বুধবার, ১৫ জানুয়ারি, ২০২৫, ২ মাঘ ১৪৩১

সাঈদের অবৈধ আয় ২৫ কোটি টাকা

প্রকাশিত: ১০:৪৬ এএম, জুন ৮, ২০২১

সাঈদের অবৈধ আয় ২৫ কোটি টাকা

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৯নং ওয়ার্ডের বহিস্কৃত কাউন্সিলর এ কে এম মমিনুল হক সাঈদ মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরে টাকা পাচার করেছেন। রাজধানীর মতিঝিল-আরামবাগ এলাকায় চাঁদাবাজি ও ক্যাসিনো থেকে অন্তত ২৫ কোটি টাকা অবৈধ উপার্জন করেন তিনি। ওই টাকা থেকে দেশ দুটিতে সাড়ে ৪৬ লাখ টাকা পাচার করেন। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ-সিআইডির অনুসন্ধানে এসব তথ্য বেরিয়ে এসেছে। এরপরই গত ৩০ জুন সাঈদ ও তার সেকেন্ড ইন কমান্ড জামালসহ চারজনের বিরুদ্ধে অর্থ পাচার আইনে মতিঝিল থানায় মামলা করেছে সিআইডির ফিন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট। মামলায় বলা হয়েছে, ২০১৬ সালের জুলাই থেকে ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সাঈদ তার সহযোগী আসামিদের নিয়ে চাঁদাবাজি, ক্যাসিনো ও জুয়া খেলা থেকে এ অবৈধ উপার্জন করেন এবং বিদেশে পাচার করেন। মতিঝিল-আরামবাগ এলাকার বহুল সমালোচিত কাউন্সিলর সাঈদ দক্ষিণ যুবলীগের যুগ্ম সম্পাদকও ছিলেন। আরামবাগ স্পোর্টিং ক্লাব দখলে নিয়ে এর সভাপতি হয়ে সেখানে ক্যাসিনো ও ওয়ান টেন জুয়া শুরু করায় তাকে 'ক্যাসিনো সাঈদ' নামেই সবাই চিনত। ২০১৯ সালে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান শুরু করলে সাঈদ বিদেশে পালিয়ে যান। পরে তাকে কাউন্সিলর ও যুবলীগের পদ হারাতে হয়। সিআইডি সূত্র বলছে, ওই অভিযানের পর জ্ঞাত আয়ের সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ চার কোটি ৪৭ লাখ ৬৬ হাজার ২৬১ টাকা অর্জন করে নিজের দখলে রাখার অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সাঈদের বিরুদ্ধে মামলা করেছিল। তবে দীর্ঘ অনুসন্ধানের পর সিআইডি তার অবৈধ উপার্জন ও অর্থ পাচারের অভিযোগে মামলা করল। ওই মামলায় অন্যান্য আসামির মধ্যে সাঈদের সেকেন্ড ইন কমান্ড ও ৯নং ওয়ার্ড যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জামাল উদ্দীন, আছাদ শাহ চৌধুরী ও ছালাউদ্দিন নামে আরও তিনজনকে আসামি করা হয়েছে। সাঈদসহ সব আসামিই পলাতক। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সূত্র বলছে, সাঈদ সিঙ্গাপুরে ও আছাদ ভারতে রয়েছেন। অন্য দুই আসামি এতদিন সাঈদের হয়ে আরামবাগ এলাকা নিয়ন্ত্রণ করলেও অর্থ পাচার মামলা হওয়ার পর আত্মগোপনে চলে গেছেন। সিআইডির ফিন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিটের পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবির বলেন, দীর্ঘ অনুসন্ধানের পর বহিস্কৃত কাউন্সিলর মমিনুল হক সাঈদ ও তার তিন সহযোগীসহ তার অজ্ঞাতনামা আরও ৪-৫ জন সহযোগীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ (সংশোধনী ২০১৫) এর ৪(২) ধারায় আসামিদের বিরুদ্ধে এজাহার করা হয়েছে। মামলাটি সিআইডিই তদন্ত করছে। এজাহারে বলা হয়েছে, আসামি সাঈদ কাউন্সিলর থাকার সময়ে তার এলাকার বিভিন্ন দোকান থেকে নিরাপত্তা প্রহরী ও পরিচ্ছন্ন সেবামূল্যের নামে ২০১৬ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত এক বছর চাঁদা আদায় করেন। ওই এলাকায় ১২ হাজার ৯১৮টি দোকান রয়েছে। এসব দোকানের আয়তন অনুযায়ী ৫০ টাকা থেকে ২০০ টাকা করে প্রতিমাসে চাঁদা তুলতেন। এসব চাঁদার টাকা তার ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান বৈশাখী এন্টারপ্রাইজের নামে ব্যাংকে জমা করেছেন। অভিযুক্ত সাঈদ আরামবাগ স্পোর্টিং ক্লাবের সভাপতি থাকার সময়ে অবৈধ ওয়ান টেন-জুয়া চালু করেন। অভিযুক্ত জামাল উদ্দীন সাঈদের হয়ে আরামবাগ স্পোর্টিং ক্লাবের জুয়া পরিচালনা করতেন এবং ক্যাসিনোর অপরাধলব্ধ অর্থ বৈশাখী এন্টারপ্রাইজের ব্যাংক হিসাবে জমা রাখতেন। এই আসামি ওই হিসাবে দুই কোটি ১৬ লাখ ৪৪ হাজার টাকা জমা ও অন্তত ৮৩ লাখ টাকা উত্তোলন করেছেন। আসামি আছাদ অন্যান্য সহযোগীকে নিয়ে ক্লাবের জুয়ার পেমেন্ট সংগ্রহ ও ক্যাশ রক্ষণাবেক্ষণ করতেন। তিনি সাঈদের অ্যাকাউন্টে চার কোটি ২৭ লাখ টাকা জমা ও ৮০ লাখ টাকা উত্তোলন করেন। অন্য আসামি ছালাউদ্দিন ক্লাবের জুয়ার অপরাধলদ্ধ ১০ কোটি ১৫ লাখ ২৫ হাজার টাকা সাঈদের ব্যাংক হিসাবে জমা করেন। অর্থ পাচারের বিষয়ে মামলায় বলা, আসামি মমিনুল হক সাঈদ ২০১৮ সালের ৮ আগস্ট থেকে ২০১৯ সালের ২৩ জুলাইয়ের মধ্যে সিঙ্গাপুরের রিসোর্ট ওয়ার্ল্ড সেনটোসা ক্যাসিনোতে ৫১ হাজার সিঙ্গাপুরি ডলার ক্যাশ ইন ও ২১ হাজার ডলার ক্যাশ আউট করেন। এ ছাড়া সাঈদ ২০১৩ সাল থেকে মালয়েশিয়ার রিসোর্ট ওয়ার্ল্ড বারহার্ড (আরডব্লিউবি) ক্যাসিনোর সদস্য। ২০১৭ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি সে ওই ক্যাসিনোর অ্যাকাউন্টে ৬৮ লাখ মালয়েশিয়ান মুদ্রা লেনদেন করেন। দুটি দেশে তিনি বাংলাদেশি মুদ্রায় ৪৬ লাখ ৪৯ লাখ টাকা ১৬০ টাকা পাচার করেছেন। সিআইডির ফিন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিটের উপপরিদর্শক সোহানূর রহমান জানান, আসামিরা বিদেশে যে অর্থ পাচার করেছেন, সে বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহের জন্য পারস্পরিক আইনি ও বিচারিক সহায়তার অনুরোধ জানিয়ে সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়ায় চিঠি পাঠানো হয়েছে। দেশ দুটি থেকে প্রতিবেদন পাওয়া গেলে পাচার করা সম্পদের পরিমাণ আরও বাড়তে পারে। আরামবাগের ভুক্তভোগী কয়েক ব্যবসায়ী বলেছেন, সাঈদ কমিশনার ক্ষমতায় থাকতে লোকজন দিয়ে তাদের অনেক অত্যাচার করেছেন। তার লোকজন প্রতিমাসে চাঁদা তুলত। না দিলে দোকানের মালপত্র নিয়ে যাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। সাঈদ বিদেশে পলাতক থাকলেও তার সেকেন্ড ইন কমান্ড জামাল উদ্দীন লোকজন নিয়ে এতদিন এলাকায় প্রভাব বিস্তার করে রেখেছিলেন। তবে গত কয়েকদিন ধরে তাকে দেখা যাচ্ছে না।
Link copied!