মঙ্গলবার, ২২ অক্টোবর, ২০২৪, ৭ কার্তিক ১৪৩১

অবশেষে প্রণোদনা পাচ্ছে ২০ লাখ ট্রেডিং ব্যবসায়ী

প্রকাশিত: ০৬:২৮ এএম, নভেম্বর ৫, ২০২০

অবশেষে প্রণোদনা পাচ্ছে ২০ লাখ ট্রেডিং ব্যবসায়ী

করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত রাজধানীসহ দেশব্যাপী প্রায় ২০ লাখ ট্রেডিং ব্যবসায়ীকে প্রণোদনা প্যাকেজে অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। তাদের ঘুরে দাঁড়াতে দেয়া হবে ৬ হাজার কোটি টাকার ঋণ সহায়তা। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিত এসএমই (ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তা) খাতের প্রণোদনা প্যাকেজ থেকেই এ অর্থায়ন করা হবে। ঋণের সুদের হার এসএমই খাতের প্রণোদনা প্যাকেজের মতো ৯ শতাংশ হবে। যার মধ্যে ঋণগ্রহীতা দেবে ৪ শতাংশ এবং বাকি ৫ শতাংশ সরকার ভর্তুকি হিসেবে দেবে। ট্রেডিং ব্যবসায়ীদের উল্লিখিত সুবিধার আওতায় আনতে এসএমই প্রণোদনা প্যাকেজ নীতিমালা সংশোধনের প্রস্তাব দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ে এ প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। সেখানে এসএমই খাতের প্রণোদনা প্যাকেজ থেকে ট্রেডিং খাতের জন্য ৩০ শতাংশ অর্থাৎ ৬ হাজার কোটি টাকা সীমা নির্ধারণের জন্য সম্মতিও চাওয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে পাওয়া গেছে এসব তথ্য। আরও জানা গেছে, এসএসইর প্যাকেজ থেকে ট্রেডিং খাতে অর্থায়ন করার ব্যাপারে ইতঃপূর্বে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক ও অর্থ মন্ত্রণালয়। অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সিনিয়র সচিব আসাদুল ইসলাম এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন। তবে মৌখিক এ নির্দেশ কার্যকর করতে সম্মতি চেয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। জানতে চাইলে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সিনিয়র সভাপতি রেজাউল করিম মন্টু বলেন, দেশব্যাপী ৫৩ লাখ ব্যবসায়ী রয়েছেন। আর সারা দেশে আছে ২০ লাখ দোকানপাট। এরা সবাই ট্রেডিং ব্যবসায়ী। এরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এদের ঋণের চাহিদা কম। এখন সরকার নীতিমালা সহজ করলে এসব উদ্যোক্তা প্রণোদনা প্যাকেজ থেকে সহায়তা পাবেন। অনেকটা ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন। করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত উৎপাদনমুখী শিল্প, রফতানি ও সেবা এবং এসএমই খাতের জন্য ১ লাখ ৩ হাজার কোটি টাকার বিভিন্ন প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে সরকার। কিন্তু এসব খাতের বাইরে দেশব্যাপী প্রায় ২০ লাখ ট্রেডিং ব্যবসায়ী আছেন। এরা হোটেল, রেস্তোরাঁ, মুদি, খুচরা-পাইকারি দোকানি, মিষ্টির দোকানি এবং মাকেট বিপণিবিতানের ছোট ব্যবসায়ী। করোনায় এসব ব্যবসায়ী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। কিন্তু তাদের কোনো সুবিধা দেয়া হয়নি। তারা কোনো ধরনের প্যাকেজের আওতায় আসেনি। ফলে প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পরও সব ধরনের সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। ক্ষতির কথা তুলে ধরে রাজধানীর বাসাবোয় ১৮৮ ওহাব কলোনি ঠিকানায় বিসমিল্লাহ রেস্টুরেন্টের মালিক মাওলানা রহিম বলেন, করোনাকালীন তিন মাস রেস্টুরেন্ট বন্ধ থাকায় হোটেল, কিচেন ও নিজের বাড়িভাড়া প্রায় ৭০ হাজার টাকা বকেয়া পড়েছে। এই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে ঋণের জন্য দৈনিক বাংলা মোড় কর্মসংস্থান ব্যাংকে যোগাযোগ করি। সেখানের শাখা ম্যানেজার জানান, ঋণের জন্য ঢাকায় জমি থাকতে হবে এবং সে জমিতে বসবাস করতে হবে। এমন জমি মর্টগেজ দিলেই ঋণ পাওয়া যাবে। তিনি আরও বলেন, রাষ্ট্রায়ত্ত অন্য ব্যাংকগুলোয় ঋণের জন্য যোগাযোগ করে পাইনি। মাওলানা রহিমের মতো লাখ লাখ ক্ষতিগ্রস্ত ট্রেডিং ব্যবসায়ী রয়েছেন যারা কোনো প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় নেই। সূত্র জানায়, এসব ক্ষতিগ্রস্ত ট্রেডিং খাতকে প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় আনতে অর্থ সচিবের কাছের সম্মতি চেয়ে সম্প্রতি চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। চিঠিতে উল্লেখ করা হয়: সারা দেশে ট্রেডিং ব্যবসায় নিয়োজিত উদ্যোক্তারা কোভিড-১৯-এ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠন থেকে তাদের ঋণ সহায়তার প্রস্তাব দিয়েছে। তাই এসএমই খাতের প্রণোদনা প্যাকেজের ২০ হাজার কোটি টাকা থেকে ৩০ শতাংশ অর্থ এ খাতে ঋণ সহায়তার বিষয়টি বিবেচনা করা যেতে পারে। এতে ট্রেডিং খাতে ঋণ সহায়তার চাহিদা পূরণ হবে। চিঠিতে আরও বলা হয়: সরকারের ঘোষিত বিভিন্ন প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নের জন্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে গত ৭ এপ্রিল পরার্মশ দিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে চিঠি দিয়েছে। পরবর্তী সময়ে অর্থ সচিবের সঙ্গে এ সংক্রান্ত এক বৈঠকে এসএমই খাতের প্রণোদনা প্যাকেজে ট্রেডিং খাতকে অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এতে প্যাকেজের ২০ শতাংশ ট্রেডিং খাতের জন্য বরাদ্দ রাখার ব্যাপারে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সেখানে আরও সিদ্ধান্ত নেয়া হয় যে, এ ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব (এসএমই প্রণোদনা প্যাকেজের কত শতাংশ ট্রেডিং ব্যবসায়ীদের দেয়া যেতে পারে) আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকে পাঠাবে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো। কিন্তু এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের চিঠিতে বলা হয়: ট্রেডিং ব্যবসায়ীদের প্রণোদনা প্যাকেজের বিষয়ে ব্যাংকগুলো এখন পর্যন্ত কোনো প্রস্তাব পাঠায়নি। অর্থ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, এসএমই খাতের প্রণোদনা বিতরণে ধীরগতি হচ্ছে। এ খাতে ট্রেডিং ব্যবসাকে অন্তর্ভুক্ত করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। এতে ঋণ বিতরণও বাড়বে।
Link copied!