বাবার ছবি বুকে নিয়ে গত দুই দিন এই হাসপাতাল থেকে ওই হাসপাতালে ছুটে বেড়িয়েছেন হেনা বেগম। বাবা হারুনুর রশিদের হদিস পাননি। অবশেষে মঙ্গলবার রাজধানীর মগবাজারে দুর্ঘটনাস্থলের ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে ৬৫ বছর বয়সী হারুনুর রশিদের লাশ উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিস। বাবাকে শনাক্তের সময় হেনা বেগমের আহাজারিতে ঘটনাস্থলে থাকা সবার চোখ ভিজে যায়।
কাঁদতে কাঁদতে হেনা বেগম বলেন, ‘এহন আমি কারে বাবা বলে ডাকব? ও বাবা, তুমি আমারে ফালাইয়া কই চইলা গেলা!’ পাশে থাকা স্বজনরা তাঁকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করেন, কিন্তু বাবার জন্য মেয়ের বেদনায় তারাও মুষড়ে পড়েন।
হারুনের এক স্বজন বলছিলেন, ‘উনি খুব ভালো মানুষ ছিলেন। এভাবে তাকে আমরা পাব, এটা কল্পনাও করতে পারিনি। পরিবারের এখন কী হবে? এভাবে তরতাজা মানুষের মৃত্যু মেনে নেওয়া কঠিন।’
লাশ উদ্ধারের আগে হেনার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দুর্ঘটনার দিন বিকেল ৫টার দিকেও একবার কথা হয় তার বাবার সঙ্গে। প্রতিদিন রাতে ১০টার দিকে ভিডিও কলে কথা হতো বাবা-মেয়ের। তবে রবিবার সন্ধ্যায় ঘটনার পর থেকে বাবার ফোন বন্ধ পান। এরপর খুঁজতে বের হন বাবাকে। বাবার ছবি হাতে যাকেই সামনে পান, বাবাকে খুঁজে দেওয়ার আকুতি জানান।
দুর্ঘটনাস্থলে হারুনুর রশিদের মেয়েজামাই জুলহাস মিয়ার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তারা পাঁচ থেকে সাতটা হাসপাতালে ঘুরেছেন। কোথাও পাননি। শেষে থানায় যান, তারাও জানাতে পারেনি কিছু।
জুলহাস জানান, হারুনুর রশিদের এক মেয়ে ও এক ছেলে। স্ত্রী নেই। যে ভবনে বিস্ফোরণ হয়, সেটির তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে তিন বছর ধরে দায়িত্ব পালন করছিলেন তিনি। একাই একটি কক্ষে থাকতেন।
হারুনুর রশিদের লাশ উদ্ধারের পর এই দুর্ঘটনায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ৮-এ। এর আগে রবিবার সন্ধ্যায় ওই ভবনে বিস্ফোরণ ঘটে।
চিকিৎসা নিচ্ছেন ১৯ জন : বিস্ফোরণে দগ্ধ পাঁচজন শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন। তাঁদের মধ্যে তিনজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। তাঁদের দেহের ৯০ শতাংশ পুড়ে গেছে। তাঁরা হলেন নুরুন্নবী (৩৫) ও মো. রাসেল (২১)। শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে আইসিইউয়ে রয়েছেন তারা।
ইনস্টিটিউটের সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন বলেন, আইসিইউয়ে থাকা এই তিনজনই সংকটাপন্ন।
এ ছাড়া ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি আছেন তিনজন। আর ঢাকার অন্যান্য হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন আরো ১২ জন। তাদের স্বজনরা অপেক্ষায় আছেন প্রিয়জনকে সুস্থ ফিরে পাওয়ার।