ডেইলি খবর ডেস্ক: বাংলাদেশকে কখনো ঋণের ফাঁদে ফেলবে না চীন। বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং আশ্বস্ত করে এসব কথা বলেন। তিনি বলেছেন,বাংলাদেশকে কখনো অসামঞ্জস্যপূর্ণ ঋণ বা কথিত ঋণের ফাঁদে পড়ার চিন্তা করতে হবে না। দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক ও সহযোগিতায় ‘ঋণ’ কখনো কূটনৈতিক নিয়ন্ত্রণের চাবিকাঠি হয়ে উঠবে না বলে আশ্বস্ত করেন এই চীনা রাষ্ট্রদূত। তিনি উল্লেখ করেন,বাংলাদেশ খুব দক্ষতার সঙ্গেই বৈদেশিক ঋণ ব্যবস্থাপনা করে আসছে।
চীনা রাষ্ট্রদূত লি জিমিং বলেন,আমি অবশ্যই বলব যে-আপনারা খুবই দক্ষতার সঙ্গে বৈদেশিক ঋণ ব্যবস্থাপনা করেছেন এবং আপনাদের কোনো অসামঞ্জস্যপূর্ণ ঋণ নেই। আন্তর্জাতিক ঋণ পরিশোধ ও ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশ ইতোমধ্যেই বেশ সুনাম অর্জন করেছে। তাই কথিত ঋণের ফাঁদ নিয়ে চিন্তা করবেন না।
গত বৃহস্পতিবার কসমস ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে আয়োজিত‘বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ক: ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা’ শীর্ষক অনলাইন আলোচনায় (ওয়েবিনার) এক প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন চীনা রাষ্ট্রদূত। অনুষ্ঠানটি কসমস ফাউন্ডেশনের ফেসবুক পেজে লাইভ সম্প্রচার করা হয়।
ওই আলোচনায় উদ্বোধনী ও সমাপনী বক্তব্য দেন কসমস ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান এনায়েতুল্লাহ খান এবং সভাপতিত্ব করেন প্রখ্যাত কূটনীতিক ও তত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা ড.ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী।এ ছাড়া সভায় আলোচক প্যানেলে ছিলেন সাবেক রাষ্ট্রদূত তারিক এ করিম, সিপিডির বিশিষ্ট ফেলো ড.দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য,সাবেক পররাষ্ট্র সচিব শমসের এম চৌধুরী,ইউনান বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহকারী গবেষক ড.জু ইওংমেং, চীনা ইনস্টিটিউট
অফ ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের সহকারী গবেষণা ফেলো ড. নিং শেংনান, সাবেক রাষ্ট্রদূত সিরাজুল ইসলাম এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড.রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর। ওয়েবিনারে মূল আলোচক হিসেবে অংশগ্রহণ করেন বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত লি জিমিং।আলোচনার এক পর্যায়ে চীনের অর্থায়নে সরকারি বিনিয়োগের মাধ্যমে শ্রীলংকার ঋণের ফাঁদে পড়ার বিষয়টি উঠে আসে। ঋণের ফাঁদ বর্তমান বিশ্বে কূটনৈতিক প্রভাব বিস্তারের এক অন্যতম মাধ্যম হয়ে উঠেছে। আর এশিয়া ও আফ্রিকা মহাদেশ অঞ্চলে চীনের ব্যাপক ঋণ কার্যক্রমের মাধ্যমে দেশগুলোকে ঋণের ফাঁদে ফেলার অভিযোগ করে আসছে বিভিন্ন বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংস্থা।এরই প্রেক্ষিতে চীনা রাষ্ট্রদূত জানান,শ্রীলংকা এবং বাংলাদেশসহ পৃথিবীর কোনো দেশেই ঋণের ফাঁদ তৈরির চেষ্টা করেনি চীন। তিনি দাবি করেন,এমন কোনো কার্যক্রমের প্রমাণ নেই। লি বলেন,আপনাদের দেশে সুপরিকল্পিত নীতিগত কাঠামো এবং দক্ষ কর্মকর্তা ও মন্ত্রী রয়েছেন। তাই আপনাদের এই ব্যাপারে চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই। এ সময় চীনা রাষ্টদূত জানান, সম্প্রতি এক নিবন্ধ পড়ে তিনি জানতে পারেন-শ্রীলংকার বর্তমান মোট ঋণের মাত্র ৮ শতাংশ চীনের কাছ থেকে নেওয়া। তাছাড়া এই ৮ শতাংশ ঋণের অধিকাংশই বেল্ট রোড ইনিশিয়েটিভের অধীনে রয়েছে। আলোচনায় সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশিষ্ট ফেলো ড.দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, চীন বাংলাদেশের শীর্ষ বিনিয়োগকারী দেশ হিসেবে পরিণত হচ্ছে। দেশের বড়-বড় প্রকল্পগুলোতে চীনের বিনিয়োগ বাড়ছে। তার মতে,বাংলাদেশের মতো দেশগুলোতে চীনের এমন অর্থনৈতিক কার্যক্রমকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও সংস্থা ঋণের ফাঁদ হিসেবে উল্লেখ করছে। আর এক্ষেত্রে শ্রীলংকাকে উদাহরণ হিসেবে দেখানো হচ্ছে। তবে এই অর্থনীতিবীদ বলেন,সৌভাগ্যক্রমে বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণ অনেকটাই নিয়ন্ত্রণের মধ্যেই রয়েছে এবং দেশের মোট ঋণের বড় অংশই আন্তর্জাতিক সংস্থার কাছ থেকে নেওয়া। কিন্তু ২০২৪ সাল নাগাদ বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ক শুধুমাত্র ঋণের কারণেই প্রশ্নের সম্মুখীন হতে পারে,বলে মনে করেন ড.দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। ওয়েবিনারে ঋণ বিষয়ক আলোচনার জবাবে চীনা রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যকার বর্তমান চলমান সম্পর্ক ও বাংলাদেশের প্রতি চীন সরকার ও জনগণের সমর্থনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন। এর পাশাপাশি দুই দেশের সুসম্পর্ক বাংলাদেশকে আরও লাভবান করবে বলে আশ্বস্ত করেন।