ডেইলি খবর নিউজ ডেস্ক: সমমনাদের সাথে জোটবদ্ধভাবে নির্বাচন করতে পারে আওযামী লীগ। প্রস্ততি চলছে সিট ভাগাভাগির হিসাব-নিকেশ। দল থেকে প্রার্থী মনোনয়ন দেবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। দলটি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জোটবদ্ধ হয়ে অংশ নেওয়ার আগ্রহের কথা জানিয়ে নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) চিঠি দিয়েছে। ইতোমধ্যে ১০টি রাজনৈতিক দল ইসিতে চিঠি দিয়েছে। এর মধ্যে সাতটি দল আওয়ামী লীগের দলীয় প্রতীক নৌকা নিয়ে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার আগ্রহের কথা জানিয়েছে। ইসি ও দলীয় সুত্রগুলো জানায় জোটবদ্ধ দলগুলোর মধ্যে রয়েছে জাতীয় পার্টি-জেপি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ),ওয়ার্কার্স পার্টি, সাম্যবাদী দল, বিকল্পধারা বাংলাদেশ, তরিকত ফেডারেশন, গণতন্ত্রী পার্টি। তৃণমূল বিএনপির সাথে জোটবদ্ধ হয়ে দলটির প্রতীকেই নির্বাচন করবে বলে জানিয়েছে প্রগতিশীল ইসলামী জোট। তবে এ জোটের কারোরই ইসির নিবন্ধন নেই। তবে জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়ে বিএনপিসহ বেশির ভাগ রাজনৈতিক দলই ইসিকে কোনো তথ্য জানায়নি। এদিকে জাতীয় পার্টি-জাপা ইসিতে আলাদা দুটি চিঠি দিয়েছে। জাতীয় পার্টি-জাপার প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদ ও মহাসচিব মুজিবুল হক আলাদা চিঠি দেন।
রাজনৈতিক দলগুলোর চিঠির বিষয়ে ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ সাংবাদিকদের বলেন, জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার জন্য আমরা ১০টা দলের আবেদন পেয়েছি। আওয়ামী লীগের চিঠিতে জোটবদ্ধ হয়ে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করার কথা বলা হয়েছে। আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা স্বাক্ষরিত ফরমে মনোনয়ন বিতরণ করা হবে। তবে চিঠিতে বলা নেই আওয়ামী লীগের জোটে কোন কোন দল থাকবে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জোটবদ্ধ হয়ে অংশ নিতে হলে তপসিল ঘোষণার তিন দিনের মধ্যে তা নির্বাচন কমিশন জানানোর নিয়ম রয়েছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তথ্য জানাতে গত ১৬ নভেম্বর আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টিসহ নিবন্ধিত ৪৪টি রাজনৈতিক দলকে চিঠি দিয়েছিল নির্বাচন কমিশন। জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়ে তথ্য জানানোর সময় ইতোমধ্যেই শেষ হয়েছে। ঐ সময় পর্যন্ত প্রকৃত কতটি দল চিঠি দিয়েছে সেই সংখ্যা জানাতে পারেনি কমিশন। নির্বাচনী নিয়ম অনুযায়ী,প্রার্থিতা প্রত্যাহারের পর প্রতিদ্ব্দ্বী প্রার্থীদের প্রতীক বরাদ্দ দেন রিটার্নিং অফিসার। জোটভুক্ত হলে সংশ্লিষ্ট দলের সম্মতি সাপেক্ষ একটি প্রতীক বরাদ্দ দেবেন তিনি। ভোটের ব্যালটে প্রার্থীর নামের পাশে ঐ প্রতীক উল্লেখ থাকবে।
ইসির একাধিক কর্মকর্তা জানান, যেসব রাজনৈতিক দল ইসিতে চিঠি দিয়েছে, সেগুলো নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে তা স্পষ্ট হলো। যদিও যেসব দল জোট ছাড়া এককভাবে নির্বাচনে অংশ নেবে তাদেরকে ইসিতে তথ্য জানানোর বাধ্যবাধকতা নেই। তবে কমিশন মনে করছে, নির্বাচনে অংশগ্রহণে ইচ্ছুক দলের সংখ্যা আরও বাড়বে।
ইসিতে দেওয়া আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের স্বাক্ষরিত চিঠিতে জানানো হয়েছে,তারা জোটবদ্ধভাবে নৌকা প্রতীক নিয়ে সংসদ নির্বাচন করবে। আর আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার স্বাক্ষরে তারা নমিনেশন দেবে। তবে আওয়ামী লীগ কোন কোন দলের সঙ্গে জোট করবে এ কথা তাদের চিঠিতে বলা নেই। দলের দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, তারা জোটবদ্ধ এবং পৃথক দুইভাবেই নির্বাচন করবেন বলে ইসিকে জানিয়েছেন। সেক্ষেত্রে কোনো কোনো আসনে জোটবদ্ধ, আবার কোনো আসনে পৃথক নির্বাচন করা হবে সেটি নির্ধারিত হবে মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিনে। আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার কথা ইসিকে জানিয়েছে আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি-জেপি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ), বাংলাদেশ সাম্যবাদী দল, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, তরিকত ফেডারেশন, বিকল্পধারা ও গণতন্ত্রী পার্টি। বিকল্পধারা বাংলাদেশ নিজ দলের প্রতীকের বাইরে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের ব্যানারে নৌকা প্রতীকে ভোট করার কথা ইসিকে জানিয়েছে। তৃণমূল বিএনপির মহাসচিব তৈমূর আলম খন্দকারের সই করা চিঠিতে জানানো হয়, তাদের সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে সোনালী আঁশ প্রতীকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে প্রগতিশীল ইসলামী জোট। গত ১৩ সেপ্টেম্বর আত্মপ্রকাশ করে প্রগতিশীল ইসলামী জোট নামের এই রাজনৈতিক মোর্চা। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জোটগতভাবে নির্বাচনে ২০টি দল প্রধান দুই দলের প্রতীক নৌকা ও ধানের শীষ নিয়ে লড়াই করে। আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে লড়ার ইচ্ছার কথা জানিয়েছিল তাদের জোটসঙ্গী ১০টি দল। অপরদিকে বিএনপির সঙ্গেও ১০টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল ধানের শীষে ভোট করার কথা জানিয়েছিল। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তপসিল ঘোষিত তপসিল অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ সময় ৩০ নভেম্বর, বাছাই ১ থেকে ৪ ডিসেম্বর, রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কমিশন আপিল দায়ের ও নিষ্পত্তি ৬ থেকে ১৫ ডিসেম্বর ও প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ১৭ ডিসেম্বর। রিটার্নিং কর্মকর্তারা প্রতীক বরাদ্দ করবেন ১৮ ডিসেম্বর। নির্বাচনি প্রচার চলবে ৫ জানুয়ারি সকাল ৮টা পর্যন্ত। আর ভোটগ্রহণ হবে ৭ জানুয়ারি। ইসি সুত্র জানায় আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু করতে ব্যাপক প্রস্তুতিও সমপন্ন করে এনেছে নির্বাচন কমিশন।