রেলের জমি বেদখলে থাকার অভিযোগ নতুন নয়। তবে সৈয়দপুর রেল অঞ্চলে দখলদারির ঘটনা রীতিমতো মহোৎসবে পরিণত হয়েছে। বেহাত হয়েছে শহরে অবস্থিত সাড়ে তিনশ’ একর জমি। এর মধ্যে সরকারি দলের নেতা, একজন উপজেলা চেয়ারম্যান ও ভূমিদস্যুদের কবলে পড়েছে প্রায় পাঁচ হাজার কোটি টাকার সম্পত্তি। শুধু তাই নয়, সেখানে নির্বিঘ্নে গড়ে তোলা হয়েছে অসংখ্য বহুতল ভবন।
প্রভাবশালী ব্যক্তি-সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের নামেও হরিলুট হয়েছে রেলের মূল্যবান জমি। দখলের গ্রাস থেকে বাদ যায়নি কেপিআই অন্তর্ভুক্ত জমিও। রেলের একশ্রেণির অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীর যোগসাজশে এসব জমি বেদখলে চলে গেছে।
রেলপথ মন্ত্রণালয়ের এক তদন্ত প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য। সেখানে উপজেলা চেয়ারম্যান ও রেলের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাসহ দখলদারিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। আর এই চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নিতে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে বলা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, সারা দেশে রেলের প্রায় ৪২১৭ একর জমি বেদখলে আছে। এর মধ্যে সৈয়দপুর শহরেই সাড়ে তিনশ একর জমি বেহাত হয়েছে।
জানতে চাইলে রেলপথমন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজন বলেন, রেলের জমি ভূমিদস্যুদের হাতে-এমনটা আর মানা যায় না। আমরা কঠোর হচ্ছি। কাউকেই রক্ষা করা হবে না। যাদের দখলে জমি রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে ক্ষতিপূরণ আদায়সহ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। দখলে থাকা জমি উদ্ধার করে রেলওয়ের মাধ্যমে স্থাপনা তৈরি করে আয়ের ব্যবস্থা করা হবে। দখলদার যত ক্ষমতাসীন কিংবা রাজনৈতিক নেতা হোক না কেন-আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। সৈয়দপুরে রেলের জমি দখল বিষয়ে তদন্ত কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ হচ্ছে। রেলওয়ে সংশ্লিষ্টদেরও ক্ষমা করা হবে না।
মন্ত্র্রণালয়ের তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, সৈয়দপুর উপজেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান ও সৈয়দপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোকছেদুল মোমেনিন অবৈধভাবে রেলের জমি দখল করে বহুতল ভবন নির্মাণ করেন। কেপিআই অন্তর্ভুক্ত সৈয়দপুর রেলওয়ে ওয়ার্কসপের ১২নং গেটের সামনে প্রায় ২ একর জায়গায় মোকছেদুল মোমেনিন তার পিতার নামে শামসুল হক মেমোরিয়াল একাডেমি এবং পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় নির্মাণ করেন। এ ছাড়া তিনি রেলওয়ে কোয়ার্টারের সিলগালা তালা ভেঙে বাংলো নং টি-১৪ অবৈধভাবে বিক্রি করে দেন। বাংলো এলাকায় অবৈধভাবে বেশ কয়েকটি বিল্ডিং নির্মাণ করা হয়েছে।
এ ছাড়া প্রতিবেদনে বলা হয়, সৈয়দপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোকছেদুল মোমেনিন একসময় রেলওয়েতে চাকরি করতেন। তিনি সৈয়দপুর রেলওয়ে ওয়ার্কসপের মিস্ত্রি মিলরাইডসপ (অবসরপ্রাপ্ত টিকিট নং-৬০১৬) পদে চাকরিরত অবস্থায় অবসরে যান। রেলওয়ে এলাকায় তিনি সবচেয়ে বেশি রেলওয়ে জমি দখলে রেখেছেন। একই সঙ্গে দখলদারিদের হয়ে তিনি কাজ করছেন।
এ বিষয়ে সৈয়দপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এবং সৈয়দপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোকছেদুল মোমেনিন বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে, তার কিছুই আমি জানি না। তদন্ত কমিটির কেউ আমার সঙ্গে কথাও বলেনি। যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কথা বলা হচ্ছে, তা আমার বাবার নামে। তবে এমন আরও প্রায় ৩৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রেলওয়ের জায়গায় নির্মাণ করা হয়েছে। রেলওয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারী সমন্বয়ে বিভিন্ন সংগঠন রয়েছে-সেসব সংগঠনের নেতাদের সমন্বয়েই বাবার নামে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নির্মাণ করা হয়েছে।’
অবৈধভাবে এসব স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে স্বীকার করে তিনি বলেন, স্থাপনাগুলো বৈধ করার জন্য রেলওয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা চলছে। সৈয়দপুর রেলে বহু রেলের সম্পত্তি দখলদারদের কবলে রয়েছে। এসব উদ্ধার করা হোক। রেলওয়ের জমি তিনি তার কোনো স্বার্থে অবৈধভাবে দখল করেননি বলেও জানান।
প্রতিবেদন সুপারিশে বলা হয়, মোকছেদুল মোমেনিন দীর্ঘদিন ধরে রেলের কোটি কোটি টাকার মূল্যবান সম্পত্তি অবৈধভাবে দখলে রেখেছেন। তার দখল করা ভূমি জরুরি ভিত্তিতে উদ্ধার এবং দখলদারের কারণে ক্ষতিপূরণ আদায়সহ রেলওয়ে আইন অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে। একই সঙ্গে একজন জনপ্রতিনিধি হয়ে রেলওয়ের জমি সম্পূর্ণ অবৈধভাবে দখলে রেখে বহুতল ভবন নির্মাণ করায় যথাযথ প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে লিখিত পত্র প্রেরণের নির্দেশ দেওয়া যেতে পারে।
একই সঙ্গে সৈয়দপুর রেলওয়ে পুলিশ সুপার সিদ্দিকী তাঞ্জিলুর রহমানের বরাদ দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, মোখছেদুল মোমেনিন ২০১৫ সালে প্রায় দুই একর জমি নিজ দখলে নিয়ে অবৈধভাবে বহুতল ভবন নির্মাণ করেছেন। এ ক্ষেত্রে রেলওয়ে পুলিশের অধিক্ষেত্র না থাকায় দখলদারিদের বিরুদ্ধে কোনো আইননানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা সম্ভব হয়নি।
তদন্ত প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, সৈয়দপুর পৌরসভার প্রত্যক্ষ যোগসাজশে রেলের জমিতে বহুতল ভবন গড়ে উঠেছে। এ বিষয়ে আদালতের নিষেধাজ্ঞা/স্থিতাবস্থায় থাকলেও পৌরসভা কোনো তোয়াক্কা না করে রেলের জমি দখলে নিয়ে নতুন ভবন তৈরি করছে। কোনো অবস্থাতেই এসব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা যাচ্ছে না। পৌরসভা কর্তৃক প্রায় ২৫ একর জমিতে অবৈধ স্থাপনা গড়ে উঠেছে।
প্রতিবেদনের সুপারিশে বলা হয়, সৈয়দপুর পৌরসভা কর্তৃক রেলের জমি অবৈধ দখলে রেখেছে। সরকারের কোটি কোটি টাকার মূল্যবান সম্পত্তি থেকে কোনো রাজস্ব আয় হচ্ছে না। পৌরসভা কর্তৃক অবৈধ দখলে থাকা রেলের জমি জরুরি উদ্ধারসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে রেলওয়ে আইনে মামলা করা এবং পৌরসভা কর্তৃক রেলভূমিতে অযাচিত হস্তক্ষেপ এবং অপদখল বন্ধ করাসহ পৌরসভা সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে লিখিত পত্র দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এদিকে স্থানীয় ব্যবসায়ী আলতাফ হোসেন পিতা নজির উদ্দিনের বিরুদ্ধেও অবৈধভাবে রেলের জমি দখলের প্রমাণ পেয়েছে তদন্ত কমিটি। তিনি রেলওয়ে কোয়ার্টার ও জমি দখল করে ১২টি বহুতল ভবন নির্মাণ করেছেন। ঠিকাদার হিসাবে পরিচিত জয়নাল আবেদিন রেলওয়ে খাদ্য গোডাউন ভেঙে ৪ তলা ভবন নির্মাণ করেন। তিনি রেলের জায়গা মসজিদ কমিটির কাছে বিক্রি করেছেন।
অপর এক প্রভাবশালী দখলদার সৈয়দপুর রেলওয়ে পুলিশ অফিসের পাশে বিলাসবহুল রেস্টুরেন্ট নির্মাণ করেছেন অবৈধভাবে। একই সঙ্গে সৈয়দপুর উপজেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি লায়ন নজরুল ইসলাম রেলের জায়গায় অবৈধভাবে লায়ন স্কুল অ্যান্ড কলেহের বহুতল ভবন নির্মাণ করেছেন।
তাছাড়া ভূমিদস্যু হিসাবে পরিচিত বাবু আলী ডালমিল সিনেমা রোডে রেলের জায়গা অবৈধভাবে দখল করে বেশ কয়েকটি বহুতল ভবন নির্মাণ করে। এছাড়া আতিকুল ইসলাম পিতা মনসুর আলী রেলের কোয়ার্টার ভেঙে বহুতল ভবন নির্মাণ করে ব্যবসা করছেন। একই সঙ্গে সৈয়দপুর রেলওয়ে জমি অবৈধভাবে দখল করে-দখলদাররা ঢাকা ব্যাংক, আল আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক, রূপালী ব্যাংক, পূবালী ব্যাংক, ডাচ-বাংলা ব্যাংক, জনতা ব্যাংক, সিটি ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংকসহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে ভাড়া দিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। প্রতিবেদনে উঠে আসে সৈয়দপুর রেলে মোট ৭৯৮.৯৯ একর জমি রয়েছে- যার মধ্যে প্রায় ২শ একর বেদখলে রয়েছে। অবৈধ দখলদারদের সংখ্যা প্রায় ৭ হাজার।
তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, সৈয়দপুর রেলওয়ে কোয়ার্টারের ৭০ শতাংশই অবৈধ দখলদারদের দখলে রয়েছে। ‘বাংলাদেশ রেলওয়ে এ্যামপ্লয়িজ কো-অপারেটিভ মার্কেট’ নামে সম্পূর্ণ অবৈধভাবে অর্ধশতাধিক দোকান গড়ে তোলা হয়েছে। রেলওয়ে জেলা পুলিশ ক্লাবের সামনে- রেলের জমি দখলে নিয়ে একতা এক্সপ্রেস ভবনসহ নজরুল ইসলাম নামক এক ভূমিদস্যু বহুতল বসতবাড়ি নির্মাণ করেছেন। অথচ রেলওয়ে পুলিশ চেয়ে চেয়ে দেখছে।
প্রতিবেদনে উঠে আসে- প্রয়াত জনৈক মেয়র আমজাদ হোসেন সরকার যখন এমপি ছিলেন (২০০১-২০০৬) তখন তার ছত্রছায়ায় স্থানীয় লোকজন রেলের জমি দখলে নিয়ে বহুতল ভবন নির্মাণ করেন। অবৈধভাবে গড়ে ওঠা ১৪০০ বাড়ি/স্থাপনা থেকে রেলওয়ে কর্মচারী এবং ভূমিদস্যুরা ভাড়া তুলছে। এসব স্থাপনায় অবৈধভাবে বিদ্যুৎ ব্যবহার হচ্ছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, সৈয়দপুর শহরে রেলের জমি রয়েছে ২৫.৭৫ একর। মোট জমিতে অবৈভাবে ১১৩১টি স্থাপনা গড়ে তোলা হয়েছে। এসব জমিতে ১ তলা ভবন ৮৭ টি, ২য় তলা ভবন ১৬৭টি, ৩য় তলা ভবন ৬৫টি, ৪ তলা ভবন ২৬পি, ৫ তলা ভবন ৫টি, ৬ তলা ভবন ১টিসহ বাসাবাড়ি রয়েছে প্রায় ১৫০টি। দলাীয় অফিস ৬টিসহ আবাসিক হোটেল রয়েছে ৩৬টি। প্রায় ৫ হাজার অবৈধ দোকানসহ ১৬টি ব্যাংকসহ ৪৩টি শিল্প প্রতিষ্ঠান রয়েছে। যুগের পর যুগ ধরে অবৈধ এসব স্থাপনা থেকে ভূমিদস্যুরা ভাড়া তুলছে। কোনো কোনোটি আবার বিক্রি করে দিয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০০৭-০৮ সালের পর সৈয়দপুর এলাকায় কোনো অভিযান পরিচালনা করা হয়নি। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, ব্যবসায়ীদের এক প্রকার ‘বাধায়’ এলাকায় উচ্ছেদ কার্যক্রম পরিচালনা সম্ভব হয়নি।
প্রতিবেদনে রেলওয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে জায়গা দখলে সহযোগিতা এবং দেখেও না দেখার ভান করার সত্যতা মিলেছে। সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানায় ১১০ একর জমি রয়েছে। কারখানা এলাকায় একরের পর একর জমি দখলদারদের দখলে রয়েছে। কারখানা বিভাগীয় তত্ত্বাবধায়ক-কারখানার কর্মকর্তাদের গাফিলতি রয়েছে। তাদের দায়দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করেনি।
একই সঙ্গে ভূ-সম্পত্তি বিভাগে সৈয়দপুর আওতাধীন যে পরিমাণ রেলের জমি রয়েছে-তার মধ্যে দখলে যাওয়া জমি রক্ষায় ব্যর্থ হয়েছে ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তাসহ তার সহযোগীরা। রেলওয়ে পুলিশ ও রেলওয়ে নিরাপত্তাবাহিনীর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদেরও অবহেলা রয়েছে বলে প্রতিবেদনে উঠে আসে। শত শত অবৈধ স্থাপনায় অবৈধভাবে বিদ্যুতের সংযোগ থাকলেও সংশ্লিষ্ট বিদ্যুৎ কর্মকর্তাদের তৎপরতা দেখা যায়নি।
প্রতিবেদনের সুপরিশে বলা হয়েছে, স্থানীয রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের কারণে সার্বিক উচ্ছেদ কার্যক্রম পরিচালনা করা যায়নি। বিভিন্ন ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় সিন্ডিকেট সৃষ্টি করে একের পর এক রেলের মূল্যবান জমি দখল করে স্থাপনা তৈরি করছে।
এছাড়া রেলওয়ে জমি রক্ষা ও উদ্ধারে রেলওয়ে পুলিশ ও নিরাপত্তাবাহিনীকে যথাযথ দায়িত্ব প্রদান জরুরি। প্রয়োজনে স্থানীয়ভাবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সমন্বয়ে অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ এবং আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা। রেলে দক্ষ কোনো আইনজীবী নেই। দক্ষ আইনজীবী নিয়োগ জরুরি। সোনালী ব্যাংকের কর্মচারী ভূমিদস্যু আমিনুল ইসলাম, জনৈক শাহজাহান ও শহিদ আক্তারের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
অবৈবভাবে নির্মিত সামসুল হক মেমোরিয়াল একাডেমি, পাইলট সরকারি উচ্চবিদ্যালয়, লায়ন স্কুল অ্যান্ড কলেজসহ অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মঞ্জুরি বাতিল এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নির্মাণের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের (শিক্ষা প্রকৌশল বিভাগ) বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হয়েছে। সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানার বিভাগীয় তত্ত্বাবধায়ক জয়দুল ইসলামসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলা হয়েছে। এছাড়া ২৪টি সুপারিশের মধ্যে রেলের জমি অবৈধভাবে দখলে নেওয়া ভূমিদস্যুদের সঙ্গে রেলওয়ে সংশ্লিষ্ট কমপক্ষে ৭ কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবসা গ্রহণের কথা বলা হয়েছে।
গত বছরের ১২ আগস্ট ‘সৈয়দপুর (নীলফামারী) বাংলাদেশ রেলওয়ের পাঁচ হাজার কোটি টাকার ভূ-সম্পত্তি আত্মসাৎ সম্পর্কিত এক অভিযোগ দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) থেকে রেল মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে ওই বছর ১২ ডিসেম্বর মন্ত্রণালয় থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিতে আহ্বায়ক ছিলেন রেলপথ মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব ও রেলপথমন্ত্রীর একান্ত সচিব মোহাম্মদ আতিকুর রহমান, সদস্য সচিব পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের প্রধান ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা মো. রেজাউল করিম ও সদস্য রেলভবনস্থ উপপরিচালক (ভূ-সম্পত্তি) মো. আবিদুল রহমান।
চলতি বছরের ১৮ মার্চ কমিটি তদন্ত প্রতিবেদন রেলপথ সচিব মো. সেলিম রেজার কাছে জমা দেয়। সেই প্রতিবেদনের সুপারিশ অনুযায়ী জমি দলখদারি ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠান এবং রেলওয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে গত ৮ জুন মন্ত্রণালয় থেকে রেলওয়ে মহাপরিচালককে বলা হয়।
তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক রেলওয়ে যুগ্মসচিব ও রেলপথমন্ত্রীর একান্ত সচিব মোহাম্মদ আতিকুর রহমান জানান, সরকারি জমি কেউ দখলে রাখতে পারে না। উদ্বেগের বিষয় এই যে, রেলের জমি দখলে নিয়ে শত শত বহুতল ভবন নির্মাণ করেছে ভূমিদস্যুরা। তদন্তে এসব বেরিয়ে এসেছে। আমরা পুরো প্রতিবেদন সুপারিশসহ রেলপথ সচিব বরাবর প্রেরণ করেছি। নিশ্চয় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। রেলের জমি উদ্ধার না হলে দিন দিন আরও দখলদারদের কবলে চলে যাবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।