মাহমুদা আক্তার খানম: টাকাওয়ালা হাইব্রিড অনুপ্রবেশকারীরা এবার আওয়ামী লীগ দলীয় মনোনয়ন মনেরমত করে পাবেন কিনা তা নিয়ে বিশ্লেসন চলছে বঙ্গবন্ধুর আদর্শলালনকারীদের মধ্যে। প্রশ্ন হচ্ছে এবার দলের মনোনয়ন প্রদানে হাইব্রিড-অনুপ্রবেশকারীদের কি হবে? দলীয় সুত্র জানায় আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়ার ক্ষেত্রে নতুন শর্তের বেড়াজালে আটকে যাচ্ছেন অনুপ্রবেশকারীরা। জানা গেছে মনোনয়নের জন্য আবেদনপত্র সংগ্রহকারীদের উল্লেখ করতে হবে দলে বর্তমান কোনো পদসহ অতীতের অন্তত আরো দুটি সাংগঠনিক পদ থাকতে হবে। মাঠের গোয়েন্দা সুত্রগুলো জানায় আওয়ামী লীগের গত ১৫ বছরের দেশ পরিচালনার সময়কালে বিরোধী মতাদর্শী বর্ণচোরা হাইব্রিড-অনুপ্রবেশকারীরা অর্থনৈতিক ও আত্মীয়তার সুযোগে নানা কৌশলে তৃণমূল আওয়ামী লীগে গুরুত্বপূর্ণ পদ বাগিয়ে নিয়েছেন এবং বর্তমানে নানাবিধ সুবিধাভোগ করছেন। এসব অনুপ্রবেকারীরা আওয়ামী লীগের তৃণমুলের নানারকম পদে অধিষ্ঠিত হয়ে এখন এ পদবি ব্যবহার করে স্থানীয় গুরুত্বপূর্ণ সরকারি চাকরিতে নিয়োগসহ ব্যবসা, বাণিজ্য, ঠিকাদারিসহ সবকিছু নিজেদের আয়ত্তে নিয়েছেন। স্থানয়িভাবে তারাই হচ্ছে প্রভাবশালী ও টাকাওয়ালা । এদের মধ্যে কেউকেউ মাদক ব্যবসায় জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে। মাদকের সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছে যারযার মহল্লায়,এলাকায়। মাদকের ব্যবসা ও চাদাবাজী করে কেউকেউ বিপুল অর্থ-সম্পদের মালিকও হয়েছেন। মনেরমত করে আওয়ামী লীগ দলীয় মনোনযন পেতে এসব অনুপ্রবেশকারী আরো ক্ষমতাধর হতে সংসদ সদস্য পদে এখন দলের মনোনয়ন পেতে চান। তবে তাদের বর্তমান পদ থাকলেও অধিকাংশের অতীতের দুটি সাংগঠনিক পদ নেই। এ কারণে তারা নৌকার মনোনয়নের জন্য আবেদনপত্র ক্রয় করতে পারছেন না। এদিকে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক ব্যরিস্টার বিপ্লব বড়–য়া স্বাক্ষরিত এক প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে আওয়ামী লীগের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দলের মনোনয়ন পেতে আগ্রহী প্রাার্থীদের ২৩ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে প্রশাসনিক বিভাগ অনুযায়ী সুনির্দিষ্ট বুথ থেকে দলীয় মনোনয়নের জন্য আবেদনপত্র সংগ্রহ ও জমা দিতে হবে। কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের দ্বিতীয় তলায় ঢাকা, ময়মনসিংহ, সিলেট ও চট্টগ্রাম বিভাগ এবং তৃতীয় তলায় রংপুর, রাজশাহী, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের মনোনয়নের জন্য আবেদনপত্র বিতরণ করা হবে। কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের নিচতলায় সব বিভাগের মনোনয়নপত্র জমা নেওয়া হবে। বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়,‘আওয়ামী লীগের মনোনয়ন-প্রত্যাশীদের কোনো ধরনের অতিরিক্ত লোকসমাগম ছাড়া প্রার্থী নিজে বা প্রার্থীর এক জন যোগ্য প্রতিনিধির মাধ্যমে আবেদনপত্র সংগ্রহ ও জমা দিতে হবে। আবেদনপত্র সংগ্রহের সময় অবশ্যই প্রার্থীর জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি সঙ্গে আনতে হবে এবং ফটোকপির ওপর মোবাইল নম্বর ও বর্তমান সাংগঠনিক পরিচয়সহ তিনটি পদ সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করতে হবে। আগামী ২১ নভেম্বর বিকাল ৪টার মধ্যে মনোনয়নের জন্য আবেদনপত্র জমা দিতে হবে। দলীয় সূত্র জানায়,আগামী সপ্তাহে আওয়ামী লীগের সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। এই বোর্ডের প্রধান দলের সভাপতি শেখ হাসিনা। আট বিভাগের প্রার্থী চূড়ান্ত করতে অন্তত চারটি বৈঠক হতে পারে। এসব বৈঠকে প্রতিটি আসন ধরে ধরে আগ্রহীদের বিষয়ে আলোচনা হবে। জানা গেছে একাদশ জাতীয় নির্বাচনে প্রতিটি ফরমের দাম ছিল ৩০ হাজার টাকা। এবার ২০ হাজার টাকা বাড়িয়ে ৫০ হাজার টাকা করা হয়েছে। গতবার ৪ হাজার ২৩টি ফরম বিক্রি হয়েছিল।
আওয়ামী লীগে আসা হাইব্রিড-অনুপ্রবেশের’ বিষয়টি দেশময় আলোচিত-সমালোচিত ঘটনা। সরাজাকার ও পাকবাহিনীর সহযোগিতায় গঠিত শান্তি কমিটির প্রধান বা গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলেন, এমন ব্যক্তি ও তাদের সন্তান-স্বজনদের কেউ কেউ নানা কৌশলে গত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনগুলোতে ঢুকে পড়েছেন। হয়ে উঠেছেন একশ্রেণির বড় নেতাদের ঘনিষ্ঠ। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরাবরই বলে আসছেন, ‘বিভিন্ন সংকটে দলের বড় নেতারা সিদ্ধান্ত নিতে ভুল করলেও তৃণমূল সব সময়ই সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তৃণমূলই দলের প্রাণ, মূলশক্তি।’ সেই তৃণমূল আওয়ামী লীগের ত্যাগী নেতাদের টার্গেট করেছেন স্বাধীনতা ও আওয়ামীবিরোধী চিন্তাধারার ব্যক্তিরা। তারা দলে ভিড়ে ত্যাগী নেতাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে আসছেন। তৃণমূল আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে যারা নিবেদিতপ্রাণ বলে পরিচিত ছিলেন, দলের দুর্দিনে যারা ত্যাগীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হতেন, আজ তারাই নিপতিত হয়েছেন চরম দুর্দিনে। জানা গেছে, এ বিষয়টি আমলে নিয়ে এবার মনোনয়নে নতুন শর্ত দিয়েছে আওয়ামী লীগ। দলে বিরোধী মতাদর্শীদের ঢালাও অনুপ্রবেশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কয়েক বারই দলীয় নেতাদের সতর্ক করেছেন। তারপরও বিরোধী মতাদর্শীদের অনুপ্রবেশ ঠেকানো যায়নি।এ কারণে অনুপ্রবেশকারীদের আশ্রয়-প্রশ্রয়দাতারা এবার মনোনয়নবঞ্চিত হতে পারেন। সবশেষ দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আগামী নির্বাচনে দলীয় মনোনয়নে বাদ পড়বেন অনেকেই। তালিকা চূড়ান্ত করতে চলছে শেষ মুহূর্তের যাচাই-বাছাই। গত মাসে আওয়ামী লীগের পার্লামেন্টারি পার্টির সভায় প্রধানমন্ত্রী বলেন,‘আপনাদের অনেকে হয়তো দলীয় মনোনয়ন পাবেন না। শুধু আপনাদের মুখ দেখে মনোনয়ন দেব না। আগামী নির্বাচনে যাদের জয়ের সম্ভাবনা আছে, তাদেরই দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হবে। প্রতি ছয় মাস পরপর করা জরিপের ভিত্তিতে আমরা আগামী সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়ার জন্য প্রার্থী বাছাই করছি। তবে যারা দলীয় মনোনীত প্রার্থীদের বিরোধিতা করবে, তাদের রাজনীতি শেষ হয়ে যাবে। তিনি প্রতিটি সভাসমাবেশেই দলীয় প্রতীক নৌকা মার্কায় ভোট চেয়ে বলেছেন যাকেই দলীয় মনোনয়ন দেয়া হবে তাকেই ভোট দিয়ে জয়ী করতে হবে।