বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

অতি লোভে তাতি নষ্ট

প্রকাশিত: ০৫:০৫ পিএম, মে ২, ২০২১

অতি লোভে তাতি নষ্ট

মানবিক বিয়ে, রুহানি বাবা, প্ররোচনা- এই শব্দগুলো বাংলাদেশ বেশ জনপ্রিয় উঠেছে। মুনিয়া হত্যাকাণ্ড নিয়ে আজ একটু আলোচনা করার পায়তারা করছি। অনুমানের ওপর তদন্তাধীন মুনিয়া অপমৃত্যু বা হত্যা নিয়ে জ্ঞানগর্ব ধারাবাহিক আলোচনা করা কঠিন। কারণ দেশের প্রতিটি ঘটনা-রটনা করোনাভাইরাসের মত ক্ষণে ক্ষণে ভিন্নরূপ ধারণ করছে। পাঠক, আসুন আত্মহত্যায় প্ররোচনা কী একটু জেনে নেই। যেকোনো মানুষকে নেতিবাচকভাবে, মানসিকভাবে, আকার-ইঙ্গিত বা কাজের দ্বারা দুর্বল করে তার বেঁচে থাকাটা অর্থহীন করে তোলা যায়। যদি কোনো মানসিক রোগীকে বোঝানো হয় যে, সে সমাজের ও পরিবারের বোঝা। তাকে দিয়ে কিছু হবে না। তার বেঁচে থাকাটা অপ্রয়োজনীয়- সেটা আত্মহত্যায় প্ররোচনাদায়ক। আবুলকে বাঁচানোর জন্য বাবুলকে বিপদে ফেলে দেওয়া অনেকটা প্ররোচনা। তিলে তিলে ছলেবলে কৌশলে কারও স্বপ্ন আশা ভালবাসাকে ভেঙে দেওয়া আত্মহত্যার প্ররোচনা। কাউকে তীব্র অপমান, তুচ্ছতাচ্ছিল্য, উত্তেজিত করা আত্মহত্যায় প্ররোচনা। দেশে সদ্য আলোচিত মুনিয়া অপমৃত্যু বা হত্যায় কারো প্ররোচনা আছে কিনা বা ইহা কী পরিকল্পিত হত্যা তা নিশ্চিত করা দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দায়িত্ব। পাঠক, বাংলাদেশের প্রচলিত আইনে আত্মহত্যায় প্ররোচনার সুনির্দিষ্ট সংজ্ঞা খুঁজে পাইনি। তবে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০ (সংশোধিত ২০০৩) এর ৯ক ধারায় নারীর আত্মহত্যায় প্ররোচনার শাস্তির বিধান উল্লেখ করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, কোনও নারীর সম্মতি ছাড়া বা ইচ্ছার বিরুদ্ধে কোনও ব্যক্তির ইচ্ছাকৃত কোনও কার্য দ্বারা সম্ভ্রমহানি হওয়ার প্রত্যক্ষ কারণে আত্মহত্যা করলে ওই নারীকে অনুরূপ কার্য দ্বারা আত্মহত্যা করতে প্ররোচনা দেওয়া হয়েছে বলা হবে। বাংলাদেশে প্রচলিত আইনে আত্মহত্যার প্ররোচনা দেওয়ার অপরাধে শাস্তির বিধান রয়েছে। তবে এমন অভিযোগ এনে দায়ের করা মামলায় শাস্তিদানের ঘটনা বিরল। আত্মহত্যার প্ররোচনায় বাংলাদেশ দণ্ডবিধি ১৮৬০-এর ৩০৬ ধারা অনুযায়ী ব্যক্তির আত্মহত্যায় প্ররোচনায় সর্বোচ্চ শাস্তি ১০ বছরের কারাদণ্ড এবং জরিমানা। তবে আত্মহত্যার চেষ্টা করেও যদি ঐ ব্যক্তি মারা না যান তবে প্ররোচনা দানকারী ঐ ব্যক্তির ১ বছরের জেল হতে পারে। এবিষয়ে আইনজীবী শফিক আহমেদের নিকট জানতে চাওয়া চাওয়া হয়েছিল। তিনি বলেন, আত্মহত্যায় প্ররোচনার ক্ষেত্রে শাস্তি হবে তাদের যারা প্ররোচনা দিয়েছিলেন। যতজনই প্ররোচনা দিয়ে থাকেন না কেন, প্ররোচনাদানকারী সবাইকেই আইনের আওতায় আসতে হবে। এক্ষেত্রে অভিযুক্ত সবাইকেই তাদের ভূমিকা বা অপরাধের গুরুত্ব অনুযায়ী বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তি প্রদান করা যেতে পারে। পাঠক, পরকীয়া নেশায় রাজ্যে মাতাল। বাংলাদেশের আইনে পরকীয়া কি ফৌজদারি অপরাধ? আইনি সহায়তা প্রতিষ্ঠান আইন ও সালিশ কেন্দ্রের একজন আইনজীবী নীনা গোস্বামীর কাছে এ প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, এ সংক্রান্ত আইন খুব বেশি নেই। তবে ৪৯৭ ধারায় বলা হয়েছে, যেকোনো বিবাহিত ব্যক্তি যদি অন্য কোন বিবাহিত নারীর সঙ্গে জেনেশুনে যৌন সম্পর্ক করে তাহলে তা ব্যভিচার বলে গণ্য হবে। এক্ষেত্রে সেই পুরুষটির পাঁচ বছরের কারাদণ্ড, অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডের বিধান আছে। পাঠক, মানুষ কেন আত্মহত্যা করে? এমন প্রশ্ন উঁকি দেয় প্রতিটি ঘটনার পর। আমরা কথা বলি, এখানেই শেষ। নানা কারণে মানুষ আত্মহত্যা করতে পারে। এর মধ্যে ডিপ্রেশন, ব্যক্তিত্বে সমস্যা, গুরুতর মানসিক রোগ বা স্বল্পতর মানসিক রোগ, মাদকাসক্তি, এনজাইটি, অপরাধ বোধ, আত্মহত্যায় প্ররোচনা, অশিক্ষা, দারিদ্র্য, দাম্পত্য কলহ, প্রেম-কলহ, অভাব অনটন, দীর্ঘস্থায়ী রোগে ভোগা, যৌন নির্যাতন, মা-বাবার ওপর অভিমান, পরীক্ষায় খারাপ রেজাল্ট, প্রেমে ব্যর্থ ও প্রতারণার শিকার হয়ে অনেকে আত্মহত্যা করেন। আবার কারও কারও ক্ষেত্রে কারণ অজানা থেকেই যায়। ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন ফর সুইসাইড প্রিভেনশন প্রতি বছরের ১০ সেপ্টেম্বর বিশ্বব্যাপী ‘বিশ্ব আত্মহত্যা প্রতিরোধ দিবস’ পালন করে। গতবারের দিবসটির প্রতিপাদ্য ছিল ‘ওয়ার্কিং টুগেদার টু প্রিভেন্ট সুইসাইড’ অর্থাৎ ‘আত্মহত্যা প্রতিরোধে কাজ করি একসঙ্গে। এক গবেষণায় দেখা গিয়েছে, বাংলাদেশে প্রতিবছর প্রতি লাখে ৩৯ দশমিক ৬ জন আত্মহত্যা করে। বহির্বিশ্বে ছেলেদের মধ্যে আত্মহত্যার হার বেশি হলেও বাংলাদেশে ব্যতিক্রম। বাংলাদেশে নারীদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা বেশি এবং তা সাধারণত অল্প বয়সী টিন এজারদের মধ্যে।
দেশের মিডিয়া ও সাংবাদিকদের ঘিরে একটি নেতিবাচক সমালোচনা সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল। অনেকেই মনে করছেন সাংবাদিকতা এখন আইসিইউতে। রাষ্ট্র সমাজ সকলে মিলে তার আরোগ্য কামনাই সমাধান। দেশের একজন সিনিয়র সাংবাদিক মুখ খুলেছেন, কথাও বলেছেন। বলেছেন, নিকৃষ্টতম সাংবাদিকতা থেকে উদ্ধার চাই, বাংলাদেশের সাংবাদিকতা অতি সম্প্রতি নোংরামির এক গভীর তলে পৌঁছেছে। এর জন্য নিজেকেও ভীষণ অপরাধী লাগছে, খুব লজ্জা লাগছে, ঘেন্না হচ্ছে। সকলের কাছে আমি নিঃশর্ত ক্ষমা চাচ্ছি। মৃত মুনিয়ার কাছে, মুনিয়ার বোন তানিয়ার কাছেও। আপনাকে ধন্যবাদ সাংবাদিক নাঈমুল ইসলাম খান।
পাঠক, বাংলাদেশেসহ অনেক দেশেই মিডিয়া অনেকটা toothless bulldog এর মত। toothless bulldog এর মানে হচ্ছে দাঁতবিহীন বুলডগ (কুত্তা) কামড়াতে পারে না। মুনিয়া অপমৃত্যু বসুন্ধরা গ্রুপের এমডি সায়েম সোবহান আলভীরের সংশ্লিষ্টতা, ফটোগ্রাফিক প্রমাণ, কল রেকর্ড আমাকে বলছে তিনি একজন জঘন্য ধরনের বিবাহিত পুরুষ। দুর্ভাগ্যক্রমে মিডিয়ায় আমাদের কিছু হলুদ সাংবাদিকরা বসুন্ধরা এমডির নাম নিতে সাহস করছেন না। ইহাই হচ্ছে অদক্ষ, অকার্যকর, অকেজো, শক্তিহীন, অক্ষম, দুর্বল সাংবাদিকতা; যা অনেকটা toothless bulldog এর মত। কামড়াতে পারে না, যা খুবই হতাশাব্যঞ্জক। মুনিয়ার অপমৃত্যু বা হত্যা (এখনও নিশ্চিত না) সন্দেহ মন্তব্য মতামত হতাশা আর আবেগে সারাদেশ উত্তাল। মেয়েটির পরিবার কুমিল্লায় থাকে, আর সে ঢাকায় একাই একটি ফ্ল্যাটে থাকত, বিষয়টি সন্দেহজনক। এই ব্যাপারে মুনিয়ার পরিবার ওয়াকিবহাল না তা বোধ হয় ঠিক না। এখানে লোভ, স্বার্থসংশ্লিষ্টটা, আকাশ ছোঁয়া স্বপ্ন, ইসলামিক জীবন বিধান থেকে বের হয়ে আধুনিকতায় উন্মাদ, মানবিক মূল্যবোধ আর নৈতিক চরিত্রহীনতার চরম অধঃপতন একাকার হয়েছে। যা মুনিয়ার আকাশ ছোঁয়া স্বপ্নকে ধূলিসাৎ করে দিয়েছে এমনটাই মনে হচ্ছে। কলেজ পড়ুয়া একটা মেয়ে ১ লাখ টাকা দিয়ে ফ্ল্যাট ভাড়া করে একা ঢাকা বসবাস করে। দেখেন পাঠক দুর্ভাগ্যক্রমে আমাদের প্রত্যক্ষ পরোক্ষ সমর্থনে এই মেয়েটা এতদূর এসেছে। পরিবার সমাজ তাকে অপমৃত্যু বা হত্যা করতে সহায়তা করেছে। উপযুক্ত তদন্ত করত: ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের আইনি প্রক্রিয়ায় নিয়ে এসে একটি উদাহরণ স্থাপন দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একটি গুরু দায়িত্ব নয় কি? পাঠক, অর্থলোভী নারী আর নারী লোভী পুরুষ দুটোই দুনিয়া ও আখিরাতের জন্য বিপদজনক। এরা কখনো সুখী হতে পারে না। মুনিয়া অপমৃত্যু বা হত্যা ঘটনা থেকে লোভী মেয়েদের বুঝা উচিত পয়সাওয়ালা টাকলুদের কাছে তোমরা বসুন্ধরা টিস্যুর মতোই। বিবাহ বহির্ভূত প্রেমকে ইসলামে হারাম করা হয়েছে। ইসলামের দৃষ্টিতে বিষয়টি হারাম হলেও যারা বিবাহ বহির্ভূত প্রেম ভালোবাসায় লিপ্ত তারা বিষয়টিকে স্বাভাবিকভাবে নিচ্ছেন। ইসলামিক মূল্যবোধ থেকে আমরা দূরে সরে আসছি। অশ্লীলতার সব মরণাস্ত্র আমাদের হাতের মুঠোয়। চলমান বিশ্বে ব্যভিচার ও অশ্লীলতার সমস্ত পথ উন্মুক্ত। অশ্লীল সিনেমা, নোংরা পত্র-পত্রিকা, ইন্টারনেটে পর্ণ সাইট এসবের কারণে মানুষ যেনার প্রতি বেশি ঝুঁকে পড়ছে। পাঠক, মুনিয়াকে যদি হত্যা করা হয়ে থাকে, যদি আত্মহত্যায় প্ররোচিত করা হয় অবশ্যই তার ন্যায্য বিচার হওয়া উচিত। একই সময়ে মুনিয়ার দ্বারা সম্পাদিত ক্রিয়া কর্মকে আমরা নীরব সমর্থন করতে পারি না। যা সমাজ তথা দেশের জন্য অশনি সংকেত। একটা অবিবাহিত মেয়ে কীভাবে বিবাহ বহির্ভূত সংসার করতে পারে? আলাদা ফ্ল্যাট নিয়ে পরপুরুষের সঙ্গে থাকে এবং তার টাকায় জীবনযাপন করে। ভিকটিমের বড় বোনের স্টেটমেন্টে বলে দিচ্ছে যেটা পরিবারের সদস্যরা পরিষ্কার জানে। তাই বলছি বসুন্ধরা গ্রুপের এমডি এবং মেয়ের পরিবার দুই পক্ষকেই আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক বিচার করা উচিত। পাঠক, সমাজের নৈতিক অবক্ষয় রোধে আমাদের ভাবতে হবে এবং পদক্ষেপ নেওয়া শুরু করতে হবে। মানবিক কারণে কিছু লোক মায়াকান্না করছে আমি দ্বিমত নই। তবে, আমাদের সমস্যাগুলো চিহ্নিত করতে হবে। এ সমাজ ব্যবস্থায় অনেক সুশ্রী রক্ষিতাদের ‘বদমাইশ বিত্তশালীরা’ পালে। আমরা সাধারণ মানুষদের বুঝতে হবে রক্ষিতা শব্দের মানে কী? সহজে এর অর্থ- যাদেরকে কেউ পুষে রেখে ব্যবহার করে। পতিতাদের সবাই মিলে ব্যবহার করে। রক্ষিতারা হল পতিতাদের চেয়ে উন্নত শ্রেণীর। আমাদের সমাজ ব্যবস্থায় এরকম রক্ষিতারা বিত্তশালীদের টার্গেট করে নিজেরাই ওদের সাথে সম্পর্ক গড়ে তুলে। কারো রক্ষিতা হয়ে গেলে সে পুরোটাই রক্ষকের নির্দেশমতো চলতে হয়। পতিতাদের মতো তাদের স্বাধীনতা থাকে না। রক্ষিতাদের প্রায় পরিবারই তাদের মেয়ের বিষয়গুলো জানে, এমনকি তাদের আরও প্রলুব্ধ করে, কারণ একটাই টাকার লোভ। পাঠক, সহজে বড়লোক হবার লোভ লালসা থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। আমাদের সমাজে কিছু লোক এ পথ খুঁজে। অনেক রক্ষিতারা জেনেশুনেই সে সকল বদমাইশ বিত্তশালীদের পেছনে ঘুরঘুর করে। অতি লোভাতুর স্বপ্নের ফলাফল সবসময় বিপদগামী হয়। তবে কাউকে মেরে ফেলা, মরতে প্ররোচিত করা সমাধান নয়। লেখক: ফ্রিল্যান্স জার্নালিস্ট, ওয়ার্কিং ফর ন্যাশনাল হেল্থ সার্ভিস (NHS) লন্ডন, মেম্বার, দ্য ন্যাশনাল অটিস্টিক সোসাইটি ইউনাইটেড কিংডম।
Link copied!