‘অনেক দিন পর স্কুলড্রেস পরলাম, নতুন বই আনতে গেলাম। কয়েকজন বন্ধুর সঙ্গে দেখা হলো। খুবই ভালো লাগছে’—ঢাকার গভর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী আবু তালহার এ কথাগুলোই বলে দেয় সে কতটা উচ্ছ্বসিত। একই উচ্ছ্বাস-আনন্দ প্রকাশ পেল বরগুনার বামনা উপজেলার পূর্ব সফিপুর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিশু শ্রেণির শিক্ষার্থী সৃজনী হাওলাদারের মুখে। নতুন বই বুকে চেপে সে বলল, ‘নতুন বই পেয়েছি, খুব ভালো লাগছে।’
করোনার চোখ রাঙানিতে আগের বছরগুলোর মতো এবার কোনো উৎসব না হলেও গতকাল উৎসবের আমেজেই শুরু হলো বই বিরতণ। প্রায় ১০ মাস পর স্বল্প সময়ের জন্য হলেও যেন প্রাণ ফিরে পেল রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশের স্কুলগুলো। স্বাস্থ্যবিধি মেনে প্রতিটি স্কুলে অল্প কিছু শিক্ষার্থীর উপস্থিতি স্কুল প্রাঙ্গণকে মুখর করে তুলল। তাদের কেউ কেউ খেলল, কেউ গেল প্রিয় ক্লাসরুমের সামনে। মাস্ক আঁটা মুখে বন্ধুর সঙ্গে গল্পও জমিয়ে তুলল তারা। সবশেষে নতুন বই নিয়ে বাড়ি ফিরল। অনেক অভিভাবক নিজেরা এসেও বই নিয়ে গেছেন।
করোনার প্রকোপ শুরু হওয়ার আগে শিক্ষার্থীদের পদচারণে প্রতিদিনই মুখর থাকত স্কুলগুলো। মহামারির শুরুর পর নিষ্প্রাণ হয়ে পড়েছিল।
গতকাল শুক্রবার ছুটির দিন হলেও রাজধানীসহ সারা দেশের স্কুলেই স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত পরিসরে বই বিতরণ শুরু হয়েছে। মাধ্যমিকে ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত চারটি শ্রেণিতে সপ্তাহে তিন দিন করে মোট ১২ দিনে পাঠ্য বই বিতরণ করা হবে। আর প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যবিধির কথা চিন্তা করে অভিভাবকদের হাতে বই তুলে দেওয়া হচ্ছে। বই বিতরণের জন্য স্কুলগুলোতে শ্রেণিভিত্তিক বুথ করা হয়েছে। স্কুলগুলো সীমিতসংখ্যক শিক্ষার্থীকে ডাকছে। এর আগে গত বৃহস্পতিবার বই উৎসবের ভার্চুয়াল উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
গতকাল রাজধানীর গভর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি স্কুলে সকাল সাড়ে ৮টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত স্বাস্থ্যবিধি মেনে নতুন বই বিতরণ করা হয়। স্কুলের প্রধান শিক্ষক আবু সাঈদ ভূঁইয়া বলেন, ‘অনেক দিন পর শিক্ষার্থীদের পদচারণে স্কুল যেন প্রাণ ফিরে পেয়েছিল।’
প্রায় একই কথা জানিয়েছেন লক্ষ্মীপুর, যশোর, গোপালগঞ্জ, বানারীপাড়া, চরফ্যাশন, নীলফামারী, রাজবাড়ী, বেনাপোল ও নওগাঁর বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষকরা।
রাজধানীর উদয়ন উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়, উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজসহ নামি-দামি সব স্কুলেই স্বাস্থ্যবিধি মেনে বই বিতরণ কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। শিক্ষার্থীরা অনেক দিন পর স্কুলে যেতে পেরে এবং বন্ধুদের কাছে পেয়ে আনন্দে মেতে ওঠে।
করোনা মহামারির জেরে গত ১৭ মার্চ সারা দেশের স্কুলগুলো বন্ধ ঘোষণা করা হয়। আগামী ১৬ জানুয়ারি পর্যন্ত তা বন্ধ থাকার ঘোষণা রয়েছে। তবে এর পরও স্কুলগুলো খুলবে কি না, তা নিয়েও রয়েছে অনিশ্চয়তা। গত বছর স্কুলগুলোতে বার্ষিক পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব না হলেও সব শিক্ষার্থীকে পরবর্তী শ্রেণিতে তুলে দেওয়া হয়েছে। শিক্ষা কার্যক্রম চলমান রাখতে বছরের প্রথম দিন থেকেই বই বিতরণ শুরু করল সরকার।
২০২১ শিক্ষাবর্ষে প্রাক-প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক পর্যন্ত চার কোটি ১৬ লাখ ৫৫ হাজার ২২৬ শিক্ষার্থীকে ৩৪ কোটি ৩৬ লাখ ৬২ হাজার ৪১২টি বই দেওয়া হচ্ছে। এর মধ্যে প্রাক-প্রাথমিক ও প্রাথমিক স্তরে দুই কোটি ৩০ লাখ ৭৯ হাজার ৭৭৩ শিক্ষার্থীকে ১০ কোটি ২৫ লাখ ৮২ হাজার ৫৫৫টি বই এবং ইবতেদায়ি, দাখিল, কারিগরি ও মাধ্যমিক স্তরে এক কোটি ৮৫ লাখ ৭৫ হাজার ৪৫৩ শিক্ষার্থীকে দেওয়া হচ্ছে ২৪ কোটি ১০ লাখ ৭৯ হাজার ৮৫৭টি বই।