সুনামগঞ্জ সড়ক, ধারারগাঁও সুনামগঞ্জ সড়ক প্লাবিত হয়ে যানবাহন চলাচল বিঘ্নিত হচ্ছে। এদিকে সুরমা নদীর পানি গতকাল শনিবার বিকেল ৩টায় বিপৎসীমার ৬৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ১৯০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।

সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, গত শুক্রবার জেলায় ১৫৩ মিলিমিটার এবং শনিবার ১৯০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। এতে সুরমা ও জাদুকাটাসহ বিভিন্ন নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে বইছে। পানি বাড়তে থাকায় বিভিন্ন এলাকার রাস্তাঘাট, হাটবাজার, দোকানপাট এমনকি ঘরবাড়িও প্লাবিত হয়েছে। এতে দুর্ভোগের মধ্যে পড়েছে সাধারণ মানুষ। তবে এখনো বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি না হওয়ায় প্রশাসনিকভাবে কোনো কার্যক্রম নেওয়া হয়নি। জেলা প্রশাসন মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের প্রস্তুত থাকার জন্য নির্দেশনা দিয়েছে।

সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ বলেন, ‘আমরা পরিস্থিতির দিকে নজর রাখছি। মাঠ প্রশাসনকেও সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। এখনো বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি না হওয়ায় কোনো কার্যক্রম নেওয়া হয়নি।’

বিশ্বনাথ (সিলেট): কয়েক দিনের টানা ভারি বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে উপজেলার সব কটি নদ-নদীর পানি বেড়ে বিশ্বনাথের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এভাবে আরো দু-তিন দিন পানি বাড়তে থাকলে উপজেলাজুড়ে বন্যা দেখা দিতে পারে। সুরমা নদীর পানি বেড়ে উপজেলার লামাকাজি ইউনিয়নের বেশ কয়েক গ্রাম প্লাবিত রয়েছে। বাড়ির বসত ঘরে এখনো পানি ওঠেনি, তবে ছুঁই ছুঁই করছে। তবে বাড়ির আঙিনা-রাস্তাঘাট তলিয়ে রয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) কামরুজ্জামান বলেন, সার্বক্ষণিক পরিস্থিতি নজরদারি করা হচ্ছে। বর্তমান পরিস্থিতির অবনতি হলে মানুষকে সাহায্য করার জন্য উপজেলা প্রশাসন প্রস্তুত রয়েছে।

শেরপুর: বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পানিতে শেরপুরে পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বাড়তে শুরু করেছে। এতে নদীতীরবর্তী এলাকার মানুষের মাঝে দেখা দিয়েছে বন্যার শঙ্কা। গতকাল দুপুরে পানি উন্নয়ন বোর্ডের গেজরিডার (পানি পরিমাপক) মো. মোস্তফা জানান, শেরপুর ফেরিঘাট পয়েন্টে পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদের পানি গত কয়েক দিন ধরে প্রতিদিন ১০-১৫ সেন্টিমিটার করে বেড়ে চলেছে। তবে এখনো তা বিপত্সীমার তিন মিটার নিচ দিয়ে ১৪ মিটার উচ্চতায় প্রবাহিত হচ্ছে।

বোচাগঞ্জ (দিনাজপুর): কয়েক দিনের বৃষ্টি ও উজানের পানিতে দিনাজপুরের বোচাগঞ্জের জমির পাকা ধান ও ভুট্টা তলিয়ে গেছে। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, ৯০ হেক্টর জমির পাকা ধান পানিতে ডুবে গেছে। এ ছাড়া ডুবে গেছে ৩৫০ হেক্টর ভুট্টা। ধানের চেয়ে ভুট্টার বেশি ক্ষতি হয়েছে। অনেক চাষির পুকুরের মাছ ভেসে গেছে।

বিজ্ঞাপন

এ জাতীয় আরো খবর