1. [email protected] : admi2017 :
  2. [email protected] : Daily Khabor : Daily Khabor
  3. [email protected] : rubel :
  4. [email protected] : shaker :
  5. [email protected] : shamim :
বৃহস্পতিবার, ৩০ মার্চ ২০২৩, ০৫:৫০ অপরাহ্ন

সাবেক এমডির ব্যর্থতায় ন্যাশনাল ব্যাংকে লোকসান

ডেইলি খবর নিউজ ডেস্ক
  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ২৬ জানুয়ারি, ২০২৩
  • ২৪ বার পড়া হয়েছে

ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দুর্নীতি ও অদক্ষতায় দেশের গুরুত্বপূর্ণ ব্যাংক ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেড এক বছরের ব্যবধানে প্রায় ১ হাজার কোটি টাকার লোকসানে পড়েছে। ২০২১ সালের ৯ ডিসেম্বর ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব নেন মেহমুদ হোসেন। গত ১৫ জানুয়ারি তিনি কোনো কারণ ছাড়াই হঠাৎ পদত্যাগ করে বসেন। গত বছর তিনি দায়িত্ব পালন করেন। এ সময়ে লাভে থাকা ব্যাংকটি ৭৫৫ কোটি টাকা লোকসান করেছে। অথচ আগের বছর ২০২১ সালে ব্যাংকটির লাভ ছিল ২২৫ কোটি টাকা।

শুধু মুনাফা নয়, মেহমুদ হোসেনের দায়িত্বকালীন ব্যাংকের অন্যান্য সূচকও হেঁটেছে পেছনের দিকে। আমানত সংগ্রহ কমে গেছে। কমেছে ঋণ বিতরণ; কিন্তু অব্যবস্থাপনার জন্য ব্যাংকের ঋণ আমানত অনুপাত ২০২১ সালের তুলনায় গত বছর বেড়েছে। আমদানি-রপ্তানি ব্যবসায়ও নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। বেড়ে গেছে খেলাপি ঋণের হার। ব্যাংক যখন লাভ করতে পারছে না, পাচ্ছে না প্রয়োজনীয় আমানত বা ভালো ঋণ গ্রহীতা; ঠিক সেই সময়ে ব্যাংকটির প্রশাসনিক বাড়িয়ে তুলেছেন সাবেক এই ব্যবস্থাপনা পরিচালক, যা ব্যাংকের লোকসানের অন্যতম কারণ।

ন্যাশনাল ব্যাংকের এক প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, ২০২১ সালের ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকটির পরিচালন মুনাফা ছিল ২২৫ কোটি টাকা। গত বছরের ডিসেম্বর শেষে লাভের পরিবর্তে পরিচালন লোকসান হয়েছে ৭৫৫ কোটি টাকা। ২০২১ সালের ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকটির আমানত ছিল ৪৪ হাজার ৯০৬ কোটি টাকা। গত বছরের ডিসেম্বরে তা কমে দাঁড়িয়েছে ৪২ হাজার ৪৩৪ কোটি টাকা। এক বছরের ব্যবধানে আমানত কমেছে ২ হাজার ৪৭২ কোটি টাকা।

একইভাবে কমেছে ঋণ বিতরণ। ২০২১ সালের ডিসেম্বর শেষে মোট ঋণ স্থিতি ছিল ৪৩ হাজার ২৬৮ কোটি টাকা। গত বছর শেষে ঋণ স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৪২ হাজার ৫০৬ কোটি টাকা। গত ১৯ জানুয়ারির হিসেবে ব্যাংকটির ঋণ আমানত অনুপাত দাঁড়িয়েছে ৯৭ দশমিক ৯৫ শতাংশ। যাকে ঝুঁকিপূর্ণ মনে করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ ছাড়া ২০২১ সালের ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকটির খেলাপি ঋণের হার ছিল বিতরণ করা ঋণের ১৩ দশমিক ৬৫ শতাংশ। ২০২২ সালের ডিসেম্বর শেষে এই হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৫ দশমিক ৬৬ শতাংশ।

মেহমুদ হোসেনের অদক্ষতা ও অনিয়ম এখানেই শেষ নয়। এর আগেও তিনি দুটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে ছিলেন। সেখানকার কর্মকাণ্ডেও ব্যাংক দুটির পরিচালনা পর্ষদ তার ওপর সন্তুষ্ট ছিল না। জানা গেছে, ওই ব্যাংক দুটিতেও তিনি প্রশাসনিক ব্যয় বাড়িয়ে তুলেছিলেন। ঝুঁকিপূর্ণ বিনিয়োগ, অপ্রয়োজনীয় নিয়োগ দেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে।

ব্যাংকটি পুঁজিবাজারে তালিকাভূক্ত। এর প্রায় ৭২ শতাংশ শেয়ার রয়েছে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে; কিন্তু ব্যাংকটি ২০২১ সালের জন্য লভ্যাংশ ঘোষণা করতে পারেনি। ব্যবস্থাপনায় অদক্ষতার কারণে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা বঞ্চিত হয়েছেন।

ব্যাংকের কোম্পানি সচিব মো. কায়সার রশিদ এ বিষয়ে বলেন, ২০২১ সালে লভ্যাংশ দেওয়ার মতো কোনো অর্জন ব্যাংকের ছিল না। যে কারণে লভ্যাংশ ঘোষণা করা হয়নি। ২০২২ সালের বার্ষিক প্রতিবেদন তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী যৌথ মূলধন কোম্পানি, বাংলাদেশ ব্যাংকের বিধিবিধান পরিপালন করে সিকিউরিটি অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের অনুমোন সাপেক্ষে বার্ষিক সাধারণ সভার তারিখ ঘোষণা করা হবে। আর এজিএম অনুষ্ঠিত হবে জুলাই বা আগস্টে।

এদিকে মেহমুদ হোসেনের দায়িত্বকালীন সময়ে ব্যাংকটির প্রশাসনিক ব্যয় অনেক বেড়েছে। এক প্রতিবেদনে জানা গেছে, ২০২১ সালের ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকটির প্রশাসনিক ব্যয় ছিল ১ দশমিক ৮৫ শতাংশ। আর ২০২২ সালের শেষে এই ব্যয়ের হার দাঁড়িয়েছে ২ দশমিক ৩৬ শতাংশ। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, সদ্য বিদায় ব্যবস্থাপনা পরিচালক অনিয়মের মাধ্যমে ব্যাপক নিয়োগ দিয়ে প্রশাসনিক খরচ বাড়িয়ে ফেলেছেন।

জানা গেছে, যাচাই-বাছাই ছাড়াই ট্রেইনি অ্যাসিস্ট্যান্ট থেকে শুরু করে এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট (ইভিপি) পর্যন্ত পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। যেখানে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরামর্শ অনুযায়ী আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো পরিচালন ব্যয় কমাচ্ছে, সেখানে গত চার মাসে ৩টি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিডেট। নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে পদ সংখ্যাও ছিল অনির্ধারিত।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মূলত নিজেদের ব্যক্তিগত স্বার্থে ব্যাংকটির সদ্যবিদায়ী ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মেহমুদ হোসেন ও মানবসম্পদ বিভাগের প্রধান শেখ আকতার উদ্দিন আহমেদ সিন্ডিকেট তৈরি করে বেশকিছু প্রশ্নবিদ্ধ নিয়োগ দিয়েছেন। এখানেই শেষ নয়, নিজেদের লোক নিয়োগ দেওয়ার সুবিধার্থে ব্যাংকটিতে নতুন-নতুন বিভাগও খুলেছেন তারা। উল্লেখ্য, ব্যাংকটির ২০২১ সালের বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী ২০২০ সালে মোট কর্মী ছিল ৪ হাজার ৮১৪। ২০২১ সালে তা কমে দাঁড়ায় ৪ হাজার ৭৬৪ জনে।

এ বিষয়ে কোম্পানি সচিব জানান, গত বছর কিছু প্রবেশনারি অফিসার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। আর কিছু লোকের নিয়োগের লক্ষ্যে ইন্টারভিউ নেওয়া হয়েছে। যেসব ক্ষেত্রে জনবলের শূন্যতা রয়েছে, সেখানে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত সেপ্টেম্বর শেষে ন্যাশনাল ব্যাংকের খেলাপি ঋণ বেড়ে হয়েছে ১১ হাজার ৩৩৫ কোটি টাকা। এক বছর আগে যা ছিল ৪ হাজার ৫৮৮ কোটি টাকা। এক বছরে ব্যাংকটির খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৬ হাজার ৭৪৭ কোটি টাকা। এখন ব্যাংকটির ২৭ দশমিক ৪৬ শতাংশ ঋণই খেলাপি। এদিকে ব্যাংকটি তারল্য-সংকটেও পড়েছে। সোনালী ব্যাংক থেকে ৯ শতাংশ সুদে ১৫০ কোটি টাকা নিয়েছেন সাবেক এমডি। উচ্চ সুদে নেওয়া এই টাকা পরিশোধ না করে তিনি বারবার মেয়াদ বাড়িয়েছেন।

এসব অভিযোগের বিষয়ে ন্যাশনাল ব্যাংকের সদ্যবিদায়ী ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মেহমুদ হোসেনের বক্তব্য নেওয়ার চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি।

১৯৮৪ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ন্যাশনাল ব্যাংকের অনুমোদিত মূলধন ৫ হাজার কোটি টাকা। পরিশোধিত মূলধন ৩ হাজার ২১৯ কোটি ৭৪ লাখ টাকা। রিজার্ভে রয়েছে ১ হাজার ৯৬৮ কোটি ৯০ লাখ টাকা। ব্যাংকটির মোট শেয়ার সংখ্যা ৩২১ কোটি ৯৭ লাখ ৩৯ হাজার ৫৭১। এর মধ্যে ২৮ দশমিক ৪৭ শতাংশ রয়েছে উদ্যোক্তা পরিচালকদের হাতে। এ ছাড়া ২৮ দশমিক ৩৪ শতাংশ শেয়ার প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী, দশমিক ৭৬ শতাংশ বিদেশি ও বাকি ৪২ দশমিক ৪৩ শতাংশ শেয়ার সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে রয়েছে। ডিএসইতে গতকাল শেয়ারটির সর্বশেষ ও সমাপনী দর ছিল ৮ টাকা ৩০ পয়সা। গত এক বছরে শেয়ারটির সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ দর ছিল যথাক্রমে ৭ টাকা ১০ পয়সা ও ৮ টাকা ৭০ পয়সা।

বিজ্ঞাপন

এ জাতীয় আরো খবর