বুধবার, ১৫ জানুয়ারি, ২০২৫, ২ মাঘ ১৪৩১

সাবেক এমপি আউয়ালের বিরুদ্ধে রামগঞ্জে জমি দখলের অভিযোগ

প্রকাশিত: ০৬:৫৯ এএম, মে ২৬, ২০২১

সাবেক এমপি আউয়ালের বিরুদ্ধে রামগঞ্জে জমি দখলের অভিযোগ

ঢাকার পল্লবীতে সাহিনুদ্দিন হত্যা মামলার প্রধান আসামি লক্ষ্মীপুর-১ (রামগঞ্জ) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এমএ আউয়ালের বিরুদ্ধে জমি দখলের অভিযোগ উঠেছে। নিঃসন্তান এক হিন্দু ব্যক্তির ওয়ারিশ সাজিয়ে জমি রেজিস্ট্রি করে সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে তিনি জমি দখল করেছেন। অপরদিকে তার দুই একান্ত সহকারী সচিব ফরিদ আহম্মেদ বাঙ্গালী ও শেখ মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে প্রতারণা করে সম্পদের পাহাড় গড়ার অভিযোগ উঠেছে। টিআর, কাবিখা, কাবিটা, ৪০ দিনের কর্মসংস্থানসহ বিভিন্ন প্রকল্পের টাকা আত্মসাৎ করে তারা অঢেল সম্পত্তির মালিক হয়েছেন। এছাড়া বিনা মূল্যের সরকারি ঘর দেওয়ার কথা বলে তারা অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন। তরিকত ফেডারেশনের সাবেক মহাসচিব ও সাবেক এমপি আউয়ালের বিরুদ্ধে রামগঞ্জ পৌরসভার সোনাপুরে হিন্দু ব্যক্তির জমি দখল করার অভিযোগ উঠেছে। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার কয়েক মাস পরই আউয়াল সোনাপুরের মুক্তিযোদ্ধা হারাধন চন্দ্র শীলের ১৭ শতাংশ জমি দখল করেন। হারাধনের কোনো ওয়ারিশ না থাকায় ফরিদ বাঙ্গালী ও শেখ মিজান সুকৌশলে হারাধনের মামাতো ভাই নারায়ণপুরের শীলবাড়ির রাধারাম শীলকে ওয়ারিশ সাজিয়ে আউয়ালের নামে জমি রেজিস্ট্রি করেন। এরপর সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে আউয়াল ওই জমি দখলে নেন। এলাকার বাসিন্দা সুধাংশ বণিক জানান, মারা যাওয়ার আগে হারাধন সোনাপুরের ৪৫ নম্বর মৌজার ১৭ শতাংশ জমি হিন্দু কল্যাণ ট্রাস্টের নামে রেজিস্ট্রি করে যান। কিন্তু সাবেক এমপি আউয়াল অন্য একজনকে ওয়ারিশ বানিয়ে ওই জমি পুনরায় রেজিস্ট্রি করে নিয়েছেন। তিনি জমি জবরদখল করেছেন। হরিসভা বাড়ির সুধাংশ বণিক (মাস্টার), বণিকবাড়ির কেশব বণিক, মাধব বণিক মামলা করেছেন। মামলা চলছে। শেখ মিজান জানান, পৌর তরিকত ফেডারেশন নেতা রফিকুল ইসলামের মাধ্যমে সাবেক এমপি আউয়াল জমি কিনেছেন। এরপর সুধাংশসহ কয়েকজন মামলা করেন। এ ব্যাপারে তরিকত নেতা রফিকুল জানান, মোট জমি ১৪৭ শতাংশ। এর মধ্যে আউয়ালের দখলে রয়েছে ১৭ শতাংশ। মামলা চলমান থাকলেও আমরা সুধাংশদের কিছু টাকা দিয়েছি। আশা করি, শিগগিরই সমাধান হয়ে যাবে। দুই সহকারীর সম্পদের পাহাড় : লায়ন এমএ আউয়াল দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মহাজোটের প্রার্থী হয়ে রামগঞ্জ আসনে সংসদ সদস্য (এমপি) নির্বাচিত হন। এরপর তিনি একান্ত সহকারী সচিব হিসাবে ফরিদ বাঙ্গালী ও শেখ মিজানকে নিয়োগ দেন। নিয়োগ পেয়েই তারা অভিনব কায়দায় প্রতারণা শুরু করেন। প্রাথমিক স্কুলের নৈশপ্রহরী নিয়োগ দিয়ে তারা টাকা নিয়েছেন। সরকারি-বেসরকারি অফিসে চাকরি দেওয়ার কথা বলে তারা কয়েক কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন। ৩৫০ হতদরিদ্রের মাঝে সরকারি ঘর নির্মাণ করে দেওয়ার কথা বলে ঘরপ্রতি এক লাখ টাকা করে সাড়ে তিন কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। আউয়াল আবার মনোনয়ন না পাওয়ায় ঘর তো দূরের কথা, কেউ আসল টাকাই ফেরত পাননি। ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ দেওয়ার কথা বলে ১ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন তারা। এ নিয়ে কয়েকটি জাতীয় পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হলে দুদক তদন্তে নামে। জানা গেছে, ফরিদ বাঙ্গালী সাপ্তাহিক অগ্রজ নামে একটি ম্যাগাজিন বের করে কোনো রকমে জীবিকা নির্বাহ করতেন। আউয়ালের একান্ত সহকারী সচিব হয়ে তিনি ঢাকার নাখালপাড়ায় দুইটি চাইনিজ রেস্টুরেন্ট, চট্টগ্রামে দুইটি আবাসিক হোটেলসহ অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান করেছেন। দৈনিক লাখো কণ্ঠের সম্পাদক হয়েছেন। গাড়ি-বাড়ি ও ফ্ল্যাটের মালিক হয়েছেন। অপরদিকে রামগঞ্জ পৌর শহরের সোনাপুর বাজারে শেখ মিজান বিলাসবহুল বাড়িসহ অনেক সম্পদ করেছেন। চণ্ডিপুরের মোরশেদ, দরবেশপুরের আবু তাহের, লামচরের বাচ্চু বলেন, হতদরিদ্রদের জন্য বিনা মূল্যে সরকারি ঘর দেওয়ার কথা বলে ফরিদ বাঙ্গালী ঘরপ্রতি ১ লাখ টাকা করে নেন। কিন্তু ঘর তো দূরের কথা, আমরা যে টাকা দিয়েছি, তা-ও ফেরত পাইনি। দুদকের মাধ্যমে তদন্ত করে তাদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানান রামগঞ্জবাসী। ভাদুর ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান জাহিদ হোসেন ভূঁইয়া, কাঞ্চনপুর ইউপি চেয়ারম্যান নাছির উদ্দিনসহ কয়েকজন চেয়ারম্যান জানান, বিনা মূল্যের সরকারি ঘর দেওয়ার কথা বলে ফরিদ বাঙ্গালী মানুষের কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন। টিআর, কাবিখা, কাবিটা, ৪০ দিনের কর্মসংস্থান ও গভীর নলকূপসহ বিভিন্ন প্রকল্প নিয়ে আমাদের অনেক বিপাকে পড়তে হয়েছে। অনেকে টাকা দিয়ে কিছুই পাননি। আবার তারা টাকাও ফেরত পাননি। দুর্নীতি করে ফরিদ বাঙ্গালী অনেক সম্পদের মালিক হয়েছেন। ফরিদ বাঙ্গালীর সঙ্গে মোবাইল ফোনে বারবার চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। মোবাইল ফোনে শেখ মিজান জানান, সাবেক এমপি আউয়ালের প্রধান সহকারী সচিব হিসাবে ফরিদ বাঙ্গালীই সব দেখাশোনা করতেন। ঘরের বিষয়টিও ফরিদ দেখেছেন। সোনাপুরে বাড়ি নির্মাণ করা প্রসঙ্গে শেখ মিজান বলেন, গ্রামের সম্পত্তি বিক্রি করে সোনাপুরে বাড়ি করেছি। উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ ক ম রুহুল আমিন বলেন, আউয়াল এমপি থাকাকালে আমি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলাম। প্রভাব খাটিয়ে আওয়ামী লীগের নেতকর্মীদের হয়রানি এবং বিভিন্ন প্রকল্পে অর্থ বাণিজ্যের কারণে তার সঙ্গে আমার বিরোধ লেগেই থাকত। অনিয়মের মাধ্যমে আউয়াল এবং তার সহকারীরা অঢেল সম্পত্তির মালিক হয়েছেন। তদন্ত করে তাদের আইনের আওতায় আনা উচিত।
Link copied!