1. [email protected] : admi2017 :
  2. [email protected] : Daily Khabor : Daily Khabor
  3. [email protected] : rubel :
  4. [email protected] : shaker :
  5. [email protected] : shamim :
সোমবার, ২৯ মে ২০২৩, ০৫:২৫ পূর্বাহ্ন

রোহিঙ্গাদের আত্তীকরণ নয়: ভাসানচরে স্থানান্তর নয়তো তৃতীয় দেশে

ডেইলি খবর নিউজ ডেস্ক
  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ২৫ আগস্ট, ২০২০
  • ১৮৭ বার পড়া হয়েছে

মিয়ানমার তার দেশের রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে না নিলে তাদের বাংলাদেশে আত্তীকরণের সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়েছে সরকার। কক্সবাজারের ওপর চাপ কমাতে সরকার চলতি বর্ষা মৌসুমের পরপরই ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের স্থানান্তরের পরিকল্পনা করছে। বিকল্প হিসেবে তৃতীয় দেশে (মিয়ানমার ও বাংলাদেশের বাইরে কোনো দেশে) বড় পরিসরে রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসনের চেষ্টাও বিবেচনায় আছে।

পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন গতকাল সোমবার ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশ সরকারের এই অবস্থান তুলে ধরেন।

অতীতে বিভিন্ন সময় তৃতীয় দেশে পুনর্বাসন উদ্যোগের আওতায় বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গারা পশ্চিমা বিভিন্ন দেশে বৈধভাবে যাওয়ার সুযোগ পেলেও পরে তা স্থগিত হয়ে যায়। অনেকের যুক্তি, এই ব্যবস্থা মিয়ানমার থেকে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে আসতে অন্যতম অনুঘটক হিসেবে কাজ করেছে। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে কিছু দেশ সীমিত পরিসরে রোহিঙ্গা গ্রহণের বিষয়ে অনানুষ্ঠানিক প্রস্তাব দিলে বাংলাদেশ বড় পরিসরে নেওয়ার আহ্বান জানায়। বিশেষ করে, কয়েক মাস আগে বঙ্গোপসাগরে ভাসমান নৌকায় আশ্রয়প্রার্থীদের উদ্ধারের জন্য পশ্চিমা দেশগুলোর চাপের পরিপ্রেক্ষিতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন রোহিঙ্গাদের নিয়ে যেতে তাদের প্রতি পাল্টা আহ্বান জানান।

মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে রোহিঙ্গা ঢলের তৃতীয় বছর পূর্ণ হয়েছে গতকাল। ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ ও ধর্ষণসহ বর্বর নির্যাতনের মুখে দলে দলে রোহিঙ্গা পালিয়ে আসে। রোহিঙ্গা সংকটের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে এবার রোহিঙ্গাদের কক্সবাজার থেকে ভাসানচরে স্থানান্তর বা তৃতীয় দেশে পুনর্বাসনের বিষয়টি উঠে এসেছে।

জানা গেছে, পরিস্থিতির আলোকেই বাংলাদেশ এমন কৌশল নিয়েছে। মিয়ানমারের আশ্বাস সত্ত্বেও গত তিন বছরে একজন রোহিঙ্গাও প্রত্যাবাসন চুক্তির আওতায় ফিরে যায়নি। রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে বাংলাদেশ দ্বিপক্ষীয়ভাবে মিয়ানমারের সঙ্গে কাজ করার পাশাপাশি আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পর্যায়েও কাজ করছে। রোহিঙ্গাদের ওপর নিপীড়নের জবাবদিহি উদ্যোগে অগ্রগতি হলেও প্রত্যাবাসনের ক্ষেত্রে অগ্রগতি নেই। বড় শক্তিগুলোর স্বার্থের কারণে মিয়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টিও বেশ কঠিন হচ্ছে। এমন প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে উদ্যোগ অব্যাহত রাখার পাশাপাশি প্রায় এক লাখ রোহিঙ্গাকে কক্সবাজার থেকে নোয়াখালীর ভাসানচরে স্থানান্তর এবং এর বিকল্প হিসেবে বাংলাদেশে আশ্রিত অর্ধেকেরও বেশি রোহিঙ্গাকে (পাঁচ লাখেরও বেশি) তৃতীয় দেশে পুনর্বাসনের বিষয়টি বিবেচনা করছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ইস্যুতে মিয়ানমারের ওপর পশ্চিমা দেশগুলো, এমনকি সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশের ঘনিষ্ঠ বন্ধু চীনও কার্যকর চাপ সৃষ্টি করেনি। জেনোসাইড, মানবতাবিরোধী অপরাধসহ গুরুতর অপরাধের শিকার হয়ে রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য ছাড়তে বাধ্য হয়েছে। তাদের ফেলে আসা বসতভূমিতে অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলাসহ বড় ধরনের বিনিয়োগ ও ব্যবসা-বাণিজ্যের সম্ভাবনা খুঁজছে অনেক দেশ। অন্যদিকে রোহিঙ্গাদের দুঃসময়ে আশ্রয় দেওয়া বাংলাদেশের ওপরই চেপে বসেছে তাদের বোঝা। সংকট সমাধানের লক্ষণ যখন দেখা যাচ্ছে না, তখন এই রোহিঙ্গাদের আশ্রয় ও শিক্ষাসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে বাংলাদেশের ওপরই প্রত্যাশার চাপ বাড়াচ্ছে পশ্চিমা বিভিন্ন দেশ ও সংস্থা। তারা মনে করে, রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরার পরিবেশ নেই। যে পর্যন্ত না সেই পরিবেশ সৃষ্টি হচ্ছে, সে পর্যন্ত বাংলাদেশেই তাদের সুযোগ-সুবিধা ও অধিকার পাওয়া উচিত। অতীতে বিভিন্ন দেশে এ ধরনের ঘটনার পরিণতির আলোকেই বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের আত্তীকরণের ভাবনা নাকচ করে দিয়েছে।

রোহিঙ্গা ঢলের তৃতীয় বছর পূর্তি উপলক্ষে গতকাল নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর পিস স্টাডিজ (সিপিএস) আয়োজিত ‘রোহিঙ্গা সমস্যা : পশ্চিমা, এশীয় ও দ্বিপক্ষীয় প্রেক্ষাপট’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেন, ‘আমি অবশ্যই স্পষ্টভাবে জানাতে চাই যে আমরা এমন কোনো বিনিয়োগ চাই না, যা রোহিঙ্গাদের উদ্বাস্তু পরিস্থিতিকে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে দীর্ঘায়িত করে এবং আরো বড় পরিসরে ও নতুন করে মিয়ানমারে অবশিষ্ট রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে চলে আসতে উৎসাহিত করে।’ তিনি বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের এ দেশে আত্তীকরণের যেকোনো ভাবনা বাংলাদেশ সরকার প্রত্যাখ্যান করে। বরং আমরা আশা করব, আগ্রহী অংশীদাররা মিয়ানমার সরকারের সঙ্গে আলোচনা করবে এবং উত্তর রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের স্বাস্থ্য, শিক্ষা, জীবিকা ও কানেক্টিভিটি খাতে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ করবে।’

পররাষ্ট্রসচিব কক্সবাজারে রোহিঙ্গাদের চাপ কমাতে এক লাখ রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে সরকারের পরিকল্পনার কথাও জানিয়েছেন। তিনি বলেন, কক্সবাজারে এখন প্রতি তিনজনের দুজন আশ্রিত রোহিঙ্গা। সাম্প্রতিক সময়ে বঙ্গোপসাগর থেকে ৩০৬ জন রোহিঙ্গাকে উদ্ধার করে ভাসানচরে নেওয়া হয়েছে। সেখানে তারা ভালো আছে। ওই রোহিঙ্গাদের স্বজনদের শিগগিরই ভাসানচরে নিয়ে পরিস্থিতি দেখানো হবে। তারা যদি মনে করে, জনাকীর্ণ রোহিঙ্গা শিবিরের চেয়ে ভাসানচর ভালো, তবে এই বর্ষা মৌসুমের পরপরই রোহিঙ্গাদের সেখানে স্থানান্তর শুরু করা হবে। জাতিসংঘের দলও শিগগিরই সেখানে পরিস্থিতি পর্যালোচনার জন্য যাবে।

পররাষ্ট্রসচিব ভাসানচরে স্থানান্তরের বিকল্প হিসেবে তৃতীয় দেশে রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসনের বিষয়টিকে স্বাগত জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘কয়েকটি দেশ মিলে যদি আগামী দু-এক বছরের মধ্যে পাঁচ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গাকে নিতে রাজি হয়, তবে আমরা তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখতে পারি।’

সংশ্লিষ্ট কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, কিছু দেশ ভাসানচরে স্থানান্তর পরিকল্পনা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে, আবার তৃতীয় দেশ হিসেবে রোহিঙ্গাদের গ্রহণে খুব একটা আগ্রহী হচ্ছে না। এমন প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ পাল্টা কৌশল হিসেবে রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে স্থানান্তর বা তৃতীয় দেশে পুনর্বাসনের বিষয়টি বিবেচনা করছে।

পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেন, রোহিঙ্গাদের জন্য বিপুল অর্থ বিনিয়োগে বাংলাদেশ আগ্রহী নয়। কারণ এতে করে রোহিঙ্গারা দলে দলে আবার বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে উৎসাহিত হবে। তবে রাখাইনে প্রত্যাবাসনের পরে রোহিঙ্গারা যেন জীবন-জীবিকা অর্জন করতে পারে, সে জন্য ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত মিয়ানমারের কারিকুলামে শিক্ষাব্যবস্থা চালু করেছে বাংলাদেশ।

ওয়েবিনারে মালয়েশিয়ার সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী সৈয়দ হামিদ আলবার বলেন, রোহিঙ্গা সমস্যা শুধু মানবিক সমস্যা নয়, বরং এটি বৈশ্বিক ও রাজনৈতিক সমস্যা। রোহিঙ্গা সংকট ঘিরে অস্থিরতা ও অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি হলে এর প্রভাব থেকে চীন, ভারত—কেউই বাদ যাবে না।

রোহিঙ্গা সমস্যার প্রভাব সরাসরি বাংলাদেশ, থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ার ওপর পড়ছে উল্লেখ করে সৈয়দ হামিদ বলেন, আসিয়ানের কয়েকটি সদস্য দেশ মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ আনলেও ওই সংস্থার এই বিষয়ে নির্দিষ্ট কোনো নীতি নেই। মিয়ানমার আসিয়ানের সদস্য। কিন্তু রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে আসিয়ান কোনো উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নিতে পারেনি। কারণ আসিয়ানের সনদে সদস্য দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক না গলানোর নীতি রয়েছে।

রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে অচলাবস্থা হওয়ার কোনো সুযোগ নেই জানিয়ে সাবেক পররাষ্ট্রসচিব ও নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র ফেলো এম শহীদুল হক বলেন, রোহিঙ্গাদের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘সেফ জোন’ (নিরাপদ অঞ্চল) প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব আবারও জোরালোভাবে উপস্থাপন করতে হবে। শান্তি প্রতিষ্ঠার কোনো ইচ্ছা ছাড়াই শান্তি আলোচনায় মিয়ানমার অংশ নিচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, রোহিঙ্গারা মিয়ানমার জান্তাকে বিশ্বাস করে না এবং এই সমস্যা সমাধানের কোনো চেষ্টা মিয়ানমার কখনো করেনি।

দায়বদ্ধতা ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার মাধ্যমে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধান করা সম্ভব এবং এ জন্য দ্বিপক্ষীয়, আঞ্চলিক ও বহুপক্ষীয় ব্যবস্থার অধীনে ‘হাইব্রিড কূটনীতি’ অব্যাহত রাখতে হবে বলে শহীদুল হক জানান।

যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত আর্ল রবার্ট মিলার বলেন, মিয়ানমারে সংখ্যালঘুরা যাতে নির্যাতিত না হয়, সে জন্য যুক্তরাষ্ট্র মিয়ানমারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখবে।

কানাডার রাষ্ট্রদূত বেনোয়া প্রিফন্টেইন দায়বদ্ধতার ওপর জোর দিয়ে বলেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের এই বিষয়ে আরো জোরালো ভূমিকা রাখা উচিত।

ওয়েবিনারে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর আতিকুল ইসলাম বলেন, রোহিঙ্গা একটি জটিল সমস্যা এবং এটি সমাধানে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।

বিজ্ঞাপন

এ জাতীয় আরো খবর