1. [email protected] : admi2017 :
  2. [email protected] : Daily Khabor : Daily Khabor
  3. [email protected] : rubel :
  4. [email protected] : shaker :
  5. [email protected] : shamim :
বৃহস্পতিবার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:০৮ পূর্বাহ্ন

মহেশখালী হবে দেশের অর্থনীতির গেমচেঞ্জার, নতুন চমক

ডেইলি খবর নিউজ ডেস্ক
  • আপডেট সময় শনিবার, ১১ নভেম্বর, ২০২৩
  • ৪৩ বার পড়া হয়েছে

মাহমুদা আক্তার খানম: বাংলাদেশের কক্্রবাজার জেলার মহেশখালী হবে অর্থনীতির গেমচেঞ্জার। অর্থনীতির নতুন চমক এই মাতারবাড়ী মহেশখালী। বঙ্গোপসাগরের তীরে কক্সবাজারের মহেশখালীর এ দ্বীপটিই আজ অর্থনীতির শক্তচাকা হচ্ছে। এ অঞ্চলটি ভূ-রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে চীন-জাপানের জন্য কৌশলগত দিক থেকে সর্বোচ্চ গুরুত্বপূর্ণ জায়গা। এই স্থানটি ঘিরেই হচ্ছে দেশের অর্থনীতির উজ্জল তারার মেলা,অর্থনীতির মেলা। মহেশখালী ঘিরে যে কর্মযজ্ঞ তার সুবিধা পাবে প্রতিবেশী দেশ ভারতের ‘সেভেন সিস্টার্স’ খ্যাত দক্ষিণ-পূর্বের সাত রাজ্যও। বহুবিধ ব্যবসায়ী ও বিশ্লেষকদের মতে, ভারত-চীন এই প্রতিযোগী দুই দেশকে হাতে রেখে জাপানকে দিয়ে গভীর বন্দর নির্মাণ সরকারের কূটনৈতিক বিজয় হয়েছে। বলা হচ্ছে, মহেশখালীই আগামীর অর্থনীতির ‘গেমচেঞ্জার’। নৌপ্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন কারো সাথে শত্রæতা বা বৈরিতা নয়, সবার সাথে আমাদের বন্ধুত্ব, বঙ্গবন্ধুর বিদেশনীতি সামনে রেখেই এগিয়ে যাচ্ছে দেশ ও দেশের অর্থনীতি। আগামীতেও এই বন্ধুত্বের বিদেশনীতি অব্যহত থাকবে।
এদিকে অর্থ বিনিয়োগকারীর সুত্রগুলো জানায় মহেশখালীতে বিনিয়োগে শক্তিধর রাষ্ট্রগুলোর তালিকায় প্রথম এগিয়ে শান্তিপ্রিয় দেশ জাপান। দেশটির ঘোষিত ‘বিগ বি’ (বে অব বেঙ্গল ইন্ডাস্ট্রিয়াল গ্রোথ-বেল্ট) এর আওতায় মাতারবাড়ীতে ৫১ হাজার কোটি টাকারও বেশি ব্যয়ে গভীর সমুদ্র বন্দর ও বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করছে। ১১ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিট, গভীর সমুদ্র বন্দরের চ্যানেল উদ্বোধন ও বন্দরের টার্মিনাল নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করার মধ্য দিয়ে শুরু হলো নতুন চমক। জাপান ছাড়াও মহেশখালীতে চীনা বিনিয়োগে গড়ে উঠেছে সিঙ্গেল মুরিং পয়েন্ট-এসপিএম। অবস্থান রয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেরও। সরকারি নথি অনুযায়ী, শক্তিধর এই তিন রাষ্ট্র ছাড়াও বিভিন্ন দেশের বিনিয়োগে এলএনজি টার্মিনাল, অর্থনৈতিক অঞ্চলসহ ৩৭টি প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে। ইতোমধ্যে ২০টির কাজ চলমান। যেখানে বিনিয়োগ ধরা হয়েছে ১ লাখ কোটি টাকারও বেশি। ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস ফোরামের নেতারা বলেন গভীর সমুদ্রবন্দর নিয়ে ভারত ও চীনের প্রবল আগ্রহ ছিল। টেকনিক্যালী মেধার যাচাইয়ে কাজের অভিজ্ঞতার আলোকে জাপানের দায়িত্ব পাওয়ার মাধ্যমে আন্তর্জাতিকভাবে বন্দরের গ্রহণযোগ্যতা আরও বেড়েছে। যেটি বাংলাদেশের একটি দারুণ কূটনৈতিক কৌশলের বিজয়।
নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের মতে, বিনিয়োগের মাধ্যমে সেভেন সিস্টার্স এবং মিয়ানমারের উত্তর-পূর্ব অঞ্চলের ভূ-রাজনীতিতে প্রভাব রাখতে যাচ্ছে জাপান। তবে চীন-ভারত বন্দরটি ব্যবহারের সুযোগ পাচ্ছে এটাও একটা দারুন খবর। মাতারবাড়ী আমাদের অর্থনীতির নতুন দিগন্ত খুলে দিবে। প্রথমত, গভীর সমুদ্র বন্দর সোনাদিয়ায় প্রস্তাবিত ছিল। সেটা যেকোনো কারণে হয়নি। মাতারবাড়ীর প্রতি জাপানের আকর্ষণ বেশি। নিরাপওা বিশ্লেষকরা আরও বলেন,জাপান মাতারবাড়ী থেকে ঘোষণা দিয়েছে ভারতের দক্ষিণ-পূর্ব অঞ্চলের সেভেন সিস্টার্সকে বাণিজ্যিক সুবিধা দেবে। সেটা আমাদের জন্যও যেমন জরুরি,তেমনি অর্থনীতিতেও কর্মচাঞ্চল্য সৃষ্টি হবে। বলা চলে, মাতারবাড়ী প্রাণ-চাঞ্চল্য সৃষ্টির অন্যতম পাদপীঠ।
এদিকে জ¦লানি সংশ্লিষ্ট সুত্র জানায় দেশের আগামীর জ্বালানির হাবখ্যাত মাতারবাড়ী বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিট থেকে ইতোমধ্যে জাতীয় গ্রিডে যোগ হচ্ছে ৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। ১১ নভেম্বর উদ্বোধনের পর দ্বিতীয় ইউনিটের বিদ্যুৎও জাতীয় গ্রিডে যোগ হবে। প্রকল্প পরিচালক আবুল কালাম আজাদ সংবাদমাধ্যমকে বলেন, বর্তমানে আমরা প্রথম ইউনিটের ৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে দিচ্ছি। আমাদের প্রথম ইউনিটে পরীক্ষামূলক উৎপাদন শুরু হয়েছে গত ২৯ জুলাই। সফলভাবে পরীক্ষামূলক উৎপাদন শেষ পর্যায়ে রয়েছে। প্রথম ইউনিটে একসঙ্গে ৬১৮ মেগাওয়াট পর্যন্ত বিদ্যুৎ উৎপাদনের রেকর্ড হয়েছে। দ্বিতীয় ইউনিটের চুল্লিতেও আগুন দেয়া হয়েছে গত ২২ সেপ্টেম্বর। ওই ইউনিট থেকে এখনো বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হয়নি। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী,সরকারের মেগা প্রকল্পগুলোর অন্যতম মাতারবাড়ী বিদ্যুৎকেন্দ্রটি জাপানের সহায়তার মোট প্রায় ৫১ হাজার ৮০০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয়েছে। এটি বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অগ্রাধিকার প্রকল্পগুলোর অন্যতম। পুরো প্ল্যান্টে প্রতিদিন ১০ হাজার টন ও প্রতিটি ইউনিটে পাঁচ হাজার টন কয়লা প্রয়োজন হবে। মাতারবাড়ী ও ধলঘাটা ইউনিয়নে ১৬০৮ একর জমির ওপর স্থাপিত হচ্ছে এই বিদ্যুৎকেন্দ্র। কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিপিজিসিএল) প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। সুুুুুুুুত্র জানা প্রকল্প ব্যয়ের মধ্যে প্রকল্প সহায়তা হিসেবে জাইকা ৪৩ হাজার ৯২১ কোটি টাকা এবং অবশিষ্ট ৭ হাজার ৯৩৩ কোটি টাকা বাংলাদেশ সরকার ও সিপিজিসিবিএল-এর নিজস্ব তহবিল থেকে দেয়া হয়েছে। যা ইতোমধ্যে বিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য তৈরি মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর চ্যানেলও চট্টগ্রাম বন্দরের কাছে হস্তান্তর করা হযেছে। গত ২০ সেপ্টেম্বর কোল পাওার জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিপিজিসিবিএল)-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো: আবুল কালাম আজাদ চ্যানেলটি আনুষ্ঠানিকভাবে বন্দর কর্তৃপক্ষকে বুঝিযে দেন।
এদিকে গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণে যৌথ অংশীদার হতে না পারলেও মাতারবাড়ী বন্দর ব্যবহারের সুযোগ পাচ্ছে দুই প্রতিদ্বদ্বী ভারত ও চীন।চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিযার অ্যাডমিরাল এম সোহায়েল সাংবাদিকদের কাছে দেওযা এক সাক্ষাতকারে বলেন, ‘নির্মাণকাজের ভিত্তি স্থাপন করলে হয়তো সর্বোচ্চ তিন বছরের মধ্যে টার্মিনালের নির্মাণকাজ শেষ হবে এবং তখন এটি পূর্ণাঙ্গ অপারেশনের চলে যাবে। এর মাধ্যমে শুধু যে বাংলাদেশের মানুষ উপকৃত হবে, তা কিন্তু নয। বরং দক্ষিণ এশিয়া এবং চীনসহ সব মিলিযে প্রায় ৩ বিলিয়ন মানুষ সরাসরি এই বন্দরের মাধ্যমে উপকৃত হবেন।’ মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দরের সাবেক প্রকল্প পরিচালক মো:জাফর আলম সংবাদমাধ্যমকে বলেন, প্রযুক্তিগত ও অর্থনৈতিক দিক মূল্যাযনের পর ভারত, চীন ও নেদারল্যান্ডসকে পেছনে ফেলে এ প্রকল্পের দাযিত্ব পেযেছে জাপান। মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণে মোট খরচ ধরা হযেছে ১৭ হাজার ৭৭৭ কোটি ১৬ লাখ টাকা। এর মধ্যে জাপানের জাইকার ঋণসহায়তা ১২ হাজার ৮৯২ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। বাকি অর্থ বন্দরের নিজস্ব তহবিল ও সরকার অর্থাযন। একাধিক ব্যবসায়ী জানান বর্তমানে বাংলাদেশ থেকে আমেরিকায় একটি পণ্যের চালান পাঠাতে সময লাগে ৪৫ দিন। মাতারবাডী বন্দর চালু হলে মাত্র ২৩ দিনেই সরাসরি নির্ধারিত গন্তব্যে পৌঁছে যাবে রফতানি পণ্য। উদ্বোধনের প্রস্ততি পরিদর্শন শেষে নৌ-প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন,গভীর সমুদ্র বন্দর বাংলাদেশের দীর্ঘদিনের একটি স্বপ্ন। যা বাস্তবে রূপ নিচ্ছে। প্রকল্প প্রতিবেদন অনুযাযী,প্রকল্পের অধীনে একটি ৩০০ মিটার দীর্ঘ মাল্টিপারপাস জেটি নির্মাণ, একটি ৪৬০ মিটার দীর্ঘ কন্টেইনার জাহাজ বার্থিং জেটি, ৩৫০ মিটার চওড়া এবং ১৬ মিটার গভীরতার ১৪ দশমিক ৩ কিলোমিটার দীর্ঘ অ্যাপ্রোচ চ্যানেল নির্মাণ, উত্তর দিকে ২ হাজার ১৫০ মিটার এবং দক্ষিণ দিকে ৬৭০ মিটার লম্বা ঢেউ নিরোধক বাঁধ নির্মাণ করা হবে। এ ছাড়াও তিনটি টাগবোট, একটি পাইলট বোট, একটি সার্ভে বোটসহ কার্গো হ্যান্ডেলিং ইক্যুইপমেন্ট টিওএস অ্যান্ড সিকিউরিটি সিস্টেম ক্রয করা হবে। এ ছাড়া জাতীয মহাসড়কের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের জন্য ২৭ দশমিক ৭ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ করা হবে। গত ২০২০ সালের ২৯ ডিসেম্বর প্রথমবারের মতো খনন করা চ্যানেল দিয়ে প্রকল্পের জন্য যন্ত্রপাতি বহনকারী বিদেশি জাহাজ মাতারবাড়ী জেটিতে পৌঁছায। দ্বিতীয়টি আসে পরের বছরের ১৫ জুলাই। এখন পর্যন্ত ১২৩টি জাহাজ কযলা বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পের জন্য সামগ্রী এনেছে।চট্টগ্রাম বন্দরের তথ্য অনুযাযী, কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রের মালামাল এবং কয়লা নিযে এ পর্যন্ত মাতারবাড়ী জেটিতে এসেছে ১২৩টি জাহাজ। জাহাজ ভিড়িয়েছে চট্টগ্রাম বন্দরের আয় হয়েছে ১৫ কোটি ৫০ লাখ টাকা।
এদিকে মাতারবাড়ীর উন্নয়ন কর্মকান্ডকে ঘিরে সড়কপথে যাতায়াত সহজ করার জন্য চকরিয়ার ফাসিয়াখালী থেকে মাতারবাড়ী পর্যন্ত নির্মাণ করা হচ্ছে ২৭ দশমিক ২ কিলোমিটার সড়ক। এর মধ্যে মাতারবাড়ী বন্দর থেকে ধলঘাটা গোলচত্বর পর্যন্ত সোয়া এক কিলোমিটার দীর্ঘ সংযোগ সড়কটি চার লেনে উন্নীত করা হবে। সব মিলিয়ে মাতারবাড়ীর গভীর সমুদ্রবন্দরকে ঘিওে দেশের অর্থনীতিতে জাতীয়ভাবে যেমন সহায়তা করবে তেমননি কর্মস্থানের সুযোগ সৃস্টিও মধ্য দিয়ে মাতারবাড়ী হবে অর্থনীতির গেমচেন্জার। অর্থনীতির নতুন চমক ।

 

বিজ্ঞাপন

এ জাতীয় আরো খবর