চলমান ‘লকডাউন’ বা বিধিনিষেধ ৬ জুন পর্যন্ত বাড়িয়েছে সরকার। ওইদিন মধ্যরাত পর্যন্ত এ লকডাউন বহাল থাকবে। বিধিনিষেধের মেয়াদ বাড়িয়ে রোববার এ সংক্রান্ত আদেশ জারি করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। লকডাউনের মেয়াদ বাড়ানোর পর নিজ দপ্তরে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেন, ‘করোনার ভারতীয় ধরন শনাক্ত হওয়ায় সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে বিশেষ নজর দেওয়া হচ্ছে। কোভিড-১৯ সংক্রান্ত জাতীয় পরামর্শক কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে সীমান্তের বাকি জেলাগুলোতে বিধিনিষেধ দেওয়ার চিন্তা-ভাবনা চলছে। এছাড়া করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতি বুঝে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’ মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের আদেশে বলা হয়, করোনাভাইরাস জনিত রোগ (কোভিড-১৯) সংক্রমণের বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় আগের সব বিধিনিষেধ আরোপের সময়সীমা ৩০ মে মধ্যরাত থেকে ৬ জুন মধ্যরাত পর্যন্ত বর্ধিত করা হলো।
প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেন, ‘বিশেষজ্ঞ ও কোভিড সংক্রান্ত জাতীয় টেকনিক্যাল কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী আরও এক সপ্তাহের জন্য বিধিনিষেধ চলমান থাকবে। আমরা চাচ্ছি সংক্রমণটাকে ৫ শতাংশের কাছাকাছি নিয়ে আসতে। ৫ শতাংশে নেমে আসলে বলা হয় স্বস্তিদায়ক পরিস্থিতি আছে, ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থা নয়। বর্তমানে ৮-৯ শতাংশের বেশি আছে। ইতোমধ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জে স্থানীয়ভাবে লকডাউন দিয়েছি। ভারতের বিষয়টির আশঙ্কা থেকেই জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে সেটা আমরা করছি। সীমান্তবর্তী কুষ্টিয়া, রাজশাহী, যশোর, নাটোর ও সাতক্ষীরা জেলার স্থানীয়ভাবে বিধিনিষেধ দেওয়ার বিষয়ে প্রস্তাব এসেছে। সেটি নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করছি। সীমান্তবর্তী জেলাগুলোর বিষয়টি আমরা একটু বেশি দেখছি। আপাতত স্পষ্ট করে কিছু বলা যাচ্ছে না। পরিস্থিতি বুঝে আমরা সিদ্ধান্ত নেব। ভারতের সঙ্গে সীমান্ত বন্ধ রাখার নিষেধাজ্ঞা আরও ২ সপ্তাহ বহাল থাকবে। দেশটির সঙ্গে চলাচলের ৩৬টি সীমান্ত পয়েন্ট রয়েছে।’
লকডাউন ধাপে ধাপে বাড়ছে, সরকারের এক্সিট প্ল্যান কী- এ বিষয়ে ফরহাদ হোসেন বলেন, ‘আমাদের স্যাক্রিফাইস (ছাড় দেওয়া) করতে হচ্ছে। বড় রকমের স্যাক্রিফাইস। আমরা চাচ্ছি ৫ শতাংশ আসার পর স্বাভাবিক করা। সব কিছুই অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের উত্তরে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা চাচ্ছি ৫ শতাংশ আসার পরে…। স্কুল-কলেজ, অফিস-আদালত বন্ধ রেখেছি। তাতে করে মানুষের চলাচলের প্রয়োজনীয়তা বা বাধ্যবাধকতা নাই। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে ৫ শতাংশের মধ্যে থাকাটা স্বস্তিদায়ক।’
সংক্রমণের বতর্মান পরিস্থিতিতে স্কুল-কলেজ খোলাটাও পিছিয়ে যেতে পারে কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে ফরহাদ হোসেন বলেন, ‘শিক্ষামন্ত্রী তেমন ইঙ্গিতই দিয়েছেন। সেটি তাদের বিষয়। উনি বলেছেন, এটা নিয়ন্ত্রণের পর্যায়ে না আসা পর্যন্ত খুলবে না। যদিও আমরা বিকল্প ব্যবস্থাগুলো চিন্তা-ভাবনা করছি স্কুল-কলেজ খোলার ব্যাপারে। আমাদের ছাত্রসংখ্যা অনেক বেশি। যখন তারা স্কুলে আসবে তখন সংক্রমণ দ্রুত বেড়ে যাবে। আমাদের বিধিনিষেধ থাকার কারণে কিন্তু সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হয়েছে।’
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ উদ্বেগজনক হারে বাড়তে থাকায় ৫ এপ্রিল সকাল ৬টা থেকে লকডাউন শুরু হয়। তবে সেই লকডাউন ছিল অনেকটাই অকার্যকর। পরে ১৪ এপ্রিল ভোর ৬টা থেকে ৮ দিনের ?‘কঠোর লকডাউন’ শুরু হয়। পরে পাঁচ দফা লকডাউনের মেয়াদ বাড়ানো হয়। সর্বশেষ ২৩ মে বিধিনিষেধের মেয়াদ আরও ৭ দিন অর্থাৎ ২৪ থেকে ৩০ মে পর্যন্ত বাড়িয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। এ সময় স্বাস্থ্যবিধি মেনে আন্তঃজেলা বাস, লঞ্চ ও ট্রেনসহ সব ধরনের গণপরিবহণ চলার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে হোটেল-রেস্তোরাঁগুলো আসন সংখ্যার অর্ধেক মানুষকে সেবা দেওয়ার অনুমতি পায়। এছাড়াও লকডাউনে আগে থেকেই স্বাস্থ্যবিধি মেনে দোকান ও শপিংমল সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা ছিল। খোলা ছিল শিল্প-কারখানা। জরুরি সেবা দেওয়া প্রতিষ্ঠান ছাড়া যথারীতি অফিস বন্ধ রয়েছে। সীমিত পরিসরে চলছে ব্যাংকের লেনদেন।
শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি শনিবার এক অনুষ্ঠানে জানিয়েছেন, ঝুঁকি নিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা হবে না। সংক্রমণ ৫ শতাংশের নিচে নামলে বিশেষজ্ঞরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার পরামর্শ দিয়েছেন, তবে সংক্রমণ এখন ১৩ শতাংশ।
ব্যাংক লেনদেন আধা ঘণ্টা বাড়ল : নতুন ঘোষিত বিধিনিষেধের মধ্যে ব্যাংকিং কার্যক্রম আরও আধা ঘণ্টা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। মন্ত্রিসভার বিধিনিষেধ বাড়ানোর পর বাংলাদেশ ব্যাংক প্রজ্ঞাপন জারি করে। এতে বলা হয়, ব্যাংকের লেনদেন সকাল ১০টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত চলবে। এরপর লেনদেন পরবর্তী কার্যক্রমের জন্য বিকাল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত ব্যাংক খোলা থাকবে। আজ থেকে এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে।
প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয়, বাংলাদেশ ব্যাংকের ১৩ এপ্রিল জারি করা প্রজ্ঞাপনের প্রদত্ত অন্য নির্দেশনাবলি অপরিবর্তিত থাকবে। স্বাভাবিক সময়ে ব্যাংকের লেনদেন হয় সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত। তবে করোনায় সময় কমিয়ে আনলেও ধীরে ধীরে আগের অবস্থায় ফিরে যাচ্ছে ব্যাংকিং লেনদেনের সময়।