শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

অচল ‘ডেমু’ সচল করা কতটা সম্ভব

প্রকাশিত: ০৮:৫৩ পিএম, নভেম্বর ২, ২০২১

অচল ‘ডেমু’ সচল করা কতটা সম্ভব

সাত বছর যেতে না যেতেই পরিত্যক্ত হওয়ার পথে ৩৫ বছর মেয়াদের ২০টি ডেমু ট্রেনের ১৬টিই অচল অবস্থায় পড়ে আছে। ৬৫৪ কোটি টাকায় কেনা ২০টি ডেমু ট্রেনের মধ্যে এখন চলছে মাত্র চারটি। অচল ট্রেনগুলো এখন পরিত্যক্ত হওয়ার পথে। ফলে চীনের কাছ থেকে এই ট্রেনগুলো কেনার উদ্দেশ্য একেবারেই সফল হয়নি। অচলাবস্থা থেকে এসব ট্রেনকে সচল করতে বাংলাদেশ রেলওয়ের কারখানাগত সক্ষমতা অনুযায়ী মেরামতের প্রক্রিয়া চলছে। তবে মেরামত করেও ডেমু ট্রেনগুলোকে চালানোর উপযোগী করা সম্ভব কি-না তা নিয়ে সন্দিহান বিশেষজ্ঞ ও রেল সংশ্লিষ্টরা। তারা মনে করছেন, ডেমু ট্রেনগুলো রক্ষণাবেক্ষণ, সঠিকভাবে না চালানো এবং দেশে পর্যাপ্ত যন্ত্রাশং ও দক্ষ টেকনিশিয়ানের অভাব। বাংলাদেশ রেলওয়ের কারখানায় যেসব ট্রেনের কাজ বা মেরামত করা হয় এই ট্রেন সেগুলো থেকে একেবারেই ভিন্ন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১১ সালে চীনের তাংসাং রেলওয়ে ভেহিক্যাল কোম্পানি লিমিটেডের সঙ্গে ডেমু ট্রেন ক্রয়ের চুক্তি করা হয়। প্রাথমিক ব্যয় ৪২৬ কোটি টাকা ধরা হলেও শুল্ক, কর, প্রায় ৩০ জন কর্মকর্তার বিদেশ ভ্রমণ-ভাতাসহ ব্যয় হয় ৬৫৪ কোটি টাকা। ২০১৩ সালে ট্রেনগুলো পায় বাংলাদেশ রেলওয়ে। কমলাপুর-নারায়ণগঞ্জ রুটে প্রথম ডেমু ট্রেনের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর ঢাকা-টঙ্গী, ঢাকা-জয়দেবপুর, জয়দেবপুর-ময়মনসিংহ, সিলেট-আখাউড়া, ঢাকা-আখাউড়া, চট্টগ্রাম-কুমিল্লা, নোয়াখালী-লাকসাম, লাকসাম-চাঁদপুর, চট্টগ্রাম-নাজিরহাট, পার্বতীপুর-লালমনিরহাট এবং পার্বতীপুর-পঞ্চগড় রুটে চলাচল শুরু করে। যদিও এসব ট্রেন সর্বোচ্চ ২০ কিলোমিটার দূরত্বে চলাচলের উপযোগী। কিন্তু চালানো হয়েছে ২২ থেকে ১৩২ কিলোমিটার দূরত্বে। এই চাপ সইতে পারেনি ‘ভদ্র’ ট্রেনগুলো। ফলে ৩৫ বছরের মেয়াদ থাকলেও মাত্র সাত বছরেই প্রায় সবগুলো ট্রেন অচল হয়ে পড়েছে। তবে রেলমন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজন জানিয়েছেন, বেশি দূরত্বে চালানো উচিত হয়নি। এ প্রকল্পে দুর্নীতি হয়েছে কি না প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘এখানে দুর্নীতির তেমন কিছু নেই। এই ট্রেনগুলো যখন কেনা হয়েছিল তখন বগি ছিল না, ইঞ্জিন ছিল না, এরকম সময়ে এগুলো প্রকিউর করা হয়েছিল।’ ট্রেনগুলোকে পরিত্যক্ত বলা যাবে না মন্তব্য করে রেলমন্ত্রী বলেন, ‘সবগুলোই যে পরিত্যক্ত তা নয়। আমরা নিজস্বভাবে পার্টস সংগ্রহ করে, আমাদের যে কারখানা রয়েছে সেখানে এই ট্রেনগুলোকে সচল করার চেষ্টা চলছে। কাজেই একেবারে পরিত্যক্ত হয়ে গেছে, এভাবে বলা যাবে না। এখনই এই ট্রেনগুলো পরিত্যক্ত হয়ে গেছে, সে কথা বলার সময় আসেনি। তবে স্বল্প দূরত্বের এই ট্রেনগুলো এক-দেড়শ কিলোমিটার পর্যন্ত চালানো হয়েছে, সেটা ভুল সিদ্ধান্ত ছিল। যেভাবে এগুলো চালানো উচিত ছিল, সেভাবে চালানো হয়নি। এগুলো মেরামতের প্রক্রিয়ায় আছে। কয়েকটি বড় ধরনের আর কয়েকটি ছোট ধরনের মেরামতের প্রক্রিয়ায় রয়েছে। কিছু যন্ত্র আমরা দেশেই বানাতে পারব।’ অবশ্য মেরামতের আগে প্রয়োজন রেলওয়ে কারখানার উন্নয়ন। একই সঙ্গে দরকার কারিগরি বিষয় যারা দেখেন তাদের পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ দিয়ে ওই ট্রেনগুলোর সঙ্গে পরিচিত করা। তা হলেই অচল পড়ে থাকা ট্রেনগুলো সচল করে হয়তো আরও কিছুদিন চালানো যাবে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক ড. মো. শামসুল হক  বলেন, ‘এই ট্রেনগুলো চাহিদা অনুযায়ী কেনা হয়নি। এটা কেউ বিক্রি করতে চেয়েছে, তখনকার যে উচ্চ পর্যায়ের প্রশাসন ছিল তারও ইন্টারেস্ট ছিল, একটি পার্টিকুলার দেশ থেকে। ফলে প্রকিউরমেন্টটা এসেছে, তাই এই ডিজাস্টার। যত বিলাসী ভ্রমণ হয়েছে, সব নন-টেকনিক্যাল লোক গেছে। এ কারণে মেকানিক্যাল ডিপার্টমেন্টে যারা আছেন তাদের ভালোভাবে জানারই সুযোগ হয়নি কী ধরনের প্রোডাক্ট আসছে। এই ট্রেনগুলো ভদ্রভাবে ব্যবহার করতে হয়। প্রতিটি ট্রিপের পর এগুলোকে একটি নির্দিষ্ট মানদণ্ডে মেইন্টেন করতে হয়। এগুলো করার জন্য তো লোক নেই। তাই এগুলোকে মেরামত করে যে সেকেন্ড হায়াত দেওয়া হবে সেটাও গচ্চা যাবে। কারণ এটার জন্য যে লেবেলের দক্ষ মানবসম্পদ দরকার তা আমাদের নেই।’ ডেমু ট্রেনগুলো মেরামত করে চালানো যাবে কি না সে বিষয়ে রেলের কর্মকর্তারাই সন্দিহান। আর সে সক্ষমতাও তাদের নেই। এ বিষয়ে রেলওয়ের অ্যাসিস্ট্যান্ট চিফ অপারেটিং সুপারিনটেনডেন্ট শাহাবউদ্দিন বলেন, ‘এখন চারটি ডেমু ট্রেন চলছে। দোহাজারী, নাজিরহাট, নারায়ণগঞ্জ, আরেকটি বঙ্গবন্ধু হাইটেক সিটি রুটে চলছে। অন্যগুলো মেরামতের প্রক্রিয়ায় রয়েছে। তবে মেরামতের অগ্রগতি জানা নেই। সবগুলো চালানোর উপযোগী করা যাবে বলে মনে হচ্ছে না।’
Link copied!