মহামারি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে কেউ হারিয়েছে স্বজন। লকডাউনে কাজ হারিয়েছে অনেকে। অর্থনৈতিক মন্দায় কারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। শ্রমজীবী মানুষের কাজও বন্ধ। উপার্জনের পথ হারিয়ে শহর ছাড়ছে মানুষ। গরিব আরো অসহায় হয়ে পড়েছে। কিভাবে চলছে এদের দিন? কিভাবে চলছে সংসার? এ নিয়ে পুরো পাতার আয়োজন ভাগ্য ফেরাতে বাপ-দাদার ভিটা ছেড়ে রাজধানীর বুকে পা রেখেছিলেন অজপাড়াগাঁর অনেক মানুষ। ঢাকা কিংবা আশপাশের এলাকায় কাজের বিনিময়ে আয়-রোজগারে ভালো মন্দ মিলিয়ে দিন কাটত তাদের অনেকের। কিন্তু করোনায় সব কিছু লণ্ডভণ্ড করে দেওয়ায় সেই মানুষগুলোই আবার পুরনো ঠিকানায় ফিরছে। কেউ চাকরি হারিয়েছে, কেউ বেকার, কারো বাসা ভাড়া দেওয়ার অর্থ নেই, কারো দোকান বন্ধ। দুর্যোগ সামাল দিতে না পেরে রাজধানীর অনেক দরিদ্র মানুষই আবার সেই গ্রামের পথেই ফেরা শুরু করেছে। ময়মনসিংহ জেলার বিভিন্ন ইউনিয়নেই কমবেশি ঢাকাফেরত এমন পরিবারের সন্ধান মিলেছে।
গফরগাঁও উপজেলার নিগুয়ারী ইউনিয়নের মিজানুল হক (৩২) জানান, তিনি নারায়ণগঞ্জে একটি কম্পানিতে চাকরি করতেন। তিন বছর আগে তিনি বাড়ি ছাড়েন। কম্পানিতে ওভারটাইমসহ নিয়ে তিনি ২০ হাজার টাকার মতো বেতন পেতেন। কিন্তু সেই কম্পানি এখন বন্ধ। তাই তিনি বাড়িতে চলে এসেছেন। বাড়িতে তিনি বেকার অবস্থাতে আছেন। একই ইউনিয়নের শাহজাদা (২৬) বলেন, তিনি ঢাকায় লালবাগ এলাকায় একটি মাদরাসায় ছাত্র পড়াতেন। আর মসজিদে মাঝে মাঝে নামাজ পড়াতেন। সব মিলিয়ে মাসে ২৫ হাজার টাকার মতো আয় হতো। কিন্তু এখন মাদরাসা বন্ধ। মসজিদেরও তেমন আয় নেই। তাই বাধ্য হয়ে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে গ্রামের বাড়িতে চলে এসেছেন। তিনি বলেন, বাড়িতে তিনি বেকারই আছেন।
ধোবাউড়া উপজেলার কলসিন্দুর গ্রামের মনীষা (২৭) জানান, চার বছর আগে তিনি গাজীপুরের মাওনা যান। সেখানে সুতার কারখানায় কাজ করতেন। কিন্তু কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বাসাভাড়া দিতে পারছিলেন না। বাসাভাড়া ছিল তিন হাজার টাকা। মালিকের চাপাচাপিতে বাসা ছেড়ে মালপত্র অন্য স্থানে রেখে গ্রামের বাড়িতে চলে আসেন। বাড়িতে এসে এখন খালার বাসায় আছেন। সামনের দিনগুলো নিয়ে তিনি খুব দুশ্চিন্তায় আছেন।
ফুলপুর উপজেলার মাসুমা (২২) জানান, তিনি বছরখানেক আগে বোর্ডবাজার এলাকায় গিয়ে সুতার কম্পানিতে কাজ শুরু করেন। মাসে চার হাজার টাকা বেতন পেতেন। তা দিয়ে কোনোমতে চলতেন। কিন্তু কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বাধ্য হয়ে বাড়িতে চলে আসেন। বাড়িতে থেকে ঢাকায় যোগাযোগ করছেন। কিন্তু কেউ কাজে নিতে চাইছে না।
ভুক্তভোগীদের সঙ্গে আলাপে জানা গেছে, লকডাউন শুরু হওয়ার পর থেকেই তাদের অনেকের দুর্দশা শুরু হয়। অনেকে বাসাভাড়া দিতে পারছিলেন না। প্রথমে কয়েক দিন ধারকর্জ করে চললেও পরে আর ধারকর্জও কেউ দিচ্ছিল না। অনেক প্রতিষ্ঠানের আয় কমে গেছে। অনেক প্রতিষ্ঠান কর্মী ছাঁটাই করেছে। নতুন চাকরিও নেই। ঘোরাঘুরি করে চাকরি পাওয়াও এখন সম্ভব না। তাই অনেকে মনে করছেন, গ্রামে অন্তত মাথা গোঁজার জায়গাটা আছে।
ময়মনসিংহের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘বেকার, কর্মহীন হয়ে অনেকেই গ্রামে ফিরছেন। এদের সহায়তা করার বিষয়টি জেলা প্রশাসনের নজরে আছে। অনেকের কাছে খাদ্য সহায়তা পৌঁছানো হচ্ছে। ভবিষ্যতে এদের সামাজিক নিরাপত্তা ও কর্মসংস্থানের জন্য কী করা যায় তা আমরা ভাবছি।’