ভাগবাটোরায় দলীয় পরিচয় বড় কিছু নয়, ঠিকাদারই আসল পরিচয়। তাই টাকার কাজ ভাগবাটোয়ারায় দলীয় পরিচয় সমস্যা হয় না। চট্টগ্রামে গণপূর্ত বিভাগের টেন্ডার (দরপত্র) নিয়ন্ত্রণ করেন হাজারের মধ্যে মাত্র সাতজন। তাদের কেউ যুবলীগ, কেউ ছাত্রলীগ, আসলে এরা সবাই ঠিকাদারলীগ, আওয়ামী লীগ নয়।
ওদের সাথে যারা বিএনপির তাদেরও কোনো ভয় নেই, ভয় বঙ্গবন্ধুর আদর্শিকদের। তবে রাজনৈতিক দর্শন যা-ই হোক না কেন, তাদের কথা ছাড়া কাজ নিতে পারেন না কেউই। ই-টেন্ডারে কোনো ঠিকাদার কাজ পেলেও নির্দিষ্ট অঙ্কের চাঁদা দিতে হয় তাদের। তাদের কথার বাইরে গিয়ে কেউ কাজ করতে গেলেই অপহরণ, হুমকি-ধমকি ও মারধরের শিকার হন।
গত ফেব্রুয়ারিতে গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয়ে ঢুকে এক ঠিকাদারকে মারধর ও প্রকৌশলীকে হত্যার হুমকির অভিযোগ তদন্তে নেমে টেন্ডারের এই সাত নিয়ন্ত্রকের নাম পেয়েছে পুলিশ। তাদের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্রও দেয়া হয়েছে। আদালত থেকে জারি হয়েছে গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও। কিন্তু এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে তারা।
চট্টগ্রামে গণপূর্ত বিভাগের টেন্ডারের এই সাত নিয়ন্ত্রক হলেন ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার সুলাখালী গ্রামের আবুল কাশেমের ছেলে এস এম পারভেজ, চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার গুনদিপ গ্রামের সোলায়মানের ছেলে মিজানুর রহমান মিজান, লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার বিজয়নগর গ্রামের মো. রফিকুল্লাহর ছেলে স্বপন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার নরসিংহপুর মধ্যপাড়া গ্রামের মো. আওয়ালের ছেলে জালাল ওরফে বিএনপি জালাল, নোয়াখালীর চাটখিল উপজেলার কড়িহাটি গ্রামের মৃত নুর আহমদ সওদাগরের ছেলে মনির হোসেন ওরফে মনির, চট্টগ্রামের হালিশহর থানার শান্তিবাগ আবাসিক এলাকার শফিউল্লাহর ছেলে শাখাওয়াত উল্ল্যাহ ওরফে বাপ্পি এবং ভোলার লালমোহন উপজেলার চরলক্ষী তহশিলদার বাড়ির এমএ বাশারের ছেলে আবু হানিফ রিয়াদ।
তারা সবাই চট্টগ্রাম নগরের বিভিন্ন এলাকায় থাকেন। তাদের মধ্যে মূল নিয়ন্ত্রক এসএম পারভেজ ও আবু হানিফ রিয়াদ। পারভেজ স্থানীয় যুবলীগ নেতা হিসেবে পরিচিত আর রিয়াদ নগর ছাত্রলীগের উপ-অর্থ সম্পাদক।
ডবলমুরিং থানার ওসি মোহাম্মদ মহসীন বলেন, আগ্রাবাদে গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৗশলীর কার্যালয়ে ঢুকে ঠিকাদারকে মারধর ও এক প্রকৌশলীকে হত্যার হুমকি দেয়ার ঘটনায় এসএম পারভেজ নামের একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিলো। এ ঘটনায় আরও ছয়জন জড়িত ছিলো বলে তদন্তে উঠে এসেছে। তাদের গ্রেপ্তারে চেষ্টা চলছে।
আদালতে দেয়া অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, গত ৭ ফেব্রুয়ারি গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীর কক্ষে সভা ছিলো। সভায় নির্বাহী প্রকৌশলী হাসান ইবনে কামাল, সংশ্লিষ্ট কয়েকজন প্রকৌশলী ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আনাস ট্রেডিং ইন্টারন্যাশনালের মালিক খলিলুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।
এ সময় এসএম পারভেজের নেতৃত্বে মিজান, স্বপন, বিএনপি জালাল, মনির, বাপ্পী ও রিয়াদ নির্বাহী প্রকৌশলীর কক্ষে প্রবেশ করে ঠিকাদার খলিলুরকে মারধর শুরু করেন। কক্ষে উপস্থিত প্রকৗশলীরা প্রতিবাদ করলে তাদের হত্যার হুমকি দিয়ে চুপ থাকতে বলেন মারধরকারীরা।
ঘটনার সময় গণপূর্ত বিভাগের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী চৌধুরী রায়হান ইবনে সুলতানের হাতে মোবাইল ফোন ছিলো। তিনি ঘটনার দৃশ্য ধারণ করেছেন সন্দেহে মারধরকারীরা তার মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করেন। একপর্যায়ে গণপূর্ত বিভাগের কর্মচারীরা এগিয়ে এলে তারা বাইরে চলে যান। এর কিছুক্ষণ পর এসএম পারভেজ দলবল নিয়ে আবার এসে চৌধুরী রায়হান ইবনে সুলতানকে হত্যার হুমকি দিয়ে শাসিয়ে যান।
তদন্ত-সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, খলিলুর রহমান ই-টেন্ডারে অংশ নিয়ে কাজ পেলেও নির্দিষ্ট অঙ্কের চাঁদা দাবি করেন পারভেজ ও তার অনুসারীরা। চাঁদা দিতে রাজি না হওয়ায় পরদিন প্রকৌশলীর দপ্তরে ঢুকে তাকে মারধর করা হয়।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডবলমুরিং থানার এসআই অর্ণব বড়ুয়া বলেন,ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ, প্রত্যক্ষদর্শীদের সাক্ষ্য ও অনুসন্ধানে ঘটনায় যাদের জড়িত থাকার প্রমাণ পেয়েছি, তাদের অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দিয়েছি।
গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৗশলী হাসান ইবনে কামাল বলেন, বাইরে কী হয় জানি না। কখনো কোনো ঠিকাদার এ বিষয়ে অভিযোগ করেননি। কার্যালয়ের ভেতরে যে ঘটনা ঘটেছে, তার জন্য থানায় মামলা করা হয়েছে। সূত্র: সমকাল