ঢাকায় ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি, বসুন্ধরায় (আইসিসিবি) উদ্বোধন হলো নভেল করোনাভাইরাস (কভিড-১৯) চিকিৎসায় দেশের সর্ববৃহৎ অস্থায়ী হাসপাতাল। দুই হাজার ১৩ শয্যার এই হাসপাতালটির নাম ‘বসুন্ধরা কভিড-১৯ আইসোলেশন হাসপাতাল’। দেশের বৃহত্তম শিল্পগোষ্ঠী বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সায়েম সোবহান আনভীর ও ভাইস চেয়ারম্যান সাফওয়ান সোবহানের উপস্থিতিতে গতকাল রবিবার হাসপাতালটি উদ্বোধন করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।
উদ্বোধন অনুষ্ঠানেই বসুন্ধরা গ্রুপের এমডি সায়েম সোবহান আনভীর এই হাসপাতালে সাংবাদিকদের জন্য ২০০ শয্যা সংরক্ষিত রাখার প্রস্তাব দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় আমরা দেশের সবচেয়ে বড় এই কভিড হাসপাতালটি সুষ্ঠুভাবে তৈরি করতে সক্ষম হয়েছি। এটি আমরা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে হস্তান্তর করেছি। তারা যত দিন চাইবে তত দিনই ব্যবহার করতে পারবে।’
করোনাভাইরাসের এই দুর্যোগে আমরা দেশের মানুষের জন্য যতটুকু দরকার করেছি উল্লেখ করে বসুন্ধরা গ্রুপের এমডি বলেন, ‘আপনারা যে যেভাবে পারেন, বাংলাদেশকে বাঁচান।’ তিনি বলেন, দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের চিকিৎসায় শুধু সরকারের উদ্যোগই নয়, দেশের প্রধান বেসরকারি শিল্প-উদ্যোক্তাদেরও সামাজিক দায়বদ্ধতা রয়েছে। মানুষের প্রতি সেই দায়বোধ থেকেই তাঁরা এগিয়ে এসেছেন।
সায়েম সোবহান আনভীর বলেন, ‘সাংবাদিকদের ২৪ ঘণ্টা বাইরে কাজ করতে হয়। এই হাসপাতালের অন্তত ২০০টি শয্যা তাঁদের জন্য সংরক্ষণ করার প্রস্তাব করছি।’
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বসুন্ধরা গ্রুপকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, দু-এক দিনের মধেই এখানে কভিড আক্রান্ত রোগী ভর্তি শুরু হবে। এখানে ‘আইসোলেশনের’ অত্যাধুনিক সব সরঞ্জাম রয়েছে। প্রয়োজনীয়সংখ্যক ডাক্তার ও নার্স রয়েছেন। তাই সহজেই এখানে কভিড রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া বা রোগীদের ‘আইসোলেশনে’ রাখা সম্ভব হবে।
মন্ত্রী বলেন, প্রথমে ৫০০ শয্যা চালু করা হবে। পরে আরো ৫০০ শয্যা এবং এরপর আরো ৫০০ বা এক হাজার শয্যায় রোগী ভর্তি করে হাসপাতালটির কার্যক্রম চলমান রাখা হবে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘সাংবাদিকরাও করোনাভাইরাস মোকাবেলায় সম্মুখ সারির যোদ্ধা। তাদের বিষয়টি আমাদের গুরুত্বের মধ্যে আছে। আমরা সব হাসপাতালেই সাংবাদিক, পুলিশসহ যাঁরা সামনের সারির যোদ্ধা তাঁদের বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে নেব।’
স্বাস্থ্যসচিব আসাদুল ইসলামও এত বড় একটি হাসপাতাল কম সময়ের মধ্যে তৈরি করার জন্য বসুন্ধরা গ্রুপকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, চীন তাদের উহান প্রদেশে মাত্র এক সপ্তাহে এক হাজার শয্যার হাসপাতাল
তৈরি করেছে বলে শুনেছি। এশিয়ার মধ্যে তথা বিশ্বে বাংলাদেশের বসুন্ধরা গ্রুপও মাত্র তিন সপ্তাহে দুই হাজার বেডের হাসপাতাল তৈরি করেও তাক লাগিয়ে দিল। তিনি বলেন, এই হাসপাতালটির মধ্য দিয়ে আমরা কভিড আক্রান্ত রোগীদের উপযুক্ত সেবা দিতে পারব।
অনুষ্ঠানে সম্পাদক ইমদাদুল হক মিলন এবং ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মোস্তফা কামাল, বাংলাদেশ প্রতিদিনের সম্পাদক ও টেলিভিশন চ্যানেল নিউজ টোয়েন্টিফোরের সিইও নঈম নিজাম, ডেইলি সানের সম্পাদক এনামুল হক চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন। বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা ড. সাজ্জাদ হায়দার অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন।
উল্লেখ্য, দেশে করোনা সংক্রমণের পটভূমিতে বসুন্ধরা গ্রুপ ও দেশের স্বাস্থ্য অধিদপ্তর মাত্র ২১ দিনে আড়াই লাখ বর্গফুট জায়গায় দুই হাজার ১৩ বেডের অস্থায়ী হাসপাতাল তৈরি করেছে। এটি কুড়িল বিশ্বরোডের কাছে ৩০০ ফুট রাস্তার পাশে আন্তর্জাতিক কনভেনশন সিটি, বসুন্ধরায় অবস্থিত।
গত ১২ এপ্রিল থেকে হাসপাতালটির নির্মাণকাজ শুরু হয়। এখানে ছয়টি ক্লাস্টারে এক হাজার ৪৮৮টি শয্যা বসেছে। এ ছাড়া তিনটি কনভেনশন হলে থাকছে আরো ৫২৫টি শয্যা। এর বাইরে চার নম্বর হলে ৭১ শয্যার আইসিইউ থাকছে। এখানে কেন্দ্রীয় অক্সিজেন ব্যবস্থাও থাকছে।
‘দেশ ও মানুষের কল্যাণে’—এই স্লোগানে পথচলা বসুন্ধরা গ্রুপ করোনাভাইরাসের এই দুর্যোগকালেও দেশ ও জাতির কল্যাণে এগিয়ে এসেছে। বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান দেশের করোনা রোগীদের চিকিৎসায় সরকারকে আইসিসিবিতে পাঁচ হাজার শয্যার একটি অস্থায়ী হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ বিষয়ে সম্মতি দিলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও সেনাবাহিনীর একটি দল প্রস্তাবিত এলাকা দেখে ও পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়। দেশের দূর্যোগে এই বিশাল সহযোগিতা নিয়ে বসুন্ধরার এগিয়ে আসা সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে এবং বিদেশেও প্রশংসিত হয়েছে।