২০২০-২১ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটকে বাস্তবসম্মত, সময়োপযোগী ও গণমুখী হিসেবে দেখছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ।
দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা বলেছেন, করোনাভাইরাস সংকটকালে এবারের বাজেট জনগণের আত্মবিশ্বাস বাড়াবে। চলমান কঠিন সময়ের এই বাজেটে অর্থের সংস্থান ও বাস্তবায়নকে চ্যালেঞ্জ হিসেবেও দেখছেন তারা।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য লে. কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান যুগান্তরকে বলেছেন, বাজেট সময়োপযোগী ও বাস্তবসম্মত।
করোনার কারণে বিশ্ব ও বাংলাদেশের যে অবস্থা তা মোকাবেলায় যেখানে যেভাবে বরাদ্দ বৃদ্ধি করা দরকার তা করা হয়েছে।
যেমন স্বাস্থ্য, সামাজিক সুরক্ষা ও কৃষি খাতে বাজেট বরাদ্দ বেড়েছে। এছাড়া মুদ্রাস্ফীতিকে ধরে রাখতে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। লকডাউনের জন্য যে শ্রমঘণ্টা নষ্ট হয়েছে, তা পুষিয়ে নিতে মানবিক ও প্র্যাকটিক্যাল ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
বাজেট বাস্তবায়নের চ্যালেঞ্জ নিয়ে তিনি বলেন, বাজেটে বড় দুটি চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এক, বাজেট বাস্তবায়ন। অন্যটি রাজস্ব আহরণ। আমরা এখনও জানি না এই অবস্থা কতদিন চলবে।
বাজেট-পরবর্তী তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় দলের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, এবারের বাজেট ভিন্ন বাস্তবতায়, ভিন্ন বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে তৈরি।
এ বাজেট করোনার বিদ্যমান সংকটকে সম্ভাবনায় রূপ দেয়ার বাস্তবসম্মত প্রত্যাশার দলিল। তিনি বলেন, জীবনের পাশাপাশি জীবিকার চাকা সচল রাখতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের সাহসী সময়োচিত চিন্তার সোনালি ফসল এ বাজেট। এ বাজেট জনগণের আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর সঙ্গে অর্থনৈতিক উত্তরণের পরিকল্পনা এবং জনবান্ধব ও জীবনঘনিষ্ঠ অর্থনৈতিক পরিকল্পনা।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেছেন, প্রস্তাবিত বাজেট সময়োপযোগী, গণমুখী ও জনকল্যাণকর। চলমান করোনা সংকট থেকে উত্তরণে এবং বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করার লক্ষ্যে নানামুখী পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।
বাস্তবতার আলোকে বাজেটে স্বাস্থ্য, কৃষি ও শিক্ষা খাতে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। অতিরিক্ত করের বোঝা চাপানো হয়নি। নিত্যপণ্যের দিকেও লক্ষ্য রাখা হয়েছে।
দলের সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক যুগান্তরকে বলেছেন, এ বাজেটে করোনা সংকটে দরিদ্র মানুষের কথা চিন্তা করে নানা পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। এছাড়া স্বাস্থ্য শিক্ষাসহ বর্তমান বাস্তবতায় প্রয়োজনীয় বিভিন্ন খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধি করা হয়েছে। যা সাধারণ মানুষের জীবনমান উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
১৪ দলের নেতাদের প্রতিক্রিয়া : বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেছেন, ২০২০-২১ সালের বাজেটে স্বাস্থ্য, কৃষি, শিল্প ও কর্মসংস্থানকে অগ্রাধিকার দিয়ে কাঠামোগত পরিবর্তন আনা হলেও অর্থমন্ত্রীর বাজেট প্রস্তাবনা এখনও প্রবৃদ্ধিকেন্দ্রিক।
এবার প্রবৃদ্ধির হিসাব ৫.২%-এ নামিয়ে আনা হয়েছে। কিন্তু কোভিড আক্রান্ত দেশ ও বিশ্বের অর্থনীতির নীতির পরিস্থিতিতে ৮.২% প্রবৃদ্ধি কতখানি বাস্তবসম্মত সেটা ভেবে দেখার বিষয়। বাংলাদেশের সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক কমরেড দিলীপ বড়ুয়া যুগান্তরকে বলেছেন, করোনা সংকটের এই সময়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে যে বাজেট প্রস্তাব করা হয়েছে তা অত্যন্ত বাস্তবসম্মত।
বাজেটে জনগণের সুবিধা নিশ্চিত করতে জীবন ও জীবিকা সমুন্নত রাখতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। বাজেটের চ্যালেঞ্জ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এই বাজেটের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে রাজস্ব আদায় ও বাজেট বাস্তবায়ন। তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু ও সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার বলেন, সবাই আশা করেছিল বৈশ্বিক মহামারী ও জাতীয় বিপর্যয়ের মধ্যে এবারের বাজেট গতানুগতিকতার বাইরে নতুন দিক উন্মোচনকারী বাজেট হবে।
সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা ও সর্বজনীন সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য ধারাবাহিক প্রচেষ্টার শুরু এবারের বাজেট থেকেই হওয়া উচিত ছিল। বাজেটে স্বাস্থ্য, সামাজিক সুরক্ষা, কৃষি, খাদ্য, শিক্ষা ও গবেষণা খাতে বরাদ্দ কিছু বাড়ানোর প্রস্তাব দেয়া হলেও তা খুবই সামান্য।
জাতীয় পার্টির (জেপি) মহাসচিব শেখ শহিদুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেছেন, এই বাজেটে ভালো কতগুলো দিক আছে, যেমন করোনা মোকাবেলায় ১০ হাজার কোটি টাকার থোক বরাদ্দ রাখা।
সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধি করা হয়েছে। শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধি করা হয়েছে- এটিও ভালো দিক। তিনি বলেন, বাজেট ভালো, কিন্তু বাস্তবায়ন কঠিন।