1. [email protected] : admi2017 :
  2. [email protected] : Daily Khabor : Daily Khabor
  3. [email protected] : rubel :
  4. [email protected] : shaker :
  5. [email protected] : shamim :
মঙ্গলবার, ২১ মার্চ ২০২৩, ১২:২০ অপরাহ্ন

সমকালীন প্রসঙ্গ, করোনা মোকাবিলায় সরকারি-বেসরকারি খাত

ডেইলি খবর নিউজ ডেস্ক
  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ২১ এপ্রিল, ২০২০
  • ৪০৪ বার পড়া হয়েছে

সিকদার আনোয়ার: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর মানুষের মৃত্যুসংখ্যা বিবেচনায় এবারের করোনা পরিস্থিতি নাকি দ্বিতীয় ভয়ংকর। করোনার তান্ডব এখনও থামেনি। কবে, কোন পর্যায়ে, কীভাবে থামবে তা একমাত্র সৃষ্টিকর্তাই জানেন। কিন্তু শুধু প্রাণহানি নয়, ভৌগোলিক সীমারেখা, আক্রান্ত দেশের বা লোকের সংখ্যা, সর্বোপরি অসহায়ত্ব, অনিশ্চয়তা আর আতঙ্কের দিক বিবেচনা করলে করোনার সমকক্ষ কিছুই পাওয়া যাবে না। করোনার ব্যাপকতা, ঝুঁকি কিংবা সুদূরপ্রসারী প্রভাব স্বল্পোন্নত এবং উন্নয়নশীল দেশের ওপর বেশি। ঘনবসতিপূর্ণ, দুর্বল অবকাঠামোর দেশে এর বিরূপ প্রভাবের মাত্রা আরও অনেক বেশি। মহাদুর্যোগের পর কর্মযোগ্য, অভিজ্ঞ ও প্রশিক্ষিত কর্মী বাহিনীর ক্ষয়ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়া, স্থবির হওয়া রেমিট্যান্সের গতি বৃদ্ধি করা, বহিঃবাণিজ্যের ক্ষতি কাটিয়ে স্বীয় অবস্থান পুনরায় আয়ত্তে আনা, খাদ্য নিরাপত্তা বজায় রাখা, জনস্বাস্থ্য সংরক্ষণ করা, বেকারত্ব দূর করা, শিল্প ও কৃষি উৎপাদন অব্যাহত রাখা ইত্যাদি চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা অনেক দেশের জন্য খুবই কঠিন। এসব দেশের অর্থনৈতিক, ভূ-রাজনৈতিক এমনকি সামরিক দুর্বলতার কারণে বৈশ্বিক খাদ্য ঘাটতির মুখে আরও অসহায় অবস্থায় পড়তে হয়।

উন্নত দেশের সরকার দুর্যোগকালীন এবং দুর্যোগ-পরবর্তী বিভিন্ন প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করে। সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি খাত বা বহুজাতিক করপোরেশনগুলো বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়ে এগিয়ে আসে। স্বল্পোন্নত বা উন্নয়নশীল দেশের সরকার সাধারণত দুর্যোগ-পরবর্তী প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা দেয়। বেসরকারি খাতও এগিয়ে আসে; তবে তাদের সহায়তার পরিমাণ একেবারেই নগণ্য। করোনায় মারাত্মকভাবে আক্রান্ত নিউইয়র্ক শহরে কয়েক মাস আগে যাওয়া এক আত্মীয় জানান, কর্মহীন নাগরিকদের মাথাপিছু মাসিক ১২শ’ ডলার আর্থিক সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। এ সহায়তা যতদিন করোনার প্রভাব থাকবে ততদিন অব্যাহত থাকবে। এ ধরনের সহায়তা স্বল্পোন্নত ও উন্নয়নশীল দেশের সরকারের পক্ষে দেওয়া সম্ভব নয়।

উন্নত ও শক্তিধর রাষ্ট্রগুলো সামরিক শক্তি বৃদ্ধিকে যতই প্রাধান্য দিক, গুরুত্ব দিক, জনগণের কোনো ধরনের নিরাপত্তার গ্যারান্টি নেই। তাহলে এই ঠুনকো শক্তির বড়াই করে লাভ কী? স্বল্পোন্নত, উন্নয়নশীল ও উন্নত দেশগুলোর জন্য তার দেশের খাদ্য, পুষ্টি ও স্বাস্থ্যসেবার দিকে গুরুত্ব প্রদান করা উচিত। যে কোনো ধরনের আপদ বা দুর্যোগকালীন বা দুর্যোগোত্তর উৎপাদন, বিশেষ করে কৃষি উৎপাদন যেন ব্যাহত না হয়, সেদিকে গুরুত্ব দেওয়া দরকার। কৃষি উৎপাদন ঋতুভিত্তিক বা সময়ভিত্তিক বিধায় এ বিষয়ে অধিকতর গুরুত্ব দিয়ে পরিকল্পনা করতে হবে, যাতে কৃষি উপকরণ সরবরাহ ও আর্থিক সচ্ছলতা এ সেক্টরে বিশেষ করে দুর্যোগকালে বা অব্যবহিত সময়ে অন্তত ছয় মাস নিরবচ্ছিন্ন রাখা যায়। আমাদের দেশে কৃষি সেক্টরে রাসায়নিক সারের প্রয়োজন বছরে কমবেশি ৫০ লাখ টন, যা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর মধ্যে ইউরিয়া সারের চাহিদা প্রায় ২৫ লাখ টন এবং নন-ইউরিয়া রাসায়নিক সার প্রায় ২৫ লাখ টন। প্রয়োজনীয় বীজের একটা ক্ষুদ্র অংশ, প্রায় দেড় লাখ টন সরকার কর্তৃক বিএডিসির মাধ্যমে কৃষকদের সরবরাহ করা হয়। সার ও বীজ সংরক্ষণের বিশেষ করে রাসায়নিক সার সংরক্ষণের ধারণক্ষমতা অদ্যাবধি প্রয়োজনের তুলনায় কম, দুই লাখ টনের কিছু বেশি। এক সময়ের সরকারের অপরিণামদর্শী সিদ্ধান্তের ফলে বিএডিসিকে সংকুচিত করে অনেক সার গুদাম খাদ্য বিভাগ, বিসিআইসিসহ অন্যান্য সংস্থাকে দিয়ে দেওয়া হয়েছে। যদিও সরকার ইতোমধ্যে বেশ কিছু সার গুদাম নির্মাণ করে ফেলেছে।

আরও এক লাখ টন ধারণক্ষমতাসম্পন্ন গুদাম নির্মাণের প্রকল্প হাতে নিয়েছে; তথাপি ইউরিয়াসহ অন্যান্য কেমিক্যাল সার আমদানিপূর্বক দীর্ঘ সময়ের জন্য মজুদ করার লক্ষ্যে আরও গুদাম নির্মাণ করা দরকার। খাদ্য নিয়ে রাজনীতির দৃষ্টান্তের অভাব নেই। অন্যদিকে বিশ্বে প্রকৃতপক্ষেই খাদ্য ঘাটতির বহু উদাহরণ আছে। দুর্যোগকালীন বা অব্যবহিত পরে বিভিন্ন দেশে খাদ্য ঘাটতি অনেক হয়েছে। বিভিন্ন কারণে খাদ্য আমদানি জটিল, অনিশ্চিত ও অনিয়মিত। এ অনিশ্চয়তা যতটা দ্রব্যমূল্যে, তার চেয়ে অনেক বেশি সময়মতো বা প্রয়োজনমাফিক প্রাপ্যতার। মনে রাখা দরকার, আমাদের প্রধান খাদ্য চাল মূলত পাঁচটি এশিয়ার দেশ উৎপাদন করে আর তার পরিমাণ মাত্র পাঁচশ’ মিলিয়ন টনের কম। বিশ্বের উন্নত বেশ কিছু দেশ গম উৎপাদন করে, যার পরিমাণ প্রায় আটশ’ মিলিয়ন টন। মৌলিক চাহিদা বা সহজ ভাষায় অত্যাবশ্যকীয় পণ্য বিধায় এর সঙ্গে বিভিন্ন ধরনের দরকষাকষি, শর্তারোপ, সুবিধা আদায় বা ভূরাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের চেষ্টা চলে। দুর্যোগোত্তর এ দরকষাকষিতে স্বল্পোন্নত বা উন্নয়নশীল খাদ্য আমদানিকারক দেশগুলোর অবস্থান খুবই দুর্বল হয়ে পড়ে। এ প্রেক্ষাপটে স্বাভাবিক প্রয়োজনের সঙ্গে ন্যূনতম ছয়-সাত মাসের খাদ্যশস্য মজুদ রাখাটা নিরাপদ হতে পারে। আমাদের খাদ্যশস্য সংরক্ষণের সরকারি গুদামের ধারণক্ষমতা প্রায় ২০ লাখ টন। সরকারের সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচিসহ বিভিন্ন প্রয়োজনে এ পরিমাণ খাদ্যশস্য দিয়ে সর্বোচ্চ চার-পাঁচ মাস চালানো যেতে পারে। কিন্তু করোনা বা এ জাতীয় দুর্যোগে সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির কলেবর বৃদ্ধিসহ অন্যান্য খাদ্য বিতরণমূলক কর্মসূচির প্রয়োজন হতে পারে।

অন্যদিকে আমাদের প্রয়োজনের সময় চাল রপ্তানিকারক দেশগুলোর রপ্তানিযোগ্য চাল থাকে কিনা তাও বিবেচ্য। সুসংবাদ যে, চলমান করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় প্রধানমন্ত্রী প্রায় ৭৩ হাজার কোটি টাকার আর্থিক প্রণোদনা গত ৫ এপ্রিল ঘোষণা দিয়েছেন। ঋনগ্রহীতা পর্যায়ে সাড়ে চার শতাংশ সুদে শিল্প ও সার্ভিস খাতে ৩০ হাজার কোটি টাকা, কুটির শিল্প, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে চার শতাংশ সুদে ২০ হাজার কোটি টাকা এবং সেই সঙ্গে দুই শতাংশ সুদে ১২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা অতিরিক্ত এক্সপোর্ট ডেভেলপমেন্ট ফান্ড (ইডিএফ) সুবিধা বৃদ্ধির ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। উলেল্গখ্য, এ ঘোষণা ছাড়াও ইতোমধ্যে রপ্তানিমুখী শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা পরিশোধের জন্য পাঁচ হাজার কোটি টাকার আপৎকালীন প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে। অন্যদিকে সম্প্রতি কৃষি খাতে ৫ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে। এ প্যাকেজগুলোর ফলে একদিকে অর্থনীতিতে গতি সঞ্চার হবে, চাহিদা বাড়বে, কর্মচাঞ্চল্য বাড়বে, রপ্তানিমুখী শিল্পে মনোবল বাড়বে, কৃষিতে উৎপাদন অব্যাহত থাকবে; অন্যদিকে শ্রমিক-কর্মচারীদের মধ্যকার অনিশ্চয়তা দূর হবে, দুর্দশা লাঘব হবে। তবে সরকারের এ ঘোষণার পাশাপাশি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান-সংস্থা বা সমিতিগুলোর আর্থিক বা কাঠামোগত কোনো পরিকল্পনা বা রূপরেখার ঘোষণা অদ্যাবধি শোনা যায়নি। বেসরকারি খাত দুঃসময়ে নিজেদের পায়ে দাঁড়ানোর লক্ষ্যে স্বাভাবিক সময়ে প্রস্তুতি নেয় না বা পরিকল্পনা গ্রহণ করে না। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি খাতের ভূমিকাও গুরুত্বপূর্ণ। এটি খুবই অপ্রত্যাশিত যে, এ দেশে যে কোনো দুর্যোগ বা আপৎকালীন বা তার অব্যবহিত সময়ে কিছু ত্রাণসামগ্রী বিতরণের মধ্যেই বেসরকারি খাতের উদ্যোগ সীমাবদ্ধ থাকে। সৌজন্য-সমকাল

লেখক: অবসরপ্রাপ্ত সচিব

ডেইলি খবর/এইচ

বিজ্ঞাপন

এ জাতীয় আরো খবর