1. [email protected] : admi2017 :
  2. [email protected] : Daily Khabor : Daily Khabor
  3. [email protected] : rubel :
  4. [email protected] : shaker :
  5. [email protected] : shamim :
সোমবার, ১১ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৬:১৭ অপরাহ্ন

রাজধানীতে মামাতো-ফুফাতো ভাইয়ের চাঁদার সিন্ডিকেট

ডেইলি খবর নিউজ ডেস্ক
  • আপডেট সময় রবিবার, ১৫ নভেম্বর, ২০২০
  • ২২৪ বার পড়া হয়েছে

ডেইলি খবর ডেস্ক: রাজধানীতে মামাতো-ফুফাতো ভাইয়ের চাদাবাজির সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে। দেখা গেছে বাবুবাজার ব্রিজের নিচে সরকারি জায়গা দখল করে গড়ে তোলা হয়েছে আওয়ামী হকার্স লীগ কোতোয়ালি থানা শাখার কার্যালয়। ওই অফিসে বসে এলাকার চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করছেন সংগঠনটির সভাপতি পিন্সু হাজী ও সাধারণ সম্পাদক আনসার ভূঁইয়া। দু’জনে মামাতো-ফুফাতো ভাই। দুই শিফটে ভাগ হয়ে এ দু’জন বাদামতলী ফলের আড়তে ফল নিয়ে এবং নিতে আসা পরিবহন থেকে চাঁদা আদায় করাচ্ছেন। অথচ এ আওয়ামী হকার্স লীগকে অবৈধ ঘোষণা করেছেন শ্রম আদালত।
বাবুবাজার ব্রিজের নিচে আওয়ামী হকার্স লীগের অফিসের পেছনের সরকারি জায়গার একটি অংশ দখল করে আরেকটি চাঁদাবাজ চক্র সেখানে দোকান বসিয়েছে। সাংবাদিক পরিচয় দেয়া এক যুবকের নেতৃত্বে ওই এলাকার ভাসমান ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে প্রতিদিন আদায় করা হয় মোটা অঙ্কের চাঁদা।
প্রতিদিন ভোরে রাজধানীসহ বিভিন্ন জেলার ফল ব্যবসায়ীরা ট্রাক, কনটেইনার, কাভার্ড ভ্যান, পিকআপ ভ্যান বুড়িগঙ্গা দ্বিতীয় সেতুর নিচে পার্কিং করে দেশের সবচে বড় ফলের পাইকারি মোকাম বাদামতলী থেকে ফল কিনে বোঝাই করে আবার খালাসও করেন। মধ্যরাত থেকে পরিবহনগুলো এখানে পার্কিং শুরু করে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, এ পাইকারি ফলের বাজারকে টার্গেট করে গড়ে উঠা চাঁদাবাজ চক্রের নেতৃত্ব দেন পিন্সু হাজী এবং আনসার ভূঁইয়া। আওয়ামী হকার্স লীগের অফিসে বসে দু’জনে নিয়ন্ত্রণ করেন এ এলাকার চাঁদাবাজি। বাদামতলীর সীমানায় গাড়ির চাকা ঢুকতে হলে বাবুবাজার ব্রিজের নিচে তাদের সিন্ডিকেটকে চাঁদা দিতেই হয়। বাদামতলী ও আশপাশ এলাকায় ব্যবসায়ী ও পরিবহন চালকদের সঙ্গে আলাপে উঠে এসেছে এ চাঞ্চল্যকর তথ্য।
সূত্র জানায়, বাদামতলী ফলের বাজারে প্রতিদিন গড়ে ছয় শতাধিক ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান, পিকআপ ভ্যান ঢোকে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে। কোনো কোনো পরিবহন ফল নিয়ে আসে, আবার কোনো পরিবহন ফল নিতে আসে। এসব পরিবহনের মধ্যে দেড় শতাধিক ট্রাক ও কনটেইনারের প্রতিটি থেকে আদায় করা হয় ৮০০ টাকা। এছাড়া প্রায় সাড়ে ৪শ’ পিকআপ ভ্যান ও অন্যান্য যান থেকে ৫শ’ টাকা করে চাঁদা আদায় করা হয়।
পিন্সু হাজী ও আনসার ভূঁইয়ার দাবি, অল্প কিছুদিন ধরে তারা বাবুবাজার ব্রিজের নিচে অফিস নিয়ে বসেছেন। এর আগে দু’বছরের বেশি সময় ধরে এ এলাকা তাদের নিয়ন্ত্রণে। মোটা অঙ্কের চাঁদাবাজির কথা অস্বীকার করলেও এখানে চাঁদাবাজির কথা স্বীকার করেছেন দু’জনেই।
পিন্সু হাজী বলেন, আমি বাদামতলী ফলের আড়তে চাঁদাবাজি করি কথাটা ঠিক নয়। আমার এলাকা বাবুবাজার ব্রিজ। তিনি বলেন, আপনি সরাসরি আসেন, আমি চাঁদাবাজ ধরিয়ে দেব। পরদিন গিয়ে দেখা যায়, বাবুবাজার ব্রিজের নিচে সরকারি জায়গা দখল করে সেখানে পিন্সু হাজী ও আনসার ভূঁইয়া আওয়ামী হকার্স লীগের অফিস স্থাপন করেছেনে। চেয়ার-টেবিল পেতে সুসজ্জিত এ অফিসে বড় করে বাঁধিয়ে রাখা হয়েছে সংসদ সদস্য হাজী সেলিমের ছবি। সেখানে বসে কথা হয় তাদের সঙ্গে। পিন্সু হাজী বললেন, এলাকার সংসদ সদস্য তাই তার ছবি এভাবে টানিয়ে রেখেছি। তার দাবি, তিনি হকারি করতেন না। বেসরকারি চাকরি করতেন। হকার্স লীগের সভাপতি হলেন কি করে এমন প্রশ্নের উত্তরে বললেন সবই আশীর্বাদ। দুই বছর ধরে এ এলাকা নিয়ন্ত্রণ করলেও অল্প কিছুদিন ধরে অফিস পেতে বসেছেন। বাদামতলী ফলের আড়তে চাঁদাবাজির প্রসঙ্গ আসতেই পিন্সু হাজী বললেন, যতটা বলা হচ্ছে, আসলে এত বেশি চাঁদা আমরা নেই না। এখানে যানবাহনের একটা বিশৃঙ্খলা তৈরি যাতে না হয়, আমরা সেই ব্যবস্থা করি। চাঁদাবাজ ধরিয়ে দেয়ার বিষয়ে প্রশ্ন তুলতেই পিন্সু হাজী কথিত এক সাংবাদিকের পরিচয় দিয়ে বলেন, ব্রিজের নিচের একটি বড় অংশ সে দখল করে রেখেছে। সেখান থেকে দিনে প্রায় ৫ হাজার টাকার চাঁদা সে আদায় করে। পিন্সু হাজী জানান, আগে ওই যুবক পুলিশের সোর্স পরিচয় দিত। এখন নিজেকে সাংবাদিক পরিচয় দেয়।

আনসার ভূঁইয়া বলেন, আমরা দু’জনে ভাগাভাগি করে এ এলাকা চালাই। আমি রাত থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত এবং পিন্সু হাজী ৬টার পর থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত এলাকার দায়িত্ব পালন করে। সরকারি জায়গা দখল করে অফিস স্থাপন সম্পর্কে তিনি বলেন, এটা দোষের কিছু মনে করি না। পরে একপর্যায়ে এ প্রতিবেদককে ঘুষ দেয়ার চেষ্টা করেন এ দুই ভাই। এর আগে সোমবার বেলা ১১টার দিকে বাবুবাজার ব্রিজ এলাকায় কথা হয় পিকআপ ভ্যানচালক কালামের সঙ্গে। তিনি বলেন, এখানে চাঁদাবাজদের টাকা না দিলে গাড়ি লোড-আনলোড করা যায় না। তিনি বলেন, এখানে খালি গাড়ি এলেও গুনতে হয় কমপক্ষে ৫শ’ টাকা। আর বেশি বড় গাড়ি হলে ৮শ’ থেকে ১ হাজার টাকা দিতে হয়। কুষ্টিয়ার ট্রাক চালক আকবর আলী বলেন, বাদামতলী থেকে ফল নিতে হলে চাঁদা দিয়েই নিতে হয়। এদেরকে চাঁদা না দিলে বাদামতলীর সীমানায় গাড়ির চাকা ঢুকবে না।
আরেকজন কাভার্ড ভ্যান চালক বলেন, চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে হাজী পিন্সু ও আনসার ভূঁইয়ার লোকজন মারধর করে। পিকআপ ভ্যানচালক কামাল জানান, বাদামতলী থেকে পিকআপ ভ্যান ভর্তি ফল নিয়ে বের হলেই গাড়িটি ব্রিজের নিচে আটক করা হয়। ফলভর্তি গাড়ি থেকে তো নেয়ই, খালি গাড়ি থাকলেও ওই গাড়ি থেকে ৫শ’ টাকার কম নেয় না এরা। তবে টাকার কোনো ¯িøপ দেয়া হয় না।
প্রায় এক যুগ ধরে এ বাজারে ফলের ঝুড়ি টানেন ‘ম’ আধ্যাক্ষরের এক শ্রমিক। তিনি বলেন, এখানে ঘাটে ঘাটে চাঁদা দিতে হয়। তবে আমাদের কাছ থেকে কেউ চাঁদা নেয় না। তবে গাড়িওয়ালারা টাকা না দিয়ে যেতে পারেন না। চাঁদাবাজির বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে বাবুবাজার এলাকার একজন ব্যবসায়ী বলেন, ওরা খুবই ভয়ংকর লোক। কোনোভাবে যদি নাম প্রকাশ করেন, তবে ওরা আমাকে হত্যা করবে। আরেকজন ব্যবসায়ী বলেন,প্রায় ৮৫ বছর আগে গড়ে ওঠা বাদামতলী ফল বাজার ওয়াইজঘাট থেকে বাদামতলী হয়ে বাবুবাজার ব্রিজ পর্যন্ত বাজারটি বিস্তৃত। সপ্তাহজুড়েই রাজধানীর খুচরা ও পাইকারি বিক্রেতার পদচারণায় ব্যস্ত এ বাজার। ভোর রাত থেকেই শুরু হয় বাজারের বিকিকিনি। দুপুর আর বিকালে লোকসমাগম কিছুটা কম থাকলেও সন্ধ্যা থেকে আবার মানুষে মানুষে মুখরিত হয় বাদামতলী বাজার। তিনি বলেন, প্রায় আড়াই যুগ আগে বাদামতলী ঘাটের রতন মহাজন খুন হন। এরপরই বাদামতলীর নিয়ন্ত্রণ চলে যায় হাজী সেলিমের হাতে। সেই থেকে এ এলাকার যে যেই অন্যায়-অপরাধ করুক না কেন, তা হাজী সেলিমের লোক হলেই সাত খুন মাপ। তিনি জানান, এখানে পিন্সু হাজীর পক্ষে চাঁদাবাজি করে ফয়েজ, মোস্তফা, জুয়েল, মাসুম, বাবুসহ বেশ কয়েকজন। আর সন্ধ্যার পর থেকে ভোর পর্যন্ত আনসার ভূঁইয়ার নেতৃত্বে চাঁদা তোলে মজিবর, জামাল, আলেকসহ আরও কয়েকজন। চাঁদার ভাগ-বাটোয়ারা নিয়ে পিন্সু হাজী ও আনসার ভূঁইয়ার মধ্যে বিরোধ দেখা দিলে তাদের আশ্রয়দাতারা এভাবে দু’জনকে ভাগ করে দিয়েছে। বাংলাদেশ হকার্স লীগের সভাপতি এমএ কাশেম বলেন, আওয়ামী হকার্স লীগ অবৈধ সংগঠন। আমার করা মামলার পরিপ্রেক্ষিতে ৪ নভেম্বর এক আদেশে আওয়ামী হকার্স লীগসহ সাতটি সংগঠনকে অবৈধ ঘোষণা করেছেন শ্রম আদালত। আমরা এসব সংগঠন অনতিবিলম্বে বন্ধের দাবি জানিয়েছি। তিনি বলেন, বাবুবাজার ব্রিজের নিচে শুধু চাঁদাবাজিই নয়, মাদক বাণিজ্যও চলে। কোতোয়ালি থানার ওসি মিজানুর রহমান বলেন, চাঁদাবাজির ব্যাপারে থানায় কেউ কোনো অভিযোগ করেননি। অভিযোগ পেলে আমরা ব্যবস্থা নেব। সুত্র-যুগান্তর।
সড়ক ও জনপথ বিভাগের ঢাকা জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো:সবুজ উদ্দিন খান বলেন, এসব জায়গা মূলত সিটি কর্পোরেশনের। আমরা জায়গাগুলো রক্ষণাবেক্ষণ করি। তিনি বলেন, প্রায়ই উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়। আবারও দখলবাজরা স্থাপনা গড়ে তোলে। তিনি বলেন, খোঁজ নিয়ে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সংসদ সদস্য হাজী সেলিমের ব্যক্তিগত সহকারী মহিউদ্দিন মাহমুদ বেলাল বলেন, হাজী সেলিমের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সঠিক নয়। তিনি শাস্তির পক্ষে, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে-এ শ্লোগান নিয়েই তিনবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি আগেই প্রশাসনকে বলে দিয়েছেন, কেউ চাঁদাবাজি করলে যাতে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় একাধিক সুত্র জানায় সর্ষের মধ্যে থাকা ভুত কি ব্যবস্থা নেবে।

বিজ্ঞাপন

এ জাতীয় আরো খবর