মাহমুদা আক্তার খানম: ভোটের আগ পর্যন্ত বিএনপির যে কোনো কর্মসুচি-আন্দোলন মোকাবিলায় শতভাগ প্রস্তুত আওয়ামী লীগ। আন্দোলনের রাজা আওয়ামী লীগ। কোথাও ছাড় দেবে না বিএনপিকে। আওয়ামী লীগকে রাজনৈতিকভাবে প্রতিহত করার মত রাজনৈতিক ও সাংগঠনিকশক্তি কোনটাই নেই বিএনপির। রাজনৈতিকভাবে দাবী আদায় করার মতো শক্তি সামর্থ নেই বলেই বিএনপি খুজছে বহিরাগতশক্তি। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন স্বাধীন সার্বভৌম দেশে বহিরাগত শক্তির সমর্থনের দিকে তাকিয়ে না থেকে দাবি আদায়ে নিজেদের সাংগঠনিক শক্তি দিয়েই প্রমান করা উচিত। বিএনপির রাজনৈতিক দূরদর্শিতার অভানের কারনে তারা পরাভুত হচ্ছে, হবে। রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করতে এবারও বিএনপির দেয়া ৪৮ ঘণ্টার অবরোধসহ বিএনপির সামনের সব কর্মসূচি মোকাবিলায় পাল্টা প্রস্তুতি নিয়ে মাঠে থাকবে ক্ষমতাসীনরা। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটের আগে বিএনপিকে আর কোথাও কোনো ছাড় দিবেনা আওয়ামী লীগ। এবার বিএনপির চোরাগুপ্তা হামলা আর অগ্নিসংযোগ প্রতিরোধের প্রস্তুতি নিয়েই মাঠে নামবে ক্ষমতাসীনরা।এবার আন্দোলনের নামে বিএনপি যদি কোনো ধরনের সংঘাত-সহিংসতায় জড়িয়ে পড়ে তা কঠোরভাবে প্রতিহত করার পরিকল্পনাও রয়েছে দলটির।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা কঠোর হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন। এর মাধ্যমে তারা বিএনপিকে ছাড় না দেওয়ার বার্তা স্পষ্ট করেছেন। একই সঙ্গে বিএনপি ও তাদের মিত্রদের হুমকিও আমলে নিচ্ছেন না ক্ষমতাসীনরা। দলটির নেতারা আরও বলছেন, যথাসময়েই নির্বাচন হবে। এক্ষেত্রেও সংবিধানের বিদ্যমান ধারার বাইরে গিয়ে কোনো ছাড় দেবে না আওয়ামী লীগ। এমনকি এ ইস্যুতে বিএনপির সঙ্গে আর কোনো ধরনের আলোচনায় বসতেও রাজি নয় দলটির হাইকমান্ড। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেও একাধিকবার এ বিষয়ে নিজের অনড় অবস্থানের কথা জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন-খুনিদের সঙ্গে কিসের সংলাপ? তিনি বলেছেন, সময়মতোই নির্বাচন হবে। কে চোখ রাঙাল আর কে চোখ বাঁকাল, তা নিয়ে পরোয়া করি না। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরও একই ধরনের অবস্থানের কথা জানিয়েছেন। সর্বশেষ বৃহস্পতিবারও এক অনুষ্ঠানে তিনি স্পষ্ট করে বলেছেন, বিএনপি এরই মধ্যে নিজেদের সন্ত্রাসী দল হিসাবে প্রমাণ করেছে। এমন একটি সন্ত্রাসী দলের সঙ্গে সংলাপ হতে পারে না। এটা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমিও বলছি। তিনি নেতাদের বিএনপির সন্ত্রাসী কার্যকলাপের কর্মসূচির বিষয়ে সজাগ ও সতর্ক থাকার নির্দেশনা দিয়েছেন।
ইসি ও সরকারদলীয় সুত্রগুলো জানায় চলতি মাসের মাঝামাঝিতে তফশিল ঘোষণা করা হবে। এরপর নির্বাচন। ফলে এখন আর কোনোভাবেই রাজপথের নিয়ন্ত্রণ হাতছাড়া করতে চায় না ক্ষমতাসীনরা।
রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশের রাজনীতির মাঠ পুরোপুরি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে চায় আওয়ামী লীগ। ফলে সামনের দিনের প্রতিটি কর্মসূচির দিনেও নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে থাকবে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলো। আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে ও দলীয় সূত্রে জানা গেছে, এজন্য ক্ষমতাসীনদের পক্ষ থেকে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। প্রতিটি কর্মসূচিতে ঢাকার প্রবেশপথগুলোতে বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মীর উপস্থিতি থাকবে। ঢাকার আশপাশের জেলাগুলোতে আলাদা দৃষ্টি রাখতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। মূলত বিএনপি বড় ধরনের অঘটন ঘটাতে পারে এমন শঙ্কা থেকেই প্রস্তুতি রাখছে দলটি। কর্মসূচি ঘিরে যদি কেউ বিশৃঙ্খলার সৃষ্টির চেষ্টা কওে, তাহলে পালটা জবাব দেওয়ার পরিকল্পনাও আছে তাদের। তবে অকারণে বিএনপির সঙ্গে বিশৃঙ্খলাতে না জড়ানোর নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে হাইকমান্ড থেকে। এক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে তাদের কঠোর ভূমিকায় দেখতে চায় ক্ষমতাসীনরা।
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক নেতারাও কঠোরভাবে ও দৃঢ়চিওে মনে করেন যথাসময়েই আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এক্ষেত্রে সংবিধানের বিদ্যমান ধারার বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই। বিএনপিসহ সব দল নির্বাচনে এলে তাদের স্বাগত জানানো হবে। কিন্তু কাউকে নির্বাচনে আনতে বিশেষ কোনো উদ্যোগ নেওয়া হবে না। উলটো নির্বাচন বানচালের চেষ্টা চালানো হলে তা কঠোর হাতে প্রতিহত করা হবে।নির্বাচনে বিএনপি না আসলেও ৬০ ভাগ ভোটারের কেন্দ্রে যাওয়া নিশ্চিত করতে কাজ করবে দলটি। সরকার পতনের জন্য বিএনপি মহাযাত্রা শুরু করতে চেয়েছিল। ৭ নভেম্বর শেখ হাসিনার পতন ঘটাতে চেয়েছিল। কিন্তু সেই স্বপ্নও নস্যাৎ হয়ে গেছে। তারা পুলিশকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে। পুলিশ অত্যন্ত ধৈর্য-সহকারে তা মোকাবিলা করে।দলটির শীর্ষ নেতারা বলেন, বিএনপি ২০১৪-১৫ সালে টানা ৯০ দিন অবরোধ দিয়েছিল। খালেদা জিয়া তখন ঘোষণা দিয়েছিলেন শেখ হাসিনার পতন না ঘটিয়ে তিনি ঘরে ফিরে যাবেন না। কিন্তু তারা সেই আন্দোলনেও ব্যর্থ হয়েছিল। এবার অবরোধ ডেকেছে। এই অবরোধেও কোনো লাভ হবে না। তারা আবারো ব্যর্থ প্রমাণিত হবে। নির্বাচন যথাসময়েই হবে।