সর্বজনীন পেনশনে মাসে সর্বনিম্ন চাঁদা হতে পারে ৫০০ টাকা
প্রকাশিত: ১২:৫৩ পিএম, ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০২৩
আপাতত এক হাজার টাকা করে রাখা হলেও মাসে ৫০০ টাকা চাঁদা দিয়েও সর্বজনীন পেনশনের আওতায় আসতে পারবেন নাগরিকেরা—এমন কথাই চিন্তা করছে সরকার। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে, জনপ্রতি মাসে ৫০০ টাকা করে নিলে ১০ বছর পর পেনশন তহবিলের আকার দাঁড়াবে ৬০ হাজার কোটি টাকা। বাড়তি চাঁদা যোগ করলে তা ১ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। এ তহবিলের অর্থের একটা অংশ দীর্ঘমেয়াদি বন্ডে খাটানো হবে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ এখন সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচি (স্কিম) সংক্রান্ত বিধিমালা তৈরি করছে। এটিসহ বর্তমানে চারটি বিধিমালা তৈরির কাজ চলছে। অন্য তিনটি হচ্ছে পেনশন তহবিলে যোগ দেওয়ার যোগ্যতা ও নিবন্ধনপ্রক্রিয়া বিধিমালা, নির্বাহী চেয়ারম্যান ও সদস্যদের নিয়োগ, চাকরির মেয়াদ ও শর্তসংক্রান্ত বিধিমালা এবং কর্মচারী নিয়োগ বিধিমালা।
সূত্রগুলো জানায়, সরকার ঋণের একটা অংশ ব্যাংকব্যবস্থা থেকে এবং আরেকটা অংশ সঞ্চয় কর্মসূচি থেকে নিয়ে থাকে। সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা শুরু হলে এ ধরনের অর্থায়ন তথা ঋণের ঘাটতি হবে না। অবশ্য তা নির্ভর করবে তহবিল ব্যবস্থাপনায় দক্ষতার ওপর।
পেনসন
কত টাকা চাঁদা দিলে মাসে কত টাকা পেনশন পাওয়া যাবে, এ বিষয়ে কোনো সুনির্দিষ্ট হিসাব তৈরি হয়নি। অর্থ বিভাগের সূত্রগুলো বলছে, এখন পর্যন্ত ধরা হয়েছে এক হাজার টাকা হবে, সর্বনিম্ন চাঁদা। তবে নিম্ন আয়ের নাগরিকদের কথা চিন্তা করে মাসিক চাঁদা ৫০০ টাকা করা যায় কি না, তা দেখা হচ্ছে। বিধিমালায় তা চূড়ান্ত হবে। তবে চাইলে কেউ এর বেশি চাঁদাও দিতে পারবেন।
অর্থ বিভাগের একজন কর্মকর্তা হিসাব দিয়ে জানান, ১ কোটি লোকের কাছ থেকে মাসে ৫০০ টাকা করে নিলে বছরে ৬ হাজার কোটি ও ১০ বছরে ৬০ হাজার কোটি টাকা সংগ্রহ হবে। ৫০০ টাকার বেশি এক হাজার বা দুই হাজার টাকা করেও চাঁদা দেবেন অনেকেই। সে হিসাবে তহবিলটার আকার ১০ বছর হওয়ার আগেই ১ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে।
১৮ বছর বয়সে যদি কেউ যদি মাসে এক হাজার টাকা করে চাঁদা দেওয়া শুরু করেন এবং ৬০ বছর বয়স পর্যন্ত তা চালু থাকে, তাহলে ওই ব্যক্তি অবসরের পর ৮০ বছর বয়স পর্যন্ত প্রতি মাসে নির্দিষ্ট হারে পেনশন পাবেন। তবে পরিমাণটা এখনো ঠিক করা হয়নি।
আবার কেউ যদি ৩০ বছর বয়সে চাঁদা দেওয়া শুরু করেন এবং ৬০ বছর পর্যন্ত তা অব্যাহত থাকে, তাহলে অবসরের পর তিনি প্রতি মাসে পাবেন ১৫ হাজার টাকারও বেশি। তবে এ হিসাব আনুমানিক।
চাঁদার পরিমাণ এক হাজার টাকার বেশি হলে আনুপাতিক হারে পেনশনের পরিমাণও বাড়বে। বিধিমালায় এ নিয়ে বিশদ বলা থাকবে। জাতীয় পরিচয়পত্রকে (এনআইডি) ভিত্তি ধরে দেশে বসবাসরত নাগরিক তো বটেই, দেশের বাইরে থাকা ব্যক্তিরাও নতুন ব্যবস্থায় অংশ নিতে পারবেন। বিদেশে কর্মরত বাংলাদেশি কর্মীরা তো পারবেনই।
সাধারণ নিয়মে ১৮ থেকে ৫০ বছর বয়সী ব্যক্তিরা সর্বজনীন পেনশনের সুযোগ পেলেও বিশেষ ব্যবস্থায় এর বেশি বয়সীরাও যাতে সুযোগটি নিতে পারেন, তা নিয়ে আলোচনা চলছে। আর কমপক্ষে ১০ বছর পর্যন্ত নির্ধারিত হারে চাঁদা দেওয়ার পর একজন ব্যক্তি পেনশন–সুবিধা ভোগ করবেন ৬০ বছর বয়স হওয়ার পর থেকে। অর্থাৎ চাঁদা দেওয়া ১৮ বছর বয়সে শুরু হবে ও ৬০ বছর বয়সে গিয়ে বন্ধ হবে। তারপর ৬০ বছর বয়স থেকে তিনি যত দিন জীবিত থাকবেন, তত দিন পেনশন–সুবিধা পাবেন।
পেনশনে থাকাকালে কেউ যদি মারা যান, তাহলে তিনি যাকে নমিনি করবেন, তিনি ওই গ্রাহকের বয়স ৭৫ বছর হওয়া পর্যন্ত পেনশন–সুবিধা পাবেন। আবার কেউ যদি ৬০ বছর হওয়ার আগেই মারা যান, তাহলে ওই ব্যক্তির নমিনি জমা করা টাকা এবং এককালীন সুবিধা পাবেন। এ ক্ষেত্রে মাসিক পেনশন দেবে না সরকার।
অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, সর্বজনীন হলেও আপাতত তা ঐচ্ছিক থাকবে। আর যারা চাঁদা দেওয়ার মতো সক্ষম নন, তাঁরা পেনশনের আওতার মধ্যে থাকবেন না। ৫০ বছরের বেশি বয়সী কেউ চাঁদা দিতে পারবেন কি না, তা নিয়ে অর্থ বিভাগ নতুন করে ভাবছে।
দেশে পেনশন, পেনশন তহবিল, তহবিল ব্যবস্থাপনা, বিমা পলিসি ইত্যাদি বিষয়ে জানাশোনা আছে, এমন লোকের অভাব দেখছে অর্থ বিভাগ। দক্ষ, নীতিনিষ্ঠ ও কঠোর—এমন একজন অ্যাকচুয়ারিকে পেনশন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান করার জন্য খোঁজা হচ্ছে বলে জানা গেছে। বিষয়ের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত নয় বা যথাযথ জ্ঞানের অভাব রয়েছে, এমন কোনো অবসরপ্রাপ্ত আমলার পরিবর্তে বেসরকারি খাতের যোগ্যতম ব্যক্তিও হতে পারেন এ কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান।
জানতে চাইলে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর এ নিয়ে বলেন, ‘সর্বজনীন পেনশন নিয়ে অনেক কাজ এখনো বাকি। ফলে যথাযথ প্রস্তুতি ছাড়াই জুলাইয়ে শুরু করাটা যৌক্তিক হবে না। শুরুর পর মাসে সম্ভব না হলে তিন মাস পরপর হলেও গ্রাহকদের হিসাব দেওয়ার ব্যবস্থা রাখতে হবে। এ অর্থ যাতে লুটপাট না হয়, সে ব্যাপারেও সতর্কতা দরকার।’