ডেইলি খবর ডেস্ক: দুদকের অনুসন্ধানে রেলে আবারও দুর্নীতি-অনিয়মের খোঁজ মিলেছে। খোঁজ মিলেছে কালো বিড়ালের। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অনুসন্ধানে রেলের এই আর্থিক কেলেঙ্কারিতে উঠে এসেছে রাজশাহী জোনের সাবেক প্রধান প্রকৌশলী মো. রমজান আলীর নাম। বর্তমানে তিনি রয়েছেন খুলনা-মোংলা রেলপথ নির্মাণ প্রকল্প পরিচালকের দায়িত্বে।
দুদকের অনুসন্ধানে তার নামে-বেনামে বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদ পাওয়া গেছে। আর এসব অভিযোগে রমজান আলী ও তার স্ত্রী আগা দিলরুবা পারভীন ইলোরার নামে মামলা করেছে সংস্থাটি। রোববার দুদকের পরিচালক (জনসংযোগ) প্রণব কুমার ভট্টাচার্য এ তথ্য নিশ্চিত করে জানান, দুদকের প্রধান কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. আবু বকর সিদ্দিক বাদী হয়ে মামলাটি করেন।
মামলার এজাহারে বলা হয়, রমজান আলী চাকরি করার সময় ক্ষমতার অপব্যবহার করে অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে তার নিজের ও স্ত্রীর নামে প্রায় পাঁচ কোটি টাকার জ্ঞাত আয়বহিভর্‚ত সম্পদ অর্জন করেছেন। এর মধ্যে অর্ধেকের কিছু বেশি টাকার সম্পদ রেখেছেন গৃহিণী স্ত্রী আগা দিলরুবা পারভীন ইলোরার নামে। এর মধ্যে রমজান আলীর নামে রয়েছে ২ কোটি ৪৩ লাখ ৮০ হাজার ২৮৬ টাকার সম্পদ। তা ছাড়া তার গৃহিণী স্ত্রী আগা দিলরুবা পারভীন ইলোরার নামে রয়েছে ২ কোটি ৪৭ লাখ ৯০ হাজার ৬৫৬ টাকার সম্পদ। এর মধ্যে ১ কোটি ৮৫ লাখ ৮ হাজার ১৮০ টাকার সম্পদ আয়ের উৎসবহিভর্‚ত।
শুধু তাই নয়, অনুসন্ধানে আরও দেখা গেছে, রমজান আলী বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার এইচ-বøকের ৬ নম্বর রোডের ৪৯৭ নম্বর প্লটে ৩ কাঠা জমিতে আটতলা বাড়ি নির্মাণ করেছেন। এই বাড়ির প্রতিতলার ফ্লোরের আয়তন দেড় হাজার বর্গফুট। বাড়িটির বর্তমান মূল্য ১ কোটি ৮০ লাখ টাকা। এ ছাড়া রমজান প্রাইভেটকার (নম্বর-গ-২৯-৩৪৮২) কেনার পাশাপাশি নগদ অর্থ ও অন্যান্যসহ মোট ২ কোটি ৭০ লাখ ৪৪ হাজার ৮৩৬ টাকার সম্পদ অবৈধভাবে অর্জন করেছেন। অন্যদিকে তার ৬৮ লাখ ২৭ হাজার ৮৯২ টাকা আয়ের বৈধ উৎসের মধ্যে রয়েছে বেতন-ভাতা, কৃষিকাজ ও জমি বিক্রিসহ বিভিন্ন খাত। এই অর্থ থেকে তিনি পারিবারিক ভরণপোষণ খাতে ব্যয় করেছেন ৪১ লাখ ৬৩ হাজার ৮৭২ টাকা। পারিবারিক ব্যয় বাদে তার নিট আয় থাকে ২৬ লাখ ৬৪ হাজার ৫৫০ টাকা। বাকি ২ কোটি ৪৩ লাখ ৮০ হাজার ২৮৬ টাকার সম্পদ তিনি অবৈধভাবে অর্জন করেছেন।
এই সম্পদ নিজের ভোগদখলে রেখে রমজান আলী শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন। দুদক তার বিরুদ্ধে দুদক আইন-২০০৪-এর ২৭(১) ধারা ও মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন-২০১২-এর ৪(২) ও ৪(৩) ধারায় মামলা হয়েছে। একই ধারায় রমজানের স্ত্রীর বিরুদ্ধেও মামলা করা হয়।
দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এরই মধ্যে ঢাকা মহানগর মুখ্য হাকিম কেএম ইমরুল কায়েশ রমজানের বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার এইচ-বøকের ৬ নম্বর রোডের ৪৯৭ নম্বর প্লটের আটতলা বাড়িটি ক্রোকের আদেশ দিয়েছেন।
দুদকের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, রমজান আলীর নামে পাবনার সাঁথিয়া ও সরিষাফরিদ মৌজায় প্রচুর জমি রয়েছে। তিনি ১২ লাখ টাকা দামের প্রাইভেটকার কিনেছেন। নামে-বেনামে ইসলামী, ডাচ্বাংলা, ট্রাস্ট ও ব্র্যাক ব্যাংকে নগদ অর্থ জমা রয়েছে। এ ছাড়া স্বর্ণালঙ্কার, দামি আসবাবপত্র ও বিভিন্ন ইলেকট্রনিক্স সামগ্রীও রয়েছে তার নামে।
রমজান আলী কৌশলে স্ত্রী আগা দিলরুবা পারভীন ইলোরার নামেও বিভিন্ন দামি সম্পদ রেখেছেন। তার নামে রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক প্রকল্পে ৩৩০৭ নম্বর প্লটে তিন কাঠা জমি কেনা হয়েছে, যার বর্তমান বাজারমূল্য ১৪ লাখ ৬৭ হাজার ৩শ’ টাকা। বসুন্ধরা আবাসিক প্রকল্পে ১০৮০ নম্বর প্লটে আরও তিন কাঠা জমি কেনা আছে ইলোরার নামে, যার বর্তমান বাজারমূল্য ২৬ লাখ টাকা। ইলোরার নামে জামালপুরের সিংজানি মৌজায় ৭৩ লাখ ১৩ হাজার ৭০৭ টাকা মূল্যের ৪ শতাংশ জমি এবং জামালপুরের সিংহজানি মৌজায় আরও ৬ শতাংশ জমি কিনে পাঁচতলা আবাসিক ভবন নির্মাণ করেছেন রমজান। এর বর্তমান বাজারমূল্য ৮২ লাখ ৮০ হাজার টাকা। পাবনার সরিষাফরিদ মৌজায় ২১ শতাংশ জমি রয়েছে রমজানের স্ত্রীর নামেÑ যার বর্তমান বাজারমূল্য ৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা। এদিকে রেলওয়ের একাধিক সুত্র জানায় বিগত সময়ে যারা বিভিন্ন প্রকল্পের দায়িত্বে ছিলেন আছেন তাদেরকেউ নজরদারীতে রাখা হয়েছে। বিশেষ করে তমা কনস্ট্রাকসনসহ একাধিক ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের খোজকবর নেয়া হচ্ছে। পূর্ব ও পশ্চিমাঞলের নানা অনিয়ম দুর্নীতির খোজখবরও নেয়া হচ্ছে।